#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৩৪.
“আমি ভুল করেও এখানে আর দ্বিতীয়বারের জন্য পা রাখবোনা প্রণয়”
বেশ কঠোরভাবেই কথাটা গাড়ির সিটে বসে থেকে প্রণয়ের উদ্দেশ্যে বলে চাঁদ।চাঁদের কথার প্রেক্ষিতে শোনা যায় প্রণয়ের শান্ত জবাব,
“আমার কোলে চড়া যে আপনার শখে পরিণত হয়েছে,বললেই পারেন মিস রেডরোজ”
গাড়ির দরজা খুলে চাঁদের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথাটা বলেই ঘাড়ে হালকা করে ফু দেয় প্রণয়।অতঃপর আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।শরীরের লোমকূপ নিমিষেই দাড়াতে বাধ্য হয় তার।প্রণয়ের এরূপ শীতল কন্ঠ আর এতোটা কাছে আসা চাঁদের সহ্যসীমার বাইরে!এরূপ কিছু হলেই নিজেকে ভুলতে বসে সে।লোকটা এমন কেনো করে?তার মস্তিষ্কে আদোতে চলছে টা কী?ভাবনায় ভাটা পড়ে যখন সে নিজেকে প্রণয়ের বাহুডোরে শূন্যে ভাসমান পায়।তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে বলে,
“দে..দে…দেখুন।সবার সামনে এভাবে বার বার কোলে চড়িয়ে আপনি কী প্রমাণ করতে চান?খুব ভালো স্বামী আপনি?”
গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে চাঁদকে শক্ত করে চেপে ধরে কলেজের ভেতর পা বাড়াতে বাড়াতে প্রণয় বলে,
“তবে কি আমি খারাপ স্বামী চন্দ্র?আপনার সাথে এখনো পর্যন্ততো খারাপ আচরণ না করাতেই এ কথা শোনালেন,করলে মা!মলা টামলা দিয়ে দিতেন নিশ্চয়ই!”
চাঁদ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
“আ..আমি সেটা বলতে চাইনি বা বলিওনি”
“ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন,আপনাকে আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে,শুধুমাত্র পায়ের ক্ষ!তটা বেশি সেজন্যই কোলে তুলতে হচ্ছে বারবার।নাহয় পা দিয়ে র*ক্তক্ষর!ণ হবে।একজন ডাক্তার হিসেবে আপনার সাথে শুধুই মানবিকতা দেখাচ্ছি এর চাইতে বেশি কিছু নয়”
চাঁদ প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়ার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আপনমনে বলে ফেলে,
“আর যখন হৃদমাঝারে র*ক্তক্ষর!ণ হয়েছিলো তখন?তখন কেনো তা বন্ধ করার জন্য আসলেন না প্রণয়?”
প্রণয় চাঁদের আস্তেসুরে বলা কথা আবছা শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বললেন?”
চাঁদ ম্লান হেসে দৃষ্টি নামিয়ে বলে,
“নাতো।সেদিনও কিছু বলিনি আজও হয়তো কিছুই বলিনি।বললে অবশ্যই শুনতে পেতেন”
চাঁদের কন্ঠে কি যেনো ছিলো!কিসের চাপা এক আ*র্তনাদ!যা বের হয়ে আসলো দীর্ঘশ্বাস স্বরূপ।প্রণয় কি তা বুঝতে পারলো?পেলো কি শুনতে সেই চাপা দীর্ঘশ্বাসটুকু?নাকি অজানাই থেকে গেলো অভিমানিনীর অভিমানটুকু?তবে কিসের সেই অভিমান?কার সাথে?এবং কেনো?
.
.
.
.
.
.
.
.
“আপনি ভাবলেনও কি করে আমি আবার এখানে পড়বো?পড়ার হলে আমি অবশ্যই অতোদূর যেতাম না”
“আমি আপনার মত জানতে এখানে আনিনি।আমাদের সবার মতামতের উপর আপনাকে আমল করতে এনেছি”
প্রণয়ের কথা শুনে খানিকটা চমকায় চাঁদ।অতঃপর বলে,
“আপনাদের সবার মানে?”
“আব্বু,আমি এবং ভাইয়া আমরা সবাই চাই আপনি এখান থেকেই পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ডাক্তার হয়ে বের হন।আর যেই বাকি ইন্টার্নিটুকু আছে সেটুকুও এখান থেকেই করবেন।আমি আলাপ করে রেখেছি আর তারাও চায় তাদের সাবেক টপার মুহাইমা ঢামেক থেকে ঢামেকের ই বড় সার্জন হয়ে বের হোক”
“আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাইনা প্রণয়?”
