স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২২

0
500

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২২
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“কথায় আছে না আল্লাহ ছাড়া দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। তোমাকে উচিৎ জবাব টা আল্লাহ তায়া’লা আরাভ স্যারের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ছোট বেলা থেকে মায়ের পরে তোমাকে ভালোবাসতাম আপু। সব সময় তোমার ভালো চাইতাম। নামাজ পড়ে তোমার জন্য দোয়া করতাম। ভালো ভালো জিনিস গুলো আমি না নিয়ে, তোমার জন্য রেখে দিতাম। আমার মনে এত পাপ ছিল না। সহজসরল মনে তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম। তুমি আমার ভালোবাসার প্রতিদান এভাবে দিলে? তুমি একটা কথা আজকে প্রমাণ করে দিয়েছো। সবাই সবকিছুর যোগ্য না। তুমিও আমার ভালোবাসা পাবার যোগ্য না। নিজের বোন হয়ে কিভাবে আমাকে এত বড় অপরাধী বানিয়ে দিয়েছিলে? আর অভ্র ভাইয়া! আপনার জন্য আমি কি করি নাই? আপুর বিয়ে ভাঙা থেকে শুরু করে, আপুর মনে আপনার জন্য একটু একটু করে ভালোবাসা তৈরি করে দিয়েছি। সেই আপনি কি করলেন? আমার ভাবতেই অবাক লাগছে৷ আজকে আরো একটা জিনিস প্রমান পেলাম। মায়ের ভালোবাসা কখনো দুই মেয়ের জন্য সমান হয় না। মানুষ ধাক্কা খেতে খেতেই উঠে দাঁড়ায়। আমিও না হয় মানুষ চিনে রাখলাম। সময় মানুষ চিনিয়ে দেয়। কে আপন আর কে পর। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। স্রুতিকে ছাড়া স্মৃতি চলতে পারবে। কিন্তু স্মৃতিকে ছাড়া স্রুতি একটা মুহুর্ত চলতে পারবে না। আজকে আমার মন থেকে বের গেলে আপু৷ আগের মতো ভালোবাসতে পারবো কি না তা আমি জানিনা। তবে নিজের বোনকে তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। বোন বলে পরিচয় দিব। কিন্তু মনে মনে জানবো। আমার কোনো বোন নেই। আগে একটা বোন ছিল সে মারা গিয়েছে। আমার কাছে তুমি মরে গিয়েছো আপু। কথা গুলো বলেই স্মৃতি বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে বাসায় থেকে বের হয়ে গেল।

রজনীর আঁধার কেটে গিয়ে প্রভাতের আলো ধরণীর বুকে আঁচড়ে পড়েছে। মায়ের ডাক কর্ণকুহরে আসতেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো স্মৃতি। কালকে চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়েছে। তা জানা নেই স্মৃতির। সে উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলো। একটু পরে তার মা এসে খাবার দিয়ে গেল। কলেজে সময় হয়ে আসতেই স্মৃতি তৈরি হয়ে নিল। আজকে মা কে না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মুনিয়া বেগম মলিন মুখ করে মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার আর বুঝতে বাকি নেই। মেয়েটা বড্ড অভিমান করেছে। স্মৃতি যতই রাগ করুক না কেনো হাজার হলে-ও সে মুনিয়া বেগমের মেয়ে। তাই মেয়ের এমন ব্যবহারে সে-ও কষ্ট পাচ্ছে। আর কোনো কিছু ভাবত পারলো না। রান্না ঘরের দিকে চলে গেল মুনিয়া বেগম।

বাইকের সাথে হেলান দিয়ে আরাভ চা খাচ্ছিল। এমন সময় স্মৃতির আঁখি জোড়া স্থির হয় আরাভের দিকে। শুভ্র শার্টে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে আরাভকে। স্মৃতি রাস্তার পার হয়ে আরাভের কাছে আসলো। আরাভকে সালাম দিয়ে কিছুক্ষণ নিরব রইলো। স্মৃতিকে নিরব থাকতে দেখে আরাভ প্রশ্ন করল,

–কিছু বলবে স্মৃতি? আরাভের প্রশ্নে একটু সাহস পেল স্মৃতি। সে কোনো রকম ভনিতা না করে বলল,

–আমি আপনাকে ভালোবাসি স্যার। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন? আপনার সাথে কথা বলার তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে, আমি বোধহয় বাকরুদ্ধ হয়ে মা’রা যাব। আজ আমায় ফিরিয়ে দিলে ভাববেন না। ভুলে যাব বরঞ্চ আপনি আমার শেষ অধ্যায়ে থেকে যাবেন। স্মৃতির শেষ অধ্যায়ে শুধু আপনি থাকবেন স্যার। স্মৃতি বলা বাক্য গুলো কর্ণকুহরে আসতেই আরাভের দু-চোখ রক্তিম বর্ন ধারণ করল। মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশটা শীতল হয়ে উঠলো। আরাভ রাগান্বিত হয়ে বলল,

