#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
১৯.
গগণে মেঘের বিন্দুমাত্র লেশ নেই।তবুও নীলিমায় দেখা যাচ্ছেনা শশীকে।রাস্তাঘাটে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা প্রাকৃতিক আলোর ঝলকানিও।শহুরে এলাকা ছেড়ে প্রাইভেট কারগুলো যত বেশি গ্রামীণ এলাকায় প্রবেশ করছে অম্বর ধীরেধীরে তত বেশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে।এ বুঝি অমাবস্যার রাত্রি?গাড়িতে এসি চলছে বিরামহীন,তবুও ঘেমে একাকার চাঁদ।বারবার ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।অস্বস্তি হচ্ছে তার।গাড়ি চলছে তার আপনগতিতে,থামেনি কোথাও।ড্রাইভিং সিটে প্রণয় আর তার পাশেই বসেছে চৈত্র।লুকিং গ্লাসে বোনকে পর্যবেক্ষণ করছিলো বেশকিছুক্ষণ যাবৎ ই।অবশেষে প্রণয়কে সে বললো,
“গ্লাসগুলো খুলে দিলে ভালো হতো প্রণয়”
প্রণয় গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো,
“এসি চলছেতো ভাইয়া”
“চাঁদের এসিতে সমস্যা হয়।শ্বাস আ!টকে আসে।প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে এসেছে।আরেকটু সময় গেলে হিতে বিপরীত হবে।এসিটা অফ করে গ্লাসগুলো খুলে দিয়েন কষ্ট করে।”
প্রণয় সাথে সাথে গাড়ি থামালো।থামিয়ে গ্লাস সব’কটাই খুলে দিয়ে এসি অফ করে দিলো।অতঃপর গাড়ি স্টার্ট করতেই চৈত্র বললো,
“থ্যাংক ইউ”
প্রণয় কিছু বললোনা।চুপচাপ গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো।চাঁদের একপাশে বসেছে উজান অপরপাশে রিহা।জানালার পাশে না বসলে অস্বস্তি হয় বিধায় চাঁদ রিহাকে বললো,
“আপু জানালার সাইডে দেবে প্লিজ?”
রিহা কিছু বলার পূর্বেই উজান বললো,
“ভাবি তুমি আমার পাশে বসো।আমি পেছনের সিটে বসছি”
“একা বসবে?”
“সমস্যা নেই”
“ঠিক আছে”
“ভাই গাড়ি থামাও”
উজানের কথায় ব্রেক কষে প্রণয়।অতঃপর উজান পেছনের সিটের কিনার ঘেষে দু’পা বাকি দুই সিটের উপর উঠিয়ে হেলান দিয়ে মোবাইল নিয়ে বসে।বসেই মেসেজ দেয় শিফার খোলা সেদিনের মেসেঞ্জার গ্রুপে,
“কী করছিস তোরা?আমাকেতো জোর করে এখানে পাঠালি।আমি ওখানে বসতে চেয়েছিলাম”
রিপ্লাই আসে রুবার,
“জায়গা না হলে কোথায় বসাবো আমার কোলে?”
উজান বমি করার ইমোজি সহিত রুবার মেসেজের রিপ্লাই দেয়,
“তোর কোলে বসতে আমার বয়েই গেছে?তাছাড়া আমি বসলে তুই আস্ত থাকবি?”
বলেই শেষে দিয়ে হাসির ইমোজি পাঠায়।উজানের মেসেজের রিপ্লাই দেয় শিফা,
“বেচারি এমনিতেই শুকনা তুমি ভুলেও বসোনা।ওর হাজবেন্ড বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে ভাই!”
