স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি #পর্ব_২৩ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
441

#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

বর্ষার মৌসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। কালো মেঘ সম্পূর্ণ আকাশ টাকে গ্রাস করে ফেলছে। থেমে থেমে একটু পর পর বৃষ্টি হচ্ছে, বিষন্ন মন নিয়ে কলেজ শেষ করে বাসায় আসছিল স্মৃতি। তখনই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। তীব্র হতে থাকে বৃষ্টির ফোঁটা। আজকে কেনো জানি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিষণ ভালো লাগছে। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো এসে স্মৃতির শরীর স্পর্শ করে দিয়ে চলে যাচ্ছে। একরাশ মন খারাপের মাঝে এই বৃষ্টি হচ্ছে ভালো লাগার কারণ। অর্ধেক পথ অতিক্রম করতেই স্মৃতির দৃষ্টি থেমে যায়। আঁখি জোড়া বন্ধ করে আবার মেলে তাকায়।না সে সত্যি দেখছে আরাভ একটা হোটেলের নিচে সুন্দরী রমণীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! নিজের আঁখি জোড়াকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে! বিস্ময় নয়নে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ টাকে মন থেকে এত করে চাইলো। মানুষটা তার মূল্যায়ন করল না। অথচ সে ভেবেছিল আর যাই হোক সবাই তার দূরে ঠেলে দিলে-ও আরাভ তাকে দূর ঠেলে দিবে না। তার ধারণা আরাভ ভুল প্রমাণ করে দিল। বিয়ের পরের কাজ যদি বিয়ের আগেই হয়ে যায়। তাহলে বিয়ে করার দরকার নেই। কথা গুলো ভাবতেই ঘৃণায় পুরো শরীর রি রি করে উঠলো স্মৃতির। সে এক মুহুর্ত বিলম্ব করল না। দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করে চলে গেল। আরাভ স্মৃতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আরাভকে চিন্তিত দেখে মারিশা বলল,

–তোমাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে আরাভ। স্মৃতি তোমাকে ভুল বুঝে চলে গেল। তাই তোমার মনের ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে তাই না। চিন্তা করো না ভাগ্যে থাকলে আবার তোমাদের দেখা হবে। তুমি এভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে আমরা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাব। তুমি স্মৃতিরকে গ্রহণ করলেই পারতে। মারিশার কথায় আরাভ রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তোমার কোনো ধারণা আছে স্মৃতি এখনো অনেক ছোট। এখনই যদি আবেগে গা ভাসিয়ে দেয়। তাহলে সে তার লক্ষ থেকে দূরে সরে যাবে। জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়ত অনেক রকম বাঁধা আসবে। সেই সকল বাঁধাকে অতিক্রম করে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যেতে হবে। স্মৃতি অনেক ভালো ছাত্রী আমি চাই না বিয়ে নামক অধ্যায়ের জড়িয়ে নিজের জীবনটা শেষ করে দিক। তুমি বিয়ে করে সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছো। চাইলে-ও নিজের ইচ্ছে মতো বাসা থেকে বের হতে পারো না। তুমি কি চাও স্মৃতি জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক। মেয়েটাকে অনেক বড় হতে হবে। তার সফলতা দিয়ে সবাইকে যোগ্য জবাব দিতে হবে। আমার ওপরে ঘৃণা করে হলে-ও সে সফলতার দিকে এগিয়ে যাক সেটাই আমি চাই। আরাভের প্রতি উত্তরে মারিশা একটা কথাই বলল,

–মানুষের ভালো চাওয়া ভালো কিন্তু অতিরিক্ত ভালো চাওয়া একদম ভালো না। একদিন তোমাকে আফসোস করতে না হয় আবার। আমার মনে হচ্ছে তুমি ভুল করছো। যে আসতে চায় তাকে আসতে দাও। হারিয়ে গেলে কেঁদে ও কুল পাবে না। তখন শুরু দীর্ঘশ্বাসের সাথে দুঃখ কষ্ট গুলো উড়িয়ে দিতে হবে।

বিষন্ন রাত বাঁকা চাঁদ একটু টুকরো কালো মেঘ এসে একটু পর পর চাঁদটাকে আড়ালে করে থেমে থেমে আবার চলে যাচ্ছে। স্মৃতির আপন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মনটা আজ ভিষণ খারাপ দীর্ঘশ্বাসের সাথে মন খারাপ গুলো উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। তখনই মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পড়ে। স্মৃতি আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে দেখে মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মেয়ের মাথা বুকে নিয়ে বলল,

–তোর মন খারাপ মা খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে কি হয়েছে তোর? মাকে বল মা তোর সব দুঃখ কষ্ট দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করবে। স্রুতি আমার বড় মেয়ে হওয়ায় আমি স্রুতিকে একটু বেশিই ভালোবেসে ছিলাম। কিন্তু মেয়েটা আমার বিয়ের পরে এতটা স্বার্থপর হয়ে যাবে কখনো কল্পনা করতে পারি নাই। তুই কষ্ট পাস না মা তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। হাজার হলে-ও আমি তোর মা তোকে দশ মাস দশদিন পেটে ধরেছি। তোর কষ্ট কি আমার বুকে আঘাত করে না। মায়ের আদুরে কণ্ঠে গলে যায় স্মৃতির মন সে মলিন কণ্ঠে বলল,

