মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 58

0
211

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 58

🍁🍁🍁

রাত বারো টা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট৷ মেঘাকে বাসর ঘরে বসিয়ে সিমথিরা বাইরে আসে। প্রায় অনেকক্ষণ হলো ছেলেদের কোনো দেখা নেই। কোথায় গেলো। এদিকে রাত ও হচ্ছে। সিমথিরা সবাই মিলে ছাঁদের উদ্দেশ্যে যায়। ছাঁদে পা রাখতেই সিমথিদের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। একেকজন একেক জায়গায় বসে কেমন মাতলামি করছে। সিমথিরা পুরোটা বিষয় ক্লিয়ার করতে কয়েক পা এগিয়ে যায়। তখনই সূর্য রা সিমথির সামনে আসে।

সূর্য : ভাবী দেখুন না কতক্ষণ ধরে মাতলামি করছে সবাই।

সিমথি : ওরা কি ড্রিংক করেছে।

আফিন : হুমম।

মেহের : একটু পর বাসর আর এখন এরা ড্রিংক করছে।

সিমথি : আপনারা করেননি।

সিমথির কথায় সূর্য রা সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে না করে। তখনই তুহিন এসে রোজের সামনে দাঁড়ায়। টলতে টলতে রোজের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,,,,

তুহিন : ত তুমি তততখন আআমাকে ভাইইয়য়া কককেন ডাকললে। আমি ত তোমাকে আআমার বাবুরর মাহহহ বানননাবো। আআআর তুমমি আআমাকে মমমামা বানাতে চাইছো।

তুহিনের কথায় রোজ হতভম্ব হয়ে যায়। বাকিরা সবাই আশ্চর্য দৃষ্টিতে তুহিনের দিকে তাকায়। আদিরা হাত তালি দিয়ে বলে,,,

আদি : এএএই ননা হলে ভালললোবাসসসসা। তুহিন কোলে আসো ভাইই।

সায়ন : চিন্তা নননেই তততোকেই রোজকে দদদেবো।

সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে তুহিনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রোজকে আড়াল করে। তুহিন ভ্রু কুঁচকায়।

তুহিন : সসসসব সমমময় আআআমার পপ্রেমে ব্যাগড়া দদেওয়ারর চচচাকরী নিয়েছিস। বড় শশশা/লললি।

সঙ্গে সঙ্গে সিমথি তুহিনের গালে এক থাপ্পড় মারে। তুহিন গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে তাকায়।

তন্ময় : ববববাহ আআআজ আমার গগাল টটটা বেঁচে গগগেলো। আলাবু তোনা।

সিমথি কপালে আঙ্গুল ঘষে জোরে একটা শ্বাস নেয়। সব মাতাল এক হয়েছে। একটু দূরে রিক আর আয়াশকে দুলতে দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

সিমথি : সূর্য ভাইয়া আপনারা আয়াশ ভাইয়া কে রুমে দিয়ে রিক ভাইয়া, তুহিন আর ইফাজ ভাইয়াকে নিয়ে যান। তারপর ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত হয়েছে অনেক।

আফিন : কিন্তু বাকিদের কি হবে।

সিমথি : আমরা সামলে নিচ্ছি।

সিমথির কথানুযায়ী সূর্যরা তিনজনে ওদের ধরে বেঁধে নিয়ে যায়।

সিমথি : মেহের ভাবী, ভাবীপু তোমাদের বর সামলাও। সিনহা তন্ময়কে নিয়ে রুমে যাও। তরী, রোজ, রোদেলা, আদিবা, তুহা তোমরা ও রুমে যাও।

মেহের : আর আদি।

সিমথি : এনার নেশার ভূত ছাড়াবো আজ। কখনো সিগারেট তো কখনো মদ। আজ তোমার দেবরের হচ্ছে।

সিমথি দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলে আদির দিকে তাকায়। মেহেররা হাসতে হাসতে শাওনদের নিয়ে নিচে চলে যায়। ছাদে থেকে যায় সিমথি আর আদি। আদি আকাশে তারা গুনছে। সিমথি পেছন থেকে আদির হাত টেনে নিজের দিকে ফেরায়। আদি নিভু নিভু দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথিকে দেখে বড় একটা হাসি দেয়।

