আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ০৯.

0
701

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৯.
সবেমাত্র হলরুমে পা দিয়েছিলো প্রণয়।অপরিচিত এক লোকের তারই বাড়িতে দাঁড়িয়ে তার বোনকে অপ!মান করতে দেখে কপাল কুচকালো তার।সে এপ্রোণ আর স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলো।ছেলেটার পাশ দিয়ে গিয়ে সোফায় আয়েশ করে বসে পাশেই হাতের জিনিসগুলো রেখে ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শার্টের কলার উচু করতে করতে পায়ের উপর পা তুলে বলে,

“আমার বাড়িতে এসে আমারই বোনকে হু!ম!কি দিচ্ছেন?ইমপ্রেসিভ”

আঁড়চোখে প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো,

“বাট আই আম নট সারপ্রাইজড অ্যাট অল।তার বেয়াদবির আইডল যে সামনে বসে থাকা তার অ!হং!কারী ডাক্তার ভাই তা বুঝতে কালবিলম্ব হচ্ছেনা আমার”

বেশ শান্তভাবে প্রণয় বললো,

“কার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি তা জানেন কি?”

“না আছে জানার ইচ্ছা না ছিলো এসব বড়লোক মানুষদের বাড়িতে প্রবেশ করার ইচ্ছা।নেহাৎ ই বোনটার জন্য আসতে বাধ্য হয়েছি।এসে ভালোই হলো, তাকে এখানে রেখে যাবার মতো ভুল চিন্তা মাথা থেকে জাস্ট চেপে গেলো”

রুবার ভাই রায়হান ছেলেটার সামনে এসে বলে,

“আমার বোনের থেকে দু’হাত পেছনে যান”

প্রণয়ের দিক থেকে ঘাড় ঘুড়িয়ে রায়হানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ছেলেটা বলে,

“আপনার বেয়াদব বোনের কাছ ঘেষে থাকতে এখানে আসিওনি।তবে আপনাদের একটা উপদেশ দিচ্ছি।সময় থাকতে আদব-কায়দা শেখালে তার বড় ভাইদের থেকেও বড় তাও আবার অপরিচিত কাউকে গা!লি দেবার মতো ভুল সে করতোনা।অবশ্য যাদের নিজেরই ম্যানার্স নেই তারা ছোটদের আর কিই বা শেখাবে?”

রায়হান ভ্রু কুচকে বললো,

“গা!লি?”

“আপনাদের বড়লোকদের কী সমস্যা জানেন?আপনাদের কেউ কিছু বললে তাদের দমাতে নিজেদের স্ট্যাটাস নিয়ে বড়াই আপনাদের করতেই হবে।সে ভুল আপনাদের নিজেদেরই হোক না কেনো,বাজি হারা যাবেনা ভুলেও!”

“ক্লিয়ারলি বলবেন রুবা করেছে টা কী?”

“আপনার বোনের বড়দের প্রতি সম্মান নাইবা থাকতে পারে তবে আমার আছে।”

রায়হান আশেপাশে থাকা সব বড়দের দেখে উক্ত কথাটির অর্থ বুঝতে পেরে গম্ভীরভাবে শিফাকে বললো,

“শিফা?রুবা কী করেছে উনাকে?”

রায়হানের কন্ঠে চমকে যায় শিফা।গলায় কথা আটকে আসে তার।এই একটা ছেলের সাথে কথা বলতে গেলেই তার জড়তা কাজ করে সর্বদা।আজ যেনো গলা তার মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।তাই সে মৌনতা অবলম্বন করাকেই শ্রেয় মনে করলো।রায়হান কন্ঠ উচিয়ে বললো,

“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি!”

শিফার বদলে রিদি বলে,

“ভা…ভাইয়া।আসলে আমরা খাচ্ছিলাম।হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে এসে দেখি রু..রুবা বসা থেকে দাঁড়িয়ে উনাকে….”

“উনাকে?”

রিদি আটকে আটকে বলে,

“এ..একটা কথা বলেছে”

রায়হান তার ডান হাতের পাশে টেবিলের কাছে থাকা ফুলদানিটা হাত দিয়ে ঘু!ষি!য়ে ফ্লোরে আছ*ড়ে বলে,

“টেল মি দ্যা ট্রুথ ড্যাম ইট!”

