ফানাহ্ 🖤 #লেখিকা_হুমাইরা_হাসান #পর্বসংখ্যা_২২

0
538

#ফানাহ্ 🖤
#লেখিকা_হুমাইরা_হাসান
#পর্বসংখ্যা_২২

বৃষ্টির অবিরাম, অবিরল,অবিচ্ছিন্ন ধারা সারা গা ভিজিয়ে মুড়িয়ে দিচ্ছে দুটো শরীর। মেহরাজের কপালে উপচে পড়া চুলের আগা থেকে এক ফোঁটা পানি টুপ করে পড়লো মোহরের মুখের উপর। সমগ্র আকাশ ভরা বৃষ্টির ঢলের মধ্যে সেই বিন্দুকণা এতো স্থুল নয় যে চোখ জুড়ে যাবে, কিন্তু এতটা সূক্ষ্মও নয় যে চোখ এড়িয়ে যাবে। বরং অবিচ্ছেদ্য বাদলের বর্ষনে মেহরাজের চুল থেকে উপচে পড়া পানির ফোঁটা যেন প্রবল উত্তাপধারী। কুলধ্বনি ছিটিয়ে দিল মোহরের সর্বাঙ্গে। এক চুল নড়ার শক্তি টাও ক্ষুন্ন হয়েছে। স্বামী নামক পুরুষটির এই সামান্য নিকটত্বে জালাময়ী সুর তুলেছে মন মস্তিষ্ক জুড়ে৷

ভারি পানি কণার ভারে বুজে আসা চোখ টেনে তুলে তাকালো, বিজড়তা, আড়ষ্টতার সাথে প্রাণপণে লড়াই করে বহুকষ্টে কম্পিত দৃষ্টি তুলে চাইলো অত্যন্ত নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা সুপুরুষের পানে। বৃষ্টির অনবরত ধারা যেন সুদর্শন মানুষটার সারা মুখে আরও অপূর্ব স্নিগ্ধতার প্রলেপ মাখিয়ে দিয়েছে। মোহরের অনুকম্পিত ওষ্ঠাধরের দিকে অনিমেষ চাইলো মেহরাজ।
চাইলেও চক্ষুগোচর করতে পারছে না তার মোহমায়াকে। মোহরের বৈরী অগাধ রূপ, মায়ার মোহ ওকে আষ্টেপৃষ্টে ঝাপটে ধরছে যার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো রাস্তা দূর মাদ’কতার নেশার ন্যায় টেনে নিচ্ছে নিজের অতীব সন্নিকটে।
অদ্রিত ঠোঁট জোড়াও প্রবল বারিধারায় ও শুকিয়ে এলো যেন, চোখ দু’টো জ্বলে উঠছে, অস্থিরতাকে ধামাচাপা দিতে চোখ সরিয়ে নিল। বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে স্বাভাবিক হওয়ার প্রয়াস করেও ব্যর্থ হয়ে আবারও তাকালো মোহরের নতজানু মস্তকে।
আচানক মনের সকল নিষেধাজ্ঞাকে বিচলিত মনের আস্কারাতে ঠাঁই দিয়ে মোহরের থুতনিতে হাত রেখে সুরত খানা উর্ধ্বে তুললো। আধবোজা চোখে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকলো নিজের ভেজা টকটকে অধর জোড়া। মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়, সম্মোহনী হয়ে জমে গেল মোহরের সমস্ত কায়া,চিত্ত। আবিষ্টমন চোখ বুজে নিলো। প্রকৃতির তান্ডবে যখন সারা ধরণী যখন নতুন সজীবতার হিল্লোল বইয়েছে, ঠিক তখনি বিশাল ছাদে দাঁড়িয়ে দুজন মানব মানবী নিজ অন্তঃস্থলের প্রবল উন্মাদনায় মত্ত হয়ে একে অপরকে ছুঁয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টায়।
কিন্তু ওদের অসংযত হওয়া মনের উদ্দম বেসামাল অনুভূতির নিষিদ্ধ মিলনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞাপনের মতো উড়ে এসে জুড়ে বসলো সাঞ্জে। পরিবেশ পরিস্থিতি বিচার না করেই সিড়ি থেকেই চিল্লাতে চিল্লাতে বলতে থাকলো

– ভাবী? ও ভাবী? তোমার এখনো বৃষ্টিবিলাস হয়নি? আর কতক্ষণ ছাদে থাকবে?

