#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 27
🍁🍁🍁
রাত আট টা বেজে পনেরো মিনিট। সিমথি মাত্রই হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেছে। সামনে চোখ তুলে সায়নকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। সায়নের হাতে কুন্তি দেখে কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে যায়। সায়নের পাশেই ইফাজ আর রোজ দাঁড়িয়ে আছে।
সিমথি : কি ভাই কোনো হেশেল টেশেলের প্রতিযোগিতায় কুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সিলেক্টেড হয়েছিস নাকি।
সিমথির কথায় সায়ন সহ সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সায়ন হতভম্ব গলায় বলে,,,,
সায়ন : মানে
সিমথি : না মানে কুন্তি হাতে দাঁড়িয়ে আছিস তাই আর কি
সায়ন : চুপ ফাজিল। কুন্তি দিয়ে তোকে মা’র’বো তাই দাঁড়িয়ে আছি ।
সিমথি : বংশের নাম উজ্জ্বল করবি দেখছি। সিরিয়াসলি কুন্তি দিয়ে কখনো মা’র খেয়েছি বলে তো মনে পড়ছে না।
সায়ন : বোন ( চেঁচিয়ে)
সিমথি : ওকে ওকে কুল কুল। বল কি হয়েছে এমন বোম হয়ে আছিস কেনো।
সায়ন : কয়টা ফোন দিয়েছি তোকে।
সিমথি : ওহহহ আসলে আ আমি না ওটি তে ছিলাম তো তোর ফোন ধরতে পারিনি। পরে যখন ফোন হাতে নেয় তো দেখি অফ হয়ে ছিলো। সরি ভাইয়া।
সায়ন : তোকে আজ তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম না।
সিমথি : কেনো আমাকে কি ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে যে তাড়াতাড়ি আসবো। আজব।
সায়ন কিছু বলার আগেই রুবিনা রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।
রুবি : হ আফামণি একদম হক কথা কইছো। জানো আইজকা,,,,
সায়ন : রুবিইই ( দাঁতে দাঁত চেপে)
সায়নের ডাক শুনে রুবি ঢোক গিলে। সিমথি ভ্রু কুঁচকে একবার সায়নের দিকে তাকায় একবার রুবির দিকে তাকায়। তো আবার ইফাজ – রোজের দিকে তাকায়। বাড়ির পরিবেশ টা ও কেমন যেনো লাগছে।
সিমথি : কি হয়ে খোলসা করে বলবে কেউ। বড় আব্বু, তোদের ভালো মা, তোদের দাদিমা, তোদের আদরের বোন তরী আর ভাবীপু কোথায়।
সায়ন : রুমে যা। বিছানায় জামা-কাপড় রাখা আছে ওগুলো পড়ে এখনই নিচে আসবি।
সিমথি : কিন্তু ভাইয়া
সায়ন : পরী রাগ তুলিস না। যা বলছি।
সিমথি : ধ্যাত যাচ্ছি। কোনো আবোলতাবোল ড্রেস দেখলে ডিরেক্ট পুড়িয়ে ফেলবো মাইন্ড ইট। আর আউল-ফাউল কোনো কিছু নিচে দেখলে দেখিস কি করি।
কথাগুলো বলে সিমথি নাক মুখ কুঁচকে রুমে চলে যায়। সিমথি যেতেই সায়ন রুবির দিকে চোখ গরম করে তাকায়। বেচারি সায়নের তাকানো দেখেই দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়। সায়ন হেসে ইফাজ আর রোজের দিকে তাকায়। তখনই সায়নের বড় আব্বু, ভালো মা আর মিম বেরিয়ে আসে।
সিমথি রুমে এসে ফোন চার্জে লাগায়। অতঃপর বেডের দিকে চোখ যেতেই চোখ কপালে। হঠাৎ মুচকি হেসে বেডের দিকে এগিয়ে যায়। সায়নের রাখা ড্রেস টার উপর হাত বুলিয়ে হাতে নিয়ে নেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর ড্রেস টা পড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে চুলগুলো কোমড়ের নিচে নেমে আসে। চোখে হালকা কাজল লাগায়। আর ঠোঁটে হালকা পিংক লিপস্টিক লাগিয়ে নিজেকে আয়নায় পরোখ করে নেয়।
