স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২১

0
305

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২১
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

আরাভ নিঃশব্দে ড্রয়িং রুম ত্যাগ করে চলে গেল। স্রুতির দু-চোখ বেয়ে অনবরত অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে। শ্বাস নিতে তার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার৷ তার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গিয়েছে। কথাটা মনে হতেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে। স্রুতি নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে পর পর আরো দু’টো থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল স্মৃতির গালে। স্মৃতি আহত দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। স্রুতি রাগান্বিত দৃষ্টিতে বোনের দিকে চেয়ে রয়েছে। অশ্রুকণা গুলো বড্ড বেইমান হয়েছে। কিছুতেই চোখের কোণে এসে ভির জমাচ্ছে না। তারা কি ইচ্ছে করে স্মৃতি দোষী বানাতে চাইছে। স্মৃতির একটা আক্ষেপ কঠিন সময় গুলোতে অশ্রুকণা এসে দু’নয়ন ভিজিয়ে দিয়ে যায় না। স্রুতি চিৎকার করে বলে উঠলো,

–এবার তোর শান্তি হয়েছে? আমার বাচ্চা টাকে খেয়ে তবে ছাড়লি? তোকে কতবার বলে ছিলাম। আমাদের বাসায় আসবি না। তুই আমাদের বাসায় আসলে, আমাদের বাসায় অশান্তি সৃষ্টি হয়। তোর রাগ তো আমার ওপরে ছিল। আমাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতি। আমার বাচ্চাটা তোকে কি করেছিল? তুই আমার বাচ্চাটাকে কেনো মেরে ফেললি? আমি জীবনে বেশি কিছু চায়নি। আমি একটু সুখে থাকতে চেয়েছিলাম। আমার সুখ তোর সহ্য হলো না। তুই আমার বাচ্চাটাকে খেয়ে ফেললি। স্মৃতির পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। স্মৃতি কেমন জানি বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। চিন্তায় মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গিয়েছে। পুরো শরীরের কম্পন সৃষ্টি হয়েছে। স্মৃতি অসহায় কণ্ঠে বলল,

–আপু আমি তোমার বাচ্চাকে মারিনি। তুমি আমার নামে মিথ্যা কথা বলছো কেনো? তুমি আমার নিজের বোন হও। আমি নিজের বোন হয়ে কিভাবে তোমার ক্ষতি চাইবো বলো? আমার ওপরে এতবড় মিথ্যার অপরাধের বোঝা নামিয়ে দিও না। এটা আমি সহ্য করতে পারবো না। আপুর পাশে কি আমি একাই দাঁড়িয়ে ছিলাম? মুনতাসীর ভাই ছিল না! তোমরা মুনতাসীর ভাইকে কেনো কিছু বলছো না? স্মৃতির কথা শুনে অভ্র রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমাকে আমি নিজের বোনের মতো ভালোবাসতাম স্মৃতি। তুমি আমাদের এতবড় ক্ষতি করে দিবে। তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল। স্রুতি আমাকে একটা কথা সব সময় বলতো তুমি স্রুতিকে হিংসা করো। আমি স্রুতির কথা বিশ্বাস করতাম না। ভাবতাম এত সুন্দর নিস্পাপ একটা মেয়ে কিভাবে নিজের বোনকে হিংসা করতে পারে? আজকে তুমি প্রমাণ করে দিলে, কারো ভালো কেউ সেই করতে পারে না। এমনকি নিজের বোনের ভালো-ও কেউ সহ্য করতে পারে না। আমরা তো দু’জন দু’জনকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তুমি কি আমাদের বাঁচতে দিবে না? এভাবে আমার সুখের প্রদীপকে কেনো নিভিয়ে দিলে? আমি তোমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না। তুমি আর কখনো আমাদের বাসায় আসবে না। এর জন্য যদি তোমাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে হয়। তাহলে আমি আর কোনোদিন স্রুতিকে তোমাদের বাসায় যেতে দিব না। অভ্রের কথা শেষ হবার সাথে সাথে রোকেয়া বেগম বলল,

–এই মেয়ে একটা অলক্ষী। সকালে মেয়েটাকে ভালো মনে কাছে ডেকেছিলাম। কে জানতো আমার পেছনেই ছোবল বসিয়ে দিবে। এই মেয়ের মুখ আমি দেখতে চাই না। যেই মেয়ের দ্বারা আমার বা আমার ছেলের বউয়ের ক্ষতি হবে। আমি তাকে আমার বাসার আশেপাশে আসতে দিব না। তোমার ছায়া যেন অভ্র আর স্রুতির আশেপাশে না দেখি। তোমাকে যদি আর একবার আমাদের বাসায় দেখেছি। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আজকেই তোমার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে এসে, তোমার সব কুকর্মের কথা জানাবো। তারপরে দেখবো তারা কি সিদ্ধান্ত নেন।

স্মৃতি অশ্রুসিক্ত নয়নে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে তাকে কেউ বিশ্বাস করছে না। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। একটু পরে স্রুতির বাবা-মা আসলো। স্রুতি কান্না করতে করতে বাবা-মাকে সবকিছু জানালো। সবকিছু শুনে মুনিয়া বেগম রাগান্বিত হয়ে মেয়ে দিকে তাকালো। আবিদ রহমান অবিশ্বাসের সুরে বললেন,