তন্ময় শিফার মেসেজের রিপ্লাই দেয়,
“ওটা বিপত্নীক* হবে”
শিফা লিখে,
“ঐ একই”
বেশকিছুক্ষণ যাবৎ ই রিদি খেয়াল করছে তার কাজিনগুলো মোবাইলে ব্যস্ত কেবল সে বাদে।মনে মনে উজানকে ইচ্ছেমতো গা*লি দিচ্ছে।কেনো সে মিরের আগে গাড়িতে উঠলোনা।সে যদি উঠে পড়তো বর্তমানে রিদিকে মিরের পাশে এতো অস্বস্তি নিয়ে বসতে হতোনা।নড়তে চড়তে পারছেনা সে।মূর্তির ন্যায় জমে থাকতে হচ্ছে তাকে।একটুখানি নড়লেই বুঝি মিরের শরীরে স্পর্শ লেগে যাবে।অতঃপর লজ্জায় মাথা কা!টা যাবে তার।ভাবতেই গাল দুটো জ্বলে উঠলো।না!আর বেশিক্ষণ এখানে বসে থাকা যাবেনা।তাই সে খানিকটা কেশে মিরের পাশে বসা তন্ময়কে বললো,
“ভাই তুই মাঝে বসে আমাকে ওপাশে দিবি প্লিজ?”
এ কথা শুনে আঁড়চোখে তাকালো মির রিদির পানে।অতঃপর মোবাইলে ধ্যান রেখেই বললো,
“কেনো?এখানে কী সমস্যা?তোমার গায়ের উপরতো আর উঠে যাচ্ছিনা।তাছাড়া আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।সো রিল্যাক্স”
মিরের কথায় চমকে তাকায় রিদি তার পানে।সেইসাথে তাকায় রুবা আর শিফাও।অতঃপর তারা রিদির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় মেয়েটা ঠোট কা!ম!ড়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।সরু ছোট্ট নাকটা লালচে বর্ণ ধারণ করছে ধীরে ধীরে।চোখজোড়া তার বন্ধ।কতটা কষ্টে কান্না আটকেছে তা কেবল সেই জানে।আরেকটু হলে যে সবার সামনেই নোনাজল গড়িয়ে পড়বে তা ভেবেই রুবা,শিফা একসাথেই বলে,
“গাড়ি থামাও ভাইয়া”
“গাড়ি থামান রায়হান ভাই”
বোনদের হঠাৎ চিৎকারে দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে পিছু ঘুরে তাকায় রায়হান।অতঃপর বলে,
“কী হয়েছে?”
রুবা আমতা আমতা করে বলছে,
“আ..আমার বমি পাচ্ছে ভাইয়া!”
কপাল কুচকে রায়হান বললো,
“এসি ছাড়া তবুও বমি কি করে লাগছে?”
শিফা বললো,
“বমিতো বলে কয়ে আসেনা।এই রুবা নামতো।রিদিকেও নামা ওর হয়তো গরম লাগছে”
রায়হান জবাব দেয়,
“এখনই নামাতে পারবোনা।একটু বাদে এমনিতেও রামিমকে পিক করতে হবে।তখনই তোরা নামিস”
বলে আবারও গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শিফা বাঁধা দিয়ে বলে,
“কিন্তু রা….”
রায়হানের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“ডোন্ট টক”
গাড়ির ভেতর নিস্তব্ধতা ছেয়ে যেতেই মির ঘাড় না ঘুরিয়ে আঁড়চোখে বাম পাশে তাকায়,যেখানটায় রিদি বসে আছে।অতঃপর তার নজরে আসে রিদির বিধ্ব!স্ত চেহারা।ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দৃষ্টি ঘুরিয়ে আবারও মনোযোগ জ্ঞাপন করে মুঠোফোনে।
শিফা আর রুবা হতাশ হয়ে দু’জন জানালার দু’পাশ দিয়ে আকাশে চন্দ্রিমাকে খুজতে ব্যস্ত হয়।তবে ব্যর্থতা গ্রাস করে তাদের।মেসেজের টুংটাং শব্দে মেসেঞ্জারে ঢুকতে বাধ্য হয় আবারও।অতঃপর দেখে উজানের মেসেজ,
“একটু আগেই আপু মেসেজ দিয়েছে শীঘ্রই দেশে ফিরবে জানালো।”
রুবা উজানের রিপ্লাই দেয়,
“উশ্মিপু!রিয়েলি!কত্ত বছর হলো আপুকে দেখিনা ইশ!”
