#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩০.(বর্ধিতাংশ)
“স্টপ আস্কিং সাচ সিলি কুয়েশ্চনস উশ্মি।অনেক রাত হয়েছে।এবার সবাইকে আগাতে হবে।জাস্ট কাম আফটার মি”
হঠাৎ প্রণয়ের কন্ঠ পেয়ে খানিকটা ভড়!কায় উশ্মি।অতঃপর বলে,
“ভাইয়া আ…”
“নো মোর ওয়ার্ডস।আয় টোল্ড টু কাম”
প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠে সকলেই তার পিছু যেতে লাগলে বাধ সাধে চাঁদ,
“এক মিনিট,নিমু কোথায়?সেই কখন ফোনে কথা বলতে গেলো।দেখছিনা কেনো মেয়েটাকে?”
অমৃতা বিচলিত হয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
“নিমু?নিমু নেই এখানে?”
রিহা অমৃতাকে সাহস জুগিয়ে তার কাধে হাত রেখে বললো,
“ডোন্ট বি হাইপার অমৃতা।নিমৃতাকে পেয়ে যাবো আমরা”
হঠাৎ করেই চাঁদ দ্রুত গতিতে যেদিকটায় শেষবার নিমৃতাকে দেখেছিলো সেখানে যেতে উদ্যত হতে নিলেই শাড়ির কুচির সাথে পা বেঝে পড়ে যেতে গিয়ে ‘আহ’ শব্দ করে বসে পড়ে।অতঃপর দাত কা!মড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
“আম্মু!”
চাঁদের চিৎকার শুনে চৈত্র দৌড়িয়ে মিরদের সাথে আড্ডা রেখে সেখানে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে ছোটি?কী হয়েছে তোর?”
“ভাই পা!পায়ে কী যেনো বিধেছে।জা!ন বেরিয়ে যাচ্ছে আমার!”
হাটু ভাজ করে বোনের সামনে বসে চৈত্র বলে,
“দেখি কোন পা?এই কেউ ফ্ল্যাশ জ্বালাও প্লিজ”
রিদি সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো বিধায় সে দ্রুত ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে চাঁদের পায়ের দিকে তাক করেই আঁতকে উঠে বলে,
“আল্লাহ!ভাবির পা দিয়েতো গলগ!লিয়ে র*ক্ত ঝড়ছে।লোহা জাতীয় কিছু চুবেছে”
বলেই চোখজোড়া বন্ধ করে খিচে রয় রিদি।অর্থাৎ খুব ভয় পেয়েছে।চৈত্রও তা দেখে দাতে দাত চেপে বলে,
“সম্ভবত এটা তারকাটা।দেখি বোন জুতাটা খোল”
চাঁদ চোখ বুজে দাত কিড়মিড়িয়ে বলছে,
“আমি কিছুই খুলতে পারছিনা ভাই।জুতা আটকে আছে।আমি খুলতে পারবোনা।একদমই পারবোনা ভাই!”
হঠাৎ উশ্মি চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,
“জুতা পরলে এসব বিধে কি করে?”
তৎক্ষনাৎ রায়হান মেজাজ খারাপ করে জবাব দেয়,
“সবজায়গায় ওকালতি সাজে না ইউ ব্লা!ডি ব্যারিস্টার”
বলেই চাঁদের পায়ের কাছে বসে দাতে দাত চেপে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে বলে,
“শিট!”
অতঃপর চোখ খুলে প্রণয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রায়হান বলে,
“অ্যান্ড ইউ!তুই না ওর হাজবেন্ড?তার উপর খুব বড় মাপের একজন ডাক্তার?এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কি মজা দেখার জন্য?কাম ফাস্ট!আর অল্প একটু বাকি আছে।বলতে গেলে পুরোটাই ঢুকে গেছে।”
রায়হানের কথায় হেলদোল হয়না প্রণয়ের।সে স্বাভাবিকভাবেই হেটে সামনে এসে চাঁদের পায়ের কাছে বসে পা পর্যবেক্ষণ করে বলে,
“এরকম জুতা পরলে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক”
প্রণয়ের কন্ঠ শুনে চাঁদ চোখজোড়া খুলে।অতঃপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“আমার কারো সিমপ্যাথির প্রয়োজন নেই।এসব জিনিস আমি নিজেই করতে পারি।ভাই তুমি ফ্ল্যাশ টা সামনে ধরো আমি দেখছি কী করা যায়”
চাঁদের অপরপাশে বসে তার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এক হাতে তার থুতনি আর গাল চে!পে ধরে প্রণয় বলে,
“বড্ড বেশি কথা বলেন মেয়ে”
হঠাৎ চাঁদের চিৎকারে সকলে ভড়!কাতে বাধ্য হয়,
“ওমা!”
