#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
১১.
কালো বাদলে আকাশ ছেয়ে গেলে বোধহয় মেঘের গর্জন শুনতে পাওয়া যায়?আকাশ আর মেঘের মাঝে হয় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা!নিজের দাম্ভিকতাটুকু বজায় রাখার প্রচেষ্টায় মত্ত থাকে তারা।মেঘ যেমনভাবে ভুলে যায় সে আকাশে কেবল সাময়িকের জন্য বিরাজমান,তেমনিভাবে আকাশও বোধহয় ভুলে যায় মেঘের আগমণ আছে বলেই আকাশের এতো কদর!আকাশের কালো মেঘে ছেয়ে যাওয়ার মতোই মেয়েটার চোখেমুখেও অন্ধকার ছেয়ে যেতে বিলম্ব হয়নি ক্ষণকালের জন্যও।কেবল গর্জনের পালা!সে কি মেঘের মতোই গ!র্জি!য়ে উঠবে?
ছেলেটা তার বন্ধুমহলের সামনে এসে বললো,
“ডেয়ার ডান মামা এন্ড খালাজ”
হঠাৎ করে এমন বাক্য কর্ণপাত হতেই চোখমুখ কুচকে আসলো মেয়েটার।নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।সে খুবই রণ!চ!ণ্ডী মেজাজের মেয়ে।তার মতে,প্রতিবাদ তখনই করা উচিত যখন খারাপ কিছু বর্তমানে হচ্ছে।তখন নয় যখন তা অতীতে পরিণত হয়ে যায়।তাই সে বিলম্ব না করেই দ্রুতগতিতে ছেলেটার সামনে এসে কলার ধরে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই ছেলেটার বান্ধবী রিহা সামনে এসে বললো,
“তোমার তো দেখছি সাহস কম না?সিনিয়রের গায়ে হা!ত দিচ্ছো?”
মেয়েটার রা!গ কিছুতেই সংবরণ হচ্ছেনা।একটা মেয়ে হয়ে কি করে অন্য মেয়ের সাথে এসব দেখছে এটাই ভেবে পাচ্ছেনা সে।তবুও দাতে দাত চেপে রা!গ সংবরণ করে ঠান্ডা স্বরেই বললো,
“সাহসের দেখেছেন ই বা কী?এখনো তো কিছু দেখালাম ই না।ওয়ানা সি?”
রবিন ধ!ম!কে বললো,
“আবার মুখে মুখে তর্কও করছো?বাবা-মা কি…. ”
গিটার হাতে ছেলেটা রবিনের দিকে তাকিয়ে গলা উচিয়ে বললো,
“শা!ট আপ রবিন।জাস্ট শা!ট ইওর মাউথ!বাবা-মা নিয়ে একটা কথাও আমি শুনবোনা”
“কিন্তু মেয়েটা তোর কল…. ”
“কলার ধরার মতো কাজ করেছি বলেই ধরেছে”
মেয়েটার রাগ তরতর করে বাড়ছে।তাই এবার নিজের সমস্ত রা!গ ছেলেটার উপর ঢেলে দিয়ে কলার ধরে রেখেই ঝা!ঝা!লো স্বরে বললো,
“ওহ হ্যালো!মি.বিড়ালাক্ষী মানব?সমস্যা কী হা?না মানে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন টা কী?এটাই তো যে আপনি খুবই মহান!আমাকে করুনা করছেন।তা এসব মহানুভবতা র্যা*গ দেয়ার আগে কোথায় ছিলো?”
ছেলেটা মেয়েটার হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে কলার ঠিক করতে করতে গম্ভীরভাবেই বললো,
“যেহেতু এসেছেন গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট না করে আপনিও যাবেন না আমিও যাবোনা।আমার সম্পর্কে সবই জানতে পারবেন।”
বলেই চলে গিয়েও আবার ফিরে আসার ভঙ্গিমায় পিছু ঘুরে বললো,
“আর আপনাকে কোনোপ্রকার র্যা*গ দেওয়া হয়নি।আ’ম সরি বাট আই ওয়াজ হেল্পলেস”
বলেই প্রস্থান করলো।আর মেয়েটা কেবলই সে প্রান্তে তাকিয়ে রইলো।
অরণ মেয়েটার সামনে এসে অনুতপ্ত হয়ে বলতে চাইলো,
“উই আর ভেরি….”
