প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_১৮

0
660

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১৮

কাঁপাকাঁপা ছোট হৃদয়টা নিয়ে তীর ইশানের ঘরে পা রাখে। ঊদ্দেশ্য ইশানের ঘরে তার কানের দুলটা আছে কিনা তা খুজে বের করা। যদি কানের দুলটা ইশানের ঘরে থাকে তাহলে বুঝে নিবে যে ইশানেই ওই‌ লোকটা যে তাকে ভালোবাসে আর না থাকলে কি আর করার কিচ্ছু করার নেই। তীর একটা ঢোক গিলে ইশানের ঘরের চারিপাশটা ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেয় কোথায় থেকে শুরু করবে কান দুলটা খোজা। ভয়ও হচ্ছে না জানি আবার কে কখন চলে আসে এই ঘরে। তবে সচারচর এই ঘরে কেউ আসে না তাই একটু রিলেক্স আছে তীর কিন্তু তার পরও ভয় লাগছে। ইশানকে নিয়ে কোনো ভয় নেই না কারন ইশান চলে গেছে কখন আসবে তারও ঠিক নেই।

তীর ইশানের সারা ঘর তন্নতন্ন করে খুজেছে কিন্তু না কোথায় কানের দুল জোড়া পেলো না। বুকসেলফ আর ওয়াড্রোব থেকে শুরু করে ঘরের সব জিনিস খুজা শেষ এখন শুধু বাকি রইলো ইশানের আলমারিটা চেক করা। তীরের ভয় হচ্ছে আলমারিতেও যদি না থাকে দুলটা তাহলে। তীর মনে প্রানে চায় যাতে আলমারির ভেতরে দুলটা থাকুক। ঠিক তাই হলো আলমারি খোলে কিছুক্ষন খুজাখুজির পরেই দেখে এক কোনে দুল জোড়া পড়ে আছে।

তীর কাঁপাকাঁপা হাতে দুল জোড়া হাতে তুলে দেয়। তারমানে ওই দিনের লোকটা ইশানেই ছিলো। তীরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। চোখ মেলে তাকালো কানের দুল গুলার দিকে বুকের ভেতরের অদ্ভুদ একটা ভালো লাগার টেউ খেলে যাচ্ছে। হঠাৎ চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে তীরের সেটা আনন্দে নাকি কষ্টে বুঝতে পারছে না। তবে এটা সিউর হয়ে গেলো ইশান তাকে ভালোবাসে কিন্তু স্বীকার করে না কেন?

তীরের ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠে সারা শরীর। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ঢোক গিলে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে তীরের কে এসেছে এখন এই ঘরে? যদি সে তাকে প্রশ্ন করে ইশানের ঘরে কেন এসেছো তাহলে কি উত্তর দিবে তীর তাকে? ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে সামনের দিকে ফিরে তীর। কিন্তু মাথা উপরে তুলে সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।

–তুই এখানে আমার ঘরে কি করছিস?

কারো কন্ঠ শুনে তীর সাথে সাথে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে ইশান স্বয়ং ইশান দাঁড়িয়ে আছে তার চোখের সামনে। যাকে মোটেও সে আশা করে নি এখানে।

ইশান ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে। একটা ফাইল ফেলে গিয়েছিলো ইশান আর সেটাই নিতে এসেছে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে এসে। কিন্তু এসে যে এমন একটা পরিস্থিতে পরবে কল্পনা করতে পারে নি।

ইশান আপতত তীরকে এই সময় তার ঘরে একদমেই আশা করে নাই। একবার তীরের হাতের দিকে তো আরেকবার তীরের মুখের দিকে তাকায় ইশান। অজানা একটা ভয় কাজ করছে ইশানের মনে তাহলে কি মেয়েটা বুঝে ফেললো সব কিছু। মেয়েটা যদি তাকে এখন প্রশ্ন করে তাহলে কি উত্তর দিবে এখন ইশান কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সারা মুখে ফুটে উঠছে চিন্তার বলি রেখা। জিভ দিয়ে ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয় ইশান।

তীরের কেন জানি ইশানকে দেখা মাএই ভয়টা মিলিয়ে গেল। মনের ভেতরে সকল প্রশ্ন এসে ভিড় জমিয়েছে যে প্রশ্ন গুলা এখন ইশান না করলেই নয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে ইশানের চোখের দিকে তাকিয়ে কানের দুল জোড়া ইশানের সামনে ধরে প্রশ্ন করে।

–এগুলা কি?

