এক_টুকরো_সুখ #পর্ব_১৫ #লেখনীতে_শুভ্রতা

0
291

#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_১৫
#লেখনীতে_শুভ্রতা

“আর বলো কেন মামা। আমার খালাতো ভাই আকাশ আছে না? তার বউ হলো তোমার বন্ধুর বড় মেয়ে। সে বলছে তোমাদের হবু বউমা নাকি আমাকে ফাঁসিয়েছে।”

দুপুরের কথা শুনে তার মামা আর সাথের লোকটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

“তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো দুপুর। বড় ভাবি হই আমি তোমার। আমাকে এভাবে আমারই বাপের বাড়িতে দাঁড়িয়ে তুমি অপমান করতে পারো না।”

বড় আপার এরকম তেজের সাথে বলা কথা গুলো শুনে দুপুর সহ সবাই একপ্রকার অবাক হয়েই আপার দিকে তাকায়। ততক্ষণে আব্বা দুপুরের মামা এবং তার সাথে থাকা অন্য লোকটাকে এনে চেয়ারে বসতে দিয়েছেন।

“আমি তোমাকে কোনো রকম অপমান করিনি ভাবি। শুধু মাত্র সত্যিটা বলেছি আমি। তুমি, তোমার মা এবং আম্মু মানে আমার খালামনি যেভাবে আয়নাকে ট্রিট করো, ওর সাথে যে বাজে ব্যবহার গুলো করো, তার কোনোটাই ওর প্রাপ্য নয়। অথচ তবু আয়ু কখনো তোমাদের কথার ওপর কিছু বলতো না। ইদানিং একটু বলা শুরু করেছে বোধহয় কিন্তু এই অভ্যাসটা ওর আরো আগে করা উচিত ছিলো। আয়ু যদি শুরু থেকেই তোমাদের অন্যায়ের জবাব দিতে শিখতো তাহলে ওকে নিজের আব্বার মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হতো না। আর না আঙ্কেলের এত চিন্তা করতে হতো ওকে নিয়ে।”

কিছু সময় থেমে দুপুর আবারও শুরু করলো। এরমধ্যে সবাই এতটাই হতোভম্ব হয়েছে যে কেউই কোনো রকম কথা বলার শক্তি জুগিয়ে উঠতে পারেনি। আম্মাও রান্নাবান্না রেখে বাইরে উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে।

“আর সর্বশেষ তোমাকে এখন যে কথা গুলো আমি বলছি, এগুলো আরো আগেই আকাশ ভাইয়ের বলা দরকার ছিলো। কিন্তু ভাই তো আমার মায়ের আঁচল ধরা। মা যা বলবে তাই। তুমিও হয়েছো খালামনির একেবারে যোগ্য চেলা। তোমাদের আর পায় কে? তবে শুনে রাখো ভাবি আজকের পরে কিন্তু আয়ুর কোনো রকম অপমান বা ওর সাথে কোনো অন্যায় আমি মেনে নেবো না যদিও বা আয়ু নিজে মেনে নেয়। আমি কিন্তু প্রতিবাদ করবোই।”

দুপুরের এরকম কথায় আপা প্রচন্ড রকম অবাক হলো। সাথে আম্মাও কারণ তিনি শুরু থেকে ছিলেন না। বাকিরা চুপচাপ। বড় আপা এবার একপ্রকার চেঁচিয়েই কথা বললো।

“কোন দেশের মহারাজ তুমি শুনি যে তুমি যেমন বলবে আয়নার সাথে আমার তেমন চলবো? কে হও তুমি আয়নার হ্যাঁ? আবার ঢং করে আয়ু বলা হচ্ছে। তা আর কি কি করেছো সবার আড়ালে? বলি দেখতে তো দুটোই যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানো না। তলে তলে এত?”