–বিয়ের পরে আমার বোন আর আমার নেই মা। আমার বোন বদলে গিয়েছে। আমি আমার বোনকে কতটা ভালোবাসাতাম। সেই বোন আমাকে খু’নি বানিয়ে ছাড়তে চেয়েছিল। এতকিছুর পরে-ও আমি সেই বোনকে কিভাবে ভালোবাসবো? আমার কথা গুলো স্মরণ হতেই দম বন্ধ হয়ে আসে। যার জন্য সারাজীবন বিসর্জন দিলাম। সে গিরগিটির মতো নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দিয়ে দিল। আমি তোমার মেয়েকে কোনোদিন ক্ষমা করবো না মা। তোমার মেয়ের আমার মতো দম বন্ধ হয়ে আসুক তবু্ও মৃত্যু না হোক। আল্লাহ তায়া’লা আমার জায়গায় তোমার মেয়েকে নিয়ে আসুক। তাহলে বুঝতে পারবে কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছি। ঘরের মানুষ যদি পরের মতো আচরণ করে তাহলে আমি কোথায় যাব মা। ‘ অর্ধেক রুটি খরচ করলাম বিড়ালটা প্রেমে পড়ে গেল। কাছে এসে ম্যাও ম্যাও করে সারাক্ষণ। কিছু টাকা খরচ করলাম শত্রু ও গুলো বন্ধু হয়ে গেল। বছরের পর বছর নিজেকে খরচ করলাম। তবুও পরিবার আর ভালোবাসার মানুষটা ভালোবাসলো না মা। মেয়ের কথায় রুহু কেঁপে উঠলো মুনিয়া বেগমের তবে কি সত্যি মেয়েকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসতে পারেনি? তবে আজ মেয়ের চোখে মুখে আক্ষেপের ছাপ কেনো? মুহুর্তের মধ্যে সবকিছু বিষাদ লাগতে শুরু করল। মেয়ের চিন্তায় মুনিয়া বেগমের রজনীর নিদ্রা হারাম হয়ে গেল। আজকে সারাক্ষণ মেয়ের সাথে থাকবে। যে করেই হোক মেয়ের মন ভালো করতে হবে। একটা মা চাইলে সবকিছু পারে। মনোবিজ্ঞানীর মতে, তুমি যতই কষ্ট বা টেনশনে থাকো মায়ের সাথে কথা বলো! কারন মায়ের আওয়াজ আমাদের শরীরে অক্সিটোশিন নামক কেমিক্যাল রিলিজ করে যার ফলে মন ভালো হয়ে যায়!

স্মৃতির মা স্মৃতিকে কক্ষে নিয়ে চলে আসলো। আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির পানি এসে মেয়ের শরীর স্পর্শ করে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভেজার ফলে স্মৃতির শরীর অস্বাভাবিক ভাবে গরম হতে শুরু করেছে। মেয়ের শরীর অস্বাভাবিক ভাবে গরম হতে শুরু করেছে দেখে, মুনিয়া বেগম ভয় পেয়ে গেলেন। স্মৃতিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে আসতে চলে গেলেন। একটু পরে খাবার নিয়ে আসলেন। স্মৃতি খেয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। একটু পরে স্মৃতির আম্মু অনুভব করল স্মৃতির পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। স্মৃতিকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে কম্বল বের করে স্মৃতির গায়ে দিয়ে দিল। সময়ের সাথে স্মৃতির পুরো শরীর আগুনের মতো উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মুনিয়া বেগম পানি নিয়ে এসে স্মৃতির মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে, স্মৃতির শরীর অতিরিক্ত গরম থাকায় দ্রুত জলপট্টির কাপড়ের পানি শুষে নিচ্ছে। ঘন্টা খানেক পরে স্মৃতির জ্বর নেমে যায়। মুনিয়া বেগম মেয়ের পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে, ফরজের আজান কানে আসতেই মুনিয়া বেগম উঠে পড়ে। স্মৃতির গায়ে হাত দিয়ে দেখলো আবার জ্বর এসেছে। কম্বল থাকা সত্ত্বেও মেয়েটা কাঁপছে। মুনিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে পড়লো। মেয়েটাকে বাসায় রাখা ঠিক হবে না। উঠে গিয়ে স্মৃতির বাবাকে ডেকে নিয়ে আসলো। চিৎকার চেচামেচি শুনে মুনতাসীর ও স্মৃতির রুমে আসলো। এসেই নিদ্রামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

–কি হয়েছে মামি সকাল সকাল এভাবে চিৎকার করছো কেনো? মুনতাসীরের কথায় মুনিয়া বেগম চিন্তিত কণ্ঠে বলল,

–কালকে মেয়েটা ভিজতে ভিজতে বাসায় এসেছে। বৃষ্টির পানি মেয়েটার শরীর সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বর আসে। কালকে রাতেও এসেছিল। জলপট্টি দিয়ে নেমে গিয়েছিল। ভোরের দিকে আবার প্রচন্ড জ্বর উঠে শরীরে, বাসায় থাকলে মেয়েটা আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি মেয়েটাকে হসপিটালে নিয়ে চল। সামনে মেয়েটার আমার পরীক্ষা। অসুস্থ শরীর নিয়ে কিভাবে পড়াশোনা করবে? মুনতাসীর আঁখি জোড়া বড় বড় করে তাকায়। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–কালকে স্মৃতির জ্বর এসেছে। আজকে তুমি সবাকে বলছো। জ্বর আসলে মিষ্টিপাখিকে একদম বিছানায় ফেলে দিয়ে যায়। মামা তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বলো। আমি মিষ্টিপাখিকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। আমি আর মামা স্মৃতিকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছি। তুমি কিছু খাবার রান্না করে নিয়ে আসো মামি। কথা গুলো বলেই মুনতাসীর স্মৃতিকে কোলে তুলে নিয়ে চলে গেল। আবিদ রহমান ও মুনতাসীরের সাথে গেল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here