বলে ছুটতে ছুটতে এলো ছাদের দিকে। সাঞ্জের গলার উচ্চস্বরে মোহর ছিটকে সরে গেল, মেহরাজ অপ্রস্তুত হতভম্বিত রূপে দাঁড়িয়ে রইলো। কি করতে যাচ্ছিল ও? কি করে এতোটা বেসামাল হয়ে গেল, সাঞ্জে না আসলে হয়তো!

– ওমা দাভাই কখন এলে? তুমিও বৃষ্টিতে ভিজছিলে?

সাঞ্জে মোহরের পাশে মেহরাজকে দাঁড়িয়ে দেখে বিস্মিতের ন্যায় বলল। মেহরাজ ভেতর থেকে অপ্রসন্ন হলেও সেই অভিব্যক্তিকে ঠাঁই দিল না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো স্থির ভাবে৷ সাঞ্জে মোহরের অস্থির,বিচলিত চেহারা টা দেখে দুষ্টু হাসলো। টুসকি দিয়ে বলল

– ইস আমি মনে হয় খুব ভুল সময়ে এসে গেছি গো। কপত কপতীর মাঝে কাবাবের হাড্ডি হয়ে গেলাম। নো প্রবলেম, চালিয়ে যাও আমি দিদা কে বলে দিচ্ছি মিস্টার এ্যান্ড মিসেস ব্যস্ত।

বলে আবারো সিডির দিকে যেতে নিলে মোহর ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে বলল

– না না তেমন কিছু না। আমিও আসছি চলো

বলে সাঞ্জের পেছন পেছন এক প্রকার দৌড়ে পালালো। মেহরাজ ওর পালিয়ে যাওয়ার দিকে নিমগ্নে চেয়ে বলল

– বুকের ভেতর ও কোন ঝড় তুলে পালিয়ে যান মোহমায়া, আপনার স্পর্শের দাবদাহে বৃষ্টিফোঁটা গুলোও জ্বলতে শুরু করেছে সারা শরীরে।

________________

– উফ দিদা তুমিই তো সব নষ্টের গুড়। তুমি যদি তখন ডাকতে না পাঠাতে তাহলে তো আর ভাবী-দাভাইয়ের প্রেমে ব্যাঘাত ঘটতো না

গাল টিপে হেসে উঠলো শাহারা বেগম। মোহরের লজ্জায় নতজানু হয়ে গাল লাল হয়ে আসছে। ও পারছে না মাটি ফুড়ে ঢুকে পরতে। দিদার সামনে যে সাঞ্জে এভাবে লজ্জায় ফেলে দেবে ও ভাবতেও পারেনি। শাহারা আড়চোখে তাকালো নতমস্তকে বসে থাকা মোহরের দিকে, এক কোণায় বসে আঙুলে ওড়না পেচাচ্ছে অনবরত। মুচকি হেসে বললেন

– আমার নাতি, নাতবউকে নিয়ে একদম ইয়ার্কি ফাজলামি করবি না সাঞ্জে। বড়োদের নিয়ে এসব বলিস লজ্জা করা উচিত।

– ওর আবার লজ্জা শরম আছে নাকি যে লজ্জা পাবে

শাহারা বেগমের কথার সাথে সাথেই জবাব দিল তাথই। ড্রয়িং রুম জড়ো করে বসেছে ওরা। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। মোহর ভেজা জামা ছেড়ে সুতির একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে। শাহারা বেগম বসে সন্ধ্যার জলখাবার খাচ্ছেন, সাথে সাঞ্জে তাথই ও বসেছে। নাজমা কাজ করছে আর মুখ টিপে হাসছে। সেদিকে তাকিয়ে মোহরের অপ্রতিভতা আরও বাড়ছে। এতগুলো মানুষ জনের সামনে বসে থাকতেও জান বের হয়ে যাচ্ছে ওর।
আম্বি খাতুন রান্নাঘর থেকে বেরোচ্ছিলেন, উনাকে ঘরের দিকে যেতে দেখে শাহারা বেগম ডেকে বললেন

– আম্বি, কোথায় যাচ্ছো। একটু এদিকে এসো তো

এদিকে আসার খুব একটা ইচ্ছে উনার ছিল না হয়তো। তবুও শাশুড়ীর আদেশ মতো এগিয়ে এলেন, সদা সর্বদা স্বাভাবিক মৃদু গলায় বললেন

– জ্বি মা

– কোথায় যাচ্ছো ঘরে?

