শেষটা_সুন্দর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৩৫।

0
384

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৩৫।

মেহুল একটা হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে। চুল থেকে তখন তার পানি পড়ছিল। তাই সে আঁচল’টা কোমরে গুঁজে চুল মুছতে আরম্ভ করে। সেই সময় রামিনা বেগম এসে বললেন,

‘কিরে, এখনো তো কিছুই রেডি হোসনি। তাড়াতাড়ি কর। ঐদিকে ছাদে সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য।’

মেহুল বলল,

‘আমাকে জাস্ট পাঁচ মিনিট দাও মা। আমি রেডি হয়ে ছাদে যাচ্ছি।’

‘হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি কর।’

মেহুল দ্রুত চুল মুছে হালকা সেজে রুম থেকে বের হতেই তার কিছু কাজিন আর রিতা একটা বড়ো ওড়না নিয়ে হাজির হয়। তারপর তারা সেই ওড়না মেহুলের মাথার উপর ধরে তাকে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদে আরো আত্মীয়স্বজন ছিল। মেহুলের দাদা আর নানা বাড়ি থেকে ঘনিষ্ঠ কিছু আত্মীয়স্বজন এসেছেন। একটা ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছে। মেহুল সেখানেই গিয়ে বসে। চারদিক ফুল আর ফেইরি লাইটে সাজানো। মেহুলের সামনে অনেক কিছুর ডালা রাখা। সে বসার কিছুক্ষণ পর তার পাশে তার মা বাবা গিয়ে বসলেন। তারা হলুদের ডালা থেকে হলুদ নিয়ে মেহুলের মুখে লাগিয়ে দিলেন। তারপর একে একে অনেকেই আসে তাকে হলুদ দিতে।

হলুদের পাঠ চুকিয়ে সবাই যখন মেহেদি দেওয়াতে ব্যস্ত, তখন নিচে থেকে খবর আসে ছেলের বাড়ির থেকে বিয়ের ডালা এসেছে। রিতা বলল,

‘চল মেহুল, নিচে বোধ হয় ভাইয়াও এসেছেন।’

রাবীর এসেছে ভেবে মেহুল খুশি হয়। সেও রিতার সাথে নিচে যায়। তবে বাসায় গিয়ে সব ডালা দেখলেও সেই মানুষটাকে সে দেখে না। কিছু লোক এসে ডালা দিয়ে গিয়েছে, রাবীর আসেনি। সবাই এত ঢালা দেখে বলছে,

‘বাবা, ছেলে তো দেখছি কোনো কিছুরই কমতি রাখেনি।’

মেহুল আর কিছু বলে না। রিতাকে বলে,

‘মেহেদিগুলো নিয়ে আয়। বাকিটা রুমেই দিব।’

এই বলে মেহুল তার রুমে যায়। আর রিতা যায় মেহেদি আনতে।

মেহুলের একটা কাজিন একটা ডালা নিয়ে তার রুমে প্রবেশ করে। মেহুল তখন তাকে বলে,

‘কিরে, ডালা এখানে কেন আনছিস? এগুলো ড্রয়িং রুমে থাকবে।’

‘হ্যাঁ, জানি। কিন্তু, তুমি কি এই ডালাতে কী আছে সেটা দেখেছো?’

মেহুল সবগুলো ডালা ভালোভাবে দেখেনি। তাই সে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘কেন, কী আছে?’