শিফা রিদিকে উৎফুল্লতার সহিত বলছে,
“রিদু উশ্মিপু দেশে ফিরছে।আমাদের উশ্মিপু”
রিদির কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করতে না পেরে পেছন থেকে রুবা তাকে ডাকতে নেবে আর শিফা তাকে ইশারায় বারণ করে।রায়হান গাড়ি চালাতে চালাতেই বলে,
“ওর আরও আগে ফেরার কথা ছিলো।বেপরোয়া মেয়েকে নিয়ে এতো মাতামাতি বড্ড বিরক্তিকর”
রায়হানের কথায় রুবা আর শিফার মুখ বন্ধ হয়।তন্ময় ভুল করেও কিছু বলেনি।কারণ রায়হানকে সে জ!মের মতো ভয় পায়।
ভোর পাঁচটা,
হঠাৎ করে ব্রেক করায় মিরের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।সে চোখ খুলতেই অনুভব করে তার দু’কাধ ভারী হয়ে আছে।এক কাধে তার রিদি অপর কাধে তন্ময় মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।অসহায় ভঙ্গিতে সে একবার রিদিকে দেখছে তো একবার তন্ময়কে।সকাল হতে হতে যে তার দু’কাধ ব্যথায় টনটন করবে তা বুঝতে পারা সত্ত্বেও তার মন,দুটো বাচ্চা ছেলে-মেয়ের কাচা ঘুম ভাঙতে সায় দিলোনা।অতঃপর সে হাই তুলে সিটের পেছনে আবারও গা এলিয়ে দিলো।
রায়হান গাড়ি থামিয়ে বসে আছে প্রায় দশ মিনিট।এখনো আসছেনা রামিম।বিরক্ত হয়ে তাকে কল দিতে নিলেই চোখ যায় রাস্তার ডান পাশে।গাড়ির কাচে মৃদু টোকা পড়ে।অতঃপর গ্লাস খুলতেই দেখতে পায় শ্যামবর্ণের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর এক মানবকে।সে হাসিমুখ করেই রায়হানকে বলছে,
“কী মামা?আছিস কেমন?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানে চেয়ে রায়হান জবাব দেয়,
“তুই যেমন রাখতে চেয়েছিলি তার তুলনায় ভালোই আছি”
ছেলেটা শব্দ করে হেসে দেয় রায়হানের কথায়। অতঃপর বলে,
“তবে বেশিক্ষণ সেই ভালো থাকা মনে হচ্ছেনা স্থায়ী হবে বলে”
রায়হানের কিছু বলার পূর্বেই ছেলেটা আবারও বলে,
“বের হ”
“বসার হলে পাশে বস।গাড়ি কেবল আমিই চালাবো”
“চোখে সরষে ফুল দেখছিস তাও তোর ঝাঁঝ কমছেনা?”
“কথা বুঝেশুনে বলবি রামিম”
“তোর সাথে আবার বুঝেশুনে কী বলবো?এই শা*লা বের হ তো!”
বলেই গাড়ির ভেতর থেকে রায়হানকে টে!নে নামায় রামিম।অতঃপর ড্রাইভিং সিটে বসতেই রায়হান তিরিক্ষি মেজাজে গিয়ে পাশের সিটে বসে।
টেকনাফ সদরে পৌঁছাতে খানিকটা সময় লাগবে আরও।নিজের এলাকায় আসতেই সতেজতায় ভরে উঠে চাঁদের ভেতরটা।সে চোখ থেকে চশমা খুলে তার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ভাই এটা তোর পকেটে রাখ”
চৈত্র গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো,
“সারারাত ঘুমাস নি।এখন আর ঘুমিয়ে কী করবি?”
অতঃপর বাম হাত দিয়ে চাঁদের থেকে চশমা নিয়ে তার শার্টের পকেটে রেখে আবারও গাড়ি চালানোয় মনোনিবেশ করে।আর চাঁদ বাইরের দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলে,
“ওসব রাস্তা মনে অশান্তি জাগায় ভাই।ঘুমাই কি করে?”
To be continued….