#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১২)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
– ‘কার বিয়ে!’
প্রিয়া একরাশ বিস্ময় নিয়ে কথাটা বলল। হামিদ চৌধুরী উপস্থিতি সকলের দিকে একনজর তাকিয়ে বললেন,
– ‘রুহির বিয়ে।’
রুহির মাথায় তো আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। ওর বিয়ে অথচ ওহ নিজেই জানে না!
– ‘বড়ো আব্বু এইসব কি বলছো? আমার বিয়ে মানে কি!!’
– ‘সব জানতে পারবে কিন্তু তার আগে বিয়েটা হয়ে যাক।’
– ‘না বড়ো আব্বু আগে আমাকে সবটা বলো এইসবের মানে কি!!’
– ‘আমি বলছি মানে কি।’ (রুহির বাবা)
রুহি ওর বাবার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
– ‘রুহি তোমার বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক করছিল। আমরা চেয়েছিলাম তোমাদের পড়াশোনা শেষ হবার পর বিয়ে দিতে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্তটা নিতে হয়েছে। প্লিজ সিনক্রিয়েট না করে দাদার কথাটা মেনে নাও।’
– ‘এইখানে মানার কথা আসছে কোথা থেকে বাবা! আমার বিয়ে ঠিক করা ছিল অথচ আমি নিজেই জানি না, আর হঠাৎ করে কি এমন হলো যে যাতে তোমরা আমার বিয়ে দিতে চাইছো?’
– ‘কারন তুমি আমাদের কাছে আমানত স্বরূপ। আমরা কেউই চাই না সেই আমানতে কারোর নজর পড়ুক তাই এই সিদ্ধান্ত।’ (বাবা)
রুহি কথার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। একটার পর একটা ধাক্কা খেতে খেতে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। তখনি পাশ থেকে ওর মামা বলে উঠল,
– ‘আপনারা এইসব কি শুরু করেছেন? একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে আপনারা জোর করে বিয়ে দিতে পারেন না।’
– ‘জোর করে তো নয়। রুহির মতামত নিয়েই এই বিয়েটা আমরা দিতে চাই।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘তাই নাকি কিন্তু সেটার তো কিছুই দেখতে পারছি না।তা পাত্র কে?’
– ‘পাত্র আমাদের খুব চেনা কেউ।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘কে?’
– ‘জয়।’ (রুহির বাবা)
রুহি সহ সকলের মাথাতে আকাশ ভেঙে পড়ল। রুহির মামা রাগে ফুঁসে উঠে, হামিদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললেন,
– ‘আপনি কিন্তু এইটা ঠিক করলেন না। আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন? ওই ছেলের মাঝে কি এমন আছে যা আমার ছেলের মাঝে নেই!’
হামিদ চৌধুরী হাসলেন। যেটা রুহির মামার রাগকে আরো দ্বিগুন করে তুলল। ওনার রাগে ঘি ঢালার জন্য হামিদ চৌধুরী বলে উঠলেন,
– ‘যে ছেলে বাবার অনুমতি ছাড়া এক পাও হাঁটতে পারে না সে কিভাবে অন্য একটা মেয়ের দায়িত্ব নেবে!’
– ‘আপনি কিন্তু আমাকে আর আমার ছেলেকে অপমান করছেন।’
– ‘আরে আপনার মান অপমান বোধ আছে?’
রুহির মামা অধৈর্য হয়ে উঠে বোনের উদ্দেশ্যে বললেন,
– ‘এইসব কি হচ্ছে, তোর ভাসুর আমাকে অপমান করছে আর তুই সেইটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস?’
– ‘ওহ কি বলবে, আপনি কি কারোর কথা বলার মুখ রেখছেন?’ (হামিদ চৌধুরী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল)
– ‘কি এমন করেছি আমি, যার জন্য আপনি আমার সাথে এইভাবে কথা বলছেন?’
– ‘কি করেননি সেটা বলুন। রুহি আপনার কাছে থেকে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল কিন্তু আপনি ওকে নিজের কাছে রাখেননি।’
সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। রুহি ওর মামার কাছে থাকত না মানে? পরিস্থিতি খারাপ দেখে রুহি বলল,
– ‘বড়ো আব্বু এইসব টপিক বাদ দাও না। আমার ভালো লাগছে না।’
– ‘না রুহি আজকে সবার সবটা জানা প্রয়োজন। প্রথম ১টা মাস রুহি ওর মামার কাছে থাকলেও একটা মাস পর ওর স্থান হয় গার্লস হোস্টেলে। কি ঠিক বললাম তো।’
রুহির মামা কথা বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না। রুহি পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পেরে উঠছে না। রুহির মাদাদার কান্ডে লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন। ছিঃ ওর দাদা এতটা নীচ, নিজের ভাগ্নীকে নিজের বাড়িতে না রেখে গার্লস হোস্টেলে রেখেছিল!