এরকম বিশ্রী কথাবার্তা একমাত্র আমার বড় আপাই হয়তো বলতে পারে। আম্মাও নির্বিকার ভঙ্গিতে শুনে চলেছেন নিজের ছোট মেয়ের সম্পর্কে বড় মেয়ের করা কুমন্তব্য। দুপুর কিছু বলার আগে আব্বাই ধমকে উঠলেন।

“ওনারা আমাদের অতিথি রুবি। ভদ্র ভাবে কথা বলো। দুপুর আমার বন্ধুর ভাগ্নে এবং ওর সাথেই আয়ুর বিয়ে হচ্ছে আজ। কথাটা আমি নিজেও আগে থেকে জানতাম না। তবে এখন যখন জেনেছি তখন ওদের অপমান হতে দিতে পারি না। যাও ঘরে গিয়ে আম্মার হাতে হাতে সাহায্য করো। রাবেয়া রুবিকে নিয়ে যাও।”

এবারও আম্মা কোনো রকম বাক্যব্যায় করলনা। যেমন চুপ করে এসেছিলো আবার তেমন চুপ করেই আপার হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে চলে গেলো। তাঁদের পেছনে ফুপুও গেলো। সবকিছু গোছগাছ করবে বোধহয়। ছেলে পক্ষের লোক এসে গেছে যে।

“তুমি কিছু মনে করো না দুপুর। জানোই তো রুবি কেমন, আয়নার সাথে কেমন ব্যবহার করে। আগেও তো এসেছো এবাড়িতে। কিছু মন করো না বাবা। ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। আর রবি, তুইও কিছু মনে করিস না বন্ধু আমার বড় মেয়ের ব্যবহারে। ও একটু এরকম উল্টোপাল্টা রে।”

“আরেহ কিসের বন্ধু? কোনো বন্ধু টন্ধু না।”

দুপুরের মামা কথাটা বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। তার দেখাদেখিই হয়তো পাশের লোকটা অর্থাৎ দুপুরের বাবাও দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাঁদের এমন ব্যবহার দেখে আব্বা এবং দুপুর দুজনেই বেশ ঘাবড়ে গেলো। আব্বা মনে করছেন এনারা হয়তো রাগ করে চলেই যাবেন। আর দুপুর ভাবছে রুবি ভাবির জন্যই এখন তার নিজের প্রিয়তমাকে পেতে পেতেও পাওয়া হলো না। এই দুইজনের চিন্তাভাবনার অবসান ঘটলো দুপুরের মামার কথায়।

“বেয়াই বল শালা। বেয়াই হই তোর এখন, তোর মেয়ের মামা শশুর আমি। সম্মান দে।”

হাসতে হাসতে কথা গুলো বলেই আব্বার পিঠে চাপড় বসিয়ে দিলেন উনি। বাকিরাও হেসে উঠলো। সেই সময় দুপুরের বাবা বললেন

“বেয়াই সাহেবকে তো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলে শালাবাবু। এটা কিন্তু মোটেও ঠিক করোনি তুমি।”

আব্বা একটু ধাতস্ত হলেন বোধহয়। আবারও সবার সাথে কথা বলায় মেতে উঠলেন। আম্মা, ফুপু আর বড় আপা খাবার-দাবার সব ঠিকঠাক করছে। আমি ঘরে মিনা আপার সামনে সঙ হয়ে বসে আছি। আর দুপুর ওদিকে উঠোনে বসে মনে মনে প্রহর গুনে চলেছে কখন আয়না তার সামনে আসবে। কখন তাঁদের বিয়েটা হয়ে আয়ু পুরোপুরি তার নিজের হয়ে যাবে!

“তুমি আগে থেকেই জানতে তাই না আপা?”

সাজানোর মধ্যে হঠাৎ আমার এরকম প্রশ্নে মিনা আপা বেশ বিরক্তই হয় বটে। চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে

“কি জানতাম আমি?”

“আব্বার পছন্দ করা ছেলে আর দুপুর দুইজন নয় একজন। আর সেই কারণেই তুমি সকাল থেকে সব কাজ এত আগ্রহ নিয়ে করছিলে এবং আমাকে একবারও দুপুরের কথা বলোওনি। কি ঠিক বলছি তো?”

