#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৪০
স্বচ্ছ নির্বাক হয়ে চেয়ে রইল নিজের বোনের দিকে। অতঃপর তড়িঘড়ি করে নিজের হাত দিয়ে ফারাহর গালে-মুখে হাত দিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল,
“একারণেই তো আলুর মতো মুখটা শুঁকিয়ে শুঁকনো কিসমিসের মতো হয়ে গিয়েছে।”
ফারাহ মুখ বাঁকিয়ে স্বচ্ছের হাত ঝেড়ে ফেলে বলল,
“হয়েছে কেয়ার করার নামে ইনসাল্ট করছ এবার।”
“খাওনি কেন তবে?”
ফারাহ মুখ নিচু করে মিনমিন করে বলল,
“খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করার কেউ নাই যে। একমাত্র তোমার সাথেই কাড়াকাড়ি করে খাবার খেয়ে তৃপ্তি পেতাম আমি।”
স্বচ্ছ এবার অপ্রস্তুত হাসল নিঃশব্দে। তাদের মাঝে সবসময় রেষারেষি লেগেই থাকে। অথচ নিঃসঙ্গতায় তারাই যেন একে অপরের পাশে এসে থাকে সকলের আগে। ভাই-বোন বোধহয় একেই বলে। ফারাহ এবার তাড়াতাড়ি করে খাবারের প্যাকেট খুলতে খুলতে বলল,
“অনেক খিদে পেয়েছে আমার। এখন আর কোনো কথা বলার মতো শক্তি নেই। খাওয়া শুরু করো, চলো।”
স্বচ্ছ মানা করতে চায়। তবে ফারাহ চোখ বড়ো করে বলে,
“মানা করলে খবর আছে। তুমি বলেছ বাবার টাকায় কিছু করবে না। এটা বলো নি নিজের বোনের টাকাতেও খাবে না। খাওয়া শুরু করো।”
স্বচ্ছ এবার আর বারণ করল না। তারও যে ভীষণ খিদে পেয়েছে। আগের মতোই যেন কাড়াকাড়ি করে একে অপরের কাছ থেকে খাবার ছিনিয়ে খেতে আনন্দ উপভোগ করল তারা। স্বচ্ছ খাওয়ার এক পর্যায়ে শুধাল,
“মা কেমন আছে? প্রেশার নাকি লো হয়ে গিয়েছিল আবার!”
“তোমার সাথে কথা বলার পর দুপুরে তো খাওয়াদাওয়া করল। তবে এখনো মনমরা হয়ে বসে রয়েছে। তোমার কাছে আসতে চাইছে বারবার। কিন্তু তুমি মানা করার জন্য নিয়ে আসিনি।”
“ভালো করেছ।”
ফারাহ এবার গলা খাঁকারি দিয়ে মুচকি হেসে পাশে খেতে থাকা স্বচ্ছকে হালকা ঠেলে বলল,
“তা প্রেমের টেম্পু কতদূর এগোলো?”
স্বচ্ছ খাওয়া বন্ধ করল। ভ্রু কুঁচকে নেত্রপল্লব দুটো সরু পাল্টা প্রশ্ন করল,
“মানে?”
“মানে আবার কী? বিয়েশাদি কবে করছ? ওই ছোটোখাটো পুতুলকে বউ কবে বানাচ্ছ? আমি ফুপি কবে হচ্ছি? তুমি বাবা কবে হচ্ছো? বাচ্চাকাচ্চার প্ল্যানিং কবে করবে?”
বেশ উত্তেজনা নিয়ে জানতে চাইল ফারাহ। তার এসব প্রশ্নে মাথা ঘুরে এলো স্বচ্ছের। মাঝে মাঝে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা তার নিজের বোন হয়। খাবারটা কোনোরকমে গিলে বলল,
“তোমার কি মনে হয় না? তুমি একটু আগে আগে দৌড়ে যাচ্ছো? ব্যাক করো পেছনে। আমি তো এখনো কিছু শুরুই করতে পারলাম না।”
চোখ বড়ো বড়ো করে চাইল ফারাহ। ভীষণ অবাক হয়ে বলল,
“মানে? এখনো তুমি কিছু বলতে পারো নি তাকে?”