– ‘বড়ো আব্বু প্লিজ এইসব কথা বাদ দাও। তিথি আপার বিয়েটা আগে হোক তারপর না হয় এইসব কথা হবে।’
– ‘আজকে বিয়ে হলে এইখানে দুটো বিয়ে হবে, নাহলে কোনো বিয়ে হবে না।’ (হামিদ চৌধুরী)
– ‘বড়ো আব্বু!’
– ‘রুহু মা আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি এইবার তোমার সিদ্ধান্ত জানানোর পালা।’
রুহি এক পা পিছিয়ে গেল। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, তিথি ফ্যাকাশ মুখ নিয়ে বসে আছে, সে ভালোই করেই জানে ওর বাবাকে এক কথার মানুষ যা বলেন তাই করেন। রুহির সকলের মুখে দিকে তাকাল, সকলের মুখটা মলিন হয়ে আছে। রুহির সবকিছু গুলিয়ে যেতে লাগল, কি করবে কিছুই বুঝতে পারল না।
এতক্ষন এতকিছু হয়ে গেছে সবকিছুর মাঝে জয় উপস্থিত ছিল না। খাবার দিকটা সামলাচ্ছিল সোহান ডাকতে যেতে তবে আসলো। আসতে আসতে সবটা জেনেও নিয়েছে।
জয় রুহির মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,
— ‘এমনিতেই রুহি আমার উপরে রেগে আছি, এই ঘটনাটা আবার রাগটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।’
হামিদ চৌধুরী জয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ‘এই তো জয় চলে এসেছে। রুহি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’
রুহি রাগে কটমট করে জয়ের দিকে তাকায়। সমস্ত রাগটা জয়ের উপরে গিয়ে পড়ল, ওর জন্যই সবকিছু হচ্ছে।
– ‘আঙ্কেল আমার কথাটা শুনুন। এইসবের কোনো দরকার নেই।’
– ‘না জয় এইসবের দরকার আছে। তোমাদের বিয়ে সেই ছোটবেলা থেকে ঠিক করা আছে সেটা নিশ্চয় তোমার অজানা নয়।’
– ‘কিন্তু আঙ্কেল আপনি তো সবটাই জানেন বলুন। এখন বিয়েটা ঠিক হবে না।’
– ‘ঠিক ভুল বিচার করেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।রুহি তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’
রুহি নিজের মা বাবার দিকে তাকাল, ওনারা সকলেই হ্যাঁ বলার কথা বলছেন। রুহি চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
– ‘আমি রাজি।’
সকলে চেঁচিয়ে উঠল। শুধুমাত্র প্রিয়া আর রুহির মামা ছাড়া। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে তারই কাজিনের সাথে বিয়ে হতে দেখে বুকের মাঝে দহনের সৃষ্টি হচ্ছে। রুহির উপর বড্ড রাগ হচ্ছে তারমানে ওহ এতদিন মিথ্যা কথা বলেছে, ওদের মাঝে শুধু বন্ধুত্ব নয় ভালোবাসাও ছিল!!
অন্যদিকে রুহির মামা নিজের চোখে নিজের হার মেনে নিতে পারলেন না। উনি অনেক বড়ো একটা স্বার্থে রুহির সাথে অর্নবের বিয়ের কথা বলেছিলেন নাহলে যে মেয়েকে নিজের বাড়িতে রাখেননি সেই মেয়েকে নিজের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাবে বিষয়টা একটু অদ্ভুত না। কিন্তু কি এমন কারন যার জন্য রুহির মামা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
দুজোড়া বিয়ে পড়ানো শুরু হলো, রুহির মাঝে কোনো অনুভূতি নেই। এখন অনেকগুলো প্রশ্ন মাদার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে সেইগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না।
কথা সাহেব রুহিকে কবুল বলার জন্য বলে চলেছে কিন্তু ওর সেইদিকে খেয়াল নেই, একমনে কিসব ভেবে চলেছে। জয় রুহির হাতে হাত রাখতেই ধরফরিয়ে উঠে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে আ’হত হলো। কাজি সাহেব কবুল বলার জন্য তাড়া দিল, রুহি সকলের দিকে একনজর তাকিয়ে কবুল বলে দিল। অবশেষে দুইজোড়া কপোত কপোতির বিয়ে সম্পন্ন হলো।
জয় রুহির দিকে তাকাল, মেয়েটাকে কি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আগের থেকে আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে, জয় রুহির হাতে হাত দিয়েই ছিল। হাতটা আর একটু শক্ত করে ধরে মনে মনে বলল,
– ‘আজকে থেকে তোর ভালো থাকার দায়িত্ব নিলাম। আমি সজ্ঞানে এমন কিছুই করব না যাতে তুই কষ্ট পাস। আর পুরানো মান অভিমান সব ভাঙিয়ে দেব কথা দিলাম।’
জয় কি পারবে রুহির মনের মাঝে থাকা সমস্ত মান অভিমান দূর করে দিতে!!
#চলবে…