– হ্যাঁ

– ঘরে গিয়ে তো সেই একা একাই বসে থাকবা। এখানে বসো আমার সাথে। মেয়েগুলোর সাথে গল্প গুজব করো ভাল্লাগবে।

– এসবের আর দরকার নাই মা। আমি ঘরেই থাকি ওরা গল্প করছে করুক না, আমি মা আমি থেকে কি করবো।

শাহারা বেগম হাত থেকে চায়ের কাপটা রেখে সুপ্রসারিত নয়নে তাকিয়ে বললেন

– তুমি মা বলেই তো থাকবে। আর কথা বলো না তো, এসো বোসো আমার পাশে

একরাশ অনিচ্ছা সত্ত্বেও এসে বসলো আম্বি বেগম। আর তার অনিচ্ছার কারণ যে মোহর সেটা মোহর নিজেও খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে। শাহারা বেগম আম্বি খাতুনের দিকে তাকিয়ে বলল

– পায়ের ব্যথা কমেছে আম্বি?

– আর কমলো কই। চিনচিন করে ব্যথা করছে ঠিক করে পা টাও মাটিতে রাখতে পারছি না

– কেন? বড়মার পায়ে কি হয়েছে?

সাঞ্জের প্রশ্নের জবাবে শাহারা বেগম বললেন

– এইতো সকালেই পা মচকে গেছিল ওর। কত করে বললাম তেল জল দাও। তা তো শুনলো না

– স্প্রে করেছি মা

– সে যাই করো। তুমি কিন্তু হেলাফেলা কোরো না। ব্যথা বাড়লে ডাক্তার দেখাতে হবে।

কথার মাঝেই মোহর উঠে গেলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে রান্নাঘর থেকে তেল গরম করে এনে আম্বি বেগমের পায়ের কাছে বসলে আম্বি বিস্মিত হয়ে বলল

– আরে কি করছো তুমি? পায়ের কাছে বসছো কেন?

মোহর আম্বির পায়ে হাত দিয়ে বলল

– আপনি শান্ত হয়ে বসুন, আমাকে কাজটা করতে দিন

আম্বি অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে নাকচ করে বলল

– কিচ্ছু করতে হবে না তোমায়, দেখি সরো তো। আমার ব্যথা এমনিতেই সেরে যাবে

– আম্বি ও যা করছে দাও না করতে। চুপ করে বসে থাকো তুমি

শাহারা বেগমের মুখের উপর কথা বলতে না পারায় দমে গেল আম্বি। নড়াচড়া না করেই বসে রইলো চুপ করে। মোহর বাটি থেকে গরম তেল আলতো ভাবে আঙুলের ডগায় লাগিয়ে মালিশ করতে থাকলো আম্বির পায়ের গোড়ালির ফোলা অংশের দিকে।
দপদপে ব্যথা স্থানে রসুন,সরিষার তেলের স্পর্শে বেশ আরাম বোধ করলো আম্বি। মোহর পায়ে তেল ঘষতে ঘষতে বলল

– মচকে যাওয়ার পরে কি বরফ লাগিয়েছিলেন?

– হ্যাঁ মালা লাগিয়ে দিয়েছিল একটু

অমসৃণ গলাতেই জবাব দিল আম্বি। মোহর আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ তেল ঘষে দিল বেশ অনেকক্ষণ সময় ধরে। ব্যথা স্থানে আরাম অনুভূত হয়ে নিরবে বসে রইলেন আম্বি। মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে অনেকটা স্বস্তি পেল ব্যথা কমার জন্যে।

বেশ সময় পেরোলো, রাতের বেলা একে একে সকলে নামলো ডাইনিং স্পেসে। রাতের খাবার সবাই একসাথে খেলেও মেহরাজ নামলো না। মোহর অবশ্য এর মাঝে একবারের জন্যেও উপরে যাই নি। নাজমার সাথে ও আর তাথই হাতে হাতে খাবার এগিয়ে দিল। আম্বি বেগম এতে সন্তুষ্ট না হলেও বাঁধা দেয়নি।
সব পর্ব চুকিয়ে ঘরে ফিরতে বেশ অনেক রাত হলো মোহরের। ঘরে এসেই আশপাশে চোখ বুলালো। মেহরাজ ডিভানে চিত হয়ে শুয়ে আছে মুখের উপর হাত রেখে। এই সময়ে শুয়ে থাকতে দেখে মোহরের ললাটে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো। কেননা মেহরাজ কখনোও এতো আগে ঘুমাই নাহ। পরমুহূর্তেই ভাবলো হয়তো সারাদিন বাইরে থাকার দরুন ক্লান্ত ছিল বলেই ঘুমিয়ে গেছে।