সিমথি : নট ব্যাড। ভালোই লাগছে তোকে সিমথি।
কথাটা বলে নিজে নিজেই হেসে দেয়। অতঃপর সায়নকে দেখানোর উদ্দেশ্য নিচে নেমে আসে। নিচে এসেই সায়নসহ মিমদের ও দেখতে পায়। সিমথি দৌড়ে সায়নের কাছে যায়।
সিমথি : ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া দেখতো আমাকে কেমন লাগছে
সিমথির কন্ঠে সায়ন সহ সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সায়ন সিমথির দিকে স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফর্সা গায়ে নেভি ব্লু শাড়িটা একদম ফুটে উঠেছে। সাথে চুলগুলো ছাড়া। হাতে কিছু কাের ব্লু চুড়ি আর কানে ব্লু ইয়ারিং মুখে কোনো কৃত্রিমতা ছাড়াও হালকা কাজল আর লিপস্টিক যেনো মেয়েটার সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সায়ন হেসে উঠে। ছোট্ট বোনটা অনেক বড় হয়ে গেছে।
সায়নকে চুপ থাকতে দেখে সিমথি সায়নের হাত ঝাঁকায়।
সিমথি : ভাইয়য়য়য়া ( চেঁচিয়ে)
সায়ন : ক কি কি কি হয়েছে চেঁচাস কেনো।
সায়নের কথায় সিমথি দুপা পিছিয়ে যায়। অতঃপর শাড়ির আঁচল হাওয়ায় উড়িয়ে একটা ঘুরান্টি দেয়।
সিমথি : দেখ আমি শাড়ি পড়েছি। বল বল কেমন লাগছে।
সিমথির কার্যকলাপ দেখে সায়ন, ইফাজ, রোজ হেসে উঠে। তরী ও আনমনে হেসে দেয়। সিমথির ছোট থেকেই শাড়ীর উপর আলাদা ঝোঁক। শাড়ি পড়তে ওর ভীষণ ভালো লাগে এটা বাড়ির সবাই জানে। আগে যখন তিনবোন শাড়ি পড়তো তখন সিমথি বরাবর বাড়ির সবাই কে বার বার বলতো দেখ দেখ আমি শাড়ী পড়েছি। আমাকে বউ বউ লাগছে না।
সিমথি : তোরা হাসছিস কেবল কিছুই বলছিস না। ধ্যাতত ( গাল ফুলিয়ে)
_ মাশাল্লাহ ভীষণ সুন্দর লাগছে মা তোমায়।
আচমকা অপরিচিত কন্ঠে সিমথি পেছনে তাকায়। পেছনে তাকাতেই সিমথি টাস্কি খায় আদিদের ফ্যামিলির সবাই কে দেখে। সিমথি মুখ হা করে একবার মেহেরের দিকে তাকায় তো একবার আদির মায়ের দিকে তো একবার চাচীর দিকে। এভাবে সবার দিকে একে একে তাকায়। শেষে আদির দিকে তাকাতেই চোখ থেমে যায়। ব্লু কালার শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত যুবকের দৃষ্টি দেখে সিমথির বুকের ভেতর কেঁপে ওঠে। সারা শরীরে হিমশীতল বাতাস বয়ে যায়। আদি শুকনো ঢোক গিলে। সিমথিকে এই রূপে নজরকাঁড়া সুন্দর লাগছে। আচমকা সিমথির হুশ আসতেই থতমত খেয়ে যায়। মুখের হা বন্ধ করে সায়নের পেছনে গিয়ে লুকায়।
সিমথি : হারামি ভাই আমার। ড্রয়িং রুমে এতো মানুষ আমাকে বলবি না ( ফিসফিসিয়ে দাঁত চেপে)
সায়ন : আসলে তো দেখতিই তাই বলিনি। ( ফিসফিসিয়ে)
সিমথি : উনারা এখানে কেনো ( পুনরায় ফিসফিসিয়ে)
সায়ন : তোদের বিয়ের কথা বলতে।
সিমথি : কিহহহহ ( হালকা চেঁচিয়ে)
মিম : এই তোমাদের গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হলে থামো তো।
সায়ন : ওহ হুমম।
আদির বাবা : সিমথি মা এদিকে এসো।
সিমথি : এ্যাঁ
হঠাৎ তিন্নি মেহেরের কোল থেকে নেমে দৌড়ে সিমথির কাছে চলে যায়। সিমথির দুপা জড়িয়ে ধরে।
তিন্নি : তুমি আমাল কাকিমা হবে।
তিন্নির কথায় সবাই মিটিমিটি হাসে। সিমথি জোর পূর্বক হেসে তিন্নির কাছে হাঁটু গেড়ে বসে।
সিমথি : তিন্নি সোনা কেমন আছো।
তিন্নি : ভালো।
সিমথি : আ আমি একটু আসছি।
ইফাজ : এই কোথাও যাবিনা গেলেই শাড়ি পাল্টে ফেলবি।
