#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩২
আদ্রিয়ানরা ফ্যাটে ফিরলো আজ দুই দিন। সকালের নাস্তা আজ আদ্রিয়ানই বানাচ্ছে। বউয়ের হাত ঠিক হয়েছে তাতে কি?এই হাতে মোটেও ও রোদকে কিচেনে ডুকতে দিবে না। শশুর বাড়ী থেকে অবশ্য বলেছিলো রোজ খাবার পাঠিয়ে দেয়ার কথা কিন্তু এক বাক্যে তা নাকচ করেছে আদ্রিয়ান। নিজের বাসা থেকে ও ওর মা, সাবা আর আরিয়ান অনেক জোর করেছে কাল ফোন দিয়ে যে খাবার তারা পাঠিয়ে দিবে কিন্তু আদ্রিয়ান না করে দিয়েছে। বাবা’র বাসা ত্যাগ করে যদি সেই বাসার খাবার ই খেতে হয় তাহলে কিসের রাগ রইলো? তার থেকে ওখানে থেকে খাওয়াই ভালো। আদ্রিয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ডিম পোঁচ’টা উল্টাতে নিলেই কুসুম ভেঙে গেল। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান। রোদ যদি দেখে ওর ডিমের কুসুম ভেঙে গিয়েছে তাহলে আদ্রিয়ানের মাথাই ভেঙে দিবে। এই মেয়ে কুসুম ভেঙে গেলে ঐ ডিম খাবেই না। ওর কথা পোঁচ করে যদি কুসুম ভেঙেই খাই তাহলে অমলেট ই তো খাওয়া যেত। আদ্রিয়ানের হাসি পেলো একা-একাই। এই রোদে’র কাছে দুনিয়ার সব আজগুবি যুক্তি দিয়ে ভরা। আরেকটা ডিম নিতে ফ্রিজের কাছে যেতেই দেখলো রোদ সোফা থেকে উঠে এসে বললো,
— এই আপনি কয়টা ডিম ভাজেন?
–আরেকটা লাগবে।
— আজব পাঁচটা তো হলোই। আর দিয়ে কি হবে?
আদ্রিয়ান চোরের মতো করে উত্তর দিলো,
— কুসুম ভেঙে গিয়েছে।
আদ্রিয়ান ভাবলো রোদ হয়তো এখন চিল্লাবে এখন ওর উপর কিন্তু তা হলো না। রোদ এগিয়ে এসে গ্যাসটা অফ করে প্লেট নিতে নিতে বললো,
— তাতে কি। খেয়ে নিব আমি।
আদ্রিয়ান অবাক হলো সাথে মুখ জুড়ে বিস্তৃত হলো হাসির রেখা। ভালোবাসায় মানুষ কত পাগলামি ই না করে সেখানে রোদ নাহয় ভাঙা কুসুম ওয়ালা ডিম পোঁচ ই খেলো। মিশান একেবারে স্কুল ড্রেস পরেই বের হয়েছে হাতে ব্যাগ আর টাই। রোদ টিভিটা অফ করে মিশিকে কোলে তুলে টেবিলে বসলো। চারজন ব্রেকফাস্ট শেষ করতেই রোদ মিশানের কাছে এসে টাইটা বেঁধে দিলো। যদিও মিশান আগে একাই বাঁধত কিন্তু মা পাওয়ার পর থেকে তার আহ্লাদপানা বেড়েছে। রোদ মিশানের ব্যাগে টিফিন বক্স ভরে একটু শাসানো গলায় বললো,
— আজ যাতে পুরোটা ফিনিস পাই।
মিশান মুখটা কালো করে বললো,
— কেউ ক্লাসে টিফিন খায় না। শুধু তুমিই জোর করে দাও।
রোদ মুখটা সিরিয়াস করে বললো,
— তাই না? রুদ্রকে তো আম্মু রোজ টিফিন দেয়।
— ও তো না খেয়ে ফ্রেন্ড’দের দিয়ে দেয়। নানুর ফ্রাইড রাইস কিন্তু অনেক মজা। আমি খেয়েছিলাম কয়েকবার।
রোদ গেলো এবার রুদ্রর উপর রেগে। আজ বেচারার নিস্তার নেই। মিশান জিভ কাটলো। বন্ধুর বিপদ কি না বাড়িয়ে দিলো ও।
রোদ রেডি হয়ে আসতেই আদ্রিয়ান ওদের নিয়ে বের হলো। আজ রোহানের সাথে দেখা হতেই আদ্রিয়ান হাসি দিয়ে টুকটাক কথা বলছে। রোদ অবাক হয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বললো না। যেই আদ্রিয়ান রোহানকে সহ্য ই করতে পারত না সে কি না হেসে হেসে কথা বলছে?
