#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 28
🍁🍁🍁
বেশ কিছুদিন ধরেই মিম খেয়াল করছে সিমথি কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগে হসপিটাল থেকে ফিরে সবার সাথে আড্ডা দিতো কিন্তু এখন কেমন নিজের ধ্যানেই থাকে। মনে হচ্ছে কোনো কিছু নিয়ে ভীষণ ডিপ্রেশনে আছে। সিমথি হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হয়ে মিম কে এমন অন্য মনস্ক দেখে ভ্রু কুঁচকায়। আচমকা মিমের হাতের দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠে।
সিমথি : ভাবীপু ( চেঁচিয়ে)
আচমকা সিমথির চেঁচানো তে মিম চমকে যায়। সিমথি দৌড়ে এসে মিমের হাত থেকে নাইফ টা ফেলে দেয়। অতঃপর মিমকে ধীরে ধীরে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসে। সিমথির চেঁচানো তে বাড়ির সবাই ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়ে পড়েছে। সিমথি মিমকে সোফায় বসিয়ে সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায়।
সায়ন : কি রে কি হলো।
সিমথি : ভাবীপু এই অবস্থায় কিচেনে কি করছিলো। আমি এখন না আসলেই একটা অঘটন ঘটে যেত। মিনিমান সেন্স নেই তোদের। ভাবীপুর প্রেগন্যান্সির সাত মাস চলছে। এখন ভাবীকে একা একা চলাফেরা করতে দিস কেনো। তারউপর এই গরমে কিচেনে কি করছে। রুবি আপু রুবি আপু
রুবিনা : জ্বি বড় আফামণি কও
সিমথি : তোমাদের কাজ করতে প্রবলেম হচ্ছে। একা সব দিকে সামাল দিতে পারছো না। তো আমাকে বলো আমি তোমাদের জন্য হেল্পিং হ্যান্ড নিয়ে আসবো।
রুবিনা : ছিহ ছিহ কিতা কও। ভাবীরে অনেকবার বারণ করছি কিন্তু হুনে নাই আমার কথা। জোর কইরা রান্নাঘরো গেছিলো।
সিমথি রাগী দৃষ্টিতে এবার মিমের দিকে তাকায়। মিম মাথা নিচু করে নেয়।
সিমথি : বেশি বউগিরি দেখাতে তোমাকে কেউ বলেনি। তোমার সাথে আরেকজনের অস্তিত্ব আছে এটা মাথায় রেখে যা করার করবে। ফারদার আমি যেনো এসব না দেখি গট ইট।
ইফাজ : আচ্ছা চুপ যা বোন। নেক্সট টাইম আমরা খেয়াল রাখবো। হ্যাপি।
প্রতিত্তোরে সিমথি কিছু না বলে কেবল একটা শ্বাস ফেলে রাগটা দমন করে। সিমথি বেরিয়ে যেতে নিলে সীমা বেগম এসে সিমথির সামনে দাঁড়ায়।
সীমা বেগম : খেয়ে যা কিছু। সকাল সকাল না খেয়ে যাওয়া একটা বাজে স্বভাব হয়ে গেছে তোর।
সীমা বেগম কে দেখে সিমথির দমে যাওয়া রাগ টা পুনরায় মাথা চাড়া দেয়।
সিমথি : ভাইয়া আসছি।
সীমা বেগম হতাশ দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সীমা বেগমের দৃষ্টি উপেক্ষা করে সিমথি চলে যায়।
তুহিন : এই মেঘা কবে আসবে বল তো।
রোদেলা : সত্যি। কতদিন হলো গ্রামে গিয়েছে এখনো আসার নাম নেই।
সিমথি : আরে ইয়ার গ্রামের পরিবেশ ছেড়ে কেউ এই কোলাহল যুক্ত শহরে আসতে চাই।