–অসম্ভব স্মৃতি তোমাকে হিংসা করে, এই কথা বললে আমি তোমাকে কোনোদিন বিশ্বাস করবো না। তুমি এই কথাটা ভুল বললে স্রুতি। স্মৃতি কোনোদিন তোমাকে হিংসা করেনি। বরঞ্চ সে ছোট হয়ে বড় বোনের দায়িত্ব পারল করেছে। সে নিজে ভালো জামাকাপড় না নিয়ে, তোমাকে নিতে বলেছে। তুমি সেই বোনের নামে বাজে কথা বলছো। আমার কাছে আমার দুই মেয়েই সমান সত্যি না জেনে, আমি কাউকে ভুল বুঝতে পারি না। স্রুতি রাগান্বিত হয়ে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–এখন তো আমার টান তোমার ভেতর থেকে আসবে না আব্বু। আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আমি পরের বাড়ির বউ হয়ে গিয়েছি। এখন তো নিজের মেয়ের টানই টানবে। আমার হৃদয় ভাঙার শব্দ তোমার কান পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে না আব্বু। আমি ভেতর থেকে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছি। আমার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তোমার মেয়ে ভুল পথে হাঁটছিল। তাহলে সঠিক পথে চলতে বলায় সে আমাকে এত বড় শাস্তি দিবে। সেটা আমি স্বপ্নে-ও কল্পনা করতে পারি নাই। আমার ভুলের মাসুল আমার সন্তানকে দিতে হবে। এটা আগে জানলে তোমার মেয়েকে কিছু বলতাম না আব্বু। আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে আমি সহ্য করতে পারছি না। আমি আর তোমার মেয়েকে কোনো কিছুতে বাঁধা দিব না। তোমার মেয়কে বলো সে যেন আমার বাচ্চাকে ফিরিয়ে দেয়। মুনিয়া বেগম রাগান্বিত হয়ে স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–সকালে যখন তোকে স্রুতিদের বাসায় আসার অনুমতি দিয়ে ছিলাম। তখনই মনের মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করছিল। কেনো যে তোকে অনুমতি দিতে গেলাম। আমি যদি তোকে অনুমতি না দিতাম। তাহলে এতবড় অঘটন ঘটাতে পারতি না। মায়ের কথা কর্ণকুহরে আসতেই স্মৃতি মলিন কণ্ঠে বলল,

–আম্মু আমাকে দেখে তোমার এতটাই খারাপ মনে হয়? আমি আপুর বাচ্চাকে মারিনি। আপু কিভাবে পড়ে গেল? সেটাও আমি জানি না। কেউ তো আমাকে বিশ্বাস করো। আব্বু তুমি তো জানো। আমি আপুকে কতটা ভালোবাসি। আমি নিজের বোন হয়ে কখনো আপুর খারাপ চাইতে পারি?

সবাই যখন স্মৃতিকে দোষারোপ করায় ব্যস্ত তখনই কারো গম্ভীর কণ্ঠ স্বর কর্ণকুহরে এসে পৌঁছালো। সবার দৃষ্টি আরাভের দিকে বিদ্যমান। আরাভ বিরক্ত মাখা মুখশ্রী করে বলতে শুরু করল,

–তখন থেকে মেয়েটাকে সবাই মিলে দোষারোপ করেই যাচ্ছেন। আপনাদের মাথায় মগজ নেই! কখনো দেখেছেন এক হাতে তালি বাজে? তাহলে সবাই মিলে স্মৃতিকে একা কিভাবে দোষারোপ করতে পারেন? স্মৃতির পেছনে মুনতাসীর ভাই বসে ছিল। স্রুতি ভাবি একবার-ও মুনতাসীর ভাইয়ের নাম নিল না। মানে ভাবি এমন ভাব করছেন যেন তার বোনই তাকে ফেলে দিয়েছে। নিজের বোন হয়ে কিভাবে নিজের বোনের নামে মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিতে পারে? সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আপনার বোন কি আপনার শত্রু স্রুতি ভাবি? যেভাবে স্মৃতির পেছনে পড়েছেন। যতক্ষণ না স্মৃতিকে শাস্তি দিতে পারছেন ততক্ষণ আপনার শান্তি নেই। ব্যক্তিগত রাগ মেটাচ্ছেন নাকি ভাবি? এখানে সবার চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমার চোখ কিন্তু অন্ধ নয়। মুনতাসীর ভাই ফোনের মধ্যে মগ্ন ছিল। আপনি মুনতাসীর ভাইয়ের পায়ের সাথে বেঁধে পড়ে গিয়েছেন। নিজের ভুলটা স্মৃতির ওপরে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। সবাইকে বোঝাতে চেয়েছেন। ভুলটা আপনার দ্বারা নয়। স্মৃতির দ্বারা হয়েছে। আর স্মৃতি তোমাকে বলছি। তুমি যে বোন বোন করে এত জীবন দাও। তোমার সেই বোন তোমাকে ভালোবাসে না। তোমার যদি আত্মাসন্মান বোধ থেকে থাকে তাহলে আর কখনো আমাদের বাসায় এসো না। ভাই নিশ্চয়ই আমার কাছে এখন প্রমাণ চাইবে না৷ তুমি ভালো করেই জানো আরাভ প্রমাণ ছাড়া কখনো কথা বলে না। প্রমান দেখার হলে রুমে এসো। তোমাকে প্রমান দেখিয়ে দিব। কথা গুলো বলেই আরাভ বাসা থেকে বের হয়ে গেল। স্রুতি মাথা নত করে নিল। স্মৃতি কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here