প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১৭

0
657

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৭

ইশান বাড়িতে এসে নিজের ঘরে ডুকে বেডে চিৎ হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়ে আর নজর তার ছাদের দেয়ালে। বাড়িতে আসতেই মায়ের অনেক প্রশ্নের সম্মুখে পড়েছে সে। তখন শুধু একটা কথাই বলেছে মাকে “ভালো লাগছে না তাই চলে এসেছে বিয়ে বাড়ি থেকে”।

ইশান জোরে তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে ওঠে কয়েক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা।

ইশান বিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ফোনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কল আসার জন্য। বিয়ে বাড়িতে চিৎকার চেচামেচির হওয়ার কারনে ঠিক মতো কথা বুঝতে পারছিলো না তাই বাধ্য হয়ে বের হতে হয়েছে। যখন ফোনে কথা বলছিলো তখনেই বখাটে ছেলে গুলা ইশানের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।

–আরে ওই দেখ আমাদের হিরোকে।

–তা হিরো এখানে তার হিরোইন কোথায়? কেউ একটু হিরোকে বল আমাদের কোলেও একটু তার হিরোইনকে দিতে। আমরা তার হিরোইনকে কোলে তোলে স্বযত্নে একটু ফিটার খাইয়ে দেই কি বলিস তরা।

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে সবাই।

আর এই দিকে রাগে ইশানের নাকের পাঁটা ফুলে উঠছে। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে। চোয়াল শক্ত করে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কল কেটে দিয়ে ফোনটা প্যান্টের পকেটে ডুকিয়ে ছেলে গুলার সমানে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে।

–কি বলছিলি আমার বল তো!

–আরে আরে দেখ দেখ হিরোর দেখি রাগ উঠে গেছে তার হিরোইনকে নিয়ে কথা বলার জন্য।

ইশান বিরক্তিকর ভাব নিয়ে মুখ দিয়ে চ উচ্চারন করে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আশেপাশে মাথাটা নাড়িয়ে বাকাঁ হাসি দেয়। ছেলে গুলা একটু আবাক হয় ইশানের এমন কান্ডে। ইশান আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজার চেষ্টা করে। অদুরে চোখ যায় একটা চেলাকাঠ পড়ে আছে। পুনরায় ছেলেগুলার দিকে রক্তচুক্ষু দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।

–এখানে দাঁড়া কেউ এক পাও নড়ঁবি না।

ইশানের এমন ভয়ংকর রক্তচুক্ষু চাওনি দেখে ছেলেগুলা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ছেলেগুলা নিতান্তই ইশানের থেকে হ্যাংলা পাতলা, বয়সেও ছোট হবে, লম্বা, চাওড়া সব দিক থেকেই ইশানের থেকে পিছিয়ে। ইশান চেলাকাঠটা হাতে তুলে নেয়। তা দেখে চারটা ছেলের মাঝে থেকে দুটো ছেলে আলগোছা সড়ে যায়। কিন্তু দুটো ছেলে রয়ে যায়। এমন উঠতি বয়সে ছেলেদের শরীরের রক্ত গরম একটু বেশিই থাকে তাই নিজের প্রতি পূর্ন বিশ্বাস ছিলো ওদেকে ইশান কিছুই করতে পারবে না। ইশান চেলাকাঠটা হাতে করে নিয়ে এসে ছেলে দুটোর সমানে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলে।

–একটু আগে কি কি বলছিলি এবার বল?

–বললে কি করবি তুই?

–তুই বলে তো দেখ কি করি?

–বলেছি তর হিরোইনকে আমাদের কোলে তুলে…..