হঠাৎই সিমথির ফোন বেজে ওঠে। তুহিন আর রোদেলা মিটিমিটি হেসে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি গলা ঝেরে তুহিন আর রোদেলার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে যায়।
তুহিন : যায় বল আদি ভাইয়া আর সিমথি মধ্যে সব ঠিক হয়েছে এতেই আমি খুশি।
রোদেলা : আমি ও। আর বিশদিন পরই তো বিয়ে। উফফস কত কিছুর পর দুজন এক হবে বল। আমার তো অনেক আনন্দ হচ্ছে।
তুহিন : হুমমম এখন যে যার কেবিনে না গেলে বেডে শুইয়ে থাকা রোগীরা হরতাল শুরু করবে। চলুন এবার।
তুহিনের কথায় রোদেলার হাসি মুখটা চুপসে যায়। দুজনই যে যার কাজে লেগে যায়।
আদি : ফোন ধরতে এতোক্ষণ লাগে।
সিমথি : আমার লাগে।
আদি : ওয়াটএভার। আজ দেখা করবে।
সিমথি : প্রতিদিনই তো করেন। আজ আবার স্পেশাল নাকি।
আদি : প্রতিদিন আধঘন্টা ও থাকিস না এটা বুঝি দেখা করা হলো। তুই ঝগড়া করতে করতেই বিশ মিনিট পার করে দিস।
সিমথি : কেনো ঝগড়া না করলে কি করতেন ওই সময়টায়।
আদি : কি করতাম এটা মুখে বলা যায় নাকি করে দেখাতে হবে। আজ দেখিস
সিমথি : হাহ। বাই দ্য ওয়ে আপনার মাকে জিজ্ঞেস করেছেন হুট করে রাজি হলো কেনো।
আদি : না। আমার এসব জানার দরকার নেই৷ আর জামতেও চাইনা। আমি আর পেছনে তাকাতে চাই না। এবার কেবল তোকে নিয়ে সামনে এগুতে চাই। সিয়াজান
সিমথি : বলো শুনছি।
আদি : আমার লাইফ থেকে অনেকগুলো বছর চলে গেছে।
সিমথি : আপনার বোকামির জন্য।
আদি : সে যায় হোক। এবার কেবল সামনের দিনগুলো রঙিন করে কাটাবো। যেখানে সবটা জুড়ে থাকবে আমাদের ভালোবাসা আর আমাদের একটা সুখের সংসার।
আদির কথায় সিমথি হাসে। অতঃপর কিছু ক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
_____________
মেহের : মেঝো মা শুনো
হঠাৎ মেহেরের কথায় আদির মা মেহেরের দিকে তাকায়।
আদির মা : হুম বল কি বলবি।
মেহের : তুমি কিন্তু এখনো বলোনি হুট করে ভাইয়া আর সিমথির রিলেশন কেনো মেনে নিলে।
আদির মা : কেনো তোরা খুশি হোসনি।
মেহের : মেঝো মা আমরা ভীষণ খুশি তবে
আদির মা : আর কোনো কিন্তু নয়। সামনে বিয়ে হাতে এখনো মেলা কাজ বাকি আছে। আত্মীয় স্বজনদের জানাতে হবে তার উপর বিয়ের শপিং কত কাজ। আর তোরা এসব নিয়ে কপনো পড়লি।
আদির মায়ের কথায় মেহের হতাশ হয় আবারো৷ এখনো পর্যন্ত হঠাৎ আদির মায়ের রাজি হওয়া টা কেনো জানি কেউ হজম করতে পারছে না।
তরী : রোদেলা আপু আসবো।
রোদেলা : আরে তরী তুই। হুমম আয়।
তরী : তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
রোদেলা : সিমথিকে নিয়ে নাকি।
রোদেলার কথায় তরী চমকায়। তরীর রিয়াকশন দেখে রোদেলা হাসে। কারণ রোদেলা জানতো দু এক দিনের মধ্যে তরী ওদের কাছে আসতো।
