আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ১৮.

0
691

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৮.
“এ শহর আমার বোনের জন্য অভিশপ্ত।এখানে রেখে গিয়ে আরও একবার অভিশাপ ডেকে আনার আহ্বান জানাচ্ছেন?”

কথাটি প্রণয়ের কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই অতীত নামক বইয়ের পাতাটি শব্দ করেই বন্ধ হলো।টনক নড়লো প্রণয়ের।মস্তিষ্কে কেবল একটি বাক্যই বিচরণ করছে,

“এ শহর আমার বোনের জন্য অভিশপ্ত”

বেশকিছুক্ষণ মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করার পরেও এ কথার অর্থ প্রণয়ের বোধগম্য হলোনা।সে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই প্রশ্ন করলো,

“আপনি ঠিক কোন জিনিসটাকে অভিশাপ বলছেন একটু বোঝাবেন?”

আচানক প্রণয়ের করা প্রশ্নে তাকায় তার পানে চৈত্র এবং চাঁদ।চাঁদ চৈত্রকে কিছু বলার পূর্বেই চৈত্র তাকে থামিয়ে দিয়ে প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“আমার আর আমার বোনের কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার অধিকারতো আমি আপনাকে দিইনি?”

প্রণয় গম্ভীরভাব ধারণ করেই ধীরগতিতে চাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়।অতঃপর চাঁদের হাত ধরে তাকে চৈত্রের সামনে থেকে সরিয়ে নিজে চৈত্রের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলে,

“সে আমার স্ত্রী।তার প্রতিটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার স্বয়ং বিধাতা আমায় দিয়েছেন”

চৈত্র প্রণয়ের জবাবে তার বিড়ালাক্ষীজোড়ার দিকে তাকালো।তাকিয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানবের মাত্র বলা বাক্য আর চোখের ভাষায় কতটা মিল আর অমিল রয়েছে।অতঃপর চৈত্র বললো,

“কিছু জিনিসে হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয় ডাক্তারসাহেব।তাছাড়া যেই লোক বিয়ের আসরে বউ পাল্টাতে দু’বার ভাবেনি তার কাছে আমার বোনকে রেখে যাওয়া কতটা নিরাপদ হবে?”

চৈত্রের সূক্ষ্ম এড়িয়ে যাওয়া আরসবার নজরে না এলেও প্রণয় ঠিকই বুঝতে সক্ষম হলো।তাই চৈত্রকে আর ঘাটাতে চাইলোনা সে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আপনার বোন যদি আপনার সাথে চলে যেতে চায় আমি তাকে বাঁধা দেবোনা।কিন্তু যেতে যদি আপত্তি থেকে থাকে তবে তাকে আমার পাশ থেকে এক পাও কেউ নড়াতে পারবেনা।”

প্রণয়ের শান্ত জবাবে চৈত্র তাকায় চাঁদের দিকে।অতঃপর বোনকে বলে,

“কী চাস?”

চাঁদ ভাইয়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে,

“তোমার অবাধ্য কখনো হইনি।আজও কিন্তু হচ্ছিনা!তবে সময় আর ভরসা চাচ্ছি।সবটা ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখো।আগে চাঁদের কেবল খোলস শক্ত ছিলো,বর্তমানে সে পুরোটাই শক্ত আবরণে আবৃত।আমায় নিয়ে ভেবোনা।”

চাঁদের কথা শুনে আড়চোখে তাকায় তার পানে প্রণয়।অতঃপর তার সামনে দাঁড়িয়ে তার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,

“চাঁদের সেই শক্তাবরণকে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করার জন্যই তার জীবনে প্রণয়ের দ্বিতীয়বার আগমণ ঘটেছে মিস রেডরোজ”

প্রথম দিনের ন্যায় প্রণয়ের কাছে আসা আর তারই দেওয়া নামে বহুবছর পর ডাকলেও সেদিনের ন্যায়ই মিল খুজে পেতে চাইলো চাঁদের অবচেতন মন,তবে সফল হলোনা তাতে।খুজে পেলো কেবলই আকাশ-পাতাল ব্যবধান!সেদিন প্রণয়ের চোখেমুখে ছিলো মুগ্ধতা আর আজ কেবলই আক্রোশ।চাঁদও প্রণয়ের ন্যায় ফিসফিসিয়ে বললো,