“আপনার সাথে আমার কোনো রসিকতার সম্পর্ক নেই”
প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠের জবাবে চাঁদ বলে,
“আব্বু?এমনকি ভাইয়াও চায় আমি আবার এই মেডিকেল থেকে পড়ি?এখান থেকেই ডাক্তার হয়ে বের হই?”
“ওয়েইট”
বলেই মোবাইল বের করে কারো নাম্বার ডায়াল করে।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই প্রণয় বলে,
“নিন ভাইয়া কথা বলুন।সে আমার কথা মানছেই না”
অতঃপর চাঁদের কাছে ফোন এগিয়ে দিতেই সে সেটা কানে লাগিয়ে সবকিছু শুনে শেষে বলে,
“ঠিক আছে”
বিকেলবেলা,
উজানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্ততবোধ করে দরজায় টোকা দেয় চাঁদ।উজান মোবাইলে ব্যস্ত ছিলো তাই প্রথম টোকা শুনতে পায়না।দ্বিতীয়বার আওয়াজ পেতেই দরজার পানে চেয়ে চাঁদকে দেখে বলে,
“আরে ভাবি।দাঁড়িয়ে আছো কেনো ওখানে?এসো ভেতরে এসো”
চাঁদ খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে রুমে প্রবেশ করতেই উজান বিছানার এক কোনায় বসে চাঁদকে জায়গা করে দিয়ে বলে,
“এই কা*টা পা নিয়ে কেনো আসলে?আমায় একটা মেসেজ করে দিতে আমি ই চলে আসতাম।এখন বসো”
চাঁদ বিছানার সামনে দিয়ে অল্প একটু জায়গায় বসে বলে,
“সমস্যা নেই উজান।পা ঠিক হয়ে যাবে।তোমরা খামোখাই টেনশন নিচ্ছো।তাছাড়া জরুরি বলেই আসতে হলো”
খানিকটা হেসে উজান বললো,
“আচ্ছা তাহলে বলো,কী এমন জরুরি কথা?তাও আবার তোমার এই হাভাগোভা দেবরের কাছে?”
“আমার কোনো দেবরই হাভাগোভা না।সবাই ই কিন্তু বেশ পাকা বুঝলে?”
বলেই উজানের কান মলে দিতেই উজান কানে হাত রেখে বলে,
“ছাড়ো ভাবি ছাড়ো”
“তুমি কি ভেবেছো তলে তলে যে খিচুড়ি পাকাও সে খবর আমি রাখিনা?”
উজান বিস্ময় নিয়ে বলে,
“কা…কিসের খিচুড়ি ভাবি?আমি খিচুড়ি দূর ভাতই পাকাতে পারিনা”
কানে আরেকটু জোরে মো!চ!ড় দিয়ে চাঁদ বলে,
“তাই না?মোবাইলে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসা।চূড়ায় উঠে অন্ধকারের মাঝে ভিডিও কল দেওয়া আমি কি কিছুই বুঝিনা ভেবেছো?”
উজান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,
“ভাবি ওটাতো আমার জাস্ট….”
ভ্রু উচিয়ে চাঁদ বলে,
“জাস্ট ফ্রেন্ড তাইনা?”
“হ্যা…মানে ”
“সত্যিটা বলবে নাকি কান একদম ছি*ড়ে ফেলবো কোনটা?”
“আমি কিন্তু এখনো বেকার ভাবি।তাই কাউকে জানাই নি”
এবার কান ছেড়ে দিয়ে চাঁদ বলে,
“হ্যা বেকার তো কী হয়েছে?ক’দিনই বা আর থাকবে?অলরেডি ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেছো।দিয়েও ফেলবে ক’দিন বাদেই।বিয়ে তাহলে জলদি খাচ্ছি কী বলো?”
“চাকরি পাওয়া কি এতোই সহজ ভাবি?”
