#এক_টুকরো_সুখ
#পর্ব_১৪
#লেখনীতে_শুভ্রতা
“তোমার শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়েছে তো সুন্দরী?”
একেই ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন না আসায় সারাদিন এই নিয়ে একের পর একজনের কাছে এটা সেটা শুনেছি। তারপর যখন রাতে একটু শান্তিতে ঘুমুতে এলাম, তখনও এই দুপুর নামক আপদ সেসব মনে করিয়ে দিচ্ছে! নাহ আর তো সহ্য করা যাবে না। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম আমি।
“হ্যাঁ হয়েছে বৈ কি। শাদী, মরণ, শ্রাদ্ধ সব হয়েছে। কেন আপনি জানেন না?”
অতিরিক্ত রাগের সাথে এক দমে কথা গুলো বলে তবে থামলাম। কিন্তু আমার রাগে বোধহয় ওপাশের মানুষটার মাঝে কোনো রকম ভাবান্তর হলো না। কারণ চুপ হয়ে যেতেই আমার কানে ভেসে এলো মৃদু হাসির শব্দ। এই হাসি যে দুপুর ছাড়া অন্য কারো হতে পারে না তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। কেনোনা এই রাত দুপুরে আমার বিপরীতে ফোন কানে নিয়ে কেবল আর কেবল দুপুরই আছে। সুতরাং অন্য কারো হওয়ার সম্ভবনা নেই। তার হাসিতে রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেলেও তা হজম করে নিয়ে চুপ হয়ে গেলাম আমি। টু শব্দও করলাম না। আমার চুপ হয়ে যাওয়া দেখেই বোধহয় তিনি আবারও মুখ খুললেন।
“আমি যে শুনলাম তোমার হবু হাব্বি না পটল তুলতে তুলতে আবার ফিরে এসেছে! তবে কি আমি ভুল শুনেছি সুন্দরী?”
তারমানে এই লোকটা সব জেনে শুনে শুধু মাত্র আমাকে খোঁচা মারতেই আবার জিজ্ঞেস করেছে! দেখেছো কান্ড। কত্ত বড় ইয়ে এই লোক। মানে ফাজিল আরকি।
“যেহেতু জানেন তবে আবার কেন জিজ্ঞেস করলেন? আসলে কি বলুন তো, ওই লোকটার জায়গায় আপনি পটল তুলতে গেলে বেশি ভালো হতো। অসহ্য লোক একটা।”
“কিন্তু তোমাকে তো অসহ্যই সহ্য করতে হবে আয়না সুন্দরী। শুধু দেখো তুমি আগে আগে কি হয়।”
বোধহয় দুপুর আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলার আগেই কল কেটে ফোন রেখে দিলাম আমি। এনার সাথে বেশিক্ষণ কথা বললে আমার আরো রাগ হবে। তারচেয়ে বরং আমি আমার মতো ঘুমিয়ে যাই। উনি যা বলে বলুক। অতঃপর মনে মনে এসব বলতে বলতেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
অপর দিকে দুপুরের চোখে আর ঘুম ধরা দিলো না। সে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো নিজের প্রিয়তমার কল্পনায়। বিছানায় শুয়ে কল্পনা করে খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে উঠে পড়লো সে নিজের শয্যা ছেড়ে। নিঃশব্দে ঘরের দরজা খুলে আস্তে ধীরে পা টিপে টিপে বাবা মায়ের ঘর পেরিয়ে উঠে গেলো ছাদে। সেখানে বসে আবারও বিভোর হয়ে পড়লো নিজের মনের কল্পনায়। তারপর কল্পনা করতে করতেই কখন যে তলিয়ে গেলো অতল ঘুমে তা টেরও পেলো না। এভাবেই দুদিকে দুজনের রাত কেটে গেলো।