সেদিকে আর মাথা না ঘামিয়ে নিজ কাজে মনোনিবেশ করলো মোহর। ফ্রেশ হয়ে এসে লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমে তলিয়ে গেল।

কৃষ্ণকায় আকাশে তারার ঝলকানি। সারা বিকেল দাপিয়ে বর্ষনের পর ফকফকে পরিস্কার নভোমণ্ডল। হাজারো তারার মাঝে দাম্ভিকতার সহিত সিংহাসনে বসে আছে রূপালি চাঁদটা। আশপাশে ঝলমল করছে তার রূপালি আভা। একবার তাকালে হয়তো মনে হবে আকাশের বুকে তার রাণী সাদরে, পরম যত্নে, আভিযাত্যে রাজ ফলিয়েছে। তার কিরণে অবগাহন করবে পুরো ধরণী। আশপাশ টা নিগূঢ় নিস্তব্ধতায় আবিষ্ট। তার মাঝে সূক্ষ্ম শব্দে আলোড়ন তুললো অজানা হরেক ঝিঁঝি পোকার ন্যায় পতঙ্গ। হালকা বাতাসে ফুরফুরে আমেজ। ঝলমলে আকাশ, তার বুকে শায়িত রূপে চাঁদটা পাহারা দিচ্ছে পুরো মেদিনী।

তবে এরূপ অপরূপে ডুব দেওয়ার মানুষ শূন্য। সকলে গভীর রাতে তন্দ্রাঘোরে আচ্ছন্ন। নিঃশ্বাসের ফিসফিসানি ছাড়া আর কোনো শব্দের অস্তিত্ব নেই মানব সমাগমে।
কেমন একটা চাপা গোঙানির শব্দে ঘুম হালকা হয়ে এলো মোহরের। পুরোপুরি ঘুম না ভাঙায় ঘোরের মাঝেই ভ্রু কুচকে এলো ওর। ধীরে ধীরে ঘুমন্ত মস্তিষ্কও অনুভব করতে পারলো খুব কাছ থেকেই কারো কাকুতি শোনা যাচ্ছে।
ঘুমু ঘুমু চোখটা খুলে আশপাশে তাকিয়ে কান খাড়া করতেই স্পষ্ট কারো মৃদু কাকনি কানে এলো। উঠে বসে বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালাতেই চোখের সামনে স্পষ্ট হলো ডিভানে শুয়ে মেহরাজের দীর্ঘাকার শরীর টা৷
মোহরের মনে হলো শব্দ টা মেহরাজের কাছ থেকেই আসছে। সকৌতুহলে বিছানা থেকে নেমে মৃদু পায়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো মেহরাজের সিথানে। ফোস ফোস শব্দ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে মেহরাজ, ঘুমের ঘোরেই মাথা চাপছে আর এপাশ ওপাশ ঘাড় ঘুরাচ্ছে। কৌতুহল বশত মোহর নিজের হাতটা মেহরাজের কপালে ঠেকালেই বিস্মিত হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে ঘরেই লাইট
জ্বালিয়ে এসে মেহরাজের পাশে হাঁটু গেড়ে বসে কপালে গালে বার কয়েক হাতের উল্টো পিঠ ছোঁয়ালো।
শরীরের উত্তাপে হাতের চামড়া ঝ’লসে যাওয়ার জো। জ্বরে সারা শরীর যেন পু’ড়ছে মেহরাজের। ফর্সা মুখটা টকটকে হয়ে গেছে। ঠোঁট ফাক করে ঘুমের ঘোরেই ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে মেহরাজ। মোহর আলতো স্পর্শে মেহরাজের গালে হাত রেখে বলল

– শুনছেন? উঠুন,আপনার খুব জ্বর। একটু উঠে বিছানাতে আসুন প্লিজ

জ্বরের ঘোরে বার দুয়েক ঘাড় নাড়িয়ে কিসব বিড়বিড়ালো মেহরাজ। তার অর্থোদ্ধার মোহরের দ্বারা সম্ভব হলো না। ও উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ব্যস্ত পায়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল। পাত্রভর্তি করে পানি এনে আশপাশ তাকিয়ে একটা কাপড় হাতে নিল। ঠান্ডা পানির মধ্যে কাপড় চুবিয়ে তার পানি নিঃড়ে মেহরাজের কপালে রাখলো। যেন গরম তাওয়ার উপরে ঠান্ডা কিছু রাখা হলো। গায়ের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, থার্মোমিটারে মাপলে হয়তো কম হলেও ১০১/১০২° হয়ে যাবে।
মোহর বারবার কাপড় ভিজিয়ে মেহরাজের কপালে চেপে ধরলো। মেহরাজ তখনও চোখ বুজে। জ্বরের ঘোরে কাঁপা কাঁপা হাতটা তুলে মোহরের কাপড় চেপে ধরে রাখা হাতটার উপরে রাখলো মেহরাজ। জ্বরের উত্তাপে যেন মোহরের চামড়া টাও ভেদ হয়ে যাচ্ছে উষ্ণ স্পর্শে। মেহরাজ অস্পষ্ট আড়ষ্ট গলায় ফিসফিসিয়ে বলল