কপাল কুচকে চাঁদ বলে,
“তোমাদের তো এতো এতো সোর্স।চাকরি কেনো পাবেনা?তাছাড়া বাবা আর আংকেলেরই তো পারিবারিক কোম্পানি আছে”
উজান নাক-মুখ কুচকে বললো,
“আর তুমি ভাবো আমি বাপ-চাচার হালে নিজের জীবন কাটাবো?আমাদের ফ্যামিলিতো এমন না ভাবি।এখানে সব ছেলে-মেয়েই সমান।আর সবারই একটা না একটা গোল আছে।এই যেমন প্রণয় ভাই ডাক্তার হলো।আপু ব্যারিস্টার।তেমনি আমিও টিচিং প্রফেশন বেছে নিয়েছি।আমিতো দু’টো কোচিং এর টিচারও ভাবি।হোপফুলি একদিন খুব ভালো একজন প্রফেসর হতে পারবো”
উজানের কাধে আলতো করে চাপড় মে!রে চাঁদ বলে,
“একদিন সব হবে উজান,ইনশাআল্লাহ।আর তাহলেতো তুমি বেকার না।বেকার বলছো কেনো নিজেকে?”
উজান হঠাৎ হেসে দিয়ে বলে,
“একজন কোচিং এর টিচার,যার কিনা মাসিক বেতন এই পাঁচ হাজারেরও নিচে তার কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে কোন বাবা ভাবি?”
“যাকে ভালোবাসো তার বাবাই দেবেন”
“তোমার মতো ম্যাচিওর মেয়ের মুখে এসব কি মানায় ভাবি?”
“একটা কথা বলি শোনো”
“হ্যা অবশ্যই”
অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“একটা ছেলে ছিলো মেয়েটাকে ভীষণ ভালোবাসতো বুঝলে?”
“আচ্ছা,তারপর?”
“মেয়েটাও খুব বাসতো।দু’জন দু’জনকে ছাড়া ম*রে যাবে অবস্থা।মেয়েটা খানিকটা শ্যামলা আর একটু স্বাস্থ্যবান ছিলো।নিজেকে নিয়ে সবসময় অসন্তুষ্ট ছিলো।তাই ভয় পেতো খুব যদি ছেলেটাকে হারিয়ে ফেলে?
“তারপর?”
“ছেলেটা মেয়েটাকে অসম্ভব ভালোবাসতো।তাই লুকিয়ে মেয়েটাকে নিজের করে নেয়।যাতে করে মেয়েটা আর ভয় না পায়”
“মানে?বিয়ে করে তারা?”
“হ্যা।কিন্তু তবুও কী হলো জানো?”
উজান খানিকটা ঘেমে গেছে।হৃদস্পন্দন বেড়েছে অনেকখানি।অস্তির হয়ে সে জিজ্ঞেস করে,
“কী হলো ভাবি?”
“মেয়েটা ছেলেটাকে ধো*কা দিলো।খুব চতুরতার সাথে ডি*ভোর্স পেপারে ছেলেটার সাইন নিয়ে নিলো”
বেশ অবাক হয়ে উজান বলে,
“কী!”
“হিম।এরপর একদিন ছেলেটার সামনে এসে সব দেখিয়ে বিয়ের কাগজ ছি*ড়ে ফেললো।ডি*ভোর্স পেপার একহাতে ধরিয়ে দিয়ে অপরহাতে মেয়েটার বিয়ের কার্ড দিলো।এরপর কি হলো জানো?”
ঢোক গিলে উজান বলে,
“কী ভাবি?”
“অতঃপর ছেলেটা ভেঙে গেলো।প্রেম-ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে গেলো।কোনো মেয়েকে আর বিশ্বাস করতে পারলোনা।মেয়ে মানুষ দেখলেই মেজাজ চ!টে যায় তার”
“কে সে ভাবি?”
“আছে একজন।তাই বলছি যা করবে সাবধানে করবে।মেয়ে মানুষ বড়ই ছলনাময়ী উজান”
উজান অবাক হয়ে বলে,
“তুমি মেয়ে হয়ে এ কথা বলছো ভাবি?”
চাঁদের শান্ত জবাব,
“হ্যা বলছি।মেয়েরা ছলনাময়ীই।এমনকি আমি নিজেও”
এবার বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় করে কপাল কুচকে উজান বলে,
“কিসব বলছো!”
চাঁদ খানিকটা হেসে বলে,
“আমি তোমার ভাইয়ের সাথে ছলনা করেছি উজান,বুঝলে?খুব বড় ধরনের ছলনা।চাঁদ ছলনাময়ী।প্রণয়ের লালগোলাপ কেবলই ছলনাময়ী এক নারী।তাই নারী থেকে সাবধান উজান!”
“আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা ভাবি”
চাঁদ গম্ভীর হয়ে বলে,
“বাদ দাও।যেজন্য এসেছিলাম।তুমি ড.আরফিদকে চেনো?”