পরের দিনটা আমার জীবনে আবারও সেই বিয়ের তোড়জোড় নিয়ে হাজির হলো। আব্বার কথা অনুযায়ী বিকেলের দিকে বা তার কাছাকাছি সময়ে আসবে সেই ছেলে এবং তার বাড়ির লোকজন। এই নিয়ে বাড়ির মানুষ গুলোর বাড়াবাড়ির সীমা নেই। সবাই অতি উৎসাহের সাথে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি আমার যে বড় আপা, রুবি, কোনোদিন কোনো কুটোটিও হাত দিয়ে ধরে সরিয়ে দেখেনি সেই আপা আম্মার রান্নার কাজে সাহায্য করছে, সব গুছিয়ে দিচ্ছে! বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। আমার বিয়ে নিয়ে বাড়ির লোকের আগ্রহের অন্ত নেই। আগ্রহ নেই শুধু আমার একার। যা হচ্ছে হোক। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি।
আম্মা আর আপা রান্না ঘরে কাজ করছে, আব্বা ফুপুর সাথে গল্প করছে, মুহিন আর মিনাল তাঁদের কথা গুলো সব হা করে গিলছে, মিনা আপা বারান্দায় বসে আমার চুল বেঁধে দিচ্ছে, দুলাভাই তার ছেলেকে নিয়ে ঘরে শুয়ে আছে। দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে ধীরে কিন্তু এখনো আম্মার রান্না শেষ হয়নি। এত কি রান্না করছে কে জানে। ছেলের বাড়ির লোকজন এটা খাবার খাবে? মানুষ নাকি অন্য কিছু কে জানে! বাড়ির সবার কাজকর্ম দেখছিলাম আর মনে মনে সেগুলোর কারণ, ব্যাখ্যা খুঁজছিলাম। এমন সময় বাড়ির মধ্যে ঢুকলো দুপুর। আমি অবাক হয়ে তার পানে চেয়ে থাকতে থাকতেই সে শুরু করে দিয়েছে নিজের বকবক।
“আরেহ আন্টি, তুমিও দেখছি এখানে। কবে এলে? মিনা আর ভাইও আছে দেখছি। বাহ্ সবাই তো তাহলে খুব ভালো বেড়াচ্ছো হুম।”
ফুপুও বোধহয় এমন সময়ে দুপুরকে আমাদের বাড়িতে দেখে আমার মতোই অবাক হয়েছে। হয়তো বা আমার থেকেও বেশি। তাই তো কেমন হা করে চেয়ে আছে আর কথাও বলছে না কোনো। ফুপুকে চুপ থাকতে দেখেই খুব সম্ভবত আব্বা কথা বলার সুযোগটা পেয়ে গেলেন।
“এ যে দুপুর বাবা। তা বাবা দুপুর তুমি হঠাৎ এমন সময় এই গরিবের বাড়িতে পা রাখলে যে! কোনো বিশেষ ব্যাপার নাকি?”
“বিশেষ কিছু না হলে কি তোমাদের বাড়িতে আসতে পারবো না আমি? কি গো আঙ্কেল! এত জলদি জলদি পর করে দিলে? এই ছিল তোমাদের মনে?”
কথা শেষ করেই দুপুর বাচ্চাদের মতো মুখ করে আব্বা আর ফুপুর পাশেই বসে পড়লো। এবার মুখ খুললো ফুপু।
“হ্যাঁরে দুপুর ভাই তো ঠিকই বলছে। তুই হঠাৎ এখানে? আর তাছাড়া তুই ভাইকে চিনিস কিভাবে? কথা শুনে তো মন হচ্ছে অনেক দিনের পরিচিত তোরা। এদের সাথে তোর আলাপ হলো কিভাবে রে?”