“চাঁদ তা সাদরে গ্রহণ করলো মি.বিড়ালাক্ষী মানব”

চাঁদের ফিসফিসানোতে তার ঠোটের নাড়াচাড়া প্রণয়ের ঘাড় স্পর্শ করতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো প্রণয়ের।আঁখি জোড়া তৎক্ষণাৎ বন্ধ করে নিজেকে সামলালো সে।অতঃপর হাতের স্টেথোস্কোপ চাঁদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের এপ্রোণ চাঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,

“ভাইয়াকে আজ কোনোক্রমেই যেতে দেবেন না চন্দ্র!একসঙ্গেই শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে বেরুবো আমরা”

রুবা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।তার মাঝে কোনো হেলদুল নেই।সে এখনো তাকে অ!পমান করা চাঁদের ভাইয়ের কথাই ভাবছে।বোন এতো মিষ্টি ভাই কেনো তিক্ত?অথচ দুজনের চেহারায় খানিকটা হলেও মিল আছে।কে বলবে এরা দুজন ভাইবোন?নাকি চাঁদও তার ভাইয়ের ন্যায়ই শক্তপোক্ত মানবী?চাঁদের অতীত তো সে জানেনা।আর আজ কেনোইবা চৈত্র বললো এ শহর অভিশপ্ত চাঁদের জন্য?তার মনে একটু একটু করে সন্দেহ জাগতে লাগলো।কি এমন হয়েছিলো যার জন্য চাঁদকে পাড়ি জমাতে হয়েছিলো সুদূর টেকনাফে?কেনোইবা প্রণয়কে চাঁদ দেখতে পারেনা?দুজনের মাঝে ঠিক কি হয়েছে তা জানতে মন তার আরও ব্যাকুল হলো।এসব ভাবতে ভাবতেই বেখায়ালী হয়ে আরও একবার পড়ে যেতে নিলেই নিজেকে সামলে সামনে তাকালো সে।তাকাতেই দেখতে পেলো সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে হাতে মোবাইল নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানেই চেয়ে আছে চৈত্র।রুবার সাথে দৃষ্টি মিলতেই আবারও মোবাইলে মনোযোগ দেয় ছেলেটা।অতঃপর রুবা মাথার ঘোমটা ঠিক করে ফ্লোর থেকে কাগজ আর কাপড়ের ব্যাগ হাতে নিয়েই বের হয় বাড়ির বাইরে।

রাত তখন নয়টা বেজে ছয় মিনিট,
বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা ব্যতীত সকল ছোটরা ডাইনীং এ বসেছে মাত্রই।কারণ প্রণয় সকলকে নিয়েই নাকি তার শ্বশুরবাড়ি যাবে।তাই ই তাদের আগে আগে খেতে বসা।চাঁদ,শিফা,রিদি আর রুবা মিলে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এক এক করে টেবিলে রাখছে।তন্ময় চেয়ারে বসেই প্লেট নিয়ে বলে,

“ভাবি দুপুরে তো আঙুল,প্লেট সবই চেটে খেয়ে ফেলেছি।এখনও কি সেম হবে নাকি?”

চাঁদ ভাতের বোল আনতে আনতে কিছু বলতেই নিয়েছিলো আর তার মাথার ঘোমটা পড়ে গিয়ে বিপত্তি বাঁধে।আচল বড় হওয়ায় সে দাত দিয়ে তুলতে পারছেনা।তার মধ্যে আবার চোখের চশমা নাকের ডগার কাছাকাছি এসে পড়েছে।বেশ বিরক্তবোধ করছে চাঁদ।আগেও বাড়তে পারছেনা সে।শিফাকে ডাক দেবে এমন সময়ই কেউ একজন তার চশমা চোখে ভালোকরে এটে দিয়ে পেছনে গেলো।পেছন থেকে হাত খোপার মতো করে পেচিয়ে গিট লাগিয়ে দিলো চুলে,যাতে করে খুলে না যায়।অতঃপর সামনে এসে চাঁদকে আড়াল করে শাড়ির আচল ধরে পেচিয়ে এনে কোমড়ে গুজে দিতেই চাঁদ চোখজোড়া আবেশে বুজে নিলো।শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো নিমিষেই।তার চিনতে মোটেও অসুবিধা হলোনা এ হাতের স্পর্শ তার বিড়ালাক্ষী মানবের।অতঃপর চাঁদের হাত থেকে ভাতের বোল নিয়ে টেবিলে রেখে চেয়ারে বসতে বসতেই প্রণয় বললো,