সিমথি : ভাই হয়ে এমন খুরাফাতি গিরি করছো কেনো আমার সাথে। এটার জন্য আমাকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলি তুই ভাইয়া।
সায়ন হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। সিমথি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এখন কি করবে। কিছু একটা ভেবে আদির মায়ের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। এতে আদির মা কিছু টা থতমত খেয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে হাসে।
সিমথি : আপনারা এখানে বিয়ের কথা বলতে এসেছেন।
শাওনের বাবা : হুমমম। একদম পাকা কথা বলতে এসেছি।
সিমথি : আপনি রাজি তো আমার মতো মেয়েকে নিজের একমাত্র ছেলের বউ করতে। আন্টি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি।
আচমকা সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে সবাই থতমত খেয়ে যায়। সায়নরা একে অপরের দিকে তাকায়। একটু আগেই তো হাসিখুশি ছিলো। সায়ন কপাল চাপড়াই।
সায়ন : এই মেয়ের মাথায় কখন কোন ভূত চাপে গড নোজ। ( বিরবিরিয়ে)
সিমথি : আমি কি আপনার নীরবতাকেই আপনার উত্তর ভেবে নেবো।
সিমথির কথায় এবার আদির মা উঠে এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়। আলতো হেসে সিমথির গালে হাত রাখে। মেয়েটার মুখে মায়ায় ভরা। কেউ যদি গভীর দৃষ্টিতে তাকায় তাহলে এই মেয়ের মায়ায় পড়তে যেকেউ বাধ্য।
আদির মা : হুমম আমি রাজি। প্রথমে একটু অমত করেছিলাম কারণ তোমার পেশা টা আমার একটু নয় অনেকখানি অপছন্দের ছিলো। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার ছেলের খুশি মা হয়ে কেনো কেড়ে নেবো। তুমি মেয়ে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। আর বাদ বাকি রইলো তোমার পেশা তোমার ডাক্তারি ,,,
সিমথি : আমি ডাক্তারি টা ছাড়তে পারবো না আন্টি। আমি ডাক্তার হবো এটা আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন ছিলো। আর নিজের স্বার্থের জন্য কখনো আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন আমি ভাঙতে পারবো না। এই জায়গা টায় আসতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। বাবাই হয়তো আমার কাছে নেয় কিন্তু আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন টা আমার কাছে আছে। এটা আমি কখনো ছাড়তে পারবো না। এতে যদি আমার বিয়ে আপনার ছেলের সাথে না ও হয় আমি রাজি। আমার কাছে সবার আগে আমার বাবাইয়ের স্বপ্ন বাকিসব পরে। এবার ডিসিশন ইজ ইউর। হয়তো আমি নিজের লাইফ টা একটু পাল্টাতে পারবো বিয়ের পর বাট আমি ডাক্তারি কোনো শর্তে ছাড়তে রাজি নয়।
সিমথির কথায় আদির গলা শুকিয়ে আসে। একবার মায়ের দিকে তো একবার সিমথির দিকে তাকায়। দুজনই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। হঠাৎ সবাই কে অবাক করে দিয়ে আদির মা নিজের গলা থেকে একটা চেইন খুলে সিমথির গলায় পড়িয়ে দেয়।