হাতের চুবিটা মাটির একদম ভেতরে চেপে দিয়ে চাঁদের পা ধরে আস্তে করে জুতাটা খুলে ফেলে প্রণয়।খুলে সেখানে কিছুক্ষণ দৃষ্টিপাত করে।অতঃপর সবাইকে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে হুট করেই চাঁদকে কোলে তুলে দাঁড়িয়ে বলে,
“পায়ের অবস্থা বেশি একটা ভালোনা।কিল তুলে ফেলেছি,এখনই ফার্স্ট এইড করে ইঞ্জেকশন দিতে হবে।গাড়িও পার্কিং এরিয়ায় রাখা।আমি ওখানটায় ই যাচ্ছি।তোরা সবাই এখানেই থাক।কোথাও যাবিনা।আর মির,রায়হান তোরা নিমৃতাকে খুজে আন।চৈত্র ভাই আপনি আর রামিমরা এখানেই থাকুন মেয়েগুলোর সাথে।আমি আমার কাজ সেরে শীঘ্রই ফিরছি”
বলে চাঁদকে নিয়েই পেছনের দিকে পা বাড়ায় প্রণয়।অতঃপর খানিকটা হেটে কপাল শিথিল রেখেই বিরক্তির সুরে বলে,
“আমি কোনো পরপুরুষ নই যে গলা জড়াতে আপনার বিরাট সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।আর বেকারদের মতো অলস হয়ে না থেকে বা’হাত দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফ্ল্যাশ অন করুন”
চাঁদ অবাক হয়ে বলে,
“ফোনতো ওখানেই পড়ে গেছে আর আমিতো শাড়ি পরেছি পকেট কোথায় পেলেন?”
“আমার পকেট”
চাঁদ লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে বলে,
“সরি”
অতঃপর পকেটের দিকে হাত নিতে গেলেই শুনতে পায় প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“গলা ধরুন।আপনাকে নিয়ে এভাবে হাটতে অসুবিধা হচ্ছে”
পকেট থেকে তড়িৎ গতিতে ফোন বের করে চাঁদ বলে,
“আপনাকেতো কেউ কোলে নিতে বলেনি?”
চাঁদের দিকে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করেও মুখভঙ্গি শান্ত রেখে প্রণয় বলে,
“আপনি কি গলা জড়াবেন?”
চাঁদ নিশ্চুপ রয় শুধু।তা দেখে প্রণয় ঠান্ডাস্বরে বলে,
“লাস্টবার বলছি চন্দ্র।ঘাড়ে হাত রাখুন আদারওয়াইজ আমি আপনাকে ফেলে দেবো”
চাঁদ মেজাজ দেখিয়ে চেচিয়ে বলে,
“হ্যা দিন!ফেলে দিন”
প্রণয় ভাবলেশহীনভাবে চাঁদকে আলগা করে দিয়ে বলে,
“ওকে।আপনার জীবন ন!ড়!ক বানানোর শুরুটা নাহয় আপনার কোমড় ভাঙা দিয়েই হোক”
এ কথা শুনতেই চাঁদ দু’হাতে প্রণয়ের গলা আঁকড়ে ধরে চোখ বুজে বলে,
“না না!আপনার এমন লম্বা দেহ থেকে অতো নিচে পড়লে আমার মেরুদণ্ড আর কখনোই জোড়া লাগবেনা প্রণয়।প্লিজ ফেলবেন না”
“ফেলছিনা।ফ্ল্যাশ অন করুন”
অতঃপর চাঁদ মোবাইল মুখের সামনে রেখে শাটার নামিয়ে ফ্ল্যাশ অন করে রাস্তার দিকে তাক করতেই প্রণয় কিছুটা দ্রুত গতিতে হাটা ধরে।তা টের পেয়ে চাঁদ বলে,
“একটু আস্তে হাটুন।আমি পড়ে যাবো”
চাঁদের কথাকে তোয়াক্কা না করে প্রণয় আগের ন্যায়ই হাটতে হাটতে বলে,
“যেভাবে ধরেছেন,আমার ঘাড় ছি!লে র*ক্ত বের হবে কিন্তু আপনি পড়বেন না।বেশি নড়াচড়া না করে স্থির থাকুন”
প্রণয়ের কথায় ভীষণভাবে লজ্জা পেলো চাঁদ।অতঃপর প্রণয়ের ঘাড় আলগা করে ধরে চুপ থাকার চেষ্টা করলো।
খানিক বাদে চোখ ঝাপসা হতে লাগলো তার।মাথাটাও ধরছে।তাই চোখজোড়া বন্ধ করাকেই শ্রেয় মনে করলো।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ পর চাঁদের দিকে তাকালো প্রণয়।অতঃপর নজরে আসলো চাঁদের বন্ধ চোখজোড়া।চাঁদকে ঘুমন্ত ভেবে তার দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে মোহময়ী গলায় প্রণয় বললো,
“আপনি বড্ড উষ্ণ চাঁদ।সর্বাঙ্গ ঝ!লসে যাচ্ছে আমার!”
জাগ্রতই ছিলো চাঁদ।চোখজোড়া বন্ধ ছিলো শুধু।হঠাৎ প্রণয়ের মুখে এরূপ বাক্য শুনে চাঁদের চোখেমুখে লজ্জারা এসে হানা দিলো।গালদু’টো জ্বলে উঠলো নিমিষেই।তবে সে চোখ খুললোনা।প্রণয়কে বুঝতেও দিলোনা সে জেগে আছে।অতঃপর প্রণয়ের দীর্ঘশ্বাসও শুনতে পেলো।সেইসাথে শুনলো প্রণয়ের কন্ঠে হৃদয় বিদারক কতগুলো কঠিন বানীও,
“কেনো আপনি ওরূপ বিশ্রী একটা কাজ করলেন চন্দ্র?আমার একান্ত লালগোলাপ হয়ে আমাতে বিলীন হতে পারলেন না?কেনো পারলেন না আপনি?কেনো জীবনে অসীম প্রেম নিয়ে এসে মাত্রাতিরিক্ত বিষাদতা ছড়িয়ে দিলেন?আপনাকে ঘৃণা করতে গিয়েও আমার চিত্ত ম!রে যাচ্ছে!পুড়ে যাচ্ছে,ঝ!লসে যাচ্ছে চন্দ্রময়ী!”
To be continued….