__________________
জাইফাকে নিয়ে আজ হসপিটালে রেগুলার চেকআপে এসেছে রাদ। জাইফার ইদানীং পেইন হচ্ছে তলপেটে। এ নিয়ে বাসায় চিন্তার অন্ত নেই। পরিচিত হওয়াতে রাদ আসতেই একটু বসতে হলো। জাইফা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবাইকে দেখছে। এখানে অধিকাংশ’ই প্রেগন্যান্ট কাপল রয়েছে। রাদ পানির বোতালটা খুলে জাইফার নেকাব’টা উঁচু করে বললো,
— পানি খাও একটু।
মাত্রই গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রাদ ওকে পানি খায়িয়ে বের করেছে। পাঁচ মিনিট ও হলো না আবার পানি দিচ্ছে। জাইফা তবুও পানির বোতলাটা হাতে নিয়ে এক ঢোক গিললো। রাদের এত এত ভালোবাসা কোথায় রাখবে ও? এই ভালোবাসা কপালে সইবে তো? রাদ আবারও নেকাবটা নামিয়ে দিয়ে বললো,
— গরম লাগছে জায়ু?
— না। ঠিক আছে।
— পেইন কি এখনও হচ্ছে?
— অল্প।
রাদ একহাতে জাইফাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। রাদের যে ভয়ে কলিজার পানিও শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম তা জাইফা সহ এতক্ষণে আশে পাশের সবাই ও হয়তো জেনে গিয়েছে। একজন মধ্য বয়স্ক দম্পতি এগিয়ে এসে বললেন,
— প্রথমবার?
রাদ মাথা তুলে তাকালো। জাইফা একটু হেসে বললো,
— জ্বি।
পুরুষটা রাদের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
— ভয় নেই ইয়াং ম্যান। ইনশাআল্লাহ ঠিক হবে সবকিছু।
রাদ শুকনো মুখে হেসে বললো,
— ইনশাআল্লাহ।
কেবিন থেকে রুগী বের হতেই নার্স রাদদের ডাকলেই রাদ জাইফাকে ধরে উঠিয়ে হাটা দিলো। জাইফা হাটতে হাটতেই বললো,
— আল্লাহ মহান তাই তো এই বয়সেও তাদের সন্তান দান করেছেন।
— হুম।
— আপনি শুধুই হাইপার হচ্ছেন রাদ। সব ঠিক আছে দেখবেন।
রাদ কথা বললো না। জাইফা নিজেও ভয়ে ভয়ে আছে কিন্তু রাদের এত ভয় দেখে কিছু বলার সাহস করলো না। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখেছে।
.
কেবিনে ডুকতেই ডক্টর.মিহা ওদের বসতে বললেন।রাদ আগে জাইফাকে বসিয়ে নিজেও বসলো। এসির মধ্যেও রাদকে ঘামতে দেখে ড.মিহা ওকে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
— কি হয়েছে রাদ? এত ঘামছিস কেন?
— ঠিক আছি আমি। জাইফার পেটে পেইন হচ্ছে আর সাথে দুই দিন ধরে প্রচুর পরিমাণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
ড.মিহা হেসে বললো,
— আচ্ছা সব বুঝলাম। কিন্তু তোর সমস্যা টা কি?
রাদ থতমত খেয়ে বললো,
— আমার কি সমস্যা হবে?