আর কিছু বলার আগেই বলিষ্ঠ পুরুষালী হাত দিয়ে ইশান নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় ছেলেটার গালে। ছেলেটা নিজের ঠাল সামলাতে না পেরে মুখ তুবড়ে পড়ে যায় মাটিতে। পাশের ছেলেটা কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ইশান ওই ছেলেটার গালে চড় বসিয়ে দেয়। ছেলে দুটোকে পুনরায় কিছু বলার বা করার সুযোগ না দিয়ে চেলাকাঠ দিয়ে পিটাতে শুরু করে। পিটানোর সময় চেলাকাঠের আগটা লেগে ইশানের হাতটা কিছুটা ছিলে যায়। তাতে ইশানের কোনো হেলদোল নেই সে আছে নিজের কাজে কি করে ছেলে গুলাকে শায়েস্তা করা যায়।

ইশান চোখ মেলে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়। লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে তাহলে কিছুটা রিলেক্স লাগবে।

আধ ঘন্টা পর বের হয় ইশান শাওয়ার নিয়ে। কোমড়ে টাওয়াল পেচানো, গলায় টাওয়াল ঝুলছে সেই টাওয়াল দিয়ে মাথার পিছনের সাইড মুছতে মুছতে এসে দাঁড়ায় আয়নার সামনে। আয়নাতে তাকাতেই নজর যায় সোফার উপরে রাখা তার পরিহিত ড্রেসের দিকে। ইশান সেখানে গিয়ে প্যান্ট হাত নিয়ে তার পকেট থেকে তীরের বড় বড় কানের দুল গুলা বের করে। ইশান ভেবে পাচ্ছে এত ভারি কানের দুল মেয়েটা পড়ে কি করে। ইশান মুচঁকি হেসে নিজের ডান গালে হাত রেখে। তীরের ছোট হাতটা দিয়ে প্রথম ছোঁয়া পেয়েছে ইশান ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এর মাঝে বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে বউ নিয়ে চলে এসেছে ইহান। ইশান কার্ভাড খুলে আপতত কার্ভাডের এক সাইডে কানের দুল জোড়া রেখে দেয়। কিন্তু কে জানতো এই কানের দুল জোড়ার জন্য ইশানকে প্রশ্নের সম্মূখীন পড়তে হবে।

_______

আগের জীবন শুরু সকলের। সময় অতিবাহিত কারো জন্য সময় অপেক্ষা করে না সময় তার নিজের গতিতে চলে। ইহানের বিয়ের পর কেটে গেছে এক সপ্তাহ চোখের পলকেই। কিন্তু এই এক সপ্তাহ’য় তীর না পেরেছে পড়াশোনায় মনযোগ দিতে, না পেরেছে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে আর না পেরেছে ঘুমাতে। তীরের সব কিছু আলোমেলো করে দিলো ইহানের বিয়ের দিনে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। মস্তিষ্ক থেকে কিছুতে ডিলেট করতে পারছে রুদ্ধশ্বাস সেই ঘটনাটা। বার বার এই ছোট মাথায় ইশান ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এই এক সপ্তাহর মাঝে ইশানকে তীর দু বার দেখেছিলো এর পর আর দেখে নি। ইশা বলেছিলো ইশানকে বাধ্য করবে মুখে ভালোবাসি কথাটা বলাতে কিন্তু না ইশার এখন কোনো পাত্তা নেই সেই আছে তার প্রেমে মজে।

তীর পড়ার টেবিলে বসে কলম কামড়াছিলো নজর তার বইয়ের দিকেই কিন্তু কোনো পড়াই সে পড়ছে না। তার মাথায় তো ঘুরছে ইশান নামক পোকটা। যে পোকাটাকে শত চেষ্টা করেও বের করতে পারছে না। মাথায় সারাক্ষন ঘিলবিল করছে। তীর হাত থাকা কলমটা রাগে টেবিলে উপর রাখে।

–নাহ এভাবে থাকতে পারবো না আমাকে কিছু একটা করতে হবে কিন্তু করবো’টা কি? ওই হিটলার ব্যাটা আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটাও তো বুঝতে পারছি না।

তীর পড়ার টেবিল থেকে উঠে দাড়িয়ে সারা রুম জুরে পায়চারি করা শুরু করে দেয় আর কিছু একটা বিরবির করে। হঠাৎ করেই কিছু একটা ভেবে ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে।

বাড়ির সদর দরজা খুলে বাড়ির বাইরে যেতে নিবে তখনেই আয়েশা সুলতানা এসে বলে।

–একি তীর এমন ভরসন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছিস তুই?