রিদি ভয়ে চোখ খিচে নেয়।শিফা রীতিমতো ঘামাচ্ছে।এ ছেলেটা রাগলে কাউকেই ছাড় দেয়না।রুবাকেও যে ছাড়বেনা তা ভেবেই অন্তরাত্মা কা!প!ছে তার।সে কিছু বলবে তার আগেই শুনতে পায় রুবার নিম্ন কন্ঠস্বর,

“আমি উনাকে শা*লা বলেছি।ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিলাম।হাতে,কপালে ব্যাথা পেয়েছি।তাই উঠেই রেগে বলেছিলাম ‘শা*লা তোর সাহস তো কম না’। জাস্ট এইটুকুই।হ্যা মানছি ভুল হয়েছে।মেজাজ খারাপ ছিলো বলে এভাবে বলে ফেলেছি।আই আম সরি ভাইয়া”

রায়হান রুবার কথা শুনে রুবার হাত ধরে হ্যাচকা টে!নে তার সামনে দাড় করিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,

“আমারও মেজাজ খারাপ হচ্ছে।এন্ড নাও আয় উইল স্লা!প ইউ”

বলেই হাত উচিয়ে রুবার গাল বরাবর নিতেই তার হাত কেউ ধরে ফেলে।রায়হান বাকা চোখে তাকায় সেদিকে।কপাল খানিকটা কুচকায় তার।রুবার চোখ বন্ধ ছিলো বিধায় হাতের স্পর্শ না পেয়ে সে ঢোক গিলে চোখ মেলে তাকায়।অতঃপর অবাক চোখে পাশে থাকা ছেলেটার দিকে তাকায় রুবা।তার ভাই প্রণয় বাদে আর কারো কথা মান্য করেনা।যখন যা ইচ্ছা তাই করে।কাউকে পরোয়াও সে করেনা।প্রণয়ের পর রায়হানকেই সবাই অনেকটা ভ*য় পায়।অথচ সামনে থাকা ছেলেটা দিব্বি তার ভাইয়ের কাজে বা!গ!ড়া দিলো?এবার তার ভাইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?ভাবতে ভাবতেই চাঁদের উচ্চস্বর শুনে বাম পাশে তাকালো রুবা,

“ভাই!”

খুব জোরে উৎফুল্লতার সহিত ‘ভাই’ শব্দটুকু উচ্চারণ করেই চাঁদ ছুটলো রায়হানের হাত ধরে রাখা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে।ছেলেটাও চাঁদকে দেখে রায়হানের হাত ছেড়ে বোনের দিকে আগে বাড়লো।দু’হাত প্রসারিত করে জড়িয়ে ধরলো বোনকে।ডান হাত মাথায় রেখে মাথার তালুতে আলতো করে চুমু খেলো বোনের।অতঃপর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

“একটাবার ভাইকে বলতে পারতি।ভাই তৎক্ষণাৎ ছুটে আসতাম”

চাঁদ ভাইকে ছেড়ে বলে,

“তুমি এ বাড়ি চিনলে কী করে?আর হঠাৎ এলে বললেনা আমায়?”

“সবার কথায় বিয়েও করে ফেললি তা আমায় বলেছিলি তুই?”

মাথা নিচু করে চাঁদ বলে,

“তখন পরিস্থিতি…”

“পরিস্থিতি জা!হা!ন্নুমে যাক।আমি তোকে নিতে এসেছি”

“কোথায়?”

“কোথায় আবার বাড়িতে”

“কিন্তু একদিন শ্বশুর বাড়ি থাকতে হয়।পরদিন যায়।এটাইতো নিয়ম না?”

ভ্রু কুঞ্চিত করে চাঁদের ভাই বলে,

“তুই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস?”

চাঁদ জবাবে কিছু বলেনা।দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে ভাইয়ের থেকে।তা দেখে সে বলে,

“যাদের চিনিসনা তাদের মেনে নিচ্ছিস?তাও আবার এমন ম্যানারলেস মানুষদের?যারা বড়দের সম্মানতো করেইনা।ছোটদের এমনকি মেয়েদের গায়ে হা!ত তু*ল*তে যাদের হাতও কাপেনা?”