ফুপুর প্রশ্নে আব্বা আর দুপুর একসাথে হেসে উঠলো।
“তোমার এই প্রশ্নের উত্তর পরে দেবো আন্টি। এখন তো আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে করে পরবর্তীতে এবাড়িতে এলে কেউ আর জিজ্ঞেস করতে না পারে ব্যাপার কি। তখন দেখো কেমন আরো হুটহাট চলে আসি।”
আব্বা হেসে ফেললেন দুপুরের এহেন কথা শুনে।
“তোমার যখন ইচ্ছে হবে তুমি তখনই চলে আসবে। কেউ মানা করবে না তোমাকে। এটা তো তোমারই বাড়ি বাবা।”
আব্বা পরিস্থিতি সুন্দর করার জন্য বললেও কিছু সময় পর যে তার কথাই সত্যি হয়ে যাবে তা কেউ জানতো না। বাড়িটা সত্যি সত্যিই দুপুরের হয়ে গেলো।
“কেউ মানা করলেও আমি শুনবো না বুঝলে আঙ্কেল।”
এদের কথার মাঝেই আপা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। সেও যে দুপুরকে দেখে অবাক হয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই আমার। কিন্তু আপা অবাক মানে ও জানতো না আর ও জানতো না মানে দুলাভাই দুপুরকে আসতে বলেনি। তাহলে উনি কেন এলেন? উনি আবার কিছু ঝামেলা করবেন না তো? আমার ভাবনার মাঝেই আপার গলা শোনা গেলো।
“একি দুপুর, তুমি আমাদের বাড়িতে! আকাশ তো তোমাকে আসতে বলেনি। তাহলে?”
“শুনলাম তোমার বোনের বিয়ে। তোমরা তো আর বললে না আসতে তাই দাওয়াত ছাড়াই বিয়ে খেতে চলে এলাম। ভালো করেছি না ভাবি?”
দুপুরের কথা শুনে আপা কিছু সময় চুপ করে রইলো। তারপর ভ্রু কুঁচকে বললো
“তোমাকে আয়না ডেকেছে তাই না? ওর বিয়ে ভাঙার জন্য! ঠিকই তাহলে বুঝেছিলাম আমি। ওই মেয়ে তলে তলে ঠিক নাগর জুটিয়ে নিয়েছে। আমার অবলা দেবরকে পেয়ে তার মাথাটা খেয়েছে। আর তোমাকেও বলিহারি ভাই। ও বললো আর তুমি চলে এলে। তবে এসেই যখন পড়েছো দাঁড়াও আমি আম্মুকে বলছি ফোন করে। তারপর ওই মুখপুড়ির ব্যবস্থা করা হবে।”
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আপা একাই বলতে থাকলো। দুপুর নিজের কথায় আপাকে থামালো।
“তোমার ভুল হচ্ছে ভাবি আমাকে কেউ ডাকেনি। আমি নিজের ইচ্ছেতেই এসেছি। আর আমাকে তো আসতেই হতো তাই না। তুমি নিজের ভুল ধারণা আবার খালামনির মাথায় ঢুকিও না যেন।”
“কে আবার কি ভুল করলো রে বেটা?”
অচেনা একটা লোকের গলা পেয়ে সবাই একসাথে সেদিকে তাকালাম। আব্বার বয়সী একটা লোক সাথে আরো একজন আছে। তাঁদের দেখে আব্বা মিনা আপাকে বললেন আমাকে ভেতরে নিয়ে যেতে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো বাক্যব্যায় না করে ভেতরের দিকে যেতে শুরু করলাম। সর্বশেষ শুনতে পেলাম দুপুরের কণ্ঠে মামা ডাকটা। অর্থাৎ ওই লোকটা দুপুরের মামা। তারমানে দুপুরই সেই ছেলে!
চলবে…?
[আস্সালামুআলাইকুম। প্রথমে ফোন তারপর নিজে অসুস্থ হওয়ার অনেক দিন গল্প দিতে পারিনি। তারজন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। গল্প না দেওয়ায় গ্রুপ থেকে আমার গল্প ডিলিটও করা হয়েছে। আশাহত হয়েছি খুব। অনেকটা মনোবল হারিয়ে ফেলেছি বলা চলে। যদিও এ নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই কারণ নিয়ম তো নিয়মই। আজ অনেক দিন পরে ১৪ পর্ব দিলাম। আশা করি সবাই রেসপন্স করবেন। ধন্যবাদ!💙]