মনের_উঠোন_জুড়ে #পর্ব_২২

0
265

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_২২

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” আমাদের কোথাও ভুল হচ্ছে স্যার। আমি আমার বাবা কে খুব ভালো করে চিনি। আমার বাবা আমাদের থেকে ও শিক্ষা কে বেশি ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে তিনি শিক্ষা কে বাবার আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। কখনো শিক্ষার গায়ে একটা আঁচড় লাগতে দেয় নি। নিজের বাবার মতো শিক্ষা কে আগলে রেখেছে। তাছাড়া বাবা তো জানে শিক্ষা উষ্ণতা নয়। তাহলে বাবা কেন উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়বে?”

-” সেটা তো তোমার বাবা কে জিজ্ঞেস করতে হবে। উষ্ণতার সাথে কিসের শত্রুতা তোমার বাবার? কেন সে উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়?

-” স্যার বিশ্বাস করুন আমার বাবা এমন নয়।তিনি কাউকে মা’র’তে পারেন না। নিশ্চয় আমার বাবা কে কেউ ফাঁসাতে চায়ছে।”

-” ছবিটা যদি তোমার বাবার না হয়ে অন্য কারো হতো তাহলে ও কি তুমি এক‌ই কথা বলতে সাহিত্য?এটা স্বজনপ্রীতির জায়গা না সাহিত্য। আমাদের এইখানে প্রত্যেক টা অপরাধী সমান।সে হোক আমাদের পরিবারের কেউ বা একান্তই নিজের কেউ । কিন্তু আমাদের চোখে সবাই সমান। তাছাড়া লোকটা মা’রা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে, যে উষ্ণতা কে মা’রার জন্য তাকে টাকা দিয়েছে তার ছবি পকেটে রয়েছে।এটা আমরা সবাই স্পষ্ট শুনেছি।আর ছবিটা কাকতালীয় ভাবে তোমার বাবার হয়ে গেল।এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য এই কিলার কে সুপারি তোমার বাবাই দিয়েছে।”

-” স্যার এমন ও তো হতে পারে যে আসল খু’নি আমাদের কে বোকা বানাতে চায়ছে।তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মৃ’ত লোকটার পকেটে আমার বাবার ছবি রেখে আমাদের ফোকাস অন্য দিকে নিয়ে যেতে চায়ছে।”

-” সেটা তো নম্রতা মৃ’ত লোকটার কল ডিলেইলস নিয়ে আসার পরেই জানতে পারবো। তোমার বাবা কে ডাকো তাকে ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।এর‌ই মধ্যে নম্রতা এসে বললো,তার কোনো প্রয়োজন নেই স্যার। মৃ’ত লোকটার সমস্ত কল ডিলেইলস পেয়ে গিয়েছি।এই দেখুন স্যার , এইখানে কোথাও সাদ্দাম আঙ্কেলের নাম্বার নেই। বরং এই কামরুল নাম দিয়ে সেভ করা লোকটার সাথে তার একাধিক বার কথা হয়েছে। এমনকি লোকটা মা’রা যাওয়ার পাঁচ মিনিট আগেও তার সাথে দুই মিনিট ধরে কথা বলা হয়েছে।হয়তো এই কামরুল নামের লোকটা উষ্ণতা কে মা’রা’র জন্য সুপারি দিয়েছিলো। কিন্তু লোকটা উষ্ণতা কে মা’রা’র বদলে নিজে মা’রা গেল। স্যার আমার মনে হচ্ছে এই লোকটার খু’নে’র সাথে আমরা যাকে খুঁজে চলেছি তার কোনো না কোনো কানেকশন রয়েছে।সে হয়তো নিজে উষ্ণতা কে মা’রতে চায়ছে।যার জন্য সে এই কিলার কে মে’রে দিয়ে সাদ্দাম আঙ্কেল কে ফাঁসানোর জন্য লোকটার পকেটে সাদ্দাম আঙ্কেলের ছবি রেখে দিয়েছে।”

-” হলেও হতে পারে। এখন এই কামরুল কে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। কামরুলের লোকেশন ট্রাক করো।এই কামরুল কে পেলে আমরা আসল সত্যটা জানতে পারবো।আর সাদ্দাম শিকদার কে ও ডাকো।তার কাছেও শিক্ষার ব্যাপারে কিছু জানার আছে।”

-” ইয়েস স্যার।”

___________________________________

-” রাতে সাহিত্য বাসায় ফেরার সময় বর্ণের কল আসে।বর্ণের কল দেখে তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের মনে পড়ে যায় বর্ণ শিক্ষাকে ভালোবাসে,তাকে বিয়ে করতে চায়। মূহুর্তের মধ্যে যেন সাহিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সাহিত্য বর্ণের কল রিসিভ না করে কেটে দেয়। কিন্তু বর্ণ বারবার কল করার কারণে এক পর্যায়ে সাহিত্য বাধ্য হয়ে বর্ণের কল রিসিভ করে। সাহিত্য ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বর্ণ বললো, সাহিত্য স্যার আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন প্লিজ?”

-” বিয়ের আয়োজন করতে হবে বুঝি? তুমি এটায় বলতে চাচ্ছো , আমি যেন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমার আর শিক্ষার বিয়ে টা দিয়ে দেই তাই তো?”

-” আপনি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছেন সাহিত্য স্যার। আমি আপনাকে সবটা খুলে বলবো।আপনি প্লিজ একটু কষ্ট করে রংধনু ক্যাফে আসুন ।আমি ক্যাফে তে অপেক্ষা করছি।প্লিজ স্যার না করবেন না।”

-” সাহিত্য ঘড়ি দেখে বললো, এখন রাত কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার?”