— যা তুই বললি এগুলো সবই স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সিতে। ডাল ভাত আরকি। তবুও চেক করছি।
রাদ কিছুটা শান্ত হলো কিন্তু পুরোপুরি না। ড.মিহা চেক করে বললো,
— কোন সমস্যা নেই কিন্তু….
রাদ উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
— কিন্তু কি?
ড.মিহা হেসে উঠলো। বললো,
— বেবির হার্ট বিট এসেছে।
রাদ একদম চুপ করে গেলো। জাইফার চোখে তখন আনন্দের পানি। রাদ আনমনেই বললো,
— আলহামদুলিল্লাহ।
ড.মিহা বন্ধুর পাগলামিতে না হেসে পারলেন না। রাদের সাথে ঠাট্টা করে বললো,
— তোর মতো ভীতু কি না পাপা হচ্ছে?
রাদ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো,
— আচ্ছা ও সম্পূর্ণ ঠিক আছে তো?
— হার্ট বিট শুনবি?
রাদ অবাক হলো। ড.মিহা স্থ্রেরোস্কোপটা রাদের কানে দিয়ে জাইফার উদাম পেটে ধরতেই রাদের র*ক্ত সঞ্চালন ঘোড়ার বেগে ছুটতে লাগলো যেন। ওর বাচ্চার হার্ট বিট পুরোপুরি শুনতে পেল রাদ। খুশিতে এবার রাগী মানুষটা কেঁদে ফেললো। জাইফা রাদের এমন কান্নায় হতবিহ্বল হয়ে গেল। ড.মিহা ওর পিঠ চাপড়ে বললো,
— ইটস ফাইন ইয়ার। ইউ ক্যান ক্রাই।
রাদ সময় নিয়ে নিজেকে সামলালো। ড.মিহা থেকে বিদায় নিয়ে জাইফাকে ধরে ধরে পারে না কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়েই চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
— জায়ু আমি শুনেছি।
— হ্যাঁ রাদ।
— আমি..আমি…
বেচারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আর বলতে পারলো না। জাইাফা হেসে উঠলো,
— বেবি এসে বলবে ওর আব্বু পাগল হয়ে গিয়েছে।
রাদ বেশসময় জাইফাকে জড়িয়ে ধরে গাড়িতে বসে রইলো। জাইফাও কিন্তু বলে নি। কিছু অনুভূতি এমনই। যা না যায় ভাষায় প্রকাশ করা আর না যায় লুকিয়ে রাখা৷ খুশিতে অতি আত্মহারা হয়ে রাদ অগনিত চুমুর বর্ষন করলো জাইফার মুখে।
________________
ম্যাডিকেল থেকে ফিরেই রোদ ডুকেছে গোসলে। আদ্রিয়ান বুয়া এনেছে নতুন। আল্লাহ জানে এই বারের বুয়া কি রান্না করে। রোদ তবুও ভালোকরে সব বুঝিয়ে বলেছে। উনিও ছয় নয় করে দেড় ঘন্টার মধ্যে রান্না করে বিদায় নিলেন। রান্নার চেহারা ভালো কিন্তু কি রেঁধেছে তা খেলে বুঝা যাবে। হঠাৎ পানি না আসায় রোদ বুঝলো টাঙ্কিতে পানি নেই। মাঝে মধ্যেই এই বাসায় এই এক সমস্যা। রোদ গলা ফাটিয়ে আদ্রিয়ানকে ডাক দিলো কিন্তু উত্তর পেলো না। এবার রোদ দরজা হালকা খুলে উঁকি দিয়ে দেখলো রুমের কোথাও আদ্রিয়ান নেই। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। জোরে জোরে ডেকেও কোন সারা পেলো না। অতি রাগে ধারাম করে দরজা লাগিয়ে প্রায় বিশ মিনিট অপেক্ষার পর পানি এলো। রোদ চুলে টাওয়াল পেচিয়ে আসতেই দেখলো আদ্রিয়ান হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। রোদকে দেখেই আদ্রিয়ান উঠে বসলো। বললো,
