একমুঠো_বসন্ত #নাজমুন_বৃষ্টি #পর্ব_১২

0
336

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১২

সাফাতের মন আজ বেশ ফুরফুরে। প্রায় কয়েকদিন পরে বাড়ি ফিরতে পারছে বলে কথা! যদিও মাত্র কয়েকদিন কিন্তু তার মনে হচ্ছে কত সহস্র দিন সে বাড়ির বাইরে! সে ভাবেনি এই প্রথম আমান শেখ এতো তাড়াতাড়ি কথা ভেঙেছেন। তিনি তো প্রথমে একমাসের মাথায় বাড়ি আসতে বলেছিল কিন্তু কয়েকদিন পেরোতেই সাফাত যখন বাবাকে কল দিয়ে বললো সে ভালোভাবেই সব করেছে। প্রথমে আমান শেখ কল কেটে অফিসের খবর নিল তারপর আবার কল দিয়ে বললো যেন বাড়ি এসে কয়েকদিন ঘুরে যায় তারপর নাহয় আবার আসবে। সাফাত প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি। পরে আর বিষয়টা ঘাটলো না। যাক, বাড়ি ফিরবে অবশেষে।

এই কয়েকদিন সে বাড়িতেও কল করেনি। অবশ্য, আমান শেখ বাড়িতে কল করার অনুমতি দিয়েছিল কিন্তু সাফাতের ইচ্ছে হয়নি। মিলির সাথেও কথা হয়নি। প্রথম দুইদিন পরে কল দিয়েছিল ঠিকই কিন্তু মায়েরা তেমন কথা বলেনি। এমনিতে মায়েদের থেকে ভার ভার আচরণ পেয়ে সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল তার উপর মিলির সেই একই কর্মকান্ডের ফলে আর ফোন করার ইচ্ছে হয়নি। মিলির মূল লক্ষ্য ছিল সাফাত যেন তাদের এদিকের ব্যাবসাটা নিয়ে একেবারের জন্য মিলিকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। সাফাত ভেবেছিল তার অনুপস্থিতিতে মিলি বুঝতে পারবে কিন্তু তার ধারণা ভুল। সে বুঝতে পারলো মিলি শুধরাবার নয়।

গাড়িতে উঠেই তার মন খুশি খুশি লাগছে। কেন লাগছে সে জানে না কিন্তু তার মনে হচ্ছে যেন অনেকদিনের চোখের তৃষ্ণা সে আজ মিটাতে পারবে। তার এমন উৎফুল্লতা সে বুঝতে পারলো তখনই যখন গাড়িটি চট্টগ্রামে অর্থাৎ বাড়ির কাছাকাছি এলো।
প্রতিবার আসার সময় এই বেলি ফুলের দোকানটার থেকে একটা বেলি ফুলের মালা নিয়ে যেত আর সেই দোকানের নার্সারি থেকে সবসময় যেকোনো একটা ফুলের চারা নিতো। আশ্চর্যজনক ভাবে এই বারও সে গাড়িটি সেই দোকানের সামনেই থামালো। গাড়ি থেকে নেমে দোকানের সামনে যেতেই দোকানদারটি সাফাতকে চিনে নিল। চিনবেই বা না কেন!প্রতিবার যে নিয়ম করে এই দোকানটি থেকেই সব নিতো।

“বাবু আসেন। এইবার অনেকদিন পরে এলেন যে!”

সাফাতের অবচেতন মন জিজ্ঞেস করলো,
“কতদিন পরে?”

“এই ধরেন একমাস মতো হচ্ছে। প্রতিবার তো প্রতি সপ্তাহেই আসতেন।” বলেই তিনি পেছনে দোকানের এক কর্মচারী ছেলের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন,
“এই জসিম,বাবুর জন্য একটি বেলি ফুলের মালা আর গোলাপ সুন্দর করে মুড়িয়ে দে।” বলেই তিনি সাফাতের দিকে ফিরে চাইল,
“বাবু, আজ কোন গাছটা নিবেন?”

সাফাত কী বুঝে না করলো না। সে হাতের ইশারায় সাদা গোলাপটা দেখালো,
“এটা দাও।”

“ঠিক আছে। আপামনি ভালো আছেন? আর গতবার গোলাপ নিছিলেন ঐটাতে গোলাপ ধরেছে?” বলতে বলতেই তিনি গাছটি নিলেন।

সাফাতের মনে আসলো। প্রতিবার ওরা ব্যালকনিতে গল্প করার সময় নিহিলা মন খারাপ করে দেখাতো,
“দেখেন তো সাফাত ভাই। এখনো গোলাপ আসছে না। একটাতে ধরেছে আরেকটাতে ধরছে না।”

সাফাত হাসতো। হেসে সান্ত্বনা দিতো,’ধরবে,’। সাফাতের এই একটা সান্ত্বনাতে নিহিলা ভরসা খুঁজে পেতো। তার উৎফুল্লতা দেখে মনে হতো যে সাফাত বলেছে আর ফুল ধরে গেছে। সাফাত গভীর থেকে একটা শ্বাস নিল। এইবারও মনে পড়ছে ভীষণ করে। কিন্তু এসব কেন নিয়ে যাচ্ছে সে জানে না। এখন তো এসব আর মানাই না কিন্তু সাফাত এসবের ধার ধরছে না। তার অবচেতন মন বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে নিহিলার কথা।