“হা!ত তুলেছে?”

“শোন ছোটি,ভাই কি তোর খারাপ চাই?”

চাঁদের জবাবের আগে প্রণয়ের মা সামনে এসে বলেন,

“ভাইয়েরা কখনোই তাদের বোনের জন্য খারাপ চায়না।চাইতেও পারেনা।তবে তোমার বুঝতে হবে বিয়েটাতো হয়ে গেছে।এখানে অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা আছে।আল্লাহ ওদের জোড়া উপর থেকে বানিয়ে পাঠিয়েছেন বলেই ওরা আজ একসাথে।তোমার এটা মানতে হবে”

“মানা না মানাতো পরের বিষয় আন্টি।আমি কি করে শিওর হবো আমার বোনটা এখানে সুখে থাকবে?তার কোনো সমস্যা হবেনা?যেখানে তার শ্বশুরবাড়ির লোকের ব্যবহার মার্জিত নয়।এসেই হুটহাট গা!লি শুনতে হলো তাও আবার হাটু সমান বয়সের মেয়ের কাছ থেকে।”

চাঁদ অবাক হয়ে বলে,

“কে গা!লি দিয়েছে তোমায়?আর আমি কিছু ভা!ঙা*র আওয়াজও শুনেছি।”

রুবা চাঁদের সামনে এসে বলে,

“ভাবি আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি।আমার ঘুম হয়নি।ঘুম না হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে।তার উপর আবার ওরা দুজন আমারই সামনে তোমার রান্না করা খাবার দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছিলো।আরও রেগে গিয়েছিলাম এতে।এমন সময়ই উনার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যাই।তোমার ভাইয়ের যা শরীর!আমি ফ্লোরে পড়ে গেছি ভাবি।কোমড়ে রগ ফা!প!ড়ে গেছে বোধহয়।কপালেও ব্যাথা পেয়েছি।দেখো ফুলে গেছেনা?তখন মুখ ফস্কে শা*লা বের হয়ে গেছে।কিন্তু আমি… ”

“কী বলেছিলে?”

“ইম…আসলে মানে..এভাবে বলা ঠিক হয়নি”

“বলেছো টা কী?”

“শা*লা তোর সাহস তো কম না”

বলেই মাথা নত করে রুবা।তা দেখে চাঁদ রুবার থুতনী উচিয়ে হেসে বলে,

“বোকা মেয়ে।মন খারাপ করেনা।আসলে আমার ভাই এসব পছন্দ করেনা।গা!লাগা*লি,ইয়ারকি এসব।আর তুমিতো তুই করেই গা!লি দিয়েছো।ভাই তাই বেশি রেগে গেছে।তুমি ভাইয়ের অনেক ছোট।তোমার মুখে এসব মানায় না।আসলে কারো মুখেই এসব মানায় না।এটা উচিতও না।তাও আবার অপরিচিত কেউ হলেতো মোটেওনা।মূলত এজন্যই ভাইয়া চেতে গেছে।”

বলেই নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চাঁদ আবারও বলে,

“ভাই তুমি এজন্য এভাবে বলছো?রুবা মেয়েটা অনেক ভালো।ওরা তিনজনই খুব ভালো।আমায় ভীষণ যত্ন করে।ভাবি ভাবি বলেও ক্লান্ত হয়না।ভাবি কম বোনের মতো ট্রিট করে বেশি।আর মা তো আরও ভালো।উনার মেয়ে নেই।দুটো ছেলেই।তাই তার মেয়ে হয়ে গেলাম।আর বাবাকে আমি আগে থেকেই চিনি।এই পরিবারে আর সবাই আমার বিপক্ষে থাকলেও বাবা কখনোই আমার সাথে কোনো অন্যায় হতে দিবেন না।আর আমার দেবর তন্ময়?সে ভীষণ দুষ্টু আর চঞ্চল।আমায় সবসময় হাসিখুশি রাখে।স্নেহ করে খুব।ভাবি হিসেবে সম্মানও অনেকখানি করে।তুমি এখনো আমার চিন্তা করবে বলো?”

