#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৯.
পাহার,নদী আর সমুদ্রের অনন্য এক মিলনস্থল বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূমি টেকনাফ।টেকনাফের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নাফ নদী।টেকনাফ উপজেলার সংরক্ষিত বন টেকনাফ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য।টেকনাফ থেকে উত্তর দিকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে এই অরণ্যের অবস্থান।সংরক্ষিত এই বনের ভূ-প্রকৃতি,জীববৈচিত্র্য এককথায় অনন্য।এই অভয়ারণ্যটির সর্বোচ্চ চূড়া ‘তৈঙ্গা’ নামে পরিচিত।এবং একেই বলা হয় ‘তৈঙ্গা চূড়া’।তৈঙ্গা পাহার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ উঁচু।এ বনটি আয়তনেও বিশাল।বনের কাছে পৌঁছেই প্রণয় বন পরিচালকদের সাথে কথা বলে সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে।সবার আগে আগে হাটছে চৈত্র আর মির এবং সবার শেষে দিয়ে আসছে প্রণয়।বাকিসবাই এদের সাথে বা মাঝে দিয়েই হাটছে।কখন কি হয় বলাতো যায়না।যতই হোক বন তো?এ মনোভাবের দরুন ই প্রণয় পেছনে এসেছে যাতে কোনো সমস্যা হলে সে সেটা দেখতে পারে।আর চৈত্র আগে আছে কেনোনা এসব এলাকা সে ভালো করেই চেনে।উশ্মি বনে ঢুকেই বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে বিভিন্ন ধরণের ছবি তুলতে ব্যস্ত।উশ্মির সাথে যোগ দিয়েছে নিমৃতা আর রুবাও।রিদি,শিফা গল্প করতে করতে হাটছে।রিহা অমৃতার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলছে,
“তুমি যে রবিনের গার্লফ্রেন্ড এটা কি চাঁদ জানে?”
হঠাৎ করে রিহার আকস্মিক প্রশ্নে হতবিহ্বল হয় অমৃতা।এরপর শ্বাস ফেলে বলে,
“হ্যা আপু।আমি আপুকে সবই জানিয়েছি।আপুর বিয়ের পরদিন সকালেই”
“আর কেউ জানে তুমি রবিনের গার্লফ্রেন্ড?”
“তোমরা আর চাঁদ আপু ব্যতীত কেউই জানেনা আপু”
“আচ্ছা।রবিনতো স্ট্যাবলিশড।বিয়ে করছোনা কেনো তোমরা?”
অমৃতা হেসে বলে,
“আজই না বললে?অরণ ভাইয়া ভালো না হওয়া ব্যতীত তোমরা কেউ বিয়ে করবেনা?তাহলে আমার আর রবিনের বিয়েটা কিভাবে এক্সপেক্ট করলে আপু?”
মুচকি হেসে রিহা বললো,
“তুমি বেশ বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে”
অমৃতা আরও কিছু বলতে নেওয়ার আগেই শিফার কথায় তার দিকে ধ্যান যায় তার,
“আচ্ছা ভাবি তুমি যে শাড়ি পরলে,উপরে উঠবে কি করে?”
রুবাও শিফার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
“হ্যা রে।যেই উঁচু!আগে জানলেতো আসতামই না।একটা বরও নেই যে কোলে কর….”
অতঃপর তার ঠিক পেছনেই যে তার বড় ভাই রায়হান দাঁড়িয়ে সে কথা স্মরণ হতেই তড়িঘড়ি করে বলে,
“ব..ব..বর দিয়ে কী?আমি একাই উঠতে পারবো।পায়ে বেশ জোর আছে আমার হেহে!”
বলেই দাত বের করে বেক্কলের মতো হাসতে আরম্ভ করে রুবা।তা দেখে মুখ ভেংচে শিফা বলে,
“ভ্যাটকাস না।পায়ে যে কত জোর তাতো জানিই….”
রিদি শিফার কাধে জোরে চাপড় মে!রে চোখ ছোট ছোট করে উদ্ভট হেসে বলে,
“আমি কি কিছু বলবো সোনামণি?”
