আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ১০.

0
699

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১০.
শুরুটা কিছুটা এভাবেই হয়,
.
.
.
.
.
.
.

“মামা আজ নবীনবরণ হলে ভালোই হতো রে!”

“তুই আবারও শুরু হয়ে গেছিস?”

“ওর তো কাজ ই এটা।এতে নতুন কী?”

দূর থেকে একটা মেয়ে ছেলেগুলোর সামনে এসে বললো,

“এই মির আবারও কোনো মেয়ের কথাই বলেছে না?”

বলেই মিরের কান ম!লা দিতে দিতে বললো,

“এই শা*লা তোর কয়টা লাগে রে?এই পর্যন্ত কয়জনের এক্স হয়েছিস বলতো?”

মির মেয়েটার হাত কান থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

“আহহা ছাড়তো।লাগছে আমার”

“লাগুক।আরও বেশি করে লাগুক”

মির এবার রে!গে মেগে বললো,

“দেখ মিরা ভালো হচ্ছেনা কিন্তু।তুই নিজের মন মর্জিমাফিক চলিস না।নিজের মনের কথা বলিস…”

সম্পূর্ণ কথা পূর্ণ করার আগেই মিরা ধ!ম!কে মিরকে বললো,

“আর একটা ফালতু কথা যদি আমি তোর মুখ থেকে শুনি তাহলে তোকে আর আ!স্ত রাখবোনা বলে দিলাম”

“কী করবি?কী করবি টা কি তুই আমার?শুনি একটু।আরে শুনাই না”

“এমন ধো!লা!ই দেবোনা যে বাপ-দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীর নামও ভুলে যাবি”

মির ফোড়ন কেটে জবাব দিলো,

“তার জন্য তো তুই আছিসই।ভুলে গেলে মনে করিয়ে দিবি।আফটার অল আমার বাপ-দাদা তো তোরও বাপ আর দাদা।একচুয়ালি চৌদ্দ গোষ্ঠীও রাইট?”

মিরা রে!গে দাত কিড়মিড়িয়ে বললো,

“মিরের বাচ্চা!”

“একেতো নিজের ই ভাইকে শা*লা বলিস তার উপর আবার কথায় কথায় বাবাকে মাঝে নিয়ে আসিস।কী?কী মনে করিস টা কী তুই নিজেকে?”

“কী মনে করি মানে?তুই আমার সাথে এভাবে কি করে কথা বলছিস মির?”

“আর তুই কী করে বলছিলিস?”

তাদের ঝ!গ!ড়ার মাঝেই ভ্রু কুচকে একটা ছেলে বললো,

“এই তোরা কি থামবি?কী শুরু করলিটা কী ভাই?তোদের জন্য আমার কনসানট্রেশন নষ্ট হলো”

তাদের মধ্য থেকে আরেকটা ছেলে বললো,

“তোর এই যেখানে সেখানে বই পড়ার স্বভাব কবে যাবে বলবি?মানে তোর জীবনে কি পড়া ছাড়া আর কিছুই নেই?”

আরেকটা মেয়ে হাসতে হাসতে বললো,

“ন আকার না।এত্ত বড় নাআআআআআআআ!না মানেতো বুঝিস ই নাকি?”

ছেলেটা খানিকটা রাগ দেখিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,

“মজা উড়াচ্ছিস তাইনা?”

বলেই ম্লান হেসে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলো।ঠিক তখনই মেয়েটা কিছুটা চেচিয়ে বললো,

“রা!গ কেনো করিস?চাশমিশ?এই ডাফার!”

মিরা গম্ভীর হয়ে বললো,

“জানিস ই যখন রাগ করে কেনো রা!গাস?”

“মজা লাগে তাই”

“তাই বলে তুই কারো ইমোশনে হা!র্ট করতে পারিস না”

“আমি কারো ইমোশনে কেনো হা!র্ট করবো ভাই?ও সবসময়ই একটু রাগ করে।এবারও তাই করেছে”

“রাগ?হাহা!হিম।রাগ করেছে।হ্যা,রা*গ ই তো করেছে!”