-” প্লিজ স্যার।”

-” সাহিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ঠিক আছে আসছি । প্রায় বিশ মিনিট পরে সাহিত্য এসে দেখে বর্ণ তার জন্য অপেক্ষা করছে। সাহিত্য কে আসতে দেখে বর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,বসুন স্যার।কি খাবেন বলুন?”

-“আমি এখানে বসতে বা খেতে আসি নি। তুমি কি জন্য ডেকেছো সেটা বলো?”

-” আপনি যে বিবাহিত সেটা আমি জানি স্যার। আর শিক্ষা আপনার বিবাহিত স্ত্রী সেটা ও জানি।”

-” সবকিছু জানার পর ও তুমি শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়ছো ?”

-” না স্যার। আমি শিক্ষা কে নয় বরং আবৃত্তি কে ভালোবাসি। আবৃত্তি কে বিয়ে করতে চাই। সেদিন ভার্সিটিতে যে ছেলেটাকে শিক্ষার হাত ধরতে দেখেছিলেন সেটা আর কেউ নয়,আমি ছিলাম। আবৃত্তি যে আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে বসবাস করে এটা আমি আবৃত্তি কে বলতে যেয়ে ও বলতে পারি নি । তাইতো শিক্ষা কে অনুরোধ করছিলাম শিক্ষা যাতে আমার হয়ে আবৃত্তি কে ভালোবাসার কথা টা বলে দেয়। আমি ভেবেছিলাম শিক্ষা হয়তো আবৃত্তি কে আমার মনের কথা জানিয়েছে এজন্য আমি আবৃত্তি কে ফোন করি।আর তখন আবৃত্তি আমার কাছে হেল্প চায়। আবৃত্তি ভেবেছিলো হয়তো আমি শিক্ষা কে ভালোবাসি , বিয়ে করতে চাই ,এটা শোনার পর আপনি জেলাস ফিল করবেন। শিক্ষা কে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন। কিন্তু আবৃত্তির ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আপনি সত্য মিথ্যা কিছু যাচাই-বাছাই না করে শিক্ষা কে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দিলেন।এর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আমার জন্যেই শিক্ষা কে আপনি ভুল বুঝেছেন।আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি স্যার।”

-” ইটস্ ওকে বর্ণ।বাই দ্যা ওয়ে তুমি আবৃত্তির কথা কি জানি বলছিলে?”

-” আমি আবৃত্তি কে ভালোবাসি স্যার। সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হ‌ওয়ার ভয়ে কখনো নিজের মনের কথা বলতে পারি নি।আর মাত্র কয়েকটা দিন পরে আমাদের গ্ৰাজুয়েশন শেষ হয়ে যাবে। আমি চাচ্ছি আমাদের গ্ৰাজুয়েশন শেষ হলে আপনাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। এখন আপনার মতামত কি স্যার? ”

-” দেখো বর্ণ তুমি হতে পারো মন্ত্রীর ছেলে। তোমার বাবার টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। কিন্তু কোনো বাবা ,মা, ভাই চায়বে না তার মেয়েটা কে একটা বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে। তুমি এখনো স্টুডেন্ট। পড়াশোনা শেষ করো, নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখো। তারপর বাকিটা দেখা যাবে।”

-” তার মানে আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?”

-” অনেক রাত হয়েছে । বাসায় যাও বলে সাহিত্য ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসে। শিক্ষা কে আরো একবার সন্দেহ, ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য অপরাধ বোধ ‌হয় সাহিত্যের। সাহিত্য গাড়ি তে উঠতে গিয়ে ও কি মনে করে মার্কেটে এসে শিক্ষার জন্য একটা লাল শাড়ি,লাল চুড়ি, বেলি ফুলের মালা নিয়ে গাড়িতে এসে মনে মনে বলে,আজ আর কোনো বাধা থাকবে না শিক্ষা। কিছু দিন আগে তুই বলেছিলি আমি যেন তোকে একটা লাল শাড়ি,লাল চুড়ি আর বেলি ফুলের মালা কিনে দেই।আজ তোর ইচ্ছা পূরণ হবে শিক্ষা।আমি নিজে হাতে আজ তোকে সাজিয়ে দিবো।তোকে প্রাণ ভরে দেখবো।তোর হাত ধরে আজ সারারাত শহর ঘুরে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করবো। আজকের রাত হবে শুধু তোর আর আমার ।”

-” রাত প্রায় বারোটা। চারিদিক নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। মাঝে মাঝে দূর থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সাহিত্য প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে কলিং বেল দিচ্ছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না।মনে মনে সাহিত্য খুশি হয়ে বলে,ভালোই হয়েছে সবাই আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে।এই সুযোগে আমি শিক্ষা কে নিয়ে আজকের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবো বলে সাহিত্য শিক্ষার নাম্বারে কল করে । কিন্তু ফলাফল শূন্য।দশ বার কল করার পরেও যখন শিক্ষা ফোন রিসিভ করে না তখন সাহিত্য নিজের কাছে থাকা একটা অস্ত্র দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে কোনো সাড়া শব্দ নেই।মনে হচ্ছে এই বাড়িতে কখনো কারো বসবাস ছিলো না। সাহিত্য টেবিলের উপর থাকা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়ার সময় হঠাৎ শিক্ষার উপর অ্যাটাকের কথা মনে পড়ে। সাহিত্যে পানির গ্লাস ফেলে দিয়ে দৌড়ে শিক্ষার রুমে চলে আসে। শিক্ষার রুমে এসে যেন সাহিত্যের পা থমকে যায়। সাহিত্যের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ নিচে পড়ে যায়।লাল কাচের চুড়ি গুলো ভেঙ্গে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here