“ড.আরফিদ?কার কথা বলছো?অরণ ভাইয়াকে যে ট্রিটমেন্ট করছে?সেই নিউরোলজিস্ট?ফায়ান ভাইয়ার কথা বলছো তুমি?”
“হ্যা হ্যা।তার পুরো নাম ড.আরফিদ ফায়ান তাইনা?”
“হ্যা।প্রণয় ভাইয়ের দু’ব্যাচ জুনিয়র ছিলো।একই মেডিকেল থেকে”
“আচ্ছা তার নাম্বারটা তোমার কাছে আছে?”
“ফায়ান ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে তুমি কি করবে ভাবি?তাছাড়া আজ যেই ছেলেমেয়েগুলো আসলো।দেখেতো লাগলো তোমরা পূর্বপরিচিত।ওখানেইতো ফায়ান ভাইও ছিলো”
এবার নিশ্চিত হয়ে চাঁদ বললো,
“আচ্ছা!তাহলে ঐ ফায়ানই অরণের ট্রিটমেন্ট করছে?”
“হ্যা”
“অরণ কোথায় আছে তুমি জানো?”
“তাতো জানিনা ভাবি।ফায়ান ভাই,প্রণয় ভাই আর মির ভাইয়েরাই জানে সে খবর।আর কাউকে বলেনি”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আসছি”
বলে উঠে যেতে নিয়েই আবারও উজানের দিকে ঘুরে বলে,
“আর হ্যা প্রেম করছো ঠিক আছে।তবে সাবধানে।লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে শাদি করবেনা।আর কেউ সাপোর্ট দিক না দিক।আমি দেবো।বিয়ে করতে হলে জানিয়ে শুনিয়ে করবে।মেয়েকে ডিরেক্ট ঘরে তুলবো।তোমার বাড়িতে না মানলে আমি আমার বাড়িতে তুলবো তাকে।তবুও আমায় জানিয়ে করবে সব।বুঝেছো?”
উজান চাঁদের কথায় ঠোট প্রসারিত করে বললো,
“অবশ্যই ভাবি।তোমায় জানিয়েই যা করার করবো।ভাবিরাইতো এসব বিষয়ে দেবরদের হেল্প করে।আর তুমিতো বেস্ট ভাবি ইন দি ওয়ার্ল্ড!ভাইয়াকে যতই থ্যাংক্স দিই না কেন ততই কম হয়ে যায়।বেস্ট একটা ভাবি গিফট করেছে আমাদের সবাইকে”
“তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো।আমি চাই আমার সব ভাইয়েরা সুখে থাকুক”
বলেই প্রস্থান করে চাঁদ।সেখান থেকে এসে নিজের অর্থাৎ প্রণয়ের রুমের বিছানায় শুয়ে পড়ে।কিছুক্ষণ পর বিছানা থেকে উঠে বসে ফোন নিয়ে কন্টাক্টলিস্টে যায় সে।সেখানে খুঁজে খুঁজে ‘এম ভাইয়া’ লিখা নম্বরটার দিকে অনেক্ক্ষণ চেয়ে থাকে।অতঃপর অনেকগুলো বছর পর আবার ডায়াল করে ‘এম ভাইয়া’ নামে সেভ করা সেই নম্বরটিতে।অতঃপর দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে মিরের কন্ঠস্বর,
“কত বছর পর ঘসেটি বেগমের নাম ফোনে জ্বলজ্বল করছে ঘসেটি”
চাঁদ ম্লান হেসে বললো,
“আমি খুবই ভাগ্যবতী।একসাথে এতোগুলো ভাই পেয়ে”
“কিন্তু মিরের মতো ভাই আর দু’টো পাবেনা ঘসেটি”
“হ্যা হ্যা।মি.মিশকাত মির ওরফে চাঁদের মিরজাফর ভাইয়া”
“আচ্ছা হঠাৎ কল দিলে?”
“আসলে ভাইয়া আজ সকালে ফায়ানরা এ বাড়ি এসেছিলো।ইপ্সিরা আরকি।আমার সাথে দেখা করতে।কিন্তু প্রণয়ের সাথে মেডিকেল যেতে হয়েছিলো তাই আর ওদের সাথে তেমন কথা হয়নি।তুমি কি ফায়ানের নাম্বারটা আমায় দেবে?”
“ফায়ানের নাম্বার?তোমার কাছে নেই?”
“আগেরটা আছে।ওটাই কি চালায়?”
