মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 56

0
202

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 56

🍁🍁🍁

আচমকা ফ্লোরের লাইট অফ হয়ে যায়। জ্বলে উঠে রঙিন লাইট। সেই সাথে ফুল সাউন্ডে বক্সে বেজে উঠে Anakh marey গানের সুর। ডান্স ফ্লোরে লাইটের ফোকাস যেতেই ভেসে ওঠে তন্ময় আর তুহিনের চেহারা।

Ho dil dhadkaaye
Arry seeti bajaye
Haye dil dhadkaaye, seeti baajaye

Beech sadak pe nakhre dikaye
Saare, oh karke ishare
Ho ladki aan..aan..aann.

Ho ladki aankh marey (3)

লাইটের ফোকাস অন্যদিকে যেতেই সবাই ওদিকে তাকায়। লাইটের আলোয় ভেসে আসে রোদেলার মুখ। আবারো গান বেজে ওঠে।

Jahaan jahaan jaaun
Mere peeche peeche aaye
Gali gali ke ashik
Dono mera hona caahaae

এবার তিনজনই একসাথে নেচে উঠে। গানের অর্ধেক হতেই পুরো ফ্লোরের আলো নিভে যায়। সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। তখনই বক্সে চিরচেনা গানের সুর ভেসে আসে। গান বেজে উঠতেই আলো চলে আসে। ফ্লোরে চোখ যেতেই সবাই আকাশ থেকে পড়ে। তুহিন, তন্ময় লুঙ্গি পড়ে আছে চোখে কালো চশমা।

Moochhon ko toda rpund ghumake
Ahnna ke jaisa chasma lagake
Coconut me lassi milake
Aa jaao sare mood banake ( 2)

All the rajini fans – thalaivar
Don’t miss the chance – thalaivar (2)
This
Lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch

এবার তুহিন আর তন্ময়ের পেছন থেকে সিমথি আর রোদেলা বেরিয়ে আসে। দুজনের ড্রেসআপ দেখে উপস্থিত সবার মাথা ঘুরে যায়। সবার মাঝে সিমথিকে নাচতে দেখে উপস্থিত সবাই যেনো পৃথিবীর নবম আশ্চর্য দেখলো। কি আজব এরা দুজনও লুঙ্গি পড়েছে।

Jaddho jawaani bada
Jor si ve jaalma
Main tah rajini da
Fan si ve jaaalma

Disko me jab ye gana bajega
On the floor aana padega
Lunghi ko uthana padega
Step karke dikaana padega( 2)

All the rajini fans – thalaivar
Don’t miss the chance – thalaivar (2)
This
Lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch lungi danch

গানের শেষ পর্যায়ে আয়াশ মেঘার কাজিনসহ ফ্রেন্ডসার্কেলের সবাই ইশানরা ও ডান্স ফ্লোরে গিয়ে নাচতে শুরু করে। মুহুর্তের মধ্যেই পুরো বাড়ি মেতে উঠে। এই সুন্দর মুহূর্তটা ক্যামেরাম্যান ভিডিও করে নেই। আয়াশ আর মেঘা আশ্চর্য হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।

এরই মাঝে আবারো গান বেজে ওঠে ” তুমি ছুঁয়ে দিলে হায় “। এবারের গানে সবাই থমকে যায়। আয়াশ আর মেঘা ফিক করে হেসে দেয় । সিমথি চোখ-মুখ কুঁচকে নেয়। এই গান টা ওর সবচেয়ে বিরক্তির।

সিমথি : এই কেরে বাজালো এটা।

আচমকা আদি সিমথির হাত টেনে নাচ শুরু করে। আদি – সিমথির দেখাদেখি সবাই আবারো হুড়াধুড়া নাচ শুরু করে। সিমথি আদির থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে নিলে আদি চোখ পাকায়। সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। নাচের এক পর্যায় সায়নরা গিয়ে আয়াশ কে টেনে নিয়ে আসে। সিমথিরা গিয়ে মেঘাকে নিয়ে আসে। এবার দুইজনের ফ্রেন্ড সার্কেল ব্যতিত বাকিরা ডান্স ফ্লোর ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। আয়াশের ফ্রেন্ডরা একসাইডে চলে যায়। সিমথিরা এক সাইডে চলে যায়। মিউজিক বক্সে আবারো বেজে ওঠে ” মেরে ইয়ার কি সাদি হে “।