“না।”
স্বচ্ছের সহজ উত্তর। ফারাহ নাক ফুলিয়ে স্বচ্ছের মতো মুখটাকে কঠিন বানিয়ে তার মতো অঙ্গভঙ্গি করে বলল,
“ওকে আমি ভালোবাসি বাবা! এই কথাটা পুরো ফ্যামিলি এমনকি আমাদের ঘাড়ত্যাড়া বাবার সামনেও সাহসের সাথে প্রকাশ করতে পারলে। আর আসল মানুষটার সামনে প্রকাশ করতে পারছ না?”
“সুযোগ পাচ্ছি না। আর বুঝতেও পারছি না এখনো অবধি ও কী চায়। গতবার ওর গ্রামের বাড়ি ও আমায় রিজেক্ট করেছিল। আমার নিজেকে ছোটো লেগেছে। আবার ছোটো হতে চাইনা।”
ফারাহ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
“এটাই তোমার সমস্যা। তুমি সবসময় নিজেকে বড়ো দেখাতে যা করতে হয় সেটাই করো। কিন্তু নিজের মনের শান্তি পেতে সেসব কাজগুলো তুমি এড়িয়ে যাও যেটা করতে হলে তোমার এই জেদটাকে বলি দিতে হবে।”
স্বচ্ছ ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল,
“তার কথার ধাঁচ দেখেছ একবারও? তার মুখের প্রতিটা শব্দে শব্দে ছু/রি চালায় মনে হয়।”
“চালাতে পারে। কিন্তু একটা মেয়েকে নমনীয়তা কখন স্পর্শ করে জানো? যখন সে কোনো শুদ্ধ ভালোবাসার সন্ধান পায়। যেখানে বিন্দুমাত্র ভেজাল থাকে না।”
স্বচ্ছ কিছুটা সময় নিশ্চুপ থাকে এবার। তারপর চক্ষুদ্বয় ছোটো করে বলে,
“প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে খুব অভিজ্ঞতা আছে দেখছি তোমার! এই অভিজ্ঞতা কি নিজের জীবন থেকে এসেছে?”
ফারাহ অসাময়িক হেসে ভাইকে ঠেলে দিয়ে বলে,
“এখনো অবধি না। আমার প্রেম-ভালোবাসা একটাই সেটা হচ্ছে ফ্যাশন। আই লাভ ফ্যাশন।”
গল্পে গল্পে শেষ হলো ভাই-বোনের খাওয়াদাওয়ার পালা। ফারাহ বিদায় নিয়ে চলে গেল বাড়ির দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে তাকে তৈরি হতে হবে। কোম্পানিতে নতুন উইন্টার প্রোডাক্ট লঞ্চ করছে সে। তা নিয়েই আয়োজন হয়েছে পার্টি। সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে তাকে।
ফারাহকে বিদায় দিয়ে ফিরে এসে স্বচ্ছ খেয়াল করে মেয়েটা তার রুমাল রেখে চলে গিয়েছে। সেটা উঠিয়ে নিতেই নিচে পড়ে যায় কিছু টাকা। স্বচ্ছের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে টাকা হাতে তুলে নেয়। সে ভুল না হলে ফারাহ ইচ্ছে করে কাজটা করে গেছে। তৎক্ষনাৎ তার ফোনে মেসেজ আসে। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফারাহর মেসেজটি। সেখানে লেখা, ‘জানি, টাকা খরচ করবে না বলে ভাবছ। কিন্তু এটা মোটেও করবে না। আমি জানি তোমার কাছে টাকা নেই। এগুলো খরচ করবে। এগুলো আমার নিজের টাকা। ছোটো ভাইয়ার থেকে টাকা নিতে না তুমি। তাই আমিই দিলাম। দরকার হলে যেদিন তোমার টাকা হবে সেদিন না হয় ফিরিয়ে দিও। ধার হিসেবেই দিলাম।’
স্বচ্ছ প্রথমে রাগতে চেয়েছিল। তবে এই মেসেজে মৃদু হাসল সে। রাগ উবে গেল। ছোটো বোনেরা বোধহয় এমনি হয়!
বাড়িতে মেহমান। মেহমান বলতে মোহের মামা-মামী সাইফুল এবং আফিয়া এসেছে মোহের বাড়িতে। মোহের পুরো পরিবারের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে যেন। তাই তাদেরকে দেখতে এসেছে সাইফুল এবং তার স্ত্রী। মোহের কোলে ইথান একেবারে জাপ্টে ধরে রয়েছে। নামছেই না। এতটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মাকে পেয়ে যেন আহ্লাদে গলে পড়েছে ছোটো ছেলেটি। মাঝে মাঝেই মোহের গালে আলতো করে চুমু বসিয়ে দিচ্ছে ইথান। আর আহ্লাদী কণ্ঠে বলছে,
“আই মিস ইউ, মাম্মা! আমাকে রেখে আর কোথাও যাবে না। মনে থাকবে?”