আদি : সসসিয়াজজান আমি তোকে ভালোবাসি। আজ ততোকে ভীষণ সুন্দর ললাগছে।

সিমথি : জাতে মাতাল তালে ঠিক।

আদি : কিছু বললি।

সিমথি : নিচে চলুন৷

আদি : নাহ যাবো না।

সিমথি : আদি রাগ উঠিও না। রুমে চলো। রাত বাজে একটা আর উনি রাসলীলা করছে।

আদি : রাসলীলা ররাইট। চল আআমরাও করি।

সিমথি : কিহহ

আদি : রাসলীলা।

সিমথি : চুপচাপ রুমে চলো। আর একটা কথা বললে মাথা ফাটিয়ে ফেলবো ( ধমকে)

সিমথির ধমকে আদি চুপ হয়ে যায়। সিমথি আদিকে টানতে টানতে নিচে নামে।

আদি বিছানায় গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সিমথি ফ্রেশ হয়ে এসে আদিকে আগের অবস্থায় দেখে দাঁতে দাঁত চেপে আদির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

সিমথি : এখনো চেঞ্জ করলে না যে।

আদি : নাচবো।

সিমথি : কিহহ।

আদি : হ্যাঁ। আমি আর তুই নাচবো।

সিমথি : ইম্পসিবল। এতোরাতে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ নাচে।

আদি : আমি নাচি।

সিমথি : তুমি তো মাতাল।

আদি : সিয়াজান একটু নাচবো। পরে চেঞ্জ করে ঘুমাবো সত্যি।

সিমথি : নো মিনস নো

আদি : তাহলে আমিও এভাবেই থাকবো।

সিমথি : আদি প্লিজ ( ইনোসেন্ট ফেস করে)

আদি : প্লিজ

অগত্যা সিমথি ধুপধাপ পা ফেলে গান চালাতে নিলে আদি এসে গান চালায়। ” তেরি মেরি ” গান চালিয়ে রুমের লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে। বেশকিছু ক্ষণ নাচার পর আচমকা আদি সিমথিকে কোলে তুলে নেয়।

সিমথি : আরেহহ কি করছো।

আদি : এখন নাচবো না।

সিমথি : তো কোলে নিলে কেনো

আদি : এখন রোমান্স করবো। মুড এসে গেছে।

সিমথি : এইইই ছাড়ো।

আদি সিমথির দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। আদির ঘোরলাগা দৃষ্টি দেখে সিমথি চুপ হয়ে যায়। সারাদেহে কাঁপন ধরে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। আদি সিমথির উপর ঝুঁকে ঠোঁটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায়। সিমথি চোখ বুঁজে নেয়। অতঃপর সিমথির গলায় মুখ ডুবায়।

মেঘা : এমন মাতালের মতো কি দেখছো।

আয়াশ : আমার বউকে।

আয়াশের কথায় মেঘা কেঁপে ওঠে। আমার বউ কথাটা পুরো হৃদয় কাঁপিয়ে তুলেছে আজ। আচমকা আয়াশ মেঘার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে। মেঘা চমকে আয়াশের দিকে তাকায়। কিন্তু আয়াশের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বেশকিছু ক্ষণ পর মেঘাও আয়াশের ডাকে সাড়া দেয়। আরো দুইজন ভালোবাসার মানুষ আজ একে অপরকে ভালোবাসার সাতরঙে রাঙাবে।

_____________

সকাল দশটা বেজে পয়ত্রিশ মিনিট। কাল ড্রিংক করায় ছেলেরা অনেকেই এখনো ঘুমে। আপাতত ড্রয়িংরুমে সিমথিরা বসে আছে। আদি রা এখনো বেঘোর ঘুম৷ সিমথি মেহেরের কাঁধে মাথা রেখে মেহেরের শাড়ির আঁচল নিয়ে একবার কুন্ডলী পাকাচ্ছে আবার ছাড়াছে। তখনই সূর্য, আফিন, আহাত ওখানে এসে ওদের পাশে বসে। আদিবা একপলক সূর্যর দিকে তাকায়। চোখাচোখি হতেই সূর্য চোখ টিপে দেয়। আদিবা থতমত খেয়ে দৃষ্টি ফেরায়। সিমথি আড়চোখে ওদের পরোখ করে মুচকি হাসে।

সিমথি : প্রেমের মরা জলে ডুবে না।

মেহের : কিছু বললি

সিমথি : হুমম বলছি মেঘার কি এখনো বাসর শেষ হয়নি। বড়রা কি ভাবছে।

রোদেলা : কি আর ভাববে। ওরা ও এই সময় পার করেছে।

সিমথি : হোপসসস৷

তখনই ওখানে একে একে তুহিনরা হাজির হয়। সিমথি ওদের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজের কাজে ব্যস্ত। শরীর টা ভালো লাগছে না। তাই কালকের রাতের ঘটনা ধামাচাপা দিলো।