“হ্যা ওটাও চালায় আবার নতুন আরেকটা নিয়েছে।আমি তোমায় মেসেজ করছি সেটা দাড়াও”
“ঠিক আছে ভাইয়া”
দীর্ঘ পাঁচ বছর তিন মাস তেরো দিন পর সচক্ষে অরণকে দেখছে চাঁদ।নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে তার পানে।নেত্রে তার অসহায়ত্ব।তার জন্যইতো ছেলেটার আজ এই দশা।না সেদিন সে ওভাবে দৌড়িয়ে যেতো না ওরূপ কান্ডগুলো হতো।আর না নি*স্তেজ হয়ে প্রাণবন্ত ছেলেটাকে এভাবে পড়ে থাকতে হতো।প্রণয় বোধহয় ঠিকই বলে।সে আসলেই একটা খু*নী!আস্তে আস্তে অরণের দিকে এগুতে এগুতে চাঁদের চোখের সামনে ভেসে উঠে সেদিনের বীভ!ৎস!কর মুহূর্তগুলো!মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সেসব স্মৃতি স্মরণ করতেই লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায় তার।নিশ্বাস আটকে আসে!কেমন দমব*ন্ধকর পরিস্থিতি!এর তুলনায় ম*রে যাওয়াও বোধহয় ঢের!স্মৃতিপটে ভেসে এলো অরণের হাত ধরে দৌড়ানোর মুহুর্তগুলো।অরণের ক্ষ*তবিক্ষ*ত হওয়া হাত আর পিঠের দৃশ্যটুকু মনে পড়তেই ঘেমে যায় চাঁদ।কি ব!র্বর সেই দৃশ্য!কি বি!শ্রী ওসব স্মৃতি!ওভাবে ছু!রিকাঘা!ত কেউ কাউকে করতে পারে?একটুও কি বুক কাপলোনা তাদের?হৃদয়ে কি একটুও ব্যথা হলোনা ছেলেটাকে নির্ম*মভাবে মা!রতে?একজন ব্যক্তির প্রাণের মূল্য কি এতোটাই নগন্য যে হ*ত্যার মতো চেষ্টা করতেও কারো বুক কাপেনা?নিষ্পাপ ছেলেটার দোষই বা কী ছিলো?এইতো?সে চাঁদের সঙ্গ দিয়েছিলো তাই?নাকি চাঁদের সাথে সেদিন ছিলো তাই?চাঁদের জন্যইতো আজ অরণের এ নি*র্ম*ম পরিণতি।চোখজোড়া বুজে নেয় চাঁদ।সেইসাথে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অঝোর ধারার নোনাজল।কে বলেছিলো তাকে এতো প্রতিবাদী হতে?একটু কম হলে কি চলতোনা?প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্র*তিশো*ধের সম্মুখীন হয়ে নিজের জীবনকেতো ন*রকে পরিণত করেছেই সেইসাথে আরও কতগুলো জীবনও ন!ষ্ট করে ফেলেছে।ভাবতে ভাবতেই চেয়ার টেনে অরণের সামনে বসে চাঁদ।সে পানে তাকিয়ে চশমা খুলে পাশের টেবিলে রেখে অরণের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে করুন চাহনী নিক্ষেপ করে বলে,
“আমা…আমায় মাফ করে দিন অরণ!মাফ করে দিন।সেদিন আপনার কথা শোনা উচিত ছিলো আমার।আপনার কথা শুনে যদি থেকে যেতাম!এ দশা…এ দশা কখনোই হতোনা।আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন প্লিজ!”
বলেই খানিকটা থেমে ঢোক গিলে লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারও বলে,
“সেদিনের কথা স্মরণ করে আমি আজও,আজও ম*রে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যাই অরণ!আপনি আপনার জীবনটা নিজ হাতে ন!ষ্ট করে দিলেন কেনো?কেনো আপনি ভালোবেসে কেবলই দুঃখ পেলেন?আপনি প্লিজ ফিরে আসুন অরণ!ফিরে আসুন।ফিরে এসে আমায় পাপমুক্ত করুন।পাপমুক্ত করুন অরণ!”
বলেই বেডের কোনায় মাথা রেখে নিঃশব্দে কেদে দেয় চাঁদ।অতঃপর অরণের হাত ধরে আবারও বলে,
“আমার জন্য হলেও ফিরে আসুন অরণ প্লিজ!আপনার বন্ধু আমায় খু*নী ভাবে।আপনার খু*নী!আমিতো সত্যিই আপনায় খু*ন করে ফেললাম অরণ!খু*ন করে ফেললাম!”