তীর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

–মা ইশুর কাছে যাচ্ছি আমার কিছু নোট লাগবে এখনেই।

–ও আচ্ছা ঠিক আছে যা। আমি কি এগিয়ে দিবো তকে।

–ঠিক আছে চলো।

আয়েশা সুলতানা তীরকে ফরাজী ভিলাতে পৌঁছে দিয়ে চলে আসে। তীর কলিং বেল বাজাতেই কেয়া এসে দরজা খুলে দেয়। কেয়াকে দেখে তীর মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে।

–কেমন আছো ভাবি?

–ভালো! তুমি?

তীর ভেতরে ডুকতে ডুকতে বলে।

–আর ভালো কারো বিরহে ভালো থাকতে পারছি কই?

কেয়া হেসে উত্তর দেত।

–সেটা কে গো যার বিরহে তুমি ভালো থাকতে পারছো না?

–আছে একজন কিন্তু এখন বলা যাবে সিক্রেট বুঝলে ভাবি।

এমন সময় তীরের চোখ যায় সিঁড়ির প্রথম মাথায় ইশান দাঁড়িয়ে আছে হাতে ফাইল টাইল নিয়ে আর তীরের দিকে কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইশানকে দেখেই তীর কেয়াকে বলে।

–ভাবি ইশু কোথায়?

–ওতো ওর ঘরেই আছে যাও তুমি।

–হুম।

তীর শুকনো একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা পায়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু ইশান টাই দাঁড়িয়ে আছে। এই লোক সড়ঁছে না কেন দেখতে পারছে তীর উপরে উঠবে তারপরও এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? তীর কাপাকাপা গলায় বলে।

–ইশান ভাইয়া একটু সাইড দিবেন উপরে যাবো।

ইশান তীরের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়। তখন ইশান তীরের কথাটা শুনে ফেলেছে এখন এটাই চিন্তা করছে কার বিরহে মেয়েটা ভালো নেই। কেয়া ইশানকে দেখে বলে।

–ইশান তুমি কি ডিনার করে আসবে বাইরে থেকে।

ভাবির কন্ঠ শুনে ইশান নিজের জায়গায় থেকে সঁড়ে আসতে তীর দৌঁড়ে উপরে চলে যায়। ইশানের তীক্ষ্ম চাওনি দেখে মনে হচ্ছিলো হার্টটা এক্ষুনি বের হয়ে যাবে ওর। এভাবে কেন তাকায় লোকটা যে তাকানোটা ছোট হৃদয়ের তীর সহ্য করতে পারে না। ইশান ভাবির উদ্দেশ্যে বলে।

–হুম ভাবি বাইরে থেকে ডিনার করে আসবো। একটা মিটিং আছে নয়টা তাই ওখান থেকে ডিনার করে ফিরবো।

–আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যাও।

–হুম।

কেয়া যেতেই ইশান দু’তলার দিকে তাকায় তাকাতেই তীরকে দেখতে পায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান তাকাতেই তীর সড়ে যায়। ইশান মুচকি হেসে নিজের কাজে বেরিয়ে পড়ে।

তীর নিজের বুক চেপে ধরে ইদানিং এই দুষ্টু হার্টটা একটু বেশি লাফালাফি করছে। আর সেই লাফালাফিটা শুরু হয় ইশানের সামনে পড়লে। ইশানের রুম পেরিয়ে ইশার রুমে যেতে হয়। তীর যেই ইশানের রুম পাড় হতে যাবে তখনেই তীরের পা দুটো থেমে যায়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে চারিপাশটা ভালো করে দেখে আস্তে আস্তে করে ইশানের ঘরে ডুকে পড়ে।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here