মেয়েটা অরণের কথায় কর্ণপাত না করেই তার বান্ধবীর হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেলো।
মির সবাইকে বলছে,
“প্রণয় সত্যিই কি*স করলো?”
রিহা বললো,
“সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে”
অরণ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
“আমি প্রণয়ের সাথে কথা বলে আসছি”
ফার্স্ট ইয়ারের দুটো মেয়ে একসাথে ক্লাসে এসে বসতেই ওদের পাশে আরেকটা মেয়ে এসে বসে।বসেই হাসিমুখে একজনকে জিজ্ঞেস করে,
“হাই?আমি অবনী আর তুমি?”
“চাঁদ”
“আমি জানি তুমি দেখতে চাঁদের তুলনায় এতোটাও খারাপ না কিন্তু আমি তোমার নাম জিজ্ঞেস করেছি।”
চাঁদ ভীষণ বিরক্ত হলো।অতিরিক্ত কথা চাঁদের মোটেও পছন্দ নয়।চাঁদের বান্ধবী তা বুঝতে পেরে অবনীকে বললো,
“ওর নাম ই চাঁদ।মুহাইমা বিনতে চাঁদ”
অবনী চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ওহ সরি সরি!তুমি এমনভাবেই বললে যে আমি….ইম…এক্সট্রিমলি সরি।মনে কিছু নিয়োনা”
চাঁদ জবাবে বললো,
“না না মনে নেয়ার কী আছে?”
অবনী বললো,
“তুমি চাঁদ আর তুমি?”
“আমি ইপ্সি।চাঁদ আর আমি ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিলাম।ভাগ্য করে এখন মেডিকেল ফ্রেন্ডস ও”
হেসে জবাব দিলো ইপ্সি।
অবনী অবাক হয়ে বললো,
“ওয়াও!দ্যাটস সো গ্রেট!নিশ্চয়ই বেস্ট ফ্রেন্ড?”
ইপ্সি বললো,
“না এমনিতে ক্লোজ ফ্রেন্ডস।”
ইপ্সি মিশুক প্রকৃতির হলেও চাঁদ কিছুটা চাপা স্বভাবের।সবার সাথে তেমন একটা মিশতে চায়না বা মিশেনা।বিশ্বাস জিনিসটা মানুষকে বরাবরই কম করে সে।তাইতো ইপ্সি আর অবনী তুইতে চলে গেলেও চাঁদ এখনো অবনীর সাথে তেমন একটা কথা বলেনি আর তুইতো দূরেই থাক!
দুই পিরিয়ড পর অবনী,ইপ্সি আর চাঁদ ক্যাম্পাসে আসলো।আসতেই সকলের মুখে বলাবলি করতে শুনতে পেলো মেডি ক্রাশ এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে নিজে থেকে কথা বলেছে সেই সাথে কি!সও নাকি করেছে!এসব শুনে চাঁদ বললো,
“ইপ্সু,অবনী চলো ক্লাসে যাবো”
অবনী বললো,
“আরে দাড়া না।আমি কী শুনেছি জানিস?মেডিকেলের ড্রিম বয় সবার কাছে নাকি মেডি ক্রাশ নামেই পরিচিত ছেলেটার কি যেনো নাম শুনেছি!”
চাঁদ সেদিকে তোয়াক্কা না করে ইপ্সিকে বললো,
“দোস্ত চলতো”
অবনী ওদের থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আরে কোথায় যাস?শুননা।ছেলেটা নাকি সেইই হ্যান্ডসাম!সব মেয়েদের ক্রাশ।আমারতো তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে।না জানি কত্ত হ্যান্ডসাম!আরও শুনেছি আজ পর্যন্ত নাকি কোনো মেয়েদের সাথে কথা পর্যন্ত বলেনি।কোনো মেয়ের আশেপাশেও তাকে নাকি দেখা যায়নি।”
ইপ্সি আগ্রহ দেখিয়ে বলে,
“তাই নাকি?কিন্তু আমিতো সকালে অন্যকিছুই দেখলাম”
“অন্যকিছু মানে?”