শিফা রিদির হাত সরিয়ে তার কাধে এক হাতে জড়িয়ে হালকা চাপ দিয়ে খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তুমি চুপ থাকলে আমার পেট থেকেও কিছু উগলাবে না কলিজার টুকরা”
রুবা ওদের কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,
“এমন গিরগিটির ভালোবাসা পরেও দেখাতি পারবি তোরা।এই ভাবি তুমি বলোতো সবাই আমরা কম্ফোর্ট্যাবল পোশাক পরেছি।আর তুমি শাড়ি কেনো?”
চাঁদ স্মিত হেসে বলে,
“শাড়ি আমার জন্য কোনো ব্যাপারই না,বেশ কম্ফোর্ট্যাবল।আমি শাড়ি পরে দৌড়াতেও পারি।বিশ্বাস না হলে রিহাপু আর মির ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে পারো তারা দেখেছে আমায়।শাড়ি পরেই বখা…”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে চাঁদ।বাকিটা আর বলা হয়না তার। তাই চাঁদের কথাটা রিহা ই পূর্ণ করে দেয়,
“বখাটে তাড়িয়েছে।আমি,মিরা আমরা সবাই ওর সাথেই ছিলাম।ওর বন্ধু-বান্ধবেরাও ছিলো।ছেলেগুলোকে শাড়ি কোমড়ে গুজে যা মা!রটাই না দিয়েছিলো!আমার এখনো মনে পড়লে পেটে খিল ধরে যায়”
বলেই একদফা হাসে রিহা।রিহার কথা শুনে রিদি বলে,
“ভাবি তো তাহলে ভীষণ সাহসী।একাই সবাইকে নাস্তানাবুদ করতে পারে”
রিহা জবাব দেয়,
“অনেকটা তেমনই।কাউকে ছাড় দেয়না”
চৈত্র তাদের কথা হালকা শুনতে পেয়ে একটু চেচিয়ে বলে,
“আগে দিতোনা।এখন কাউকে ছাড় দেবে দূর ধরেও না”
মির সাথে সাথেই উত্তর দেয়,
“কিন্তু কেনো?কী হয়েছে ঘসেটির?”
চাঁদ প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
“আমি শাড়ি পরেছি চূড়ায় উঠে ভালো ভালো কয়েকটা ফটো তুলতে।শাড়িতে এমন মনোরম পরিবেশে বেশ ভালো ভালোই ছবি আসবে।এই নিমু আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেতো আয়”
বলেই নিজের ফোনটা নিমৃতার দিকে এগিয়ে দেয় চাঁদ।অতঃপর বিভিন্নভাবে পোজ দিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয় দু’বোন।ছয়-সাতটা ছবি তোলার পর আরেকটা তুলতে নিলেই নিমৃতার ফোনে কল আসায় সে চাঁদের ফোন তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আপু একটু পরে তুলে দিচ্ছি হা?কলটা ধরি?”
চাঁদ স্মিত হেসে বোনের কাছ থেকে ফোন নিতে নিতে বলে,
“ফোন ধরতেও পার্মিশন নিতে হবে তোর?”
মাথা চুলকে নিমৃতা বলে,
“তোমাকে যে বড্ড ভালোবাসি আপাই।তোমার কাজ বাদ দিয়ে নিজেরটা করতে মন স্বায় দেবে কি?”
বোনের কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে চাঁদ বলে,
“থাক সোনা।তুই যা কথা বল সমস্যা নেই”
এ কথা শুনতেই নিমৃতার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক দেখা দেয়।চোখদুটো তার চকচক করে উঠে।তা দেখে চাঁদ হেসে বাকিদের সাথে হাটা ধরতে নিলে দেখতে পায় কেউই কোথাও যায়নি।কেউ কেউ বসে আছে,কেউ ছবি তুলছে তো আবার কেউ দাঁড়িয়ে মোবাইল ব্যবহার করছে।তা দেখে চাঁদ বলে,
“তোমরা যাওনি?”
চাঁদের প্রশ্নের জবাবটা এবার রায়হান দেয়,
“তোমাদের রেখে চলে যাবো,বোকা নাকি?”
