আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৩৮.

0
665

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৩৮.
“ঐ বদ!মা!ইশ লোকটা আমায় বড্ড জ্বালাচ্ছে মিরজাফর ভাইয়া!”

সকাল সকাল কলেজে প্রবেশ করেই সরাসরি তৃতীয় বর্ষের ক্লাসে ঢুকে প্রণয়ের বন্ধুমহলের সামনে একটা বেঞ্চে বসতে বসতে কথাখানা বলে চাঁদ।চাঁদের কথা শুনে মির ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

“কোন ব!দমা‌!ইশের কথা বলছো ঘসেটি?”

চোখের চশমা খুলে তা হাইবেঞ্চে রেখে,ওড়নার একপাশ দিয়ে পুরো মুখের ঘাম মুছতে মুছতে চাঁদ বলে,

“কার আবার তোমাদেরতো সেদিনও বললাম লোকটা আমায় রীতিমতো ফলো করছে।শুধু কি ফলো?তিন মাস ধরে জাস্ট বিরক্ত করে ফেলেছে।কোনো কিছু বললে গায়েও মাখেনা সে।থার্ডক্লাস লোক একটা”

মিরা কোকের বোতলে হা করে দুই-তিন ঢোক গিলে চাঁদের দিকে তা এগিয়ে দিয়ে বলে,

“নাও আগে মাথা ঠান্ডা করো।এটার একটা বিহিত আমরা অবশ্যই করবো।তুমি টেনশন নিওনা”

রবিন পাশে থেকে বলে উঠলো,

“আমার কী মনে হচ্ছে,আহিন মেইবি তোমাকে ভালোবাসে চাঁদ”

এক চুমুকেই পুরো বোতল শেষ করে বিরক্তি নিয়ে রবিনের পানে তাকিয়ে চাঁদ বলে,

“কী বললে তুমি?ভালোবাসে?সিরিয়াসলি ভাইয়া?ঐ লোকটা আমায় ভালোবাসে?ভালোবাসলে এমন ছ্যা!চড়ামো কে করে বলবে?আর এতো নামধামপূর্ণ মেয়রের ছেলেকে এসব মানায়?নিশ্চয়ই আমার থেকে সেদিনের প্র!তিশোধের জন্যে পিছে পড়েছে আর ভেবেছে তার সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে চাঁদ ফেসে যাবে।হাউ সিলি!”

রিহা এক ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

“তার মানে তুমি মানছো আহিন সুন্দর?”

চাঁদের সোজাসাপটা জবাব,

“হ্যা অবশ্যই।সুন্দরকে তো আর কুৎসিত বলা যায়না তাইনা?”

কথাটা প্রণয়ের কর্ণকুহর হতেই দৃষ্টি সরু হয়ে আসে তার।বাকা চোখে তাকায় সে চাঁদের পানে।অতঃপর মিরের বাক্যটি শ্রবণ হতেই দৃষ্টি ঘুরায় সে,

“যেহেতু তোমার কাছে সুন্দর লেগেছেই তাহলে প্রেম করতে সমস্যা কোথায় ঘসেটি?”

“তুমি আসলেই একটা মিরজাফর”

“এখন আবার কী করলাম?”

“তোমাদের কাছে এসেছি সমাধান নিতে আর তোমরা আমায় বলছো প্রেম করতে?”

হঠাৎ প্রণয়ের অপ্রত্যাশিত গম্ভীর কন্ঠস্বর পেয়ে তার পানে শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ,

“আহিন হয়তো আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে নাহয় ওর মতো ছেলে কখনো কারো জন্য ডেসপারেট হতে পারেনা।অন্তত আমার জানামতে কখনোই না।তবে আপনি যদি অন্য কাউকে ভালোবাসেন হতে পারে সে আপনার ত্রিসীমানায়ও আর আসবেনা”

মিরা প্রণয়কে বলে,

“কিন্তু চাঁদের তো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই”

রবিনও তৎক্ষনাৎ বলে,

“মনে তো হচ্ছেনা এই মেয়েকে দিয়ে প্রেম হবে।নাহয় আহিনের মতো ছেলেকে যে রিজেক্ট করতে পারে সে আর কারো সাথেই প্রেম করতে পারেনা”

প্রণয় মিরার পানে দৃষ্টি দেয় এরপর কিছুক্ষণ রবিনের পানে তা স্থির করে।অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,

“আমি ভালোবাসা বলেছি”

কথাখানা বলে খানিকটা থেমে আকাশপানে দৃষ্টিজ্ঞাপন করে আবার বলে,

“আর ভালোবাসলেই যে প্রেম বা সম্পর্ক করতে হবে এমন কোনো কথা নেই।আমরা যাকে-তাকে যখন-তখন ভালোবাসতে পারি।ভালোবাসা অনাকাঙ্ক্ষিত,অপ্রত্যাশিত”

প্রণয়ের কথার মাঝে কিছু একটা ছিলো।যা বারবার চাঁদকে আকর্ষণ করছিলো।তার দিকে টানছিলো।কোনোক্রমেই চাঁদ তার দিক থেকে দৃষ্টি সরাতে সক্ষম হলোনা।কেনো এমনটা হলো জানা নেই চাঁদের।এই একজন লোকের কাছে আসলে চাঁদের সবকিছু ওলোটপালোট হয়ে যায়।এক ভুলভুলাইয়ায় ফেসে যায় সে।

এক ভ্রু উচিয়ে রবিন বলে,

“তুই কবে থেকে প্রেম-ভালোবাসা এসবে জ্ঞান দেওয়া শুরু করলি?জীবনে ভালোবেসেছিস নাকি কাউকে?”

শেষের কথাটা তাচ্ছিল্য করেই বললো রবিন।রবিনের কথা শুনে অরণ প্রণয়ের কাধে চাপড় মে!রে বললো,

“এতক্ষণ যাবৎ কিছুই বলিনি।তবে আমিও একমত প্রণয়।যে যা পারেনা সেই বিষয় নিয়ে অন্যকে উপদেশ দেওয়া মোটেও উচিত নয়”

রিহা বলে,

“তোরা কিসব শুরু করলি ভাই!বেচারি হেল্প চাইতে আসলো আর তোরা নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু করেছিস”

প্রণয় বেঞ্চ থেকে উঠতে উঠতে বললো,

“আমার কথাটা ভেবে দেখবেন মিস চাঁদ”

অতঃপর ক্লাসরুম থেকে বেরুতে বেরুতে তার বন্ধুমহলকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা উচ্চস্বরেই বললো,

“কাউকে ভালোবাসিনি মানে এই নয় কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা বা বাসিনি”

প্রণয়ের শেষ কথাটা বাকিসবার মাথার উপর দিয়ে গেলেও অরণ ঠিক বুঝতে সক্ষম হলো বন্ধুর কথার মর্ম।আর আরেকজনের হৃদয় চি*ড়ে প্রবেশ করলো এক অতি সাধারণ,সরল বাক্যখানা যা ল!ণ্ডভ!ণ্ড করে দিলো হৃদয়ের প্রতিটা প্রকোষ্ঠ।

রাত তখন একটা ছুইছুই।ঘুম নেই প্রণয়ের চোখে।বইয়ের পাতা এপাশ ওপাশ করছে।মনোযোগ নেই সেখানেও।দৃষ্টি তার টেবিলে সুসজ্জিত করে রাখা বইয়ের তাকের বইগুলোর মাঝে।কিছু একটা ভাবতে ভাবতেই বইয়ের পাশে রাখা ফোনটা হাতে নেয় সে।অতঃপর ঢুকে তার হাইড করে রাখা গুগল ড্রাইভে।সেখানে গিয়ে সার্চলিস্টে কিছু একটা টাইপ করে একটা ফোল্ডারে ঢুকে সে।কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে সে পানে।অতঃপর চোখজোড়া বন্ধ করে চোয়াল শক্ত করে টেবিলে ঘু!ষি দিয়ে আবারও ফোনটা হাতে নেয়।নিয়ে দোনোমোনো করতে করতে প্রায় মিনিট বিশেক পার করে সে।কোনোকিছু ভেবে না পেয়ে বই বন্ধ করে মোবাইল হাতে নিয়ে হাটাধরে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে।সেখানে উপস্থিত হয়ে ঝটপট এক কাপ কফি করে আবারও ছুট লাগায় নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।অতঃপর রুমে এসেই দরজা আটকে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।দাঁড়িয়ে থেকে অল্প অল্প করে কফিতে চুমুক দেয় সে।বেশকিছুক্ষণ ধরে কফির মগ ঠোটের সাথে চেপে ধরে বারান্দার বিপরীত পাশে যতদূর চোখ যায় দৃষ্টি স্থির করে সেথায় তাকিয়ে থাকে প্রণয়।দৃষ্টি সেখানে নিবদ্ধ করে অনেক্ক্ষণ ধরে কিছু একটা ভেবে অবশেষে কফির মগ বারান্দার গ্রিলের পাশে রেখে ফোন হাতে নিয়ে কন্টাক্টলিস্টে গিয়ে ডায়াল করে অতি পরিচিত তবুও অচেনা এক নম্বরে।তিন-চারবার রিং হয়ে ওপাশ থেকে ভেসে আসে এক পুরুষালি কন্ঠস্বর,

“দাম্ভিকতা তবে চু!রমার হলো বলে?”

প্রণয়ের শান্ত জবাব,

“দাম্ভিকতা ছিলোই বা কবে যে চু!রমার হবে?”

“তো তুই বলছিস তুই দাম্ভিক নস?”

“আমি কী বা কী নই এসবকিছু বলতে অবশ্যই তোকে কল দিইনি”

“তাতো আমি বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি।এবং এয়ো বুঝতে পারছি যা বলবি তা তোর জন্য অতি মূল্যবান কিছু”

প্রণয় খানিক হেসে বলে,

“ততোটাও মূল্যবান নয় যতটা তুই ভাবছিস”

“আমি বেশ অবাকই হচ্ছি তুই পড়াশুনা বাদ দিয়ে আমায় কল দিয়েছিস।যার সাথে আর কখনোই যোগাযোগ করার প্রয়োজনবোধ তোর ছিলোনা”

“মানুষ হয়ে জন্মেছি প্রয়োজনবোধ তো থাকবেই।তাছাড়া নিত্যদিন যা করি বিশেষ দিন তা করিনা।আবার বিশেষ দিন যা করি নিত্যদিন তা করিনা”

“এতো রাতে তুই এসব পেচাল পাড়তে কল দিয়েছিস?”

“তারপর বল তোর কী অবস্থা চলে?আমার কথা অমান্য করে পলিটিক্সে কেমন খাতিরযত্ন পাচ্ছিস?”

“আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি বাবার ক্ষমতার জেরে পলিটিক্স জয়েন করিনি।পলিটিক্সের প্রতি ঝোঁক সেই ক্লাস সেভেন থেকে ছিলো এবং এই কথা তুইও জানতিস প্রণয়”

তাচ্ছিল্যের সুরে প্রণয় বললো,

“সবই জানি রে আহিন,সবই জানি।তবে তুই কিন্তু জানিস না যে তুইও তোর বাবার পথেই পা দিয়েছিস এবং তার মতো করেই…”

আহিন গম্ভীরভাবে বলে,

“বাবার বিরুদ্ধে কোনো কথা শুনবোনা প্রণয়”

“তাহলে নিজের বিরুদ্ধে শোন”

“মানে?”

“একটা মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব করা ই!ভটি!জিং এর মধ্যে পড়ে তা কি তুই জানিস না?”

প্রণয়ের আকস্মিক করা প্রশ্নে খানিকটা অবাক হয় আহিন।তবে বেশিক্ষণ অবাক হওয়ার রেশ থাকেনা।দ্রুতই তা কেটে যায়।অতঃপর খানিকটা হেসে সে বলে,

“নীলাম্বরী তাহলে তোর কাছে বিচার দিয়েই ফেলেছে?আমিও তো বলি এতোমাস হলো অথচ ব্যাপারটা তোর কান অব্দি গেলোনা কেনো?”

“সে আমার কাছে বিচার দেয়নি”

“তাহলে তুই জানিস কী করে এ ব্যাপারে?”

“যেখান থেকেই জেনেছি সেটা তোর জানার বিষয় নয় আহিন।তোর যা জানা উচিত তাই তোকে জানানোর জন্য কল দিয়েছি”

“ওয়েইট আ মিনিট!”

কথাখানা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে আহিন।হাসতে হাসতেই বলে,

“তাহলে দি রুহায়ের প্রণয়!উড বি দি ডক্টর রুহায়ের প্রণয় সামান্য একটা মেয়ের জন্য তার দাম্ভিকতা জলাঞ্জলি দিলো?”

“সে সামান্য নয়।সে সাধারণ,অতি সাধারণের মাঝেও অসাধারণ একজন”

আরেকবার হেসে আহিন বলে,

“প্রেমে তবে পড়লি বলে?তাও আবার আহিনের পছন্দ করা মেয়ের প্রেমে?”

“কিসে পড়েছি কিসে পড়িনি তা তো তোর জানার বিষয় না।তোর জানার বিষয় হলো তার থেকে তুই দূরে থাকবি।আর তুই নিশ্চয়ই ভুলে যাচ্ছিস তুই যাকে দু’দিন ধরে পছন্দ করিস তার সাথে দেখাসাক্ষাৎ আমার সেই প্রথমদিন থেকে আজ অব্দি এবং বহু বছরধরে এ সাক্ষাৎ অব্যাহত থাকবে”

“তাই নাকি?তাহলে তুইও শুনে রাখ তোদের সাক্ষাৎ কেবল সাক্ষাৎ ই রয়ে যাবে।এর বেশি কিছুতে গড়াতে পারবেনা।আহিন মোহাম্মদ শেখ তা হতে দিবেনা।ঐ নীলাম্বরীতে চোখ পড়েছে মানে সে আমার এবং কেবলই আমার হবে।আর দূরে থাকার কোনো প্রশ্নই আসেনা।এখন আরও বেশি বেশি কাছে থাকবো”

“তোকে কাছে ঘেষতে দিলে না তুই কাছে থাকবি।না সে দেবে আর না…।তাই বলছি চন্দ্রের থেকে দূরে থাকবি।সে খুবই বিরক্ত এসবে”

“বিরক্তি থেকেই তো ভালোবাসা হয়।আমার সাথেও হবে।দেখে নিস তোকে ভালোবাসার আগেই নীলাম্বরী আমার হবে”

“হবেনা।সে তোর কখনোই হবেনা।এ কথা আমি তোকে কাগজে কলমে লিখে দিতে পারি”

“তাই নাকি?তোর গার্লফ্রেন্ড নাকি?লুক্কায়িত প্রেমিকা?”

“সবাইকে নিজের মতো ভাবা উচিত নয়।অন্তত রুহায়ের প্রণয়কেতো একদমই নয়।প্রেমিকা না হোক।একজন নারী তো।কারো মেয়ে,কারো বোন হয়।কারো স্ত্রী হবে,মা হবে।আর মা জাতিকে সম্মান বৈ কিছু করা যায়না।তুই সেখানে তাকে প্রতিনিয়ত অসম্মান করছিস।আবারও বলছি দূরে থাকবি চন্দ্রের থেকে।সে তোকে মোটেও পছন্দ করেনা,করবেওনা”

“এতোটা শক্তপোক্তভাবে কি করে বলছিস তুই?”

“কারণ সে তোকে ভালোবাসেনা”

“ভালো তো তোকেও বাসেনা”

“আমিতো বলিও নি যে বাসে বা বাসবে”

“তাহলে লাভ কি আমায় আটকে দিয়ে?চেষ্টা করছি করতে থাকবো।তুইতো তাও করিস না”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই”

“তবে তুই ভালোই বাসিস নি”

“আমি কখন বললাম তাকে আমি ভালোবাসি?”

“তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝছি না প্রণয়”

“বোঝা লাগবেনা।তাকে বিরক্ত করা বন্ধ কর।মেয়েটা বড্ড বিরক্তিবোধ করে এসবে”

“তোকে বলেছে?”

“তার বিরক্তিভাব দেখেও বুঝিস না তুই?তোতে ইন্টারেস্টেড হলে এতোদিনে অবশ্যই হয়ে যেতো”

“যেই আহিন শেখ কতশত মেয়েদের রিজেক্ট করে তাতে ইন্টারেস্টেড হবেনা?লাইক সিরিয়াসলি প্রণয়?”

“সে কতশত মেয়ে না।সে একজন এবং কেবল একজনই হয়”

“চাঁদকে আমি আমার করবোই।তুই শুধু দেখ কিভাবে করি!”

“তোকে আমি নিষেধ করেছি এবং আবারও করছি আহিন।দূরে না থাকতে পারলে কাছে যাওয়ার মতো ব্যবস্থাও তুই করতে পারবিনা।অ্যান্ড আই মিন ইট”

To be continued….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here