— এতক্ষণ লাগলো যে? আসো। বাচ্চারা বসে আছে।
রোদ কোন কথা বললো না। আলমারি থেকে উরনা বের করে গলায় ঝুলিয়ে ফোন হাতে নিতেই আদ্রিয়ান বললো,
— ইয়াজ কল করেছিলো একটু আগে।
রোদ কোন উত্তর দিলো না। আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বললো,
— আমি কি করলাম আবার? কথা বলো।
রোদ তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো,
— কই ছিলেন আপনি হ্যাঁ? কাহিনী কি আপনার? গলা ফাটিয়ে ডাকলাম। মরার টাঙ্কিতে পানি নেই। এক ঘন্টা লাগলো গোসল করতে।
আদ্রিয়ান অসহায় কন্ঠে বললো,
— টাঙ্কিতে পানি নেই এতেও আমার দোষ।
রোদ চিন্তা করলো আসলেই তো টাঙ্কিতে পানি নেই এতে ওর ভোলাভালা জামাইটার কি দোষ? এগিয়ে এসে রোদ আদ্রিয়ানের ঘাড়ে হাত দিয়ে ওর মাথাটা নামালো। আদ্রিয়ান ঝুঁকতেই রোদ আদ্রিয়ানের গালে চুমু খেয়ে বললো,
— আপনি থাকলে কি আর এত দেড়ী হতো? এরপর থেকে রুমে থাকবেন।
ব’লেই রোদ বের হতে নিলো। পেছন থেকে শুনা গেল আদ্রিয়ানের কন্ঠ,
— বকলা এতগুলো। এক চুমুতে হবে না। আরো লাগবে।
রোদ পাত্তা না দিয়ে বললো,
— খেতে হলে আসুন।
রোদ এই বার খাবার বেড়েই আগে নিজে একটু মুখে দিলো। যদিও বাসার মতো হয় নি তবুও চলে। মিশিকে খায়িয়ে দিতে দিতে আদ্রিয়ান ও এলো। রোদ মিশিকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,
— কাল আমার আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। মিশান বাসায় একা কিভাবে থাকবে?
মিশান গর্বের সঙ্গে বললো,
— তাহলে স্কুল থেকে রুদ্রকে নিয়ে আসব নে।
রোদ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
— ওকে আবার বাসায় দিয়ে আসবে কে?
আদ্রিয়ান বলে উঠলো,
— রাতে আমি দিয়ে আসব নে। সমস্যা নেই। রুদ্র আসুক। মিশানের ও টাইম পাস হবে।
.
আদ্রিায়নের ফোনটা বারবার সশব্দে বেজে উঠছে। আদ্রিয়ান ধরছে ও না আবার কেটেও দিচ্ছে না। রোদ তখন পড়ছিলো। আদ্রিয়ান ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে নিজেও ল্যাপটপে মনোযোগ দিলো। মিশান গিয়েছে নিচে। এটা যেহেতু আবাসিক এলাকা তাই সামনেই বিশাল বড় মাঠ। রোহানের সাথেই গিয়েছে। রোদ ভেবে পায় না রোহানের সাথে এত সক্ষ্যতা কবে হলো? মিশি বাবার কোলে মাথা দিয়ে ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কুটকুট করে বাদাম চিবুচ্ছে আবার বাবার সাথে দুষ্টামীও করছে।
ফোনটা আবারও ভাইব্রেট হতেই রোদ বই থেকে মুখ তুলে বললো,
— কে কল করেছে? রিসিভ করে দেখুন একবার। ইম্পরট্যান্ট ও তো হতে পারে।
আদ্রিয়ান মিশি থেকে বাদাম নিজের মুখে পুরে বললো,
— ফুপি করছে।
— আজব রিসিভ করুন।
— মুড নেই।
— কিসের মুড নেই? এতবার কল করেছে। আপনার রিসিভ করা উচিত। হয়তো কিছু বলতে চায়।