তরী : আ আসলে মানে
রোদেলা : সরাসরি বলে ফেল কি জানতে চাস। তবে হুমম সিমথিকে জানতে দিস না। সিমথি তাহলে রেগে যাবে। আমাদের বার বার নিষেধ করেছে তোকে এসব জানাতে।
প্রতিত্তোরে তরী মাথা ঝাকায়।
তরী : সিমথি আপু তো রুদ্র কে ভালোবাসতো। তাহলে আদি ভাইয়ার সাথে বিয়ে তে রাজি হলো কেনো।
রোদেলা : কে বললো তোকে সিমথি রুদ্র কে ভালোবাসতো।
তরী : রোদেলা আপু প্লিজ মিথ্যা বলো না।
রোদেলা : আমার মিথ্যে বলে সিমথিকে ইনোসেন্ট প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই। কারণ সিমথি ইনোসেন্টই। আর ওই জা’নো’য়া’র তোকে বলেছে না এসব বাজে কথা।
তরী : হুমমম। রুদ্র আমাকে নিজেই বলেছে। সিমথি আপু নাকি রুদ্র কে বলেছে ও রুদ্র কে ভালোবাসে। তার জন্যই তো রুদ্র আমাকে ইগনোর করতো।
রোদেলা : আর তুই ও বিশ্বাস করে নিলি। নিজের বোনের উপর বিশ্বাস নেই। ওকে একবার এসে জিজ্ঞেস করা উচিত বলে মনে হয়নি তোর।
তরী : আমার কাছে প্রমাণ ছিলো। রুদ্র আর সিমথি আপুর অনেকটা ক্লোজলি একটা ভিডিও ছিলো।
রোদেলা : ভিডিও টা আছে তোর কাছে।
তরী : না আমি তো ডিলিট করে দিয়েছি। আর ফোন চেঞ্জ করেছিলাম তো।
তরীর কথায় রোদেলা নিজের ফোন ঘেটে কিছু একটা বের করে তরীর সামনে ধরে। তরী ফোনের স্কিনে তাকাতেই চমকে উঠে।
রোদেলা : এটাই সেই ভিডিও।
রোদেলার কথায় তরী মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
রোদেলা : রুদ্র অনেক চালাক ছেলে বুঝলি। তাইতো কেবল পেছনের দিক টার ভিডিও অংশ তোকে পাঠিয়েছে। নে এবার এই ভিডিও টা দেখ।
রোদেলা নিজের ফোন টা তরীর হাতে দেয়। তরী ফোনের স্কিনে চোখ রাখে। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রুদ্র সিমথির সাথে বাজে আচরণ করছিলো আর সিমথির অনেকটা কাছাকাছি গিয়েছিলো। আর রুদ্র সিমথির পজিশন দেখে পেছন থেকে যে কেউ বলবে ওরা একে অপরকে চুম্বন করছে। কিন্তু সামনে তো সিমথি রুদ্র কে থাপ্পড় মেরেছিলো। রুদ্র থাপ্পড় খেয়ে সিমথির দিকে এগুতে গেলে সিমথি পুনরায় আরেকটা থাপ্পড় লাগায়। সেই থাপ্পড়ে রুদ্র তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।
রোদেলা : রুদ্র তোর সাথে রিলেশনে থাকাকালীন সিমথিকে প্রপোজ করেছিলো। সিমথি তখনও জানতো না তুই আর রুদ্র রিলেশনে আছিস। সিমথি তখন আদিকে ভালোবাসতো। একদিন আমরা কলেজে পৌঁছাতেই রুদ্র সিমথির সাথে বাজে বিহেভ করে আর অনেক বাজে বাজে কথা বলছিলো। সিমথি রেগে থাপ্পড় মেরে বসে। তখন রুদ্র রেগে বলেছিলো সিমথির থাপ্পড়ের বদলা নিতো। তারপর রুদ্র নিজেই এসব ভিডিও রঙচঙ মাখিয়ে তোর সামনে প্রেজেন্ট করে আর তুই সিমথিকে ভুল বুঝিস। তোর মনে আছে লাস্ট দিন তুই