রাত তিনটায় ওদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। তাও বড়দের বকাঝকায়। সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে যে যার নির্ধারিত রুমে চলে যায়। অতঃপর যে যেভাবে পারে সেভাবেই শুয়ে পড়ে।

____________

বরপক্ষ – কনেপক্ষ যদিও একই রিসোর্টে কিন্তু আদিরা মজার জন্য আয়াশকে বর সাজিয়ে গাড়ি করিয়ে পথ ঘুরিয়ে আবারো রিসোর্টে নিয়ে আসে। দরজার সামনে আসতেই ইয়াবড় ফিতা দেখে আয়াশরা হাসে। ফিতার এপাশে আয়াশ, আদিরা আর ওপাশে রোদেলারা।

আয়াশ : কি চাই শ্যালক-শ্যালিকাগন’স

রোদেলা : আরে বাহ আমাদের দুলাভাই তো একস্ট্রা অর্ডিনারী। তা দুলাভাই ঝটপট ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে দেন তো।

আয়াশ : কেনো আমার বউ আমি নেবো টাকা কেনো দেবো।

তুহিন : বাহ রে সিমথির বিয়ের সময় ও তো টাকা নিলাম।

আয়াশ : সেটাই তো। এক বন্ধু তো টাকা দিয়েছে আমি দিয়ে কি করবো।

তরী : কি আশ্চর্য এক বন্ধু টাকা দিয়ে কি দুইজনকে নিয়েছে নাকি। কি হলো আদি ভাইয়া আপনি কয়জনকে নিয়েছেন।

____

আদির জবাব না পেয়ে তরীরা আদির দিকে তাকায়। আদিকে এদিক ওদিক উঁকি দিতে দেখে সবার ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

রোজ : কাউকে খুঁজছেন।

আদি : সিয়া কোথায়৷

আদির কথায় সবাই মুখ টিপে হাসে। আদির হুশ ফিরতেই থতমত খেয়ে যায়। মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকায়। আদির চোরাভাব দেখে এবার সবাই সশব্দে হেঁসে দেয়।

আয়াশ : ভাই বিয়ের এক বছরের উপরও এভাবে চোখে হারাস।

আদি : একবছর কি কাছে ছিলো নাকি। সাতমাস তো দূরেই ছিলো। তারজন্য না দেখলে খালি খালি লাগে। তুই এসব বুঝবি না। বর বরের মতো রুমাল মুখে চুপ করে থাক।

আয়াশ : হাহ কি প্রেম রে ভাই তোদের দু’জনের। আর আমি কি ওদের কাছে নতুন নাকি। যে রুমাল চেপে লাজুক হাসবো।

রিক : হ ভাই তুই পারলে আজই বাসর করিস।

আয়াশ : বাসর তো আজই হবে।

সায়ন : ভাই চুপ কর। একটু লজ্জা রাখ।

আয়াশ : নিজে বিয়ে করে আমার ভোলাভালা বান্ধবী কে মা বানিয়ে দিলি আর এখন আসছিস জ্ঞান দিতে।

আয়াশের কথায় সায়ন চুপ মেরে যায়। এই ছেলের সাথে কথা বলা মানেই ইজ্জত রফাদফা।

শাওন : আরে গেট ছাড়ো ভেতরে যাবো আমরা।

আদিবা : বললেই হলো আগে টাকা পরে ছাড়াছাড়ি।

আয়াশ : আরে ভাই টাকা দিয়ে দে। আমার বউটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আদি : আরেহ থাম তোরা। এই রোদ সিয়া কোথায়। গেটে আসলো না যে। দাঁড়াও ফোন করছি।