ইশান যে ভয়টা পেয়েছে সেটাই হলো এখন কি উত্তর দিবে। ফেঁসে গেছে ইশান তীরের জালে ফেঁসে গেছে খুব বাজে ভাবে ফেঁসে গেছে। এখন এই জাল থেকে যেই করেই হোক তাকে মুক্ত হতে হবে। তাই নিজের সত্ত্বায় ফিরে এসে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে বলে।

–মেয়েদের কানের দুল।

–সেটা তো‌ আমি দেখতে পারছি।

–তাহলে আমাকে প্রশ্ন করছিস কেন তুই? আর তুই আমার রুমে কি করছিস?

–ভ্যাগিস আপনার রুমে এসেছিলাম না হলে তো জানতেই পারতাম না।

–কি জানতে পারতি না।

–এই যে আপনার রুমে আপনার আলমারিতে আমার কানের দুল।

–তুই আমার আলমারিতে হাত দিয়েছিস কেন?

–একশো বার হাত দিবো হাজার বার হাত দিবো।

ইশান একটু জোরেই বলে উঠে।

–তীররর!

–একদম চিৎকার করবেন না। কি ভেবেছেন আপনি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না আমি কিচ্ছু না। ওই দিন আপনি সেই অচেনা লোকটা ছিলেন তাই না, যে কিনা আমার কান থেকে এই দুল গুলা খুলে নতুন দুল পরিয়ে দিয়েছিলেন।

সব শেষ সবটা ধরে ফেলেছে তীর এবার কি হবে। ইশানের বুকের ধুকপুকানিটা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট অ্যাটাক করে হয়ে যাবে। হাটু ভেঙ্গে আসছে ইশানের, মনে হচ্ছে এক্ষুনি হাটু মোড়ে নিচে বসে পড়বে। গম্ভীর, বদমেজাজী, রগচটা ছেলেটা যেন এখন সামনে দাঁড়ানো পিচ্চি মেয়েটার কাছে এখন কিচ্ছু না। নিজেকে এতটা অসহায় ইশানের কোনো দিন লাগে নি আজকে যতটা লাগছে। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে।

–কার কথা বলছিস তুই হুম? আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর আমিই বা এমন করতে যাবো কেন তর সাথে? আমার কি কোনো কাজ নেই নাকি।

তীর নিঃশব্দে হাসে।

–অস্বীকার করছেন আপনি বলতে চাইছেন ওই লোকটা আপনি ছিলেন না।

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে কথা বলতে পারছে না তাই দ্রুত পায়ে টেবিলের কাছে গিয়ে ফাইলটা তুলে নিয়ে জবাব দেয়।

–নাহ আমি ছিলাম না।

তীরের গলা ধরে আসছে ইশান কেন এভাবে অস্বীকার করছে সবটা বুঝতে পারছে না। তীর ধরা গলায় বলে।

–সত্যিই আপনি ছিলেন না।

ইশান এবার জোরেই বলে।

–আর কত বার বলবো তকে ওই অচেনা লোক আমি ছিলাম না।

ইশানের এমন চিৎকার শুনে তীর কিছুটা কেঁপে উঠে। ইশান অন্য দিকে ফিরে আবারও বলে।

–আমার ঘর থেকে বের হো তীর।

তীর ছলছল চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে।

–আপনি কি আমায় ভালোবাসেন ইশান ভাইয়া।

থমকে যায় ইশান। কেঁপে উঠে হাতে ধরে রাখা লাল ফাইলটা। এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে এখন তীরকে। তবে ইশানের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে–

“হে ভালোবাসি তকে আমি খুব ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তকে আমি।”

কিন্তু ইশান নিরুপায় এখন ও এমন কথা বলতে পারবে না। ইশান চায় না আবেগের বশে কিছু ভুল করে ফেলতে। তীর যতই‌ নিজের কাছে থাকবে ততই নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ভুল কিছু করে বসবে। আপতত সেটা ইশান এখন চায় না। তীর যে এখনোও ছোট এখনোও আঠারো বছর পূর্ন হয় নি। মেয়েটার আঠারো বছর পূর্ন হতে যে আরও কিছু দিন বাকি। এর আগেই‌ ইশান চায় না ওদের মাঝে প্রনয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হোক। তীরকে সম্পূর্ণ বৈধ ভাবে নিজের করে‌ পেতে চায় ইশান অবৈধ ভাবে নয়। তাই নিজের সব আবেগ ভালোবাসা গুলা ধামা চাপা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ইশান‌ কোনো জবাব দিচ্ছে না দেখে তীর ভাঙ্গা গলায় আবারও বলে।

–কি হলো ব.. ব বলুন?