বলেই মিরাও সেখান থেকে চলে গেলো আর মেয়েটা বাকিদের বললো,

“মিরার আবার কী হলো বুঝলাম না”

মিরা ছেলেটাকে অনুসরণ করে দৌড়ে এসে তার কাছে দাড়ালো।ছেলেটা ক্লাসের শেষ কর্নারের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলো।সে মিরাকে দেখে বললো,

“কেনো এসেছিস?”

মিরা খানিকটা হেসে ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

“কেনো আসি?”

ছেলেটাও চোখে চোখ রেখে ম্লানভাবে বললো,

“কী দরকার?”

“তোরই বা কী দরকার যে অভিমান বুঝেনা তার সাথে অভিমান করার?”

ছেলেটা খানিকটা চমকালো।চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হয়ে গেলো নিমিষেই।দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

“অভিমান?কীসের অভিমান?কার সাথে আর কেনোইবা করবো।কিসব বলিস?”

মিরা ছেলেটার দু’কাধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

“অরণ?অরণ?”

“এই অরণের বাচ্চা?এখানে তাকা।তাকা বলছি!”

অরণ গম্ভীর থাকলেও মিরার দিকে তাকাতেই হাসতে বাধ্য হলো।হাসতে হাসতেই বললো,

“মানে রাগও ভাঙাবি আবার খবরদারিও করবি?এই নাহলে মিরা দি ডা!কি!নী?”

এ কথা শুনে মিরা অরণকে মা!র!তে লাগলে অরণ হাসতে হাসতে বললো,

“সরি সরি বাঘিনী”

অরণের সাথে এবার মিরাও হাসিতে যোগ দিলো।সাথে চোখের কোন পানিতে চিকচিক করতে লাগলো।অরণ মিরাকেও হাসতে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে আ!ৎ!কে উঠে বললো,

“মিরু?”

“এই?কাদছিস তুই?”

মিরা চোখের পানি মুছে অরণের মাথায় গা*ট্টা মে!রে বললো,

“পূর্ণ ঠিকই বলে।তুই আসলেই ডাফার।আমি কাদবো কেনো?”

“তাহলে হাত দিয়ে কি মুছলি?আমায় বল কী হয়েছে?মিরের কথায় হা!র্ট হয়েছিস?ওর মুখে কিছু আটকায় না জানিস ই তো।আর মন থেকে কিছু বলেওনা।নাকি আমি কিছু করলাম?”

“ধুর!মিরের কথা আমি কখনোই গায়ে মাখি না।তাছাড়া ও আমার ভাই।আমার থেকে বেশি ওর সম্পর্কে আর কে ই জানবে?আর তুইও কিছু করিসনি।হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে”

“শিওর তুই?আর কিছুনাতো?”

মিরার কিছু বলার পূর্বেই ওদের সব ফ্রেন্ড সেখানে হাজির হয়।পূর্ণতা এসেই অরণের হাত টে!নে ওর কাধে মাথা রেখে বলে,

“সো সরি মামা।আমি তোকে সত্যিই হা!র্ট করতে চাইনি।বিশ্বাস কর।আমিতো সবসময়কার মতো শুধু মজাই করতে চেয়েছি।বন্ধুত্বে যদিও সরি চাওয়াচাওয়ি নেই তবুও আমায় মাফ করবিনা?”

অরণ পূর্ণতাকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে দাড় করিয়ে দু’বাহুতে হাত রেখে বলে,

“মাফ কেনো চাচ্ছিস বোকা?আমি হা!র্ট হইনি।এমনিতেই রাগ করে এসেছি আর কিছুনা।”

“কিন্তু মিরু যে….”

“আমি সত্যি ই রাগ করিনি।মানে হা!র্ট হইনি”

পূর্ণতা এবার মিরার দিকে তাকিয়ে বললো,

“দেখেছিস?অরণকে আমার থেকে ভালো আর কে ই বা বুঝতে পারে?কখন রাগ করে কখন কী?আর কিভাবে রাগ ভাঙাতে হয় দেখলি?”