আদির মা : এটা আমার শ্বাশুড়ি মা আমি যেদিন প্রথম বিয়ে করে বাড়িতে পা রেখেছিলাম সেদিন দিয়েছিলো। আমার শাশুড়ি মা আমাদের তিন বউকেই এমন চেইন দিয়েছিলো। এটা আমাদের বাড়ির নিয়ম। প্রত্যেক ছেলের বউকে সোনার চেইন দিয়ে মুখ দেখার। আমার শ্বাশুড়ি মাকে উনার শ্বাশুড়ি দিয়েছিলো। আর উনি ছেলের বউ হিসেবে আমাকে দিয়েছিলো। আমি আজ বাড়ির বউ হিসেবে এটা তোমাকে আগাম দিয়ে রাখলাম। এই যে এটা দিলাম এখন থেকে এটার ঐতিহ্যে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার চৌধুরী বাড়ির দ্বিতীয় বউ হিসেবে।
আদির মায়ের কথায় সিমথি স্তব্ধ হয়ে যায়। সিমথি ভেবেছিলো হয়তো আদির মা রাগারাগি করে চলে যাবে কিন্তু এটা কি হলো। মুহুর্তেই আদির থেমে যাওয়া দম আবারও চলতে শুরু করে। ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠে একটা প্রাপ্তির হাসি। নীরব খান, সীমা বেগম এগিয়ে গিয়ে আদির মা-বাবার সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে শুরু করে। আদিবারা খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে। মেহের, আদিবা, ইশান, রোজ এসে সিমথিকে ঘিরে ধরে। আদির মা হেসে সোফার দিকে অগ্রসর হয়। সিমথি এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শাওনের বাবা : তাহলে সামনের মাসে প্রথম শুক্রবার বিয়ের আয়োজন করা হোক। কি বলেন আপনারা।
নীরব খান : অবশ্যই কেনো নয়।
সীমা বেগম : ছেলে-মেয়ে রাজি আমরা কেনো ভিলেন হবো।
দূর থেকে রহিমা বেগম সবকিছু দেখে মুখ বাকায়।
রহিমা বেগম : তা এমন অপয়া মাইয়ারে নিয়া কি নিজের পোলাডারে অকালে হারইতে চাইতাছেন নাকি আপনারা।
আচমকা রহিমা বেগমের কথায় সবাই চমকে উনার দিকে তাকায়। সিমথি হেসে উঠে। এটারই অভাব ছিলো। রহিমা বেগম সিমথিকে হাসতে দেখতে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
রহিমা বেগম : ওই মাইয়া হাসোস কেরে। আমি খারাপ কিতা কইছি। তোর লাইগাই তো আমার আহনাফ টা,,,
নীরব খান : আহ মা থামবে তুমি।
সিমথি : বড় আব্বু বলতে দাও উনাকে। নয়তো এসিডিটি হবে।
রহিমা বেগম : সিয়া। আমার লগে ফাজলামি করবি না। আর হাসতাছোস কেন ক আগে।
সিমথি : আপনার সাথে আমার ফাজলামি করার স্বভাব না আর না সেই সম্পর্ক আমি তৈরি করেছি।
রহিমা বেগম : আমি তোর দাদি লাগি
সিমথি : মানি না।
রহিমা বেগম : কি কইলি। সায়ন তুই তোর বইনরে,,,
সিমথি : ভাইয়া আমি রুমে যাচ্ছি। উনি এখান থেকে গেলে ডাক দিস আবার আসবো। আপাতত মেজাজ চটাতে চাইছি না।
রহিমা বেগম : তুই আমারে দেইখা পথ বদলালে কি হইবো তোর গায়ে তো আমার রক্তই বইছে। পারবি সেই রক্ত বদলাইতে।
সিমথি : আমার জানামতে আপনি এই বাড়ির মেয়ে না বউ ছিলেন এখন শ্বাশুড়ি, দাদি ব্লা ব্লা হয়েছেন।এ বাড়ির পুরুষদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক আর মেয়েদের সাথে। আপনার সাথে আমার রক্তের নয় বংশের মিল আছে। যায় হোক আমি আসছি।
রহিমা বেগম কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিমথি মাছি তাড়ানোর মতো হাত উড়িয়ে চলে যায়।
তরী : নানি আজকের দিনটা অন্তত চুপ থাকো। প্লিজ রুমে যাও।
রহিমা বেগম : তোর আবার কিতা হইলো।
সীমা বেগম : মা তুমি কি যাবে।
রহিমা বেগম ভেংচি কেটে চলে যায়। নীরব খান সবার দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে মাফ চাই।