কথাটুকু বলে যেইনা অরণের হাত নিজের কপালের কাছে নেবে এমতাবস্থায় তীব্র গতিতে টান অনুভব করে চাঁদ।এতোটাই তীব্র সেই গতি যে মনে হলো তার বাহুটা বোধহয় ছি*ড়েই যাবে!আলাদা হয়ে যাবে শরীর থেকে।সেকেন্ডের মাঝে প্রবল বেগে ধা!ক্কাও অনুভব করলো চাঁদ।নিজেকে সামলাতে না পেরে ছি!টকে পড়লো টাইলস করা মেঝের উপর।হাত গিয়ে পড়লো কাঠের এক চেয়ারের ভাঙা অংশের উপর।চি*ড়ে গেলো হাতের তালু।দাতের সাথে ঠোটের চাপ লেগে কে*টে গেলো ঠোটও।আকস্মিক হাম!লা!র তীব্র বেগে টাস করে কপাল মেঝেতে লেগে ফে!টে গেলো কপালের ডান পাশও।গলগলিয়ে র*ক্ত ঝড়তে লাগলো ফোয়ারার ন্যায়।ভেসে গেলো ফ্লোরখানা,সেইসাথে চাঁদের ধূসর রঙের জামাখানাও।র*ক্তের সাথে মিশে গিয়ে পরিণত হলো কালচে খয়েরী বর্ণের অদ্ভুত এক রঙিন জামাতে।সেভাবে পড়ে থেকেই ঠোট কা*মড়ে আধো আধো চোখ খুলে তাকালো চাঁদ সে পানে,যেখান থেকে হঠাৎ করে তার উপর হা*মলা হলো।অস্পষ্টভাবে নজরে আসলো সাদা রঙের শার্টের উপর এপ্রোণ গায়ে দেওয়া লম্বাটে এক মানবকে।অবস্থা তার অতিরিক্ত মাত্রায় বিধ্ব*স্ত!চোখেমুখে হিং*স্রতা*র প্রকাশ!কই?কখনোতো এ বেশে লোকটাকে দেখেনি সে?এতোটা হিং*স্র,এতোটা ব*র্বরতো তার শুদ্ধ পুরুষ ছিলোনা!তবে কেনো আজ এতোটা অমানবিক,এতোটা ব*র্বর?যার বিড়ালাক্ষীজোড়ায় তাকিয়ে হাজার বছর কাটিয়ে দেওয়া যাবে,সেই বিড়ালাক্ষীজোড়া থেকে কেনো আজ আগুনের ফু!ল্কি ঝড়ে পড়ছে?ঐ শীতল চাহনী কেনো আজ এতোটা হিং*স্র?এতোটা ঘৃ*ণা মনের মাঝে কেনো?কেনো চাঁদ আজ কেবল প্রণয়ের ঘৃ*ণার পাত্রী?আর কিছু ভাবতে পারলোনা চাঁদ।চোখজোড়া বন্ধ করতে করতে অনুভব করলো কেউ তাকে ধরে উঠাচ্ছে।তার মাথা আগলিয়ে হাটুর উপর রাখছে।রেখে গালে হাত দিয়ে আলতো থা!পড়ে বারবার উঠতে বলছে,
“এই চাঁদ?চাঁদ?এই?এই উঠো!উঠো ব…..”
অতঃপর?অতঃপর কী হলো?
আর কিছু দেখার বা শোনার ভাগ্য জুটলোনা চাঁদের।নি*স্তেজ হয়ে পড়লো দেহখানা।অস্পষ্টভাবে প্রণয়ের পানে চেয়ে থেকে চোখজোড়া বুজে নিয়ে শরীর ছেড়ে দিলো হঠাৎ আসা আগন্তুকের হাটুর উপরই।
To be continued….
[বিঃদ্রঃগতপর্বের পর অনেককেই দেখলাম রহস্য জানার জন্য ম!রিয়া হয়ে উঠেছেন।আপনাদের উদ্দেশ্যেই বলছি।রহস্যতো অবশ্যই উন্মোচন হবে।উন্মোচন না করলেতো আর গল্প শেষ করতে পারবোনা তাইনা?তবে একটুখানি অপেক্ষা করতে হচ্ছে যে!আমিতো চাইলেই এক জায়গার জিনিস অন্যজায়গায় টেনে এনে লাগিয়ে দিতে পারিনা।তাই বলবো একটুখানি ধৈর্য ধরে পড়ুন সব জানা যাবে।আর হ্যা গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক!বাস্তবতার সাথে না গুলানোর অনুরোধ রইলো]