মিরা এবার অরণের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ করে অরণের চোখ মিরার দিকে পড়লো আর সেও তাকালো।মিরা খানিক হেসে তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে বললো,

“হ্যা দেখলাম তো।খুব ভালো করেই দেখলাম আর শিখলাম ও।”

রবিন সবার অ্যাটেনশন সিক করে বললো,

“তোরা পরেও ইমোশনাল হতে পারবি।আজ ফার্স্ট ডে অফ নিউ ইয়ার?ভুলে গেছিস?অরণ আর মিরাকেতো সেজন্যই নিতে আসলাম।এতক্ষণে নিশ্চয়ই কলেজে ঢুকেও গেছে”

অরণ মেজাজ খারাপ করে বললো,

“কেনো এমন করিস বলতো?জানিসই তো ও কখনো রাজি হবে না।মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে না থাকলে যার অ!স্ব!স্তিবোধ হয় সে কী করে কাউকে কি*স করবে?”

মিরা ফোড়ন কেটে বললো,

“এই তোর মতলব টা কী?আমি,পূর্ণ আর রিহা কি থা*র্ড পার্সন?”

“আরে আমি সেটা… ”

পূর্ণতা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“তোর কিছু বলতে হবেনা।চুপচাপ চল নাহলে কিন্তু পরেরবার থেকে ডেয়ার তোকে দেবো।তাও আবার এর চাইতেও ডে!ঞ্জারা!স।বুঝেছিস?”

“হা…হ্যা হ্যা…. চল।যাচ্ছিতো”

সকলে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখলো কাউকে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে আর গিটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে।মিরা সেখানে এসে তার বন্ধুকে মেয়েদের মাঝে দেখে মেজাজ চ!টে গেলো।অতঃপর চেচিয়ে বললো,

“চোখ খুলে আশেপাশে দেখ ছা!গ!ল কোথাকার।”

মিরার আওয়াজ শুনতেই গিটারের আওয়াজ বন্ধ হলো আর একটা ছেলে তার চোখ থেকে কালো রঙের আই মাস্ক খুলে ভ্রু কুচকালো।অতঃপর তাকালো মিরার দিকে।মিরা ইশারায় তাকে সেখান থেকে চলে আসতে বললো।কিন্তু মেয়েদের ভিড়ে সে সেখান থেকে বেরুতে পারছেনা।তাই কুঞ্চিত ভ্রুযুগোলকে আরও কুঞ্চিত করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“আপনারা তো জানেন আমি আমার সামনে এতো মেয়ে মানুষ পছন্দ করিনা।ইন ফ্যাক্ট মেয়ে মানুষ আমার আশেপাশে থাকলে আমি সেই রাস্তা দিয়ে যাই ই না।সো প্লিজ লিভ মি আলোন”

সেখান থেকে একটা মেয়ে বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো,

“হায়!এই অ্যাটিটিউডেইতো বারবার ম*রে যাই জান!”

এসব দেখে পূর্ণতা ভিড় ঠেলে সামনে এসে বললো,

“আর তোকে কতবার বুঝাবো ক্যাম্পাসে বসে গান তো দূরে থাক গিটারও বাজাবিনা?”

“গান কখন গেলাম?”

ছেলেটার কথায় পাত্তা না দিয়ে পূর্ণতা তাকে টে!নে ভিড় থেকে বাইরে আনলো।আনতেই মির ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো,

“তোর দেখি খুব সাহস মামা!”

“হঠাৎ এই কথা?”

“আজ কোন দিন জেনেও এসেছিস?”

ছেলেটা মনে পড়ার ভঙ্গিতে বললো,

“ওহ!হ্যা।কারণ আমার জবাবও তোরা জানিস”

মিরা বললো,

“চল তাহলে।ফার্স্ট ইয়ারের অনেকে ঢুকে ক্লাসেও চলে গেছে”

ছেলেটা সেখানে দাড়িয়েই বললো,

“যাওয়ার কী দরকার?বল কোথায় পার্টি লাগবে তোদের?”