ঐ মেয়েটা তার সামনে ডালা’টা রেখে বলে,

‘এই যে দেখো।’

মেহুল চেয়ে দেখে পুরো ঢালা’টা আইসক্রিম আর অনেকগুলো চকলেট দিয়ে সাজানো। যা দেখে সঙ্গে সঙ্গেই মেহুলের মন খুশিতে নেচে উঠে। সে অস্থির হয়ে রিতাকে বলে,

‘রিতা, খুল জলদি।’

মেহুলের হাতে মেহেদি থাকায় রিতা’ই ডালা’টা খুলে। তারপর একে একে সব আইসক্রিম আর চকলেট বের করে। অনেকটা সময় হয়ে যাওয়ায় আইসক্রিমগুলো গলে গিয়েছিল। তাই মেহুল সেগুলোকে ফ্রিজে রেখে আসতে বলল। তারপর সবাই মিলে চকলেটগুলো আলাদা করে। অনেক রকমের চকলেট দিয়েছে। মেহুল পারছেনা সবগুলো একসাথে মুখে পুরে বসে থাকতে। কিন্তু, তার বিচ্ছুসব কাজিনরা তার দিকে হাত পেতে চেয়ে আছে। তাই সে সবার মাঝে চকলেট বিলিয়ে নিজের চকলেটগুলো আলাদাভাবে রেখে দেয়। পরে খাবে।

তার রুম’টা একটু খালি হওয়ার পর মেহুল রাবীরকে কল দেয়। রাবীর কেটে দিয়ে আবার কল ব্যাক করে। মেহুল কোনো কথা বলে না। রাবীর জিজ্ঞেস করে,

‘ডালা সবগুলো ঠিকঠাক মতো পেয়েছেন?’

মেহুল আস্তে করে বলে,

‘জি।’

‘আর, ঐ চকলেট আর আইসক্রিমের ডালা’টা পেয়েছেন?’

‘জি, সবাইকে সবগুলো চকলেট আইসক্রিম ভাগ করে দিয়েছি।’

‘আর আপনি খাননি?’

‘না, আমি কেন খাব? আমি কি বাচ্চা নাকি? ঐসব তো বাচ্চাদের জন্য ছিল, তাই না?’

রাবীর ধীর সুরে বলল,

‘না, আপনার জন্য।’

মেহুল কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল,

‘আপনিও তো আসতে পারতেন।’

‘আমি তো এখনো বাসায়’ই যাইনি। আপনার ঐখানে কীভাবে যাব বলুন?’

মেহুল তখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

‘আপনি কি হলুদ করেননি?’

‘না, কালকে একটা জরুরি মিটিং ছিল। কাল সম্ভব না বলে সেটা আজকেই শেষ করতে হয়েছে। আর তাছাড়া আরো কিছু জরুরি কাজ ছিল।’

‘তাই বলে আপনি নিজের হলুদ’টাও করবেন না?’

‘সময় পাইনি। পেলে অবশ্যই করতাম। আপনার ঐদিকে সবকিছু সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে?’

‘জি।’

‘উম, পাশে কেউ আছে?’

‘না।’

‘আচ্ছা, ভিডিও কল দিচ্ছি।’

রাবীর ভিডিও কল দেয়। মেহুল কল রিসিভ করে বলে,

‘এখন আর ভিডিও কল দিয়ে কী হবে?’

‘না ভাবলাম, একটু আপনার সাজ’টা দেখি।’

‘থাক, এত ব্যস্ত মানুষের আর আমাকে না দেখলেও চলবে।’

‘কপালে আর গালে দেখি অনেক হলুদ লেগে আছে।’

‘হু, রিতা বেশি হলুদ লাগিয়েছিল।’

‘আপনাকে সুন্দর লাগছে, মেহুল।’

মেহুল বোধ হয় লজ্জা পেল। মৃদু সুরে বলল,

‘সুন্দর মানুষকে তো সবসময় সুন্দর’ই লাগবে, এটাই নিয়ম।’

রাবীর তখন মুচকি হেসে বলল,

‘হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।’

রিতা তখন স্ক্রিনের দিকে চেয়ে বলল,

‘একটা কথা বলব?’

‘বলুন।’

‘এখন কি আপনার কোনো কাজ আছে?’

‘না, মোটামুটি সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছি।’

মেহুল তখন লজ্জামাখা কন্ঠে বলল,

‘একবার এখানে আসবেন?’