রায়হানকে সচরাচর কথা বলতে দেখে না চাঁদ।তাই তার থেকে জবাব পেয়ে ইতস্ততবোধ করে চাঁদ বলে,
“আসলে…ভাইয়া সরি”
“ওয়েল।বসো,রেস্ট নাও।অনেক উঁচুতে উঠতে হবে।মনে হচ্ছেনা শাড়ি পরে পারবে আর তোমার বর এতোটা দয়ালুও নয় যে তোমায় কোলে করে উঠাবে।কিন্তু দেখা যাক!তারতো কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।হুটহাট অসম্ভব কিছু করে ফেলার প্রতিভা নিয়েই জন্মেছে”
বলেই মিরের সাথে কথা বলতে মির আর চৈত্রের সামনের দিকে এগোয় সে।গিয়ে শুনতে পায় মির চৈত্রকে বলছে,
“বুঝলেন ভাই?এখানে ঘুরতে এসেও গার্লফ্রেন্ডের প্যারায় শান্তি নাই!”
চৈত্র হেসে বলছে,
“গার্লফ্রেন্ডতো প্যারাই দেয় ভাই।রেখেছো কেন?”
মির অসহায়ের ন্যায় বলে,
“একটা গেলে আরেকটা আসে এমনকি একটা থাকলে দুই-তিনটাও আসে।কি করবো ভাই?”
মিরের কথা শুনে চৈত্র হেসে দিয়ে বলে,
“তুমিতো দেখি পাক্কা প্লেবয়!”
রায়হান চৈত্রের পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে সুর তুলে বলে,
“হ্যা ভাই।পাক্কা প্লেবয় রোমিও”
মির রায়হানের কথা শুনে কপাল কুচকে বলে,
“নো।ইটস পাক্কা প্লেবয় মিশকাত মির”
রায়হান মিরের কাধে চাপড় মেরে বলে,
“প্লেবয় ট্যাগ লাগাতে ভালোই লাগে না?”
“অসম্ভবরকম লাগে রায়হান!তুমি বুঝবেনা”
চৈত্র মিরের কথা শুনে আফসোসের সুরে বলে,
“না পারলাম পাক্কা প্লেবয় হতে আর না পারলাম এক নারীতে আসক্ত হতে।হায় জীবন!”
রায়হান উদাসীনভাবেই চৈত্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এক নারীতে আসক্ত হয়েও কোনো মজা নাই ভাই।ইহা বড্ড পোড়ায়!”
রায়হানের কথা শুনে চৈত্র তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কেন?তুমি এক নারীতে আসক্ত নাকি?”
“নারীই আসলে খারাপ বুঝলেন ভাই?আসক্তি বানালেও মা!রে আবার না বানালেও জান ক!ব!জ করে নেয়”
রায়হানের কথার মানে বুঝতে না পেরে চৈত্র কপাল কুচকে বলে,
“মানে?”
রায়হান হালকা হেসে বলে,
“কিছু না ভাই”
চৈত্র রায়হানের কাধে হাত রেখে বলে,
“বলো প্যারা নাই!আমরা আমরাইতো নাকি?”
রায়হান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“কাউকে ভালোবেসেছেন ভাই?না বাসলে হয়তো বুঝবেন না।পেয়েও হারানোর বেদনা ঠিক কতখানি”
চৈত্র এক গালে হেসে তুচ্ছ করে বললো,
“আর একান্ত নিজের করে নেওয়ার পরেও পাখি যখন উড়াল দেয়?তখন?তখন প্রেমচিত্ত ঝলসে যায় রায়হান!”
রামিমের হঠাৎ আগমন আর কথা শুনে ভড়কে যায় চৈত্র,
“কী ঝলসে যায় চৈত্র ভাই?”
মির ঠাট্টার সহিত রামিমকে বলে,
“এখানে বেশ সিরিয়াস কথাবার্তা চলছে রামিম।ওসব তুমি বুঝবেনা!যাও উশ্মির সাথে গিয়ে প্রেম করো”
রামিমও বিরক্ত হয়ে ঠাট্টার সুরে বললো,
“গার্লফ্রেন্ড আছে বলেই যে সারাদিন প্রেম করি এমন চিন্তাধারা বাদ দাও মির।সবাই কি তোমার মতো?”