মোহ আলতো হেসে মাথা দুলাচ্ছে। মিসেস আফিয়া অর্থাৎ মোহের মামী সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
“এ তো একেবারে মন্ত্রী মোহের পিছে পড়ে গিয়েছে। তাও ভাগ্য ভালো মোহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।”
মিসেস সুফিয়া স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেন,
“সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ ধন্যবাদ।”
“তবে তুমি যাই বলো সুফিয়া, মোহ নিজেকে একটু সংযত করলে কিন্তু এত কিছু ঘটত না।”
কথাটা গায়ে লাগল মোহের। তবে কিছু বলতে পারল না। কথাটা হয়ত খানিকটা হলেও সত্যি। তার যে মুখের উপর কথা বলে দেওয়ার স্বভাবটা রয়েছে সেটাই তো বিপদের মূল কারণ৷ কিন্তু তবুও মোহ মুখ বন্ধ রাখতে পারবে না। সেটা সে জানে। পাশ থেকে সাইফুল ইশারা করে নিজের স্ত্রীকে বেশি কথা বলতে মানা করলেন। তৎক্ষনাৎ মোহের বাবা আজহার সাহেব উত্তর দিলেন,
“চুপ আর সংযত থেকে লাভটা কী? সাইফুল ভাই নিজেও কিন্তু যথেষ্ট সংযত ছিলেন। তবুও কিন্তু নিজের এতদিনের পরিশ্রমের ফ্যাক্টরি হারিয়েছেন।”
এবার আফিয়ার মুখটা ফ্যাকাশে হলো যোগ্য জবাবে। মোহের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা গেল যেন। যোগ্য জবাবে সবসময় যেন তার বাবাই শ্রেষ্ঠ। তাকে আর কিছু বলতে হলো না। ইথানকে নিয়ে ঘরে ঢুকে এলো সে। অতঃপর ইথানকে বিছানায় বসিয়ে দিতেই মুখ ভার করল ইথান। মোহ তার গালে হাত রেখে বলল,
“তোমার মাম্মা তো এখানেই আছে তোমার কাছেই। আমার একটু কাজ আছে ইথান। সেরে নিই। রাতে অনেক গল্প করব আমরা।”
ইথান হাসে এবং রাজি হয়। মোহ নিজের ফোনটা হাতে নেয়। কল করে স্বচ্ছকে। তাও মনের মাঝে রাগ পুষে রেখেই।
তীব্র মাথাব্যথার ফলে একপ্রকার বেঘোরে ঘুমাচ্ছে স্বচ্ছ৷ ঘুমানোর আগে হালকা ঠাণ্ডা অনুভব করছিল সে। হয়ত অতিরিক্ত শরীর ঘেমে যাওয়ার কারণে জ্বর এসেছে তার। তবে সেসব মাথায় নেয়নি সে। হুট করে ফোনের রিংটোনে ধড়ফড়িয়ে উঠতে গেলেই সরাসরি সোফা থেকে নিচে পড়ে যায় সে। ধপ করে শব্দ হয়। কোমড় তীব্র ব্য/থায় চিনচিন করে ওঠে। কোমড় একহাতে ধরে কোনোরকমে উঠে দাঁড়িয়ে রাগ ঝেড়ে বলে,
“যে কল করেছে আজ তার একদিন কি আমার একদিন!”
ফোনটা হাতে নিতেই রাগ উবে গেল স্বচ্ছের। জড়িয়ে রাখা চোখমুখে দেখা গেল রাজ্যের উচ্ছ্বাস। তবুও তার রাগ দেখাতে প্রবল ইচ্ছে করল। কিন্তু পারল না। ঢক গিলে কল রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো।”
মোহ সরাসরি জিজ্ঞেসা করে বসল,
“কোথায় আছেন এই মুহূর্তে?”
মোহের এমন গম্ভীর সুর এবং সরাসরি এই প্রশ্নে থতমত খায় স্বচ্ছ। পাল্টা প্রশ্নে জানতে চায়,
“কেন বলো তো?”
“উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা কি জরুরি?”
মোহের তেজ দেখে বিস্মিত হয় স্বচ্ছ। অথচ রাগ তার দেখানোর কথা। কিন্তু রাগ দেখাচ্ছে উল্টো জন। তবে কেন দেখাচ্ছে? নারীর মন আসলেই ভীষণ অদ্ভুত। স্বচ্ছ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“বাড়িতে আছি।”
“বাড়িতে? তাই নাকি?”