–এই মেয়ে তোমার বয়স কতটুকু এই বয়সে স্যারকে প্রেমের প্রস্তাব দাও। তোমাদের সময় আমরা শিক্ষকদের বাবা-মায়ের নজরে দেখতাম। আজকালকার বাচ্চারা নির্লজ্জ হয়েছে। কিন্তু এতটা নির্লজ্জ হয়েছে, সেটা আমার জানা ছিল না। আজকে আমাকে যা বলার বলেছো। দ্বিতীয় দিন যেন তোমার মুখে এমন কথা না শুনি। তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আরাভের কথায় স্মৃতি মলিন হেসে বলল,

–কাউকে কখনো মন থেকে ভালোবেসেছেন স্যার? স্মৃতির কথায় আরাভ রাগান্বিত হয়ে স্মৃতির দিকে দৃষ্টিপাত করল। আরাভের দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি পড়তেই স্মৃতি দৃষ্টি নত করে নিল। আরাভ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–দেখো মেয়ে এখন তোমার পড়াশোনা করার বয়স। প্রেম ভালোবাসা তোমার জন্য না। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। আবেগে গা ভাসিয়ে দিও না। সারাজীবন ধরে পোস্তাতে হবে। তোমার সাথে আমার যায়। আজ আমার তোমাকে ভালো লাগছে। কালকে না-ও লাগতে পারে। এই বয়স টাই হচ্ছে আবেগের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে ভালো লাগবে। তাই বলে তুমি সবাইকে ভালোবাসবে। যে আবেগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে। তুমি নিজের জীবন টা নষ্ট করতে চাও নাকি সফলতা অর্জন করতে চাও? স্মৃতি দৃষ্টি নত করেই বলল,

–আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই স্যার। স্মৃতির কথায় বিরক্ত হলো আরাভ। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আমার অর্ধাঙ্গিনী হতে চাও। তোমার কি যোগ্যতা আছে আমার অর্ধাঙ্গিনী হবার? আমার অর্ধাঙ্গিনী হতে হলে যোগ্যতা লাগে। আমি যেমন আমার সফলতা দিয়ে আমার যোগ্যতা অর্জন করেছি। ঠিক তেমনই আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে আমার মতো যোগ্যতা অর্জন করা মেয়ে। তোমার মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই আমার অর্ধাঙ্গিনী হবার। আমার মুখের সামনে থেকে সরে যাও। না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এতটুকু বাচ্চা মেয়ের সাহস কত? আমাকে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, তোমার বাবা-মাকে আমি সবকিছু বলে দিব। আরাভের কথা শুনে স্মৃতি শান্ত কণ্ঠে বলল,

–আমি আপনাকে বিয়ে করতে চেয়েছি। কোনো পাপ কাজ তো করিনি। আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন? আমি কোন দিকে খারাপ। পড়াশোনায় খারাপ নাকি দেখতে খারাপ কোনটা? আরাভের ইচ্ছে করছে মেয়ে টাকে কষে দু’টো থা’প্প’ড় বসিয়ে দিতে, নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে আরাভ। সে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো,

–আমি তোমাকে কোনোদিন বিয়ে করবো না। এটা তুমি খাতা কলমে লিখে রাখো। যাও গিয়ে পড়াশোনায় মন দাও। স্মৃতি আবারও প্রশ্ন করল,

–কাউকে ভালোবাসেন স্যার? আরাভ বিরক্ত হয়ে বলল,

–এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। তার কৈফিয়ত নিশ্চয়ই তোমাকে দিব না। তোমার জন্য তোমার বোনই ঠিক। তোমার সাথে ভালো করে দু’টো কথা বলাই আমার ভুল হয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে তোমার বেয়াদবি সহ্য করছি। আর সহ্য করবো না। কথা গুলো বলেই আরাভ চলে গেল। স্মৃতি মলিন মুখে কলেজের দিকে অগ্রসর হলো। বুকটা হাহাকারে ভরে গিয়েছে। যাদের প্রত্যাখান আমরা নিতে পারিনা। তারাই আমাদের প্রত্যাখান করে চলে যায়। স্মৃতির দম বন্ধ হয়ে আসছে। অশ্রুকণা গুলো বড্ড স্বার্থপর হয়েছে। খুব সহজে আসতেই চায় না। প্রিয়জনদের কাছে কষ্ট পেতে পেতে আর কষ্টকে কষ্ট মনে হয় না। আগে কষ্ট পেলে কান্না করেছি। আর এখন কষ্ট পেলে হাসি পায়। জীবন যেমন ভাবে চলছে চলতে থাকুক। সবাই সবার মতো ভালো থাকুক কারো ভালো থাকার মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না। যাকে ঘিরে বাঁচতে চেয়েছিলাম। সে-ও আর মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। আপন বলতে কেউ রইলো না। পৃথিবীতে মানুষ বড্ড অসহায়। কেউ সারাজীবন পাশে থাকে না। জন্মানোর সময় একা আসতে হয়। আবার মৃত্যুর সময় ও একাই যেতে হবে। এটা থেকেই বোঝা যায় মানুষ সর্বদাই একা। কথা গুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো স্মৃতি।

চলবে…..

(রিচেক করা হয়নি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here