ইশান নিজের ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে আছে। তীরের ভাঙ্গা গলার স্বর শুনে ইশান ফিরে তাকায় তীরের দিকে। মেয়েটা অসহায় চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর পাওয়ার আশায়। ইশান ঢোক গিলে নেয় সাথে সাথে। মেয়েটা এভাবে চোখের জল ফেলছে কেন উত্তরটা শুনার জন্য তবে কি ও ইশানকে ভালোবাসে। এই‌ কথাটা ভাবতেই ইশানের শিরদাড়া দিয়ে স্রোত বয়ে যায়।

ইশানের হাত দুটো নিশপিশ করছে তীরের চোখের কোণে জমে থাকা নোনা জলটা মুজে দিতে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়। চাইলেও পারছে না সামনে থাকা ভালোবাসার মানুষটার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরতে। একবার মাথাটা বুকে গেঁথে ধরলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।

ইশানের কি হলো কে জানে হঠাৎ করেই এক পা এক পা করে তীরের দিকে এগিয়ে যায়। ইশানের এগুনো দেখে তীরও ঠাই দাঁড়িয়ে আছে এক পাও নড়ছে না। আসলে চাইলেও নড়তে পারছে না একটা অদৃশ্য শক্তি যেন তীরের সব শক্তি লোপে নিয়েছে। তবে বুকের মাঝে ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ।‌ যে শব্দটা ইশান আরেকটু কাছে আসলেই শুনতে পাবে।

ইশান তীরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় হাত থাকা ফাইলটা আনমনেই ফ্লোরে পড়ে যায়। ইশান কাছে এসে দাঁড়াতেই তীরের নাকে সেই দিনের স্মেলটা এসে বারি খায়। এবার আরও নিশ্চিত হয়ে গেলো তীর ওই দিনের লোকটা ইশানেই ছিলো ইশান ছাড়া আর কেউ নয়।

ইশান নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দেয় তীরের মুখের দিকে তা দেখে তীর চোখ জোড়া আপনাআপনি বন্ধ করে নেয়। ইশান তীরের বা চোখের জলটা মুজে দেয় অতি সাবধানে। ইশানের ছোঁয়া পেয়ে তীরের ছোট্ট দেহটা কেঁপে উঠে, সারা শরীরের অজানা শিহরন বয়ে যাচ্ছে, তল পেটটা কেমন অসহনীয়ভাবে মুচর দিয়ে উঠছে বার বার। সারা শরীরের লোমকূপ দাড়িয়ে গেছে। এই সব অনুভুতিরা তীরের কাছে একান্তই নতুন অনুভুতি যেগুলার সাথে আজকে এক এক করে পরিচিত হচ্ছে। পরপর ডান চোখের জলটাও মুজে দেয় ইশান। এবার তীর চোখ মেলে তাকায় ইশানের দিকে, তাকিয়ে চোখের পাতা জোড়া দু তিন বার ঝাপ্টায়। ইশান সম্মোহনী চোখে তাকিয়ে আছে তীরের টগর টগর চোখের দিকে। কান্না করার ফলে গোলাপি রাঙা ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাপছে তীরের। গাল দুটো লাল হয়ে আছে টমেটোর মতো। তীরের এমন আবেদনময়ী চেহারা দেখে ইশান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে না চাওয়া শর্তেও। ইশানের মনের ভেতরের বিষাক্ত ইচ্ছেরা জেগে উঠছে যে ইচ্ছে গুলা এত বছর জমা রেখে দিয়েছিলো মনের কোঁটায়। মেয়েটা তার কাছ থেকে সড়ে যাচ্ছে না কেন ইশান বুঝতে পারছে না। সে না হয় তগড়া জোয়ান কোনো মেয়ে তার সন্নিদ্ধে আসে তাহলে বিষাক্ত ইচ্ছেরা সজাগ হয়ে যাবেই আর সেই মেয়েটা যদি হয় তার ভালোবাসার মানুষ তাহলে যেন মনের ভেতরের বেসামাল অনুভুতিরা তেড়ে আসে।

#চলবে________

গল্প ভালো না লাগলে ইগনোর করেন প্লিজ আর যারা গল্প পড়েন তারা একটু দয়া করে মায়া করে রেসপন্স করিবেন কেমন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here