মোহের কণ্ঠে স্পষ্ট সন্দেহ। স্বচ্ছ ইতস্ততবোধ করে। জানতে দিতে চায়না সত্যটা। জোর দেখিয়ে বলে,
“তাছাড়া আবার কী? এমন হাবভাব করছ যে আমি আমার কোনো গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে এসে তোমার কাছে লুকাচ্ছি।”
“এটা অসম্ভব কিছু না।”
স্বচ্ছ হতবাক হয়। এই মেয়ে বলে কী! চরম বিস্ময়ের সঙ্গে বলে,
“তোমাদের মাঝে জন্মগত সন্দেহ নামক রোগটা রয়েছে। কিন্তু আফসোস কী জানো! কোনো বিজ্ঞানী তোমাদের এই রোগের সমাধান বের করতে পারে নি।”
মোহ বেশ বুঝতে পারল স্বচ্ছ তাকে নিয়ে মজা করছে। সে তেতে উঠে বলল,
“তাহলে একটা কাজ করলেই তো হয়। আপনি সমাধানটা করে দিন।”
স্বচ্ছ তৎক্ষনাৎ ভয় পাওয়ার ভান ধরে এবং একরাশ অনীহা নিয়ে বলল,
“অসম্ভব! এতগুলো নারীর সমাধান আমি করতে পারব না। আমার সাধ্যের বাহিরে। একজনকে নিয়েই আমার ম/রি ম/রি অবস্থা। এতজনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে প্রাণটা বেরিয়ে যাবে নিশ্চিত।”
মনে রাগটা নিয়েও বেশি কড়া কথা বলতে পারল না মোহ। ফিক করে হেসে উঠল এক পর্যায়ে। উৎসুক হয়ে শুধাল,
“তা বিশেষভাবে কার দায়িত্ব নিয়ে বসলেন যার জন্য আপনার অবস্থা একেবারেই ম/রি ম/রি?”
“ভীষণরকম একগুঁয়ে, মনে ভয়-ডর খুবই কম। খুবই ধুরন্ধর নারী। আমাকে তার পেছনে মাইলের পর মাইল ছুট করাচ্ছে। নিজে কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না।”
মোহের মুখটা মলিন হয় হঠাৎ। কণ্ঠস্বর নরম হয়। নিচু সুরে বলে ওঠে,
“হতে পারে তার কোনো বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
“কীসের বাধ্যবাধকতা বলে তোমার মনে হয়?”
মোহ সেই প্রসঙ্গে আর কিছু বলে না। ঘাড় ঘুরিয়ে একমনে তাকিয়ে থাকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে খেলা করা ইথানের দিকে। চোখ বুঁজে ঢল গিলে নেয় সে। প্রসঙ্গ দ্রুত পাল্টে বলে,
“কথা বলার ছিল আপনার সাথে সামনাসামনি। দেখা করুন আজকে এখনি আমার বাড়ির সামনে।”
স্বচ্ছ ফের চমকে গেল। মেয়েটা দিনদুপুরে কী উদ্ভট আবদার করছে! সে পুনরায় বলল,
“হ্যাঁ?”
“দেখা করতে বললাম আপনাকে। দেখা করুন৷ আমি অপেক্ষায় থাকলাম আপনার।”
নিজের কথাটুকু শেষ হতেই কল কাটল মোহ। স্বচ্ছ হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল শুধু। হুট করে মোহের এমন আবদারের কারণ খুঁজে পেল না সে। কোনো গুরুতর কারণ কিনা ভাবতে গিয়ে চিন্তায় পড়ল সে।
সন্ধ্যেবেলা গা ছাড়া ভাব নিয়ে ঘুমে নিমগ্ন সৌমিত্র। এই সময় তার ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে এলেন মিসেস যামিনী। বেশ কয়দিন পর আবারও এলেন তিনি নিজের বোনের বাড়িতে। এসেই উনার প্রথম কাজ বাড়ির ছেলেমেয়েগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিয়ের কথা তোলা। তবে এবারও রিহানের বিয়ের ব্যাপারটা ঠিক করতেই এসেছেন তিনি। এসেই সৌমিত্রকে এমন ঘুমোতে দেখে তিনি ডেকে উঠলেন,
“এই ছেলে অবেলায় ঘুমাচ্ছিস কেন? উঠে পড়। সন্ধ্যা হলো যে।”
সৌমিত্র নড়েচড়ে উঠল। অন্যদিকে ফিরল। তবে ঘুম ভাঙল না। মিসেস যামিনী ফের কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,
“এই সৌমিত্র! এভাবে সন্ধ্যাবেলা কেউ পড়ে পড়ে ঘুমায়? এজন্য তোদের মাকে বলি তোদেরকে বিয়েশাদি দিয়ে একটু সাংসারিক বানাতে। কাজ আর সংসারের চাপে এমনি সবাই সোজা হয়ে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!”