রবিন বললো,

“আগেই কেনো হার মানছিস?এবার কোনো সুন্দরী পড়তেও তো পারে?”

এমনসময় ওদের ফ্রেন্ড রিহা দৌড়িয়ে ওদের সামনে এসে হাপাতে হাপাতে বললো,

“আমি আজকে সেই লেইট হয়েছি মামা।হোপফুলি তোরা শুরু করিসনি?আর রবিন, বে!কু!ব কোথাকার!সব মেয়েরাই সুন্দর ছিলো।এই শা*লা*র নজরে বোধহয় ছিলোনা।”

শেষের কথাটা রিহা সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বললো।

মির বিরক্ত হয়ে বললো,

“একসাথে কত কুয়েশ্চন করিস?”

“অন্তত তোর মতো বা*রো ছেলে নিয়ে ঘুরিনা ”

“হোয়াট!আমি ছেলে নিয়ে ঘুরি?”

“আমি ছেলে আর তুই মেয়ে নিয়ে সেটা বলেছি উফ!”

মির বললো,

“আচ্ছা থাম।তোর সাথে ঝ!গড়া পরে করবো।মামা!যা দেখ কোন রমনী গেট দিয়ে ঢুকছে।গো এন্ড কি-স হার টা!ই!ট!লি”

মির কথাটা গিটার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো।

অরণ সাথে সাথে নাক ছি!টকে বললো,

“ছিহ!সবাই লাগে তোর মতো?”

গিটার হাতে ছেলেটা অরণকে বললো,

“ভাই তুই ই বুঝা।এসব আমার দ্বারা একেবারেই অসম্ভব।ওরা পার্টি পেলেই তো হলো নাকি?”

মিরা ছেলেটার দু’কাধ ধরে সামনের দিকে ঘুরিয়ে ধা*ক্কা দিয়ে বললো,

“ওর কিছু বুঝাতে হবেনা।তুই বল কাকে দেখলি?যাকেই দেখেছিস যা করতে বলেছি করে আয়”

মিরার আকস্মিক ধা*ক্কায় নিজেকে পড়া থেকে একটুর জন্য বাঁচাতে সক্ষম হয়ে সামনে তাকাতেই ছেলেটা দেখলো লাল-কালো ড্রেসাপে খয়েরী রঙা চতুর্কোণা চশমা পরহিতা একটি মেয়ে হাসতে হাসতে গেট দিয়ে ঢুকছে।

রিহা মিরকে বলছে,

“এবার টাকা পার পার্সন টেনকে করে নেবো বুঝেছিস?”

রবিন বললো,

“আর হোলডে ফ্রিতে ট্রিট!”

সবাই কথা বলতে বলতে হাসছে আর অরণ ওদের থামিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলছে,

“দা.. দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্বপ্ন না দেখে সা…সামনে তাকিয়ে দেখ।আই জাস্ট কান্ট বিলিভ অন মাই আইস!”

সবাই হা করে সামনে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা মেয়েটার সামনে গিয়ে ডান হাত পকেটে ঢুকিয়ে বাম হাতে গিটার মাঠে ধরে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পথ আটকালো।আরেকটু হলেই ছেলেটার বুকে মেয়েটার মাথা ঠু*কে যেতো।মেয়েটা খানিকটা পেছনে চেপে বললো,

“এক্সকিউজ মি?চোখে কি কম দেখেন?”

ছেলেটা সামনের দিকে ঝুকে মেয়েটার ডান কানে ফিসফিসিয়ে বললো,

“আপনার চাইতে একটু হলেও বেশি দেখি….”

বলেই নিঃশ্বাস আটকে খানিকটা থেমে পেছনের দিকে আসতে আসতে মেয়েটার ডান গালে শব্দহীনভাবে আলতো করে ঠোট ছু!ই!য়ে বললো,

“মিস রেডরোজ”

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here