আদ্রিয়ান এবার সোজা চোখে তাকালো রোদের দিকে। রোদ কিছুটা দমে গেলো সেই চাহনি দেখে। মন খারাপ করে আবার বইতে মুখ গুজে দিলো। আদ্রিয়ান ঐ দিকেই তাকিয়ে রইলো। মিশি হাতে বাদাম নিয়ে হাত বাড়িয়ে রেখেছে কিন্তু বাবা নিচ্ছে না দেখে নিজেই উঠে আঙুল দিয়ে বাবার ঠোঁট ফাঁক করার চেষ্টা করতেই আদ্রিয়ান নিজেই মুখ খুলে দিলো। মিশি হাতের বাদামগুলো বাবার মুখে ভরে দিলো। আদ্রিয়ানের ভীষণ ভাবে ভালোলাগা কাজ করে যখন ছোট্ট মিশি ওকে এমন ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা দেয়। মিশি এবার বাবার কোলে না শুয়ে হাতে বাদাম নিয়ে মা’য়ের কাছে গেলো। আদ্রিয়ান একবার তাকিয়ে আবার কাজে মন দিলো। মিশি টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ডাকলো,
— মাম্মা।
রোদ সাইডে তাকালো। মিশি মুঠ খুলে মা’কে বাদাম দেখালো। রোদ হেসে মুখে তুলে মিশিকেও নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
রোদ আদ্রিয়ানের সাথে সোজা কোন কথা বলছে না। এরিয়ে যাচ্ছে বারবার। আদ্রিয়ান কফির জন্য উঠবে এমন সময় রোদই দুই হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে রুমে ডুকলো। একটা কাপ আদ্রিয়ানের সামনে রেখে নিজে মিশিকে নিয়ে চলে গেল খোলা বড় বারান্দায়। রোদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা এটা। ছোট ছোট অনেকগুলো ফুলের চারা লাগিয়েছে ও এখানে। মিশি টবের নিচে পড়ে থাকা সবগুলো নয়নতাঁরা আর সন্ধ্যামালতি ফুল কুঁড়িয়ে নিচ্ছে। রোদ বাইরে তাকিয়ে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। এদিক থেকে পুরোটা প্রকৃতি বেশ সুন্দর ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। হঠাৎ পেছনে প্রিয় মানুষটার অস্তিত্ব টের পেলো রোদ কিন্তু তবুও নীরবতাই গ্রহণ করে রইলো। আদ্রিয়ান কিছু সময় পর পাশের রেলিং এ হেলান দিলো। দৃষ্টি তার বাইরে বড় ঝার গাছের ওখানে। হঠাৎ বিষাদে মাখামাখি করা কন্ঠ স্বর কানে এলো রোদের। আফসোসের স্বর এটা। কিছু করতে অপারগ সেই ভাষায় ই বলে যাচ্ছে সামনের পুরুষটা,
— জারবা তখন অনেক ছোট। এই ধর সাত কি আট বছরের। জানোই তো কম বুঝে একটু। এখনও কেমন বাচ্চা বাচ্চা। তো তখন তো আরো কম বুঝতো। ওর অবশ্য ওর দোষ না। মস্তিষ্কের বিকাশ সামান্য কম হয়েছে ওর। এটা ডক্টর বলেছে। ও হাঁ যেটা বলছিলাম। তো একবার ফুপি বাসায় এলো জুরাইন, জারা আর তার স্বামী’কে নিয়ে। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু ওনার স্বামীর নজর কিছুটা উলোট পালোট ছিলো। এমনিতে কথা বললে বুঝা দায় যে উনি কতটা নিকৃষ্ট মনের। সবাইকেই আদর করত। একদিন ওনার রুমে কেউ ছিলো না। উনি জারবাকে রুমে নিয়ে রুমে ডুকেন এটা বলে যে জারবার জন্য গিফট এনেছে। জারবা তো বুঝোই কেমন। হঠাৎ আরিয়ান দেখে ফেলতেই তারাতাড়ি ঐ রুমে ডুকে। উনি কিছুটা অপ্রস্তুত হন কারণ জারবা ছিলো তখন তার কোলে। আরিয়ান সেই মুহূর্তে কিছু না বলে জারবাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর একদিন..