মিনা আপা বোধহয় একটু চমকালো। আমতা আমতা করে বললো

“তোর কেন মনে হচ্ছে আমি জানতাম? তাছাড়া আমি কিভাবে জানবো? কে বলবে আমাকে? যত্তসব।”

“হাসিও না আপা। যেই তুমি এবাড়িতে এসেই আগে আমাকে দুপুরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, দুপুরের সাথে আমি ঠিক করছি না এটা বললে, আমাকে নিজের খুশি অর্থাৎ দুপুরকে নিয়ে ভেবে আব্বার কাছে বলতে বললে সেই তুমি হঠাৎ করেই আজ সকাল থেকে একা একা এগিয়ে গিয়ে আমাকে দেখতে আসা পাত্র পক্ষের জন্য কাজ করছো? তাঁদের খাতির যত্নের ব্যবস্থা করছো! এগুলো কি স্বাভাবিক হতে পারে?”

আপা ছেলেমানুষি রাগ দেখিয়ে বললেন

“তোর এসব ফাউ গোয়েন্দাগিরি আমার কাছে দেখাতে আসবি না একদম। ভারী আমার এলেন রে কোথাকার গোয়েন্দা!”

এখানে আর কিছু বলে যে কোনো রকম লাভ হবে না তা বেশ বুঝতে পারলাম। মিনা আপা আমার কাছে কোনোভাবেই মুখ খুলবে না। কিন্তু আপা যে জানতো এতে আর কোনো সন্দেহ রইলো না। থাক না আপা। তুমি নাইবা বললে। কিন্তু আমিও আয়না, তোমার বন্ধু রুপী ভাইয়ের বিয়ে তো আমার সাথেই হচ্ছে তাই না। ঠিক সুযোগ মতো টুটি চেপে ধরবো দেখো। খুব মজা নিয়েছিল না কাল রাতে? আমাকে খেলানোর শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।দেখতে থাকো শুধু হু।

সবার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে বেশ সাধারণ ভাবেই আমার আর দুপুরের ঘরোয়া বিয়ে সম্পন্ন হলো। দু’চারটে প্রতিবেশী আর ফুপু ছাড়া তেমন আর কোনো মানুষ ছিলো না উপস্থিত। কবুল বলার পরে কিছুক্ষণ যখন সবাই নীরব হয়ে বসে ছিলাম তখনই বাড়িতে আগমন ঘটলো নাজমুল চাচার ছেলে আর তার দলবলের। সঙ্গে নাজমুল চাচা নিজেও উপস্থিত। মেম্বার হওয়ার খাতিরে প্রায় চব্বিশ ঘন্টাই নাজমুল চাচা ও তার ছেলের সাথে গুন্ডাপান্ডা কিছু উপস্থিত থাকেই। এখনো বোধহয় সেই সব অকর্মা গুলোই আছে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের বাড়িতে তাঁদের কি কাজ তা বুঝতে পারছি না। আমার এসব ভাবনার মাঝেই এগিয়ে এলো নাজমুল চাচার গুণধর ছেলে।

“আমার মাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়ে এখন লুকিয়ে মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে চাচা? তোমার মেয়ে নাকি বহুত লেখাপড়া করবে! এত কম বয়সে বিয়ে করবে না! তাহলে এগুলো কি নাটক হচ্ছে?”

ছেলেটার এরকম চিৎকারে মন হচ্ছে যেন ওর সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এখন আমি ওকে ঠকিয়ে দুপুরকে বিয়ে করছি। অদ্ভুত সব মানুষ জন। এরমধ্যে আবার নাজমুল চাচাও এগিয়ে এলেন।

“কাজটা কিন্তু তোমরা একদমই উচিত করলে না আনাস ভাই। আমার গিন্নি কত শখ করে আমার একমাত্র ছেলের জন্য তোমার ছোট মেয়েটাকে চাইতে এলো। তোমার মেয়ে তার সাথে বেয়াদবি করে তাকে ফিরিয়ে দিলো। সে নাকি লেখাপড়া করবে। আবার এখন মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করছো? আমার ছেলের মতো ভালো ছেলে তুমি এ তল্লাটে আর দুটো দেখাতে পারবে? এ বিয়ে কিছুতেই হবে না। আর যদি হয় তবে তা আমার ছেলের সাথেই হবে।”