আদি ফোন বের করে কানে ধরে। এদিকে রোদেলা কিছু বলার আগেই ওখানে সিমথি আসে।

সিমথি : আরেহ এখনো এখানে কি ক,,,,

আদির দিকে তাকিয়ে সিমথির কথা বন্ধ হয়ে যায়। হা করে আদির দিকে তাকিয়ে থাকে। শুকনো একটা ঢোক গিলে গলা ভেজানোর জন্য কিন্তু কোনো কাজ হয়না। এই ছেলেকে এতো সুদর্শন হতে কে বলেছে। ইশশ কালো রঙ টায় কি সুন্দর লাছে। সিমথি আদির পা থেকে মাথা অবধি স্কেন করে। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট। শার্টের উপর জ্যাকেট। হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, পায়ে ব্ল্যাক – ওয়াইট সংমিশ্রণে সু। এই ছেলে কি এখানে শোক পালন করতে এসেছে। এতো কালো পড়তে কে বলেছে। সিমথির হাত কাঁপতে কাঁপতে একসময় ফোনটা নিচে পড়ে যায়।

এদিকে আদিরও সেইম অবস্থা। সিমথি কে দেখে ফোন কানে নিয়েই থমকে যায়। দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। একপর্যায়ে ফোনটা গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। বুকের ভেতর টা কেঁপে ওঠে। ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা ফুটে উঠেছে। শাড়িটা হাতে রাখা। কানে পানি কালার এয়ারিং, গলায় বাসর রাতে আদির দেওয়া একটা নতুন প্যানডেড পানি কালার। হাতে কালো – সিলভার কালারের সংমিশ্রণে চুড়ি জোড়া। ঠোঁটে ডার্ক রেড লিপস্টিক। মুখে কালকের মতোই হালকা প্রসাধনী। চুলগুলো একসাইডে সিথি করে সামনে দিয়ে কেমন করে হালকা বেঁধে ডান সাইডে এনে রাখা। বাম কানের সাইডে গোলাপ ফুল গুজা। আদি একটা শুকনো ঢোক গিলে।

সিমথি – আদির অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসে। এরা হুটহাট একে অপরকে দেখে থমকে যায় এটা সবার জানা। কিন্তু এভাবে যে থমকায় এটা দেখেঔই সবাই অবাক। রোদেলা দুষ্টু হেসে সিমথির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,

রোদেলা : কি সোনা জামাইকে এভাবে দেখে কি আবারো বাসর করতে মন চাইছে।

সিমথি ঘোরে থেকেই হুমম বলে উঠে। রোদেলা পেট চেপে ধরে মুখ টিপে হাসে। আবারো ফিসফিসিয়ে বলে,,,

রোদেলা : আদি ভাইয়া কে কাছে পেতে মন চাইছে নাকি হিংসে হচ্ছে এতো সুন্দর লাগায়।

সিমথি : দুটোই

রোদেলা : বুকের ভেতর টা ধকধক করছে

সিমথি : হুমমম

রোদেলা হাসতে হাসতে তন্ময়ের বাহুতে মাথা ঠেকায় এই মেয়ে যদি হুঁশে থাকতো তাহলে এসব বলার জন্য নির্ঘাত ওর গালে চপাট চপাট পড়তো। আর এখন ঘোরে থাকায় সব বলে দিচ্ছে। এসব ভেবেই রোদেলা এবার শব্দ করে হেঁসে দেয়। রোদেলার সাথে বাকিরা ও হেঁসে দেয়। আচমকা এতোজনের হাসির শব্দে সিমথি – আদি দুজনেরই ধ্যান ভাঙ্গে। দুজনই দৃষ্টি সরিয়ে সবার দিকে তাকায়। সবার তাকানো দেখে সিমথি লজ্জায় পড়ে যায়। আদি মাথা চুলকে অন্যদিকে ফিরে হেসে দেয়। সিমথি আমতা আমতা করে বলে,,,,

সিমথি : ভ ভাইয়াকে ন নিয়ে য যা তত তাড়াতাড়ি।

সিমথির তোতলানো দেখে আরেক দফা হাসির রোল পড়ে যায়। ভাবা যায় সিমথি তোতলাচ্ছে। সিমথি বিরক্ত হয় এবার। এভাবে হাসার কি আছে আমি কি অন্য ছেলের দিকে তাকিয়েছি। নিজের বরের দিকে তাকিয়ে থাকবো না তো কার দিকে তাকাবো। মনের কথাটা এবার মুখেও এসে পড়ে।