“এখানে আমি ব্যতীত বাকি সকলেই আপনার ভাই।টিপিক্যাল বউ সাজার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হচ্ছেনা”

প্রণয়ের কথায় চমকে তাকায় সকলে।অবাক হয় চাঁদ নিজেও।মনে এতো ক্ষো!ভ থাকা সত্ত্বেও এতো শান্ত ব্যবহার করছে কেনো লোকটা?ঝড় টা কি তবে ভ!য়ংকরভাবে হা!না দেবে চাঁদের জীবনে?চাঁদের ভাবনায় ছ্যাদ ঘটে তার দেবর আর ননদদের উস্কানিমূলক কথাবার্তায়,

তন্ময় সুর তুলে বলছে,

“ওহোওওও!এখানে আমি ব্যতীত সকলেই আপনার ভাআআই!”

উজান তন্ময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চাঁদকে বলছে,

“ভাই যখন তোমাকে খোপা করে দিচ্ছিলো আমি কিন্তু ফটো ক্লিক করে ফেলেছি ভাবি!”

উজানের কথায় শিফা ভ!ড়কে বলে,

“আমার নকল করার সাহস কি করে হলো তোমার হ্যা?”

উজান ভ্রু কুচকে বললো,

“নকল মানে?”

“আমিও ফটো তুলেছি”

রুবা বিরক্ত হয়ে বললো,

“এরকম একটা মোমেন্টই ছিলো যে ফটো না তুলে থাকাই যাবেনা!আমিও তুলেছি এতে এমন করার কি আছে ভাই!”

রিদি বললো,

“সেটাইতো।ভাইয়া যখন শাড়ি গুজে দিচ্ছিলো আমিও তুলেছি হোয়াটস দ্যা বিগ ডিল?”

তন্ময় কৌতুহলী হয়ে বললো,

“চশমা ঠিক করার সিন টা তুলেছিস কেউ?”

“ওদের অজান্তেই ওদের আড়ালে তোলা অনেক ছবি আমার ড্রাইভে এখনো পড়ে রয়েছে”

মিরের কন্ঠস্বর পেয়ে সেদিকে নজর দেয় সকলে।মিরের এতো কাছাকাছি থাকায় রিদি তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে সরে চাঁদের নিকট এসে দাঁড়ায়।মির সেটা খেয়াল করে আঁড়চোখে তাকায় সে পানে।অতঃপর প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বলে,

“আমাদের না জানিয়ে ঘসেটি বেগমকে বিয়ে তো করেছিসই আবার শ্বশুরবাড়িও যাচ্ছিস না জানিয়েই?”

প্রণয় মিরের দিকে না তাকিয়েই বলে,

“মিরা সাথে আছে?”

তৎক্ষনাৎ মিরার উচ্চস্বর শোনা গেলো,

“কেনো?মিরা সাথে থাকলে খুব বেশি অসুবিধা হয়ে যাবে তোর?”

প্রণয় সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বললো,

“দোস্ত তুই…”

“কি তুই?তুই এই মেয়েকে বিয়েও করেছিস কিভাবে বলবি আমায়?তোর কাছে আছে কোনো এক্সপ্লেনেশন?”

“পুরো অতীতটা জানা সত্ত্বেও তুই এক্সপ্লেনেশন চাচ্ছিসও কি করে?”

প্রণয়ের কথায় কুচকানো ভ্রু শিথিল হয় মিরার।অতঃপর সে বলে,

“এটাই তবে কারণ আমাদের কাউকে বিয়েতে না নেওয়ার?”

হঠাৎ করে শোনা গেলো পূর্ণতার কন্ঠস্বর,

“তোদের দুজনের যদি বিয়েই করতে হতো মাঝে দিয়ে পাঁচটা বছর নাটক করলি কেনো?কেনোইবা তোদের জন্য অরণকে সা!ফার করতে হচ্ছে?”

পূর্ণতার কথায় দরজার দিকে তাকায় সকলে।অরণের কথা শুনে চাঁদ বিচলিত হয়ে দৌড়ে পূর্ণতার কাছে গিয়ে তার দু’বাহুতে হাত রেখে বলে,

“পূর্ণপু অরণ কোথায় আছে আপনি জানেন?”