– ক্ কষ্ট লাগছে। মাথা ফেটে যাচ্ছে।

মোহর অস্থির হয়ে উঠলো। নিজ স্বভাব বিপরীত হয়ে কি করবে ভেবে পেল না। মেহরাজের জ্বরের অবস্থা একেবারেই ভালো ঠেকছে না। কেঁপে কেঁপে উঠছে সারা শরীর। মোহর উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলে একটা জ্বরের ওষুধ এনে খাইয়ে দিয়ে আবারও মেহরাজকে ক্ষীণ স্বরে ডাকতে লাগলো

– আপনি একটু কষ্ট করে উঠুন প্লিজ। খাট পর্যন্ত অন্তত আসার চেষ্টা করুন, ডিভানে থাকলে আরও অসুবিধা হবে

মেহরাজের ভারি শরীরটা টেনে নেওয়ার মতো ক্ষমতা মোহরের নেই, আর ওকে খাটে নেওয়া টা খুব জরুরি। আরও বার দুয়েক ডাকলে মেহরাজ ঢুলু ঢুলু চোখ খুলে তাকালো। চোখের সাদা অংশটাই অস্বাভাবিক লালাভ বর্ণ ধারণ করেছে। মোহর মেহরাজের বাহু শক্ত করে ধরে ওকে খাট অব্দি নিয়ে গেল, খাটে শুইয়ে দিয়ে আবারও জলপট্টি দিল কপালে। আরেকটা কাপড় এনে বারবার হাত পা ভেজা করে মুছিয়ে দিতে লাগলো।
বৃষ্টিতে ভেজার কারণেই যে জ্বর এসেছে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না মোহরের। তাই আজ মেহরাজ খেতেও আসেনি আর ঘুমিয়েও গেছে ওত আগে। ইস একটা বার যদি লোকটা বলতো শরীর খারাপ লাগছে তাহলে হয়তো এখন এই পরিস্থিতি আসতো নাহ। আধঘন্টা ধরে অনবরত জলপট্টি দিয়ে দিয়ে খানিকটা কমে এলো মেহরাজের জ্বর। মোহর ড্রয়ার খুঁজে ভ্যাপো রাব এনে কপালে লাগিয়ে দিতে গেলে আচানক মেহরাজ এসে মোহরের কোমর আঁকড়ে ধরলো। জড়ানো অস্পষ্ট গলায় বলল

– খারাপ লাগছে আমার, কষ্ট লাগছে। আমাকে সারিয়ে দিনি না মোহ..

এরপর আর কি বলল এটা মোহর শত চেষ্টা করেও বুঝতে পারলো নাহ। এতো রাত করে কি করবে সেটাও মাথায় আসছে না। জ্বর সাময়িক কমলেও আবারও উঠবে এ ব্যাপারে মোহরের ভয়ও হচ্ছে। একটু উঠে কি কাওকে খবর দেবে? নড়েচড়ে দেখতে গেলেও মেহরাজ আরও শক্তপোক্ত করে ঝপটে ধরলো মোহরের কোমর, নরম পেটের ভেতর মুখ গুঁজে দিয়ে বলল

– কোত্থাও যাবেন না। আমার কষ্ট হচ্ছে

জ্বরের চোটে আবল তাবল বলছে বারবার মেহরাজ। মোহর আর উঠার চেষ্টা করলো নাহ। মেহরাজের এই অসুস্থ নেতিয়ে পরা মুখটা দেখে ছ্যাৎ করে উঠছে বুকের ভেতর। লোকটা এতটা অসুস্থ হয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি। প্রচণ্ড উষ্ণ নিঃশ্বাস ঘনঘন আঁছড়ে পড়ছে মোহরের পেটে, শূলের মতো বিঁধে ঢুকছে পেটের মধ্যিখানে। মোহর কাঁপা কাঁপা আঙুল আস্তে করে গলিয়ে দিল মেহরাজের চুলের গভীরে।
.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ

©Humu_❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here