“আর তোর স্বামী?”

ভাইয়ের কথায় ঠোটজোড়া থমকায় চাঁদের।শ্বাস নিয়ে বলে,

“সময়ের গতিতে সবটা ঠিক হয়ে যাবে”

“তাই না?”

“হিম”

“তো তুই এখানেই থাকবি?”

প্রণয়ের চাচি সামনে এসে বলেন,

“বাড়ির বউ বাড়িতে থাকবেনা তো কোথায় থাকবে?যত যাই হোক তোমার বোন এ বাড়ির বউ।তাও আবার বড় বউ।অনেক দায়িত্ব আছে।সবটা সামলাতে হবে তাকে”

“বিয়ে যেহেতু সবাই মানছেন তাহলে আমি আর কিই বা বলতে পারবো।তবে একটা কথা অবশ্যই বলবো।আমার বোনের অযত্ন হলে বোনকেতো নেবোই।আপনাদেরও ছেড়ে কথা বলবোনা।সে আপনারা যত বড়লোকই হন না কেনো”

প্রণয়ের বাবা কথাটা শুনে বলেন,

“মেয়েকেতো নিতে দেবোনা কোনোক্রমেই।পারলে তোমায়ও রাখতাম।তবে আমারতো কোনো মেয়ে নেই”

“ঘর জামাই হওয়ার ইচ্ছে নেই আংকেল।আচ্ছা এবার আমি আসি।বোনকে পাঠিয়ে দিবেন।আর তুই কোনো প্রয়োজন হলেই কল দিবি।আমি আসি”

প্রণয়ের মা চাঁদকে বললেন,

“তোমার ভাইয়ের নাম?”

“চৈত্র”

প্রণয়ের মা কোমল সুরে বলেন,

“বাবা চৈত্র?আজ নাহয় থাকো।রাতের দিকে এমনেও পাঠাতাম ওদের।তোমাদের বাড়িওতো গিয়ে থাকতে হবে।বোন আর বোন জামাইকে নিয়ে যেও একবারে?”

চৈত্র শান্তভাবে জবাব দেয়,

“বোন জামাই কি আদৌ বিয়েটা মানে আন্টি?”

বলেই আড়চোখে তাকায় প্রণয়ের দিকে।প্রণয় কোনোকিছুর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে তাও খুব মনোযোগ সহকারে।তা বুঝতে পেরে প্রণয়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে চৈত্র।

চাঁদের মুখে ‘ভাই’ ডাক শুনে এভাবে ছেলেটার দিকে চাঁদের দৌড়ে আসা দেখেই বসা থেকে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ায় প্রণয়।ছেলেটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চাঁদের দিকে দৃষ্টি জ্ঞাপন করে সে।।সামনে থাকা ছেলেটা যে চাঁদের বড় ভাই এটা তার মস্তিষ্কে পৌছেও পৌছাচ্ছেনা।ভাই-বোনের মাঝে কী আলাপ হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল নেই তার।থাকবে কেমন করে?তার মস্তিষ্কে আপাতত তার সামনে দাড়িয়ে থাকা লাল-কালো শাড়িতে আবৃত নারীটিই বিচরণ করছে।এই রূপেই প্রথম চাঁদকে সে দেখেছিলো।সেদিনও লাল-কালোর সংমিশ্রণে চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিলো প্রণয়ের।সে জ্ঞানশূন্য হয়ে এমন এক কান্ড করে বসেছিলো যা কেউ কখনো ভাবেনি।আনেনি কল্পনায়ও।প্রণয় নিজেও অবাক হয়েছিলো সেদিন।তবে সেদিনের সেই ঘটনার ফলেই ঘটে প্রণয়ের জীবনে এক গোলাপের বিচরণ।গোলাপটি কেবলই তার।তার একান্ত লালগোলাপ।আজও লালগোলাপের বেশে চাঁদকে দেখে অতীত নামক বইয়ের প্রথম পাতাটি নাড়াচাড়া দিয়ে উঠে মস্তিষ্কে।

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here