বোঝা যাচ্ছে এনারা জানেন না যে বিয়ে হয়ে গেছে। সাথে সাথে নাজমুল চাচার ব্যবহারে এটাও প্রমাণিত হচ্ছে যে তার ছেলে এমনি এমনি বখাটে হয়নি। বাবার সূত্রেই ছেলের এমন দশা। বাবা ছেলে যখন শুনবো বিয়ে হয়ে গেছে তখন তাঁদের মুখের কি অবস্থা হবে তা ভেবে বেজায় আনন্দ হচ্ছে আমার। হয়তো বাকিদেরও হচ্ছে। আনন্দ আরেকটু বাড়াতেই আমি নিজের মুখ খুললাম।

“আপনারা বড্ড দেরি করে ফেলেছেন চাচা। একটুখানি আগে এলেই আমি আপনার পুত্রবধূ হতে পারতাম। এখন এ জন্মের মতো আমি আপনার না হওয়া বউমা রয়ে গেলাম। দুঃখ হচ্ছে খুব চাচা। আপনার ছেলের মতো ভালো ছেলে হাতছাড়া হয়ে গেলো।”

কথা গুলো বলে আমি আফসোসের ভঙ্গিতে তাকালাম তাঁদের দিকে। আমার কথা শুনে মিনা আপা, ফুপু, দুলাভাই, দুপুর, দুপুরের মামা আর বাবাও মুখ টিপে হাসছেন। আম্মা আর বড় আপাই শুধু মুখ কালো করে আছেন।

“তোমার বাবার বয়সী আমি মেয়ে। আর তুমি আমার সাথে মস্করা করছো? ভেবেছো তোমার মিথ্যে কথা শুনে বিশ্বাস করে আমি আর আমার ছেলে চলে যাবো?”

লোকটার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখে আবারও হাসলাম আমি।

“আপনার কেন মন হচ্ছে চাচা আমি মিথ্যে বলছি? সত্যি বলছি, এই যে আমার দুলাভাই এর পাশে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখছেন, তার সাথেই আপনারা আসার কিছু মুহূর্ত পূর্বে শরীয়ত মোতাবেক আমার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। হুজুরের কাছে শুনে দেখতে পারেন।”

নাজমুল চাচার মুখ অপমানে লাল হয়ে এলো। সুযোগ থাকলে হয়তো এখানেই আমাকে পুঁতে ফেলতেন। ছেলেও কম নয়। চোখ দিয়েই আমাকে ভস্ম করে দিচ্ছে যেন। এমন মুহূর্তে আব্বা আমাকে ঘরে চলে যেতে বললেন। কিন্তু আমার ইচ্ছে হলো না এমন সময়ে চলে যেতে। তবু আব্বার কথা মানতে ধীর পায়ে ঘরের দিকে এগোলাম।

“দেখুন মেম্বার সাহেব আমার ছোট মেয়ের বিয়ে একটু আগেই আমার ছোট বেলাকার বন্ধু রবির ভাগ্নে দুপুরের সাথে হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই। এছাড়াও আপনার ছেলেকে আমার মেয়ের সঙ্গী হিসেবে আমার পছন্দ নয়। কোনো দিক দিয়েই সে আমার মেয়ের যোগ্য না। এখন এসেই যেহেতু পড়েছেন তবে আমার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে খেয়ে যান। আর সে ইচ্ছে যদি না থাকে তবে দরজা ঐদিকে, আপনারা যেতে পারেন।”

দরজার দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেই আব্বা শেষের কথাটা বললেন। নাজমুল চাচা রাগে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেলেন, সাথে তার সব চেলা গুলো। কিন্তু ছেলে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু মুহূর্ত পর আব্বার দিকে আঙ্গুল তুলে বললো

“আমাদের বাবা ছেলেকে এভাবে অপমান করে আপনি ঠিক করলেন না আনাস চাচা। এর ফল আপনার মেয়েকে ভোগ করতেই হবে। খুব দেমাগ ওর রূপের তাই না। সব ঘুচিয়ে দেবো।”