তন্ময় : যাহ সবাই দেখি চুপচাপ।

রোদেলা : তো কি নৃত্য করবো।

তুহিন : করতেই পারিস। এ ছাড়া আর কি পারিস তোরা।

সিমথি : ঝগড়া করবি না। চুপচাপ থাক। ( বিরক্ত হয়ে)

তখনই ওখানে আয়াশ-মেঘার দাদি আর মায়েরা আসে।

আদিবা : বউমণি শরীর খারাপ লাগছে তোমার।

আদিবার কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকায়। আসলেই চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।

আদি : সিয়া কি হয়েছে। বললি না তো আমায়।

সায়ন : কি রে পরী বল কিছু

সিমথি : কিছু হলে তো জানতেই। এমনি জাস্ট ভালো লাগছে না৷

আয়াশের দাদি : আরে মাইয়ার চোখ – মুখ দেইখা তো মনে হইতাছে পোয়াতি। তা মা সিমথি কয় মাস। সুখবর টা জানাইলা না আমগোরে।

আয়াশের দাদির কথায় সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হতভম্ব হয়ে আয়াশের দাদির দিকে তাকায়। সায়ন আর ইফাজ মাথা নিচু করে নেয়। যতই হোক বোন তো। সিমথি সায়ন আর ইফাজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। তবুও সেটা ভেতরে চেপে রাখে।

সিমথি : আসলে দাদি,,,

আয়াশের দাদি : আরে বুঝছি সরম পাইছো এল্গায় কও না। কিন্তু আমি তো ঠিকই ধইরা ফেলাইলাম। যায় হোক আদি তোর বাপ- মারে জানা।

আদি : না মানে

আয়াশের মা : লজ্জা পাচ্ছিস কেনো। এটা তো খুশির সংবাদ।

সিমথি বোকার মতো একবার এর দিকে তো একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। ওকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না। কি আজব। এদিকে তুহুন রা চোখের ইশারায় ফাজলামো শুরু করেছে। সিমথি বিরক্তির শ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে নেয়।

আয়াশের দাদি : এই সময় আবার বউয়ের কাছে যাস না যেনো এতে অনাগত সন্তানের ক্ষতি হবে।

আয়াশের দাদির কথায় আদি বিষম খায়। ছোট ভাই বোনের সামনে এমন লজ্জায় পড়তে হবে জানলে কখনোই আসতো না রুম থেকে।

সিমথি : সাত মাস কোমায় থাকাকালীন মানুষ কিভাবে কনসিভ করে দাদি।

সিমথির কথায় সবাই এবার সিমথির দিকে তাকায়।

আয়াশের দাদি : কি কইবার চাও তুমি আমি ভুল বলতাছি।

সিমথি : আরেহ দাদি রাগ করেন কেনো। সন্তান যার হবে সেই নিশ্চয় ভালো বলতে পারবে। আর আমি বিগত সাত মাস কোমায় ছিলাম। এটা কিভাবে সম্ভব।

আয়াশের দাদি : আরে সব সম্ভব।

সিমথি : আহা। যাক। তাহলে কনসিভ করার নতুন পথের দেখা মিললো। কনসিভ করতে হলে কোমায় যেতে হবে। কোমা থেকে ফেরার চারপাঁচ দিন পরই তাহলে সেই ব্যক্তি প্রেগন্যান্ট। বাহ কষ্ট ও কমলো সময় ও সাশ্রয় হলো।

সিমথির শেষের কথায় ছোট বড় সবাই বিষম খায়। এই মেয়ে এতো স্পষ্টবাদী কেনো।

সিমথি : মেঘা তুই চাইলে ট্রাই করতে পারিস।

আয়াশের মা : তার মানে তুই বলতে চাইছিস

সিমথি : উফফস এটাও কি ভেঙে বলতে হবে কেনো প্রেগন্যান্ট হয়নি। আমি রুমে যাচ্ছি।

সিমথি আর থাকতে না পেরে রুমে চলে যায়। আয়াশের দাদিও গোমড়া মুখে চলে যায়। এতো বছরের সব তাহলে বৃথা। মুখ দেখে পোয়াতি চিমতে উনি এখনো সম্পূর্ণ পারে না। আয়াশের মা-দাদিরা যেতে ই আদি হাফ ছেড়ে বাঁচে।

রিক : বেচারী বোন আমাদের লজ্জায় চলেই গেলো।

চলবে,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here