ঘুমের ঘোরে তানিয়ার বিয়ের স্বপ্ন দেখছিল সৌমিত্র। স্বপ্নে বিষণ্ন মনে বিয়ে করছিল তানিয়া এবং তাকে দোষারোপ করছিল। সৌমিত্রের মুখের মাঝে ফুটে ছিল অস্থির এক মনোভাব। বারবার বোধ হচ্ছিল তার জন্য মেয়েটার খুশি হারিয়ে গেল। সেই মুহূর্তে মিসেস যামিনীর বিয়ের কথা বলায় সেটা তার কান অবধি এলে হুড়মুড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে সে। আশেপাশে তাকিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো বলে,
“বিয়ে! কার বিয়ে? কীসের বিয়ে? এই বিয়ে হওয়া উচিত নয়।”
মিসেস যামিনী ভ্রু কুঁচকান। সৌমিত্রের নিকটে গিয়ে বলেন,
“কী রে! কী বলছিস এসব?”
সৌমিত্র ঘোলা দৃষ্টিতে মিসেস যামিনীর দিকে চাইল। তখনি চক্ষু ছানাবড়া হলো তার। মিনমিন করে বলল,
“আন্টি?”
“হ্যাঁ রে আমি। তোর রিহান ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করতে চলে এলাম আবার।”
সৌমিত্র মাথা চুলকে বলল,
“রিহান ভাই অবধিই তাহলে বিয়ের বিষয়টা সীমাবদ্ধ থাক। আমাদের দিকে আবার বিষয়টা টেনে এনো না।”
মিসেস যামিনী কিছু বলার আগেই রিহান ব্যাগ নিয়ে ঘরে আসে। সোফায় ব্যাগ রেখে প্রথমে সৌমিত্রকে আবেশে জড়িয়ে ধরে।
“কী খবর তোর?”
“এইতো চলছে জবরদস্ত। তার উপর বিয়ের ব্যাপারটা!”
সৌমিত্র মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“হুঁ আন্টি বলেছে। জানিস, আজকাল আমার চারিপাশে শুধু বিয়ে আর বিয়ের ব্যাপারই ঘটছে। কেন বল তো!”
রিহান হেসে বলে,
“কী বলিস?”
“যা সত্যি তাই। ফ্রেশ হয়ে আসি থাম।”
সৌমিত্র ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয়। রিহান ব্যাগ থেকে জামাকাপড় বের করে। সৌমিত্র ওয়াশরুম থেকে ফিরে এলে রিহান হাসিমুখে বলে,
“তোর হবু ভাবীকে দেখবি না?”
সৌমিত্র বিছানায় ধপ করে বসে বলে,
“মুড নেই। পরে দেখব।”
“আরে দেখ না! বল তোর পছন্দ হলো কিনা!”
সৌমিত্র দেখতে না চাইলেও জোরপূর্বক তার সামনে নিজের ফোনে থাকা পাত্রীর ছবি দেখাল রিহান। সঙ্গে সঙ্গেই সৌমিত্রের চোখ যেন কপালে উঠে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে রিহানের ফোনটা কেঁড়ে নিয়ে দেখতে লাগল ছবিটা। সে ঠিক দেখছে তো? অস্ফুটস্বরে সে বলে,
“এই মেয়েটা?”
“হ্যাঁ জানি পূর্বে তার বান্ধবীর জন্য ঝামেলা হয়েছিল। পরে মেয়ের পরিবার থেকেই আমরা ইতিবাচক ইঙ্গিত পাই। তাই মা ঠিক করে বিষয়টা নিয়ে এগোনোর। তাছাড়া মেয়ে তো ভালো। দেখতেও সুন্দর। তাই না বল?”
সৌমিত্র কোনো কথা ব্যতীত আচমকা রিহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“থ্যাংক ইউ রে! তোর জন্য আমার কষ্ট কমে গেল।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]