মির ঠাট্টার রেশ ধরে রেখে ঠোটে হাসি ঝুলিয়েই বলে,
“আমার মতো হতে চাও?তাহলে দশ-বারোটা প্রেম করো।করবে?তাতো করবেনা।তোমরা সবগুলো এক নারীতে আসক্ত হয়ে এভাবেই ঝল!সে যাবে।কিছুই করতে পারবেনা”
এমতাবস্থায় সেখানে প্রণয়ও হাজির হয়।কিন্তু সে কিছু বলেনা।তা দেখে রামিম বলে,
“নিজের ফালতু ভাবটা বজায় রাখতেই হবে তোর তাই না?”
মিরও উস্কিয়ে বলে,
“না রাখলে ওর জমে নাকি মামা?”
রায়হান কপাল কুচকে বলে,
“তোমাদের মতো প্লেবয়গিরি করে নাকি ও?”
মির অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে রায়হানের পানে চেয়ে বলে,
“আয়হায় সেকেন্ডেই পল্টি!”
চৈত্র প্রণয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমাকে সবসময় গম্ভীরই দেখি প্রণয়।সবসময় কি এমনই ছিলে?নাকি কোনো এক্সিডেন্টবশত?”
প্রণয়ের পরিবর্তে মিরই হতাশ হয়ে চটজলদি জবাব দেয়,
“আরেএ ভাই ও সারাজীবন এমন দেবদাসই ছিলো”
রামিম মিরের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
“ইয়েস।দেবদাস উইদাউট এনি পারো”
রায়হানের উদাসীন কন্ঠস্বর শুনে তার পানে তাকায় সকলে।তাকায় প্রণয়ও,
“চাঁদ নামক পারোকে প্রণয়রূপী দেবদাস তো পেলোই।সবার কপালে কি আর তার নিজস্ব পারোকে পাওয়া হয় চৈত্র ভাই?”
ঠিক তখনই প্রণয়ের শান্ত কিন্তু ধারালো কন্ঠস্বর শুনে রায়হানের থেকে দৃষ্টি সরে গিয়ে প্রণয়ের পানে সকলের চোখজোড়া থমকায়,
“না চাঁদ কোনোকালের পারো আর না প্রণয় তার জন্য দেবদাস।ঐ চন্দ্রময়ী নারী তার শুদ্ধ পুরুষের একান্ত লালগোলাপ,যে গোলাপে হাজারটা কাটারূপে স্বয়ং প্রণয় বিদ্যমান।কাটারূপী প্রণয়ই যথেষ্ট প্রতিটা জমিদারকে ছি!ন্ন!ভি!ন্ন করে দিতে।প্রণয় চন্দ্রময়ী নারীকে পারো হতে দেয়নি।চন্দ্রতো কখনো পারো ছিলোনা,হতে পারেইনা!”
To be continued….
[বিঃদ্রঃগতকাল গল্প দেয়ার কথা ছিলো।আমি দিতে পারিনি।আসলে লিখতে পারিনি।তার জন্য আমি ভীষণ!ভীষণভাবে দুঃখিত।তার বদৌলতে কাল সকালে আরেকটা পর্ব দিয়ে দেবো কেমন?প্লিজ কেউ রাগ করবেন না।আমি সত্যিই দুঃখিত।এডমিশন টেস্ট ছিলো ওখান থেকে এসে খুব টায়ার্ড ছিলাম তাই আর লিখা হয়নি।দুঃখিত ভীষণভাবে!প্লিজ প্লিজ রাগ করবেন না।কাল সত্যিই আরেকটা পর্ব দেবো প্রমিজ।আর এডমিশনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিয়া কেহ লজ্জা দেবেন না!ফেইল আসবে।পড়াশুনা করিনি।০% প্রিপারেশন নিয়ে গিয়েছিলাম।ফেইল আসাটাই স্বাভাবিক হেহে!]