রুদ্রর সাথে ডেটে গিয়েছিলিস। ওইদিন রুদ্রর বাজে মতলব ছিলো। সিমথি তার কিছু দিন আগে জানতে পেরেছিলো তুই রুদ্রর সাথে রিলেশনপ আছিস। তন্ময় আর তুহিন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে রুদ্র একাধারে অনেকগুলো মেয়ের সাথে রিলেশন করতো আর নিজের বেড পার্টনার করতো। তোকে নিয়েও রুদ্রর এই পরিকল্পনায় ছিলো। তাই সেদিন যখন তুই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলি তার আগেই রুদ্রর সাথে সিমথি মিট করতে গিয়ে ছিলো। আর তুই গিয়ে দেখেছিলি সিমথি আর রুদ্র একই টেবিলে বসে কথা বলছে। ব্যস তুই আর কিছু না দেখে না বুঝে চলে এসেছিলি। তুই কেবল সিমথিকে দেখেছিলি কিন্তু আমাদের দেখতে পাসনি। তুই চলে আসার পর ওই রেস্টুরেন্টে রুদ্রর সাথে সিমথির প্রচুর ঝামেলা হয়। একপর্যায়ে তুহিন তন্ময় রুদ্র কে মারতে শুরু করে। মারতে মারতে রুদ্র প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিলো। সেদিন সিমথি রুদ্র কে ওয়ার্ন করেছিলো তোর থেকে দূরে থাকতে। তুই হয়তো জানিস না সিমথি এতো বছর রুদ্রর থেকে তোকে প্রটেক্ট করেছে। তুই সিমথির সম্বন্ধে কেবল ভুল ধারণা পুষে রেখেছিস।
এতোটুকু বলে রোদেলা থামে। আড়চোখে তরীর দিকে তাকায়। বেচারীর মুখে অনুশোচনা ফুটে উঠেছে স্পষ্ট। রোদেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভুল বুঝাবুঝি একটা সুন্দর সম্পর্ক কিভাবে নষ্ট করে দিতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বোধহয় সিমথি আর তরী।
রোদেলা : সিমথি ক্লাস টেন থেকে আদি ভাইয়া কে ভালোবাসতো। সিমথি আদি ভাইয়া ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কথা চিন্তা ও করতে পারে না। আর সেখানে রুদ্রর মতো একটা ছেলেকে সিমথি পছন্দ করবে। সিমথির চয়েজ এতোটা নিম্ন না। আর শোন। তোর মা-বাবার মৃত্যুর পেছনে সিমথির কোনো ভূমিকা নেই। কারো মৃত্যু উপরওয়ালার হাতে। তোর বাবা সিমথিকে বাচাতে গিয়ে মা’রা গেছে এটা সম্পূর্ণ তোর ভুল ধারণা। এসব ভুল ধারণা মাথা থেকে বের কর। আর কারো যুক্তি তে চলিস না। বড় হয়েছিস বুঝতে শিখ। কে তোর ভালো চাই আর কে তোর খারাপ চাই৷ দ্যাটস ইট৷
তরী কিছু না বলে চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। এতোবছর একটা ভুল ধারণা মনে পুষে রেখেছিলো। একটা বাজে ছেলের জন্য নিজের বোনের সাথে দিনের পর দিন এতো বাজে বিহেভ করে গেলো। এখন কিভাবে গিয়ে সিমথির সামনে দাঁড়াবে। এজন্যই সিমথি সেদিন বলেছিলো সত্যিটা জানলে নিজেকে মাফ করতে পারবো না। সত্যিই তো নিজেকে এখন কিভাবে মাফ করবো। আর সিমথি তো কখনো মাফ করবে না।
চলবে,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)