নীরব খান : কিছু মনে করবেন না। আসলে সিমথির চেহারার সাথে ওর মায়ের চেহারার কিছু টা মিল থাকায় মা সিমথির সাথে এমন করে। তবে সিমথির চেহারা মায়ের মতো হলেও স্বভাবে বাবার মতোই হয়েছে। আহনাফের তেজ ছিলো আমাদের বাবার মতো। আহনাফের রাগের সাথে, কাজে সাথে আমাদের বাবার মিল পাওয়া যেতো। আহনাফের সাথে এখন সিমথির মিল আছে। তবে বলা বাহুল্য সিমথির তেজ, রাগ, বিচক্ষণতা সবই আহনাফের থেকে একটু বেশি। আসলে মা তানিশা কে ( সিমথির মা) আহনাফের বউ করতে চাইনি। মায়ের পছন্দ ছিলো অন্য একজন মেয়ের। তানিশারা একটু গরিব ছিলো। তাই মায়ের তানিশাকে পছন্দ ছিলো না। তো এজন্যই মা আর সিমথির মধ্যে কখনো মন বা মতের মিল হয় না। এজন্যই মা এমন করে। মায়ের হয়ে আমি আপনাদের কাছে মাফ চাইছি।
শাওনের বাবা : আরে না না আমরা বুঝতে পারছি ভাইসাব। সবাই পছন্দ এক হয় না। আর আমাদের সিমথিকে ভীষণ পছন্দ।
এভাবে কথাবার্তা চলতে থাকে। আদিবারা এই ফাঁকে আদি কে নিয়ে সিমথির রুমে চলে যায়। সায়ন রান্নার দিকটা দেখতে চলে যায়। একমাত্র বোন বলে কথা।
আদিবারা পা টিপ টিপে সিমথির রুমে প্রবেশ করে। পুরোটা রুম একদম সাজানো গোছানো।
ইশান : ভাই আমার রুম জীবনে এতো পরিপাটি থাকে না।
আদিবা : তুমি তো জঙ্গলি একটা।
আদিবার কথায় ইশান আদিবার মাথায় চাটি মারে। আদিবা চোখ গরম করে তাকাতেই ইশান বোকার মতো হেসে দেয়।
মেহের : সিমথি কোথায়।
সিমথি : মেহের ভাবী আমি বারান্দায়।
সিমথির আওয়াজে সবাই বারান্দায় যায়। সিমথি ওদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পেছন ঘুরে রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর আদির দিকে তাকায়।
সিমথি : আপনার মা হঠাৎ রাজি হয়ে গেলো কিভাবে। কি কীর্তি করেছেন শুনি তো।
আচমকা সিমথির এহেন কথা আদি চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
আদি : কেনো তোর বিয়েতে আপত্তি নাকি।
সিমথি : কথা প্যাঁচাবেন না তো জিলাপির মতো। এন্সার দেন।
আদি : জানিনা রে। কাল রাতে হুট করে ডিনার টেবিলে মা বললো।
সিমথি : এ্যাঁ
মেহের : হুমমম। আমরা ও তোমার মতোই অবাক হয়েছিলাম। হঠাৎ কি হলো বুঝলাম না।
সিমথি : ভাবার বিষয়। সে যায় হোক আপনি আমাকে জানালেন না কেনো আজ আসবেন। আর কখন আসলেন বলুন তো।
আদি : যখন সায়ন কুন্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো তখন।
সিমথি : ওহ আচ্ছা। কিহহহহ
আদি : জ্বী ম্যাডাম। আমি তো ভেবেছিলাম দু একটা পড়বে আপনার পিঠে।
সিমথি : ভাইয়া আমাকে কখনোই মারেনি। আর আজ মারবে এটা ভাবেন কেনো হুহহ।
আদি : সেই কখন থেকে আপনি আপনি করছিস একটু তুমিও তো বলতে পারিস।
সিমথি : পারবো না।
আদি : কালকে তো ঠিকই বলেছিলি।
সিমথি : বলেছিলাম বুঝি। কি জানি শর্ট টাইম মেমোরি লস হয় আমার বুঝলেন।
আদি : ফাজলামি করছো আমার সাথে
সিমথি : আপনি কি আমার বেয়াই লাগেন যে ফাজলামি করবো। আপনি তো আমার,,,
আদি : কি লাগি তোর বল
আদির দিকে তাকিয়ে সিমথি ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি মাখা হাসি দেয়। অতঃপর আদির দিকে দু পা এগিয়ে যায়।
সিমথি : আপনি তো আমার ভাইয়া বন্ধু ভাইয়য়য়য়া লাগেন। তাইনা ভাইয়া।
সিমথির কথায় আদিবারা হেসে দেয়। আদি চোখ পাকিয়ে সিমথির দিকে তাকায়। বিনিময়ে সিমথি একটা টেডি স্মাইল দেয়।
চলবে,,,,,
( কেমন হচ্ছে জানাবেন। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ)