আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ০৫.

0
734

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৫.
“ভাবিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা!”

শিফার এরূপ চেচানোতে বাড়ির সকলের ঘুমই উবে গেলো।বড়রা সকলেই শিফা,রুবা আর রিদির রুমের সামনে এসে জড়ো হলেন।সকলের চোখেমুখেই চিন্তার রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠছে।সবাই ই ভয়ে আছে না জানি নতুন বউ বাড়ি ছেড়ে পালালো!এমনিতেই মেয়েটা তাদের ছেলেকে দু’চোখে দেখতে পারেনা।এভাবে জো!র করে বিয়ে দেওয়াটা ঠিক কি বেঠিক কারোরই জানা নেই।প্রণয়ের মা পুষ্পিতা জামান শিফাকে বললেন,

“চাঁদকে পাচ্ছিসনা?”

শিফা মাথা ডানে-বায়ে করে বলে,

“না খালামনি”

“এতো সকালে কোথায় গেলো মেয়েটা?”

রুবা বলে,

“ফুপি ভাবিকে আমরা শুইয়ে দিয়েই গেছিলাম।এখন এসে পুরো বাড়ি খুজে তন্ন তন্ন করেও কোথাও পেলাম না।”

রুবার মা বললেন,

“এই মেয়েটাকে আমার একটুও পছন্দ না।কোন বাড়ির মেয়ে যে তোমরা ধরে আনলে ভাবি!ছোটটা বিয়ের দিনই পালিয়েছে আর বড়টা বিয়ের পর।এমন মেয়ের সাথে ছেলেটা সংসার করবে কী করে?”

শিফার মাও বললেন,

“এভাবে বলা ঠিক হবেনা কিন্তু রায়হানের মা কথাটা ঠিকই বলেছে আপা।তোর যাচাই-বাছাই করে মেয়েকে আনা উচিত ছিলো”

প্রণয়ের বাবা তৌহিদুল চৌধুরী গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“চাঁদ মায়ের নামে আর কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছিনা।পুষ্পি প্রণয়ের রুমে গিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করো রাতে দুজনের ঝ!গড়া হয়েছিলো কিনা?”

রিদি আমতা আমতা করে বলে,

“ফু…ফুপা আসলে…”

তৌহিদুল চৌধুরী বললেন,

“কি হয়েছে?”

শিফা রিদির হাতে চি*ম*টি কাটতেই রিদি বলে,

“কি…কিছুনাতো ফুপা”

আবারও সকলে মনোযোগ দেয় প্রণয়ের রুমের দিকে এগোতে আর শিফা রিদিকে ফিসফিসিয়ে বলে,

“কী করছিলি তুই?এখনই সবাই জেনে যেতোনা ভাবি ভাইয়ার সাথে কাল থাকেনি?তখন সবাই কী মনে করতো?”

রিদিও শিফার ন্যায় ফিসফিসিয়ে বলে,

“সেটাতো ভাবিনি”

রুবা রিদিকে খোচা মে*রে বললো,

“হ্যা সেটা কেনো ভাববা তোমার মন আর মস্তিষ্কেতো কেবল মির ভাইয়াই ঘুরে!”

রিদি লজ্জা পেয়ে খানিকটা রা*গ দেখিয়ে বললো,

“কথায় কথায় মিরকে আনবিনাতো।আমি এখন মোটেও তার কথা ভাবছিলাম না”

শিফা রিদিকে ভেংচিয়ে বলে,

“আহাগো সোনা আমার!স্কুল লাইফ থেকে ভাবতে ভাবতে ভার্সিটি লাইফে এসে ক্লান্ত হয়ে গেছো বুঝি?”

রিদি আড়চোখে শিফার দিকে তাকিয়ে বলে,

“রায়হান ভাইয়ার সামনেতো মুখের খৈ থাকেনা এখন আমায় খোচানোর বেলায় মুখে বুলি ফুটে গেছে না?”

রুবা শিফার গাল টে!নে দিয়ে বলে,

“আহাগো ভাবি আমার!লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে।ইশ ইশ!দেখ রিদু দেখ”

রিদি শিফার অন্য গাল টে*নে বলে,

“এই একজনই পারে আমাদের বাচাল শিফুকে চুপ করাতে।যার মাঝে লজ্জার ছিটেফোটাও নেই সে লজ্জার নাইনটি পার্সেন্ট ছাড়িয়ে যায় কেবল রায়হান ভাইয়ার নাম শুনে?”