—–

নিহিলা সকালে ঘুম থেকে উঠে বসতেই ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ গেল। সে উঠে আয়নার সামনে এগিয়ে গেল। আয়নার সামনে থাকা খরগোশ ল্যাম্পটি হাতে নিয়ে হাত বুলালো। এটা এখানে কী করছে! এটা তো সে মেলায় দেখেছিল। পছন্দ হয়েছিল বিধায় দুইবার তাকিয়েছিল কিন্তু এটা এখানে কে এনে দিল! তবে কী…কিছু একটা ভাবতেই নিহিলা নিজেকে নিজে সংযত করলো।
“এসব কী ভাবছিস তুই নিহিলা! এসব কিছুই না।” এসব ভেবেও নিহিলা নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারলো না।

অরিন ঘুম থেকে উঠে বসতেই নিহিলাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খরগোশ ল্যাম্পটি হাতে নিয়ে কিছু একটা ভাবতে দেখে হাসলো। হেসে এগিয়ে গেল।

“কিরে কী ভাবছিস?” অরিনের কথায় নিহিলা হাতে থাকা খরগোশ ল্যাম্পটার দিকে তাকালো।

“এটা?”

নিহিলার প্রশ্নবোধক চাহনী দেখে অরিন কিছু একটা মনে পড়ার ভঙ্গিমা করে বলে উঠল,
“ওহ, এটা? এটা কালকে রাতে ভাইয়া এনে দিছিল।” বলেই অরিন মাথা চুলকে বলল,
“কিন্তু এটার দিকে আমি তো তাকাইনি তবে ভাইয়া কেন এনে দিয়েছে বুঝলাম না।”

নিহিলা অরিনের দিকে ফিরে তাকালো,
“কেন! কিছু বলেনি?”

নিহিলার কথা শুনে অরিন হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিমা করে বলে উঠল,
“আরে দূর! ভাইয়া এসব কিছু বলে না-কি! সব চুপচাপ নীরবের মধ্যে করবে। কালকে এটা এনে আমার হাতে দিয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এটা কেন। জবাবে ভাইয়া বলল,’কাজে লাগবে রাখ।’ বলেই রুমে চলে গেল।”

“উনি আবার গিয়েছে?”

“আবার মানে?”

“না মেলাটাতো অনেক দূরে। আমরা তো পরশু গিয়েছিলাম। এখনো আছে?”

“হ্যাঁ মেলাটা সাতদিন মতো থাকে।” বলেই অরিন হেসে ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।

নিহিলা ভাবনায় পড়ে গেল। তার মানে এটা সেদিন রাহান ভাই খেয়াল করেছিল! ভাবতেই নিহিলার সেদিনের দৃশ্যপটটা ভেসে উঠলো।

সেদিন মেলায় ঢুকতেই একটা দোকানে নিহিলা থেমে গেল। মূলত এই খরগোশ ল্যাম্পটাই চোখে পড়েছিল বিধায় একটু দেখেছিল কিন্তু সেটা কাউকে বলা হয়নি কারণ তার হাতে সেরকম টাকা ছিল না আর তাছাড়া কারোর কাছে থেকে খুঁজে জিনিস নেওয়াটাও বেমানান। তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখে রাহানও দাঁড়িয়েছিল কিন্তু রাহান তাকাতেই নিহিলা আবার হাঁটা শুরু করে। পরবর্তীতে রাহান যে সেই জিনিসটা খেয়াল করেছে সেটা নিহিলা ঘুনাক্ষরেও ভাবেনি।
নিহিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। খরগোশ ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে সেটার দিকে দৃষ্টিপাত করে হাসলো।
“মানুষটা উপরে যেমন দেখায় তেমনটা না। আংশিক হয়ত।”

“এই নিহিলা কী বলছিস বিড়বিড় করে?” অরিন ওয়াশরুম থেকে এসে মাথায় ঠোকা দিতেই নিহিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। সে ধরা পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিমায় খরগোশ ল্যাম্পটা পেছনে ফিরে আগের জায়গায় আবারো সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললো,
“কিছু না।”

“আচ্ছা? আমার তো ভাবনায় এটা আসেনি যে মেলায় তুই সহ গেছিলি! কোনোভাবে তোর এটা পছন্দ হয়েছিল? কই আমি তো এটা খেয়ালই করিনি। তবে রাহান ভাইয়া কী তোর পছন্দ হয়েছে বলে এটা এনে দিয়েছে! আমার পছন্দ না হলে বা ভাইয়ার পছন্দ না হলে এরকম তো কোনোদিন করেনি!”

নিহিলা ল্যাম্পটির দিকে তাকালো। আসলেই কী! সে তাকিয়েছিল বলেই এনে দিয়েছে! আজব মানুষ তো! এমন অদ্ভুত মানুষ সে আগে দেখেনি। তিনি উপরে যতটা দেখাই ততটা না। তবে এটা ভেবে ভালো লাগলো যে উপরে যেমনটা দেখায় তেমনটা পুরোপুরি না। মানুষটা অতটা খারাপও না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। রিচেক করা হয়নি। ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার নজরে দেখার অনুরোধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here