আব্বা তার কথায় কান দেননি এমন ভাব করে আম্মার সাথে খাবার দাবার নিয়ে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন। তা যেন ছেলের রাগে আগুনে ঘিয়ের মতো কাজ করলো। সে দুপুরের দিকে এগিয়ে এসে বললো

“আমার মুখের সামনে থেকে খাবার ছিনিয়ে নেওয়ার শাস্তি তুইও পাবি। আমার এলাকায় এসে আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে তুই সাপের লেজে পা দিয়েছিস। খুব আনন্দ হচ্ছে তাই না সুন্দরী বউ পেয়ে? এটাই তোর কাল হবে ছোকরা।”

দুপুর মুচকি হেসে ছেলেটার কাঁধে হাত রাখলো। তারপর বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে যেতে বললো

“অতি বাড় বেড়ো না ভায়া, ঝড়ে পরে যাবে। আয়ুকে বিয়ে করে আমি যে অত্যন্ত খুশি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তোমার এই ফাঁকা হুমকি এই দুপুরকে টলাতে পারবে না। আমাদের পেছনে লাগতে গিয়ে না তোমার নিজের নাক কাঁটা যায়! তারচেয়ে ফ্রিতে একটা উপদেশ দিই। ভালো হয়ে যাও আর আমার আয়ুর দিকে নজর দিও না। সে কোনো খাবার নয় মনে রেখো। আর কি বলতো ভায়া, যেটা আমার তাতে আবার আমি কারো নজর সহ্য করতে পারি না। চোখ সামনে রেখো হ্যাঁ? নইলে বলা তো যায় না কখন আবার তা আমার হাতে চলে আসে!”

কথা বলতে বলতে ছেলেটার কাঁধে বেশ জোরেই চেপে ধরলো দুপুর। সাবধান করার প্রয়াস বোধহয়। ছেলেটা ঝাড়া মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো। তবে তার চাহুনিতে বোঝা গেলো সে দুপুরের কথা খুব একটা গায়ে মাখেনি। কিছু একটা বোধহয় করবেই।

আম্মা আর ফুপু বারান্দাতেই সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আব্বা, দুলাভাই, আপা, দুপুরের বাবা, মামা সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মিনা আপাই শুধু বসে আছে। দুপুর সেখানে খেতে না বসে মিনা আপাকে কিছু একটা ইশারা করে চলে গেলো। মিনা আপা হাসতে হাসতে নিজের খাওয়া শুরু করে দিলেন। দুপুরের চলে যাওয়া আর কেউ খেয়াল করলো না আলাদা করে।

মেকাপের নানা নামের জিনিস পত্র মুখের মধ্যে মেখে মেয়েরা সাজগোজ করে। এটা নাকি তাঁদের রূপচর্চা। সবগুলোর নামও জানা নেই আমার। অথচ সেসব দিয়েই মিনা আপা আমাকে সঙ সাজিয়েছে। সাথে আবার এরকম ভারী শাড়ি। উফ কি অসহ্য। সব কিছু একটা সীমা থাকে ঠিকই কিন্তুমেয়েদের সাজগোজের ভাই কোনো সীমা থাকে না। তা আজ মিনা আপার কাজ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।

ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সব পরিষ্কার করতে করতে নানান কথা মনে মনে আওড়ে চলেছি। এরকম সময় দরজার শব্দ কানে এলো। কেউ ঢুকেছে ঘরে। মিনা আপা হবে বোধহয়। নিচের দিকে চোখ রেখে দুল খুলছিলাম। আপা এসে গলা থেকে অলংকারটা খুলতে শুরু করলো। কিন্তু স্পর্শ গুলো এমন লাগছে কেন? কেমন অচেনা অচেনা ভাব! তড়িৎ গতিতে আয়নার দিকে তাকালাম। একিই? এ ত মিনা আপা না। এ যে দুপুর! ছিটকে সরে গেলাম তার থেকে। ফলে গলায় খানিক ব্যথাও পেলাম। কিন্তু তা আমলে নেওয়ার সময় এখন নয়। এখন অন্য হিসাব মেটাতে হবে।

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here