আদ্রিয়ান থামলো একটু। রোদের দম গলায় আটকে যেন। কিছু কি অপ্রীতিকর ঘটেছিলো? এই পর্যন্ত অনেকবার রোদ আদ্রিয়ানকে জিজ্ঞেস করেছে যে ফুপির সাথে কি সমস্যা ওর কিন্তু আশাহত হয়েছে বারবার। আদ্রিয়ান ঠিক ঠাক কিছুই বলে নি। আজ সেধেই বলছে। আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— কফি ঠান্ডা হলে মজা পাবে না।
রোদ পলক ঝাপটালো কয়েকবার। চোখ মুখে উপচে পড়া কৌতুহল। কিছুটা ভয়। অপ্রতাশিত কিছু হলো নাকি?
আদ্রিয়ান তা বুঝলো। এতদিনে প্রিয় জনের চোখের দৃষ্টি বুঝার সাধ্য হয়েছে ওর। কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিশি হাত ভর্তি ফুল এনে রোদের কাছে দিলো। রোদের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এগুলো শুধু ফুল না। এগুলো হলো না পাওয়া সব সুখ রোদের। ফুলগুলো হাতে তুলে নিলো। মাথা গেঁধে মিশিকে পড়াবে এগুলো দিয়ে। মিশি খুশি হয়ে আবারও গেলো ফুল কুঁড়াতে কারণ এখনও তো সব কুঁড়ানো হয় নি। ছোট্ট হাতে বুঝি একসাথে এত ফুল আটে? মিশি যেতেই রোদ দৃষ্টি মেলে তাকালো। আদ্রিয়ান শুরু করলো বলা,
— আরিয়ানের বুঝতে বেগ পেতে হয় নি ওই লোকের দৃষ্টি। আম্মু-আব্বুকে জানালো। তারা চিন্তায় পরলেন। ফুপিকে ডেকে বললেন যাতে তার স্বামী’কে বুঝায় নাহলে খারাপ হবে। ফুপির মাথা ছিলো তখন নিচু। চেয়েও গলা উঁচিয়ে বলতে পারেন নি কিছু কারণ ভালোবেসে পালিয়ে গিয়েছিলেন এই পশুর সাথে। ঐ দিন রাতে প্রচন্ড কথা কাটাকাটি হলো ফুপির ওনার স্বামীর সাথে। পর দিন সকালে সব স্বাভাবিক যেন কিছুই হয় নি। দুই দিন পরের কথা। সবাই ছিলাম বাড়ীর পেছনে, ঐ যেদিকে বাচ্চারা খেলে। তো সেখানে ছিলাম আমরা। জুরাইনের জন্মদিন ছিলো। কেক কাটার সময় সবাই থাকলেও জারবা আর ঐ পশুটা ছিলো না। আমি ভয়ে দৌড়ে বাড়ীর ভেতর ঢুকি। এদিক ওদিক খুঁজি কিন্তু পাই নি। হঠাৎ কান্নার শব্দ কানে আসতেই…
কলিং বেল বেজে উঠলো। রোদ কৌতুহল মুখ নিয়েই দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই যেন ওর মাথা ঘুরে উঠলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা’কে এমন অবস্থায় দেখে। একপা ও এগুলো না রোদ। না ধরলো। চিৎকার করে ডেকে উঠলো আদ্রিয়ান’কে। ভয় পেয়ে গেল আদ্রিয়ান। নিজেও দৌড়ে বের হলো।
#চলবে……
[ দেখুন কিছু সময় রেগুলার হবে কিছু সময় ইররেগুলার হবে। এটাই স্বাভাবিক। আমি ইচ্ছে করে লেট করি না। সত্যিই পড়াশোনা নিয়ে বেশ ঝামেলায় ছিলাম। আপনাদের মন্তব্য একান্ত কাম্য।
আর একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, গোল হয়ে কিভাবে ঘুমায়?
হাটু ভাজ করে থুতনিতে লাগিয়ে ঘুমায় বাচ্চারা যেটাকে এককথায় স্নেইল স্লিপ বলে। এটাই হলো গোল হয়ে ঘুমানো।]