শিফা রা!গ দেখিয়ে বলে,

“নিজেতো মির ভাইয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারিস না আবার কথা বলছিস?”

রুবা হুহা করে হেসে দিয়ে বলে,

“মির ভাইয়া আর ভাইকে নিয়ে তোদের মাঝের ঝগ!ড়া দেখতে বেশ লাগে রে উড বি ভাবিস!”

শিফা গ*র*ম চোখে রুবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“যেদিন আমার নন্দাই ওরফে জিজুর আগমন আপনার জীবনে ঘটবেনা?সেদিন পাওনার সাথে সাথে লাভও নেবো বুঝেছো ননদিনী?কি বলিস রিদু?”

রিদি আর শিফা হাই ফাইভ দিয়ে বলে,

“তা যা বলেছিস শিফু!”

রুবা কথা এড়াতে বলে,

“তোরা মনে হচ্ছে ভুলে গেছিস যে আমরা চাঁদ ভাবিকে খুজে পাচ্ছিনা?”

ওটির বাইরে বসে আছে মিরা।উদ্দেশ্য প্রণয়ের সাথে কথা বলা।চেয়ারে বসে দেয়ালের দিকে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে অরণের সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত,

“এই ডা*কি*নী সবসময় আমার বইয়ের পেছনে লেগে থাকবিনাতো!”

মিরা নাক ফুলিয়ে বলে,

“বই বই যে করিস বিয়ের সময় বই নিয়েই বিয়ে করিস ঠিক আছে?”

“বই নিয়ে বিয়ে করি আর যাই করি তোকে দাওয়াত দেবোনা শিওর থাক!”

মিরা ভেংচিয়ে বলে,

“ইশ!আমায় ছাড়া তোর বিয়ে হবে ক্যাম্নে মামা?”

“একটা হুরপরী আসবে আর আমায় নিয়ে ছু-মন্তর হয়ে যাবে দেখে নিস!”

এসব ভাবতে ভাবতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছিলোই মাত্র কিন্তু সাথে সাথে তা মিলিয়ে গেলো অরণের র*ক্ত*মা*খা শরীর কোলে নিয়ে মিরার তার শেষ কথোপকথন চোখের সামনে ভেসে উঠায়,

অরণ তার র!ক্তে আবৃত হাত মিরার গালে ছুইয়ে আস্তে আস্তে বলছে,

“চোখের সামনে এক সমুদ্র ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও অন্ধের ন্যায় এক ফোটা ভালোবাসার আশায় সারাটা জীবন বৃথা করে দিলাম রে ডা*কি*নী!আমার বোধহয় এ জী…জীবনে আর ভালোবাসা পাওয়াটা হবেনা।ভালোবাসাহীনই ম*র*তে হবে।প্রেমটা যে আমার হয়েও হলোনা বাঘিনী।বলা হলোনা আমি…..”

আর বলতে পারলোনা অরণ।মিরার কোলেই মাথাটা শব্দ করে পড়ে গেলো।হাতটা হয়ে গেলো অসাড়!বুলি তার এলো ফুরিয়ে।র!ক্তে মাখোমাখো হয়ে গেলো মিরার সারা শরীর!বুকে সেই অসহ যন্ত্রণা সহ্য হলোনা মিরার।দিন দুনিয়া ভুলে গিয়ে অরণের সারামুখে হাত বুলিয়ে সে বললো,

“অরণ?এই অরণ?ওঠনা।অরণ?অরণরে?”

“অরনের বাচ্চা!ওঠ বলছি।ওঠনারে!”

আরও অনেক্ক্ষণ ডাকার পরেও যখন অরণ উঠেনা তখন কান্নায় ভে!ঙে পড়ে বলে,

“অরণ?এই অরণ!শোননা।আমি না তোকে ভালোবাসি রে।অনেক ভালোবাসি অরণ!কেনো আমায় ভালোবাসলিনা?কেনো তোকে অন্য কাউকে ভালোবাসতে হলো?কেনো তুই আমার হলিনা?”

কারো হাতের স্পর্শ নিজের কাধে টের পেতেই চোখ খুলে মিরা।পুরোনো স্মৃতি মনে করতেই চোখ হয়ে উঠে অশ্রুসিক্ত।সামনে প্রণয়কে দেখে নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয় সে।জাপটে ধরে প্রণয়কে।প্রণয়ের বুকে মুখ গুজে ফুপিয়ে কেদে উঠে মিরা আর বলে,

“আমরা যাকে ভালোবাসি কেনো ভালোবাসেনা তারা?”