পূর্ণতা ভ্রু কুঞ্চিত করে চাঁদকে ঝাড়া মে!রে বলে,

“ছুবেনা আমায়!”

সবেমাত্র দরজা দিয়ে প্রবেশ করেছিলো রিহা।তৎক্ষনাৎ চাঁদকে পড়ে যেতে দেখে জাপটে ধরে তাকে।অতঃপর বলে,

“ঠিক আছো তুমি?”

রিহাকে দেখে চাঁদ জড়িয়ে ধরে তাকে।জড়িয়ে ধরেই বলে,

“আমি একদম ঠিক আছি।তুমি কেমন আছো আপু?”

রিহা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“ভুলেও কাদবেনা মেয়ে।তোমার চোখে পানি কখনো দেখিনি।দেখতে চাইওনা।আমি ভালো আছি।ওঠো”

বলেই চাঁদকে বুক থেকে উঠিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এগুলো কেমন ব্যবহার পূর্ণ?”

“তোর জ্ঞান শুনতে এখানে আসিনি”

বলেই প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ভালোইতো মজে আছিস।বিয়ে,বাসর টাসর করে একদম অস্থির!”

পূর্ণতার মুখে এরূপ কথা শুনে বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় সকলে তার পানে।অপেক্ষায় আছে প্রণয়ের জবাবের।বেশি বিলম্ব করতে হলোনা তাদের।প্রণয়ের পালটা জবাব এলো,

“বিয়ে করেছি বাচ্চাও করে ফেলবো শীঘ্রই।নাকি তোকে বলে করতে হবে?”

প্রণয়ের এরূপ লাগামহীন কথায় ভ!ড়কায় চাঁদ।ভ!ড়কায় সেখানে উপস্থিত সকলেই।পূর্ণতার বুলি ফুরোয় এবার।তবে এখানেই শেষ হয়না কথোপকথন।মিরা প্রণয়কে গম্ভীরভাবে বলে,

“আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো আমি পাইনি”

প্রণয় জবাব দেয়,

“সময় হলে উত্তর আপনাআপনি তোর কাছে চলে যাবে”

রিহা সবকিছু মনোযোগ দিয়েই শুনেছে এতক্ষণ।বেশ শান্তভঙ্গিতেই সে এবার বলে,

“সবই বুঝলাম তবে তুই বিয়ে করলি তাও আবার চাঁদকে আর আমাদের কান অব্দি খবরটা এলোও না ব্যাপারটা হজম হচ্ছেনা!”

“মিরুকে তো বলেছিলাম বাসায় এসে বউ দেখে যেতে”

রিহা জবাব দিলো,

“এসেছি বলেইতো জানলাম।এও জানলাম শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিস?”

“হিম”

“অরণের সাথে কে থাকবে তবে?”

“দু’দিনের জন্যই যাচ্ছি।তাছাড়া মিরু আর আরফিদ তো আছেই।তোরাওতো আছিস।আমি ওর খোজ এমনিতেও রাখবো”

মিরা বললো,

“আসছি তবে”

প্রণয় মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

“না খেয়েই যাবি?”

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রণয়ের পানে চেয়ে মিরা বললো,

“খাওয়ার জন্য আসিনি।”

বলেই দরজা দিয়ে বেরুতে বেরুতে বাকিদের বললো,

“চল”

পূর্ণতা মিরার সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লেও রিহা আর মির যায়না বলে পূর্ণতা পিছু ঘুরে বলে,

“কি হলো?”

রিহা জবাব দিলো,

“তোরা যা”

“আর তোরা?”

রিহা শান্তভাবেই বললো,

“ভাবিকে দেখতে এসেছি।যেহেতু ভাবিরূপে ছোট বোনকে পেয়ে গেছি আপাতত আমার আর যাওয়া হচ্ছেনা।আর মিরও যাবেনা।তোরা থাকলে থাকতে পারিস”

পূর্ণতা তাচ্ছিল্য করে বললো,

“ছোট বোন?এখনো এই মেয়ে তোর ছোট বোন?”

“বোন তো বোনই।এখন আর তখন কি রে?”