সিমথি : কিছু পারিস আর না পারিস ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে জানিস। এতো হাসার কি আছে আমি কি পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। নিজের বরকে দেখছিলাম। ইচ্ছে হলে আবার দেখবো।

সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। সিমথি এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে রোদেলার দিকে তাকায়।

সিমথি : টাকা তুলেছিস।

রোদেলার হাসি থামিয়ে মাথা নাড়িয়ে না করে।

সিমথি : আয়াশ ভাইয়া টাকা দেন।

আদি : তুমিও কি গেট ধরবে নাকি।

সিমথি : তো ধরবো না।

আদি : ভাবীরা বুঝি গেট ধরে।

সিমথি : কে ভাবী কার ভাবী কিসের ভাবী।

সিমথির কথায় আয়াশরা হতভম্ব দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। আদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে,,,

আদি : আমার বউ হলে তো ভাবীই হবে।

সিমথি : আমি বুঝি আপনার বউ হয়।

সিমথির কথায় আদি আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকায়। মেয়ে পক্ষ মুখ চেপে হাসে।

আদি : তো কি তুমি আমার বেয়াইন হও।

সিমথি : হ্যাঁ বান্ধবীর জামাইয়ের বন্ধু তো বেয়াই ই হয়।

আদি : সিয়া আমি তোর বেয়াই কেনো হবো।

সিমথি : তাহলে কি হবেন।

আদি : আম ইউর হাসবেন্ড।

সিমথি : কাবিননামা দেখান।

আদি : মানে

সিমথি : বাহ রে এই যে বললেন আম ইউর হাসবেন্ড তো কাবিন নামা দেখান আমি মেনে নেবো।

আদি : কেনো তোর মনে নেই।

সিমথি : কি জানি শর্ট টাইম মেমোরি লস। আমি তো আপনাকে চিনিই না।

আদি : ও মা তাই। একটু আগে কার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলি।

সিমথি : আরেহ বিয়ে বাড়িতে দু একটা সুন্দর ছেলে দেখলে সব মেয়েই পিছলা খায় আমিও তাদেরই দলে। বুঝলেন। কথা কম কাবিননামা দেন। যে কেউ এসে আমাকে বউ দাবি করলেই তো আর আমি বিশ্বাস করে নেবো না তাই না।

সিমথির কথায় আদি বিষম খায়। সিমথি মুচকি হেসে আবারো আদির দিকে তাকায়। আদি বুঝতে পারে সিমথি মজা করছে।

আদি : কাবিননামা কি কেউ সাথে করে ঘুরে।

সিমথি : তাহলে বউ ফউ বাদ। টাকা দিয়ে বন্ধুর বউ নিয়ে যান। বুঝলেন ভাইয়া।

আদি : একবার তোকে বাঘে পাই ভাই ডাকার ইচ্ছে জন্মের মতো বুঝাবো।

আদির কথায় সিমথি ভেংচি কাটে। আদি কিছু বলতে নিলে আয়াশ কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,,,,

আয়াশ : থাম তোরা। আমি টাকা দিচ্ছি। এখনো বিয়ে করলামই না বাসর করবো কখন।

রিক : শা/লা লু/ই/চ্ছা বাসর নিয়া আছে। ত্রিশ হাজার টাকার মানে বুঝিস।

সিমথি : ত্রিশ হাজার চেয়েছে। ( অবাক হয়ে)

সায়ন : তা নয়তো কি। তোরা যে এতো ডাকাত ভাবিওনি। একটু কমা

সিমথি : আমি হলে এমাউন্ট থাকতো পঞ্চাশ। ওরা তো বিশ কম চেয়েছে।

সিমথির কথায় ছেলেপক্ষের মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম। অবশেষে আয়াশ জোড়াজুড়ি করে টাকা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। আয়াশকে নিয়ে জায়গা মতো বসানো হয়।

চলবে,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here