অপারেশনের মাঝেই একজন নার্স এসে প্রণয়কে বলেছিলো ‘ডক্টর মাইশাত মিরা ওটির বাইরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন’।তখন সেদিকে তোয়াক্কা না করলেও অপারেশন শেষে সেই অবস্থায়ই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে প্রণয়।এসেই র*ক্ত*মা*খা গ্লাভসসহ হাতে মিরার কাধে হাত রাখতেই দ্রুতগতিতে মিরা উঠে প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে উক্ত কথাটি বলে।

“তোমাদের সাহস কী করে হলো আমায় না জানিয়েই আমার বোনকে একটা অপরিচিত ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার?”

চাঁদের খালা বোনের ছেলেকে সামলাতে বলেন,

“দেখ চৈত্র তখন পরিস্থিতিটাই…”

হুং!কার ছেড়ে চৈত্র বললো,

“পরিস্থিতি জাহা!ন্নুমে যাক খালাম্মি।আমার চাঁদটাকে আমার অজান্তেই তোমরা বিদায় করে দিলে কী করে?যেই মেয়ে ভাইকে ছাড়া একটা ডিসিশনও নেয়না সে কী করে বিয়ের মতো অতো বড় একটা ডিসিশন নেয় মা?অমৃতার যেহেতু বিয়েতে মতই ছিলোনা কেনো ওর বিয়ে ঐ ডাক্তারের সাথে ঠিক করেছো তোমরা খালাম্মি?”

চৈত্রের খালা বললেন,

“অমি খুশিই ছিলো।চাঁদ যখনই জামাইর নামে উল্টাপাল্টা বললো মেয়েটা ওর পিছু গিয়ে…..”

চৈত্র তীক্ষ্ণ নজরে তার খালার দিকে তাকিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“তো তুমি বলতে চাইছো চাঁদ অমৃতাকে উষ্কিয়ে চলে যেতে বলেছে আর তোমার মেয়ে বাচ্চাদের মতো যা বুঝ চাঁদ ওকে দিয়েছে সেই বুঝ নিয়েই জাস্ট হাওয়া হয়ে গেছে তাইতো খালাম্মি?”

“আমি সেটা…”

চে*চিয়ে চৈত্র বলে,

“তুমি সেটাই বলেছো খালাম্মি!তুমি আমার বোনের উপর ইন্ডাইরেক্টলি অপ!বাদ দিচ্ছো যেটা আমি মোটেও সহ্য করবোনা।আমার ঢাকা থাকার সুযোগ নিয়ে আমার বোনটাকে এমন এক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছো যেই ছেলেকে আমার বোন চিনেওনা।জাস্ট রিডি*উকু*লাস!”

চৈত্রের মা বললেন,

“বারবার যে বলছিস তোর বোন ছেলেকে চেনেনা চেনেনা।বলার আগে পুরো ঘটনা শুনেতো নিবি!ছেলেকে তোর বোন ভালো করেই চেনে।নাহলে এভাবে ভরা মজলিশে কেউ কাউকে অপ*মা*ন করতে পারেনা।আর ভুলে যাস না ছেলে যেই মেডিকেল থেকে পাশ করে ডাক্তার হয়েছে তোর বোনও একই মেডিকেলের ফার্স্টগার্ল হয়ে এসেছে তাও তিনবছর!আমারতো মনে হয় এই ছেলের সাথেই কিছু হওয়ায় টেকনাফ চলে….”

চৈত্রের মেজাজ সপ্তম আকাশে চড়তেই গ!র্জে উঠে সে বলে,

“জাস্ট শাটা!প আম্মু!যা জানোনা তা নিয়ে বলবেনা বলে দিলাম।আমার চাঁদের গায়ে কোনো কল*ঙ্ক নেই কোনো ক*লঙ্ক নেই!”

বলেই সেখান থেকে চলে আসে সে।এসেই হাইওয়েতে উঠে রিক্সা করে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসে।সেখান থেকে রওয়ানা দেবে ঢাকার উদ্দেশ্যে!গন্তব্য তার বোন চাঁদের শ্বশুরবাড়ি।ঘন্টা খানেক পর ট্রেন আসতেই ট্রেনে চড়ে বসেই র*ক্তু!চক্ষু নিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

“যে শহর তোর থেকে তোর সবকিছু ছি*নি*য়ে নিয়েছে সেই শহরে তোকে আর এক মুহুর্তও থাকতে দেবোনা ছোটি!”

To be continued…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here