পূর্ণতার কিছু বলার পূর্বেই মির সামনে এসে বলে,

“অনেক্ক্ষণ ধরে তোদের নাটক দেখে যাচ্ছি।ইচ্ছে হলে থাক নাহলে যা।তোদের কেউ আটকে রাখেনি।”

এরূপ অপ!মানে মিরা আর এক মুহুর্ত দাড়ায়না সেখানে।চলে আসে তৎক্ষনাৎ।পূর্ণতাও যেতে নেবে এমন সময় মির তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“আর শোন।ব্যক্তিগত দ্ব!ন্দ্বের জন্য অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা এবার অন্তত ছাড়িস!”

পূর্ণতা পিছু না ঘুরেই হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে।পূর্ণতা যেতেই রিহা চাঁদের সামনে এসে বলে,

“ননদ আর দেবরকে এভাবেই দাড় করিয়ে রাখবে?খেতে বলবেনা?”

চাঁদ মাথা ঝাকিয়ে বলে,

“তোমরা ওদের সাথে জয়েন করো আমি এখনি খাবার বেড়ে দিচ্ছি”

বলেই দুজনকে বসিয়ে তাদের খাবার বেড়ে দিতেই তন্ময়ের হতাশ কন্ঠস্বর শোনা যায়,

“ভাবি আমরা কিন্তু এখনো কিছু খাইনি।”

চাঁদ ভ্রু কুচকে বলে,

“সেকি!এখনো খাওনি কেনো?”

উজান বললো,

“খাবার দিলে তবেইনা খাবো!”

চাঁদ জিভ কে!টে বলে,

“সরি সরি।ভুলে গিয়েছিলাম”

বলেই এক এক করে সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়।খাওয়াদাওয়ার পর্ব চুকতেই মির ঢেকুর তুলে বলে,

“সরষে ইলিশটা অসাধারণ হয়েছে বিড়ালিনী”

চাঁদ হাসিমুখ করে বলে,

“আমার ভাইয়ের প্রিয়।তাইই করেছি।তবে ভাইয়ের থেকে এখনো রিভিউ পেলাম না”

কথাটা বলে চৈত্রের দিকে তাকাতেই সে পানি খেয়ে বলে,

“প্লেট চেটেপুটেই পরিষ্কার করে দিয়েছি আর না ধুলেও চলবে।আরও রিভিউ চাস?”

চাঁদ হেসে দিয়ে ভাইয়ের পেছনে এসে দু’হাত ভাইয়ের দু’কাধে রেখে বলে,

“একবারও কিন্তু খাইয়ে দাওনি”

এ কথা শুনেই চোখজোড়া বন্ধ করে নিশ্বাস নিয়ে চাঁদকে ছাড়িয়ে টেবিলে কিছু একটা খুজতে থাকে চৈত্র।অতঃপর রুবার কাছে গিয়ে রুবাকে না বলেই তার প্লেট হাতে নিয়ে চাঁদের সামনে গিয়ে চাঁদকে দু’লোকমা খাইয়ে দিয়ে বলে,

“এবার ঠিক আছে?”

চাঁদ কেবলই মাথায় ঝাকায়।আর রুবা চোখ ছোটছোট করে তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের নজরকাড়া মানবটিকে।ঠিক তখনই চৈত্রের চোখ রুবার দিকে পড়ে।রুবার দৃষ্টি এলোমেলো হয় তৎক্ষনাৎ।চৈত্রও দৃষ্টি ঘোরায় প্রণয়ের কন্ঠস্বরে।প্রণয় চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে বলছে,

“রুবা,শিফা,তন্ময় তাড়াতাড়ি কর।বেরুতে হবে।নেক্সট বিশ মিনিটের মাঝে সবাইকে হলরুমে তৈরি অবস্থায় দেখতে চাই আমি”

অতঃপর চৈত্রের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ভাইয়া একটু আসুন।কিছু কথা ছিলো”

চৈত্র প্রণয়ের পানে চেয়ে বলে,

“বাইরে গিয়ে দাড়ান আসছি”

সকলে তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠছে।রিহা আর মিরও গিয়ে গাড়িতে উঠতে নিলে প্রণয় বলে,

“কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”

মির কানে ইয়ারফোন গুজতে গুজতে গাড়িতে উঠে বললো,

“কেনো?তোর শ্বশুরবাড়ি”

To be continued….

[বিঃদ্রঃমাঝে দিয়ে অনেকগুলো পর্ব অতীতের ছিলো।তাই যাদের বর্তমানটা মনে নেই বা ভুলে গেছেন,নয় নম্বর পর্ব কষ্ট করে রিচেক দিয়ে নেবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here