রাবীর ইতস্তত সুরে বলল,

‘এখন তো সম্ভব না মেহুল। আ’ম সরি।’

মেহুল মেকি হেসে বলল,

‘না না, থাক। সমস্যা নেই। আচ্ছা, রাখছি। আপনি কাজ করুন।’

মেহুল কল কেটে দেয়। মন খারাপ হয় তার। তবুও কী করবে। রাবীর ব্যস্ত মানুষ। আর তার এই ব্যস্ততায় তাকেও একসময় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।

________

শাড়ি পরেই এক চোট ঘুমিয়ে উঠেছে মেহুল। ঘুম ভাঙতেই হাতের দিকে চেয়ে দেখে মেহেদিগুলো শুকিয়ে গিয়েছে। সেগুলো তুলার জন্য তখন সে বারান্দায় যায়। আর সেই মুহুর্তেই একটা গাড়ি এসে তাদের গেইটের সামনে দাঁড়ায়। যেটা দেখা মাত্রই খুশিতে তার চোখ মুখ ঝলমলিয়ে উঠে। গাড়ি থেকে সেই ব্যক্তিটা নামতেই মেহুল বড়ো বড়ো চোখে তার দিকে তাকায়। রাবীর উপরের দিকে চেয়ে ইশারায় তাকে নিচে নামতে বলে। মেহুলও দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে দরজার কাছে যায়। তার চাচি পেছন থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন,

‘মেহুল, কোথায় যাচ্ছো?’

‘একটু নিচে যাচ্ছি চাচি। এখনই চলে আসব।’

‘আরে, এভাবে নিচে যাচ্ছো কেন? কিছু লাগলে অন্য কাউকে বলো।’

‘না না, চাচি। তুমি মা’কে বলো না। আমি যাব আর আসব।’

এই বলে মেহুল দ্রুত নিচে নামে। তার চাচি বুঝতে পারেন না কী হয়েছে। তাই তিনি মেহুলের বারান্দার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। নিচে তাকিয়ে দেখেন রাবীর এসেছে। রাবীরকে নিচে দেখে আশ্বস্ত হন তিনি। পরে মুচকি হেসে বারান্দা থেকে চলে আসেন।

মেহুল মাথায় বড়ো ঘোমটা টেনে রাবীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘এত জরুরি তলপে ডেকে যদি এতবড়ো ঘোমটাই দিয়ে রাখেন, তাহলে এখানে এসে আমার লাভ কী হলো?’

মেহুল তখন মুচকি হেসে বলল,

‘আপনার লাভের প্রয়োজন নেই। আমার লাভ হলেই হবে।’

‘আপনার লাভ? কীভাবে?’

মেহুল তখন সঙ্গে সঙ্গেই তার পেছন থেকে দু’হাত বের করে রাবীরের গালে ঘষে বলল,

‘এই যে আমার লাভ।’

রাবীর গালে হাত ছুঁয়ে দেখল, তার গাল হলুদে ভর্তি। সাথে হলুদ গাল থেকে পাঞ্জাবীতে পড়ে সেটার অবস্থাও খারাপ। মেহুল তাকে দেখে হেসে বলল,

‘এবার আপনি আসতে পারেন।’

রাবীর কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে বলে,

‘আশেপাশে মানুষ আছে বলে আপনি আজ বেঁচে গিয়েছেন। নয়তো…’

মেহুল ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘নয়তো কী? আপনি আমি ভয় পাই নাকি?’

রাবীর হেসে বলল,

‘ভয় পান না?’

‘না, মোটেও না।’

রাবীর মেহুলের হাত টেনে ধরে বলে,

‘চলুন তাহলে।’

মেহুল চমকে বলে,

‘কোথায়?’

রাবীর তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে তার গাড়িতে বসায়। সেও ড্রাইভিং সিটে বসে জানলার গ্লাসগুলো তুলে দেয়। মেহুল ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হলো? আপনি আমাকে গাড়িতে কেন নিয়ে এলেন?’

রাবীর তখন কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here