“বাদ দে।চল ক্লাসে যাই”
অবনী আবারও ইপ্সির হাত ধরে আটকে বলে,
“আরেএ এমন করছিস ক্যান।মজার বিষয়তো শোন!এই ছেলে নাকি নিজের কাজিনদের সাথেও কথা বলতে পছন্দ করেনা।মা আর এক না দুইটা ফ্রেন্ড আছে হয়তো। এরা বাদে আর কারো সাথেই কথা বলেনা,মেশেনা।ছেলেটা কি জোস রে ভাই!এজন্যইতো সে মেডিকেলের প্রায় সব মেয়ের ই ড্রিম বয়।এমন ছেলেকে ধরে!বে!ধে বিয়ে করে ফেলা উচিত।হায়েএএএএ!”
বলেই ডান হাত ডান গালে রেখে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা করে অবনী।এসব শুনে চাঁদ মেজাজ খারাপ করে ভ্রু কুচকে উচ্চস্বরে বলে,
“এই থামো তো।জানোটা কী তুমি?”
“ভ!ড়কে যাচ্ছিস কেনো?”
“ভ!ড়কাবোনা কেনো?তুমি নিশ্চয়ই এটা শুনোনি যে লোকটা আস্ত খা!টাস আর লু*ইচ্ছা!”
অবনী অবাক হয়ে বললো,
“কীসব বলিস!আমিতো শুনেছি সে নাকি মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে থাকে”
চাঁদ নাটকীয়ভাবে বললো,
“হ্যা।দূরে থাকে বলেই তিন তিনটা বান্ধবী নামক হাফ গার্লফ্রেন্ড আর অপরিচিত মেয়েদের ডেয়ারের নামে কি*স করে যত্তসব!”
অবনী অবাক হয়ে বললো,
“কিসব বলছিস?”
“ইপ্সু ক্লাসে যাবি তুই?”
বলেই চাঁদ হনহনিয়ে যেতে লাগলে অবনী বললো,
“এই চাঁদ যাসনা।ছেলেটার নাম মনে পড়েছে রে ইপ্সু।নামটাও সুন্দরই,প্র….”
চাঁদ রেগে বললো,
“তোর নাম তুই ই রাখ!”
অবনী চাঁদের সামনে এসে বললো,
“তুই এতো রাগছিস কেনো?আর এসব জানিস ই বা কী করে?”
ইপ্সি বললো,
“আরে অবু!আজ ওকেইতো সেই ছেলে কি*স করেছে”
অবনী চেচিয়ে বললো,
“কী!প্রণয় চাঁদকে কি*স করেছে?”
অবনীর চেচিয়ে বলা কথা ক্যাম্পাসে উপস্থিত অনেকের কানেই পৌছালো।কথাটা শ্রবণ হতেই তারা ওদের দিকে শকুনের দৃষ্টিতে তাকালো।তাদের অবিশ্বাস্য চাহনী পর্যবেক্ষণ করে ইপ্সি চাঁদের দিকে তাকালো।তাকিয়ে দেখলো চাঁদের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করছে।সে তৎক্ষনাৎ ভ!ড়কে অবনীকে বললো,
“চেচাচ্ছিস কেনো?”
অবনী তাও বিস্ময় নিয়েই বললো,
“সিরিয়াসলি?ক্যাম্নে?আই মিন কিভাবে কী ভাই!”
কয়েকটা মেয়ে সামনে এসে বললো,
“চাঁদ?কোনটা চাঁদ?দেখি।কই মেয়েটা?মেয়েটাকে দেখবো আমরা।শুনেছি কি*স করেছে।লি!প কি*স করেনিতো আবার?”
এসব শুনে চাঁদের মেজাজ যেনো সপ্তম আসমানে চড়ে বসলো!সেখান থেকে ক্ষীপ্র গতিতে যেতে লাগলো সে।অবনী আর ইপ্সি চাঁদের পিছু নিলো।অবনী যেতে যেতে বললো,
“চাঁদ এই চাঁদ?দোস্ত?রাগিস কেনো?আমার কথাটা শোন”
সবার মাঝে রটিয়ে গেলো মেডি ক্রাশ প্রণয় চাঁদ নামক একটি মেয়েকে কি*স করেছে।তাদের মাঝে ঠিক কী রকম কি*স হয়েছে এসব ই বর্তমানে কলেজের মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।মেয়েটা ঠিক কতটা সুন্দর হলে যেই ছেলের মেয়েতে এলার্জি, সেও কিনা তাকে কি*স করে?এসব ভেবেই কেউ কোনো উত্তর মিলাতে পারছেনা।কলেজের প্রায় সব ইয়ারের ছেলে-মেয়েই চাঁদকে একবার দেখার জন্য ব্যাকুল!
To be continued…