#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ১১
উজ্জ্বল আকাশে তারার মেলা দেখা যাচ্ছে। মৃদু বাতাস। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চুল মুচছে আনাবিয়া। চাঁদের চকচকে আলো তার কোমল মুখশ্রীতে এসে পরছে। মনে মনে ইচ্ছে মতো বকছে ইরানকে। চুল মুছে তৌয়ালেটা হাতে নিয়ে সামনের দিকে তাকায়। রাস্তার ঐপাশে পাঁচ তালা একটি ভবন। আনাবিয়া ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলো তিনতালার বেলকনিতে কেউ দাঁড়িয়ে তাকেই দেখছে। আনাবিয়া আর দাঁড়ালো না। রুমের ভিতরে চলে যায়।
ইরান একজনের সাথে ফোনে কথা বলছিল। আনাবিয়া ভাবুক হয়ে ডিভাইনে বসে পরে। ইরান কথা বলছে আর লক্ষ্য করছে আনাবিয়াকে। ইরান কল কেটে ফোন পেন্টের পকেটে ভরে আনাবিয়ার কাছে এগিয়ে আসে। ডিভাইনে আনাবিয়ার পাশেই বসে জিজ্ঞেস করে,
-এনিথিংক রং?
-আই ওয়ান্ট ডিভোর্স ইরান।
ইরানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। মুখে কঠিন ভাব দেখা যায়। আনাবিয়া পুনরায় শান্ত কণ্ঠে বলে,
-মম আমাকে অনেক কিছু বললো তার বিষয় আপনার বিষয়। আমি শুধু নিজের প্রতিশোধ নিতেই আপনাকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি ভেবে দেখলাম এখানে আপনার কোনো দোষ নেই। শুধু শুধু একজন নির্দোষের জীবন নষ্ট করার ইচ্ছে নেই আমার। আমার নিজেরও একটা ভবিষৎ আছে।
-তুমি তোমার ভবিষৎ নিয়ে চিন্তা করো আমারটা আমি করতে পারব। আর রইলো ডিভোর্স! তুমি কী রাশিয়া যেয়ে নিজের স্টাডি শেষ করতে চাও? তাহলে যেতে পারো আমার প্রবলেম নেই।
-আমি একবারের জন্য চলে যেতে চাই। সেখানে আমার গ্রান্ডমা এন্ড গ্রান্ডফাদার আমার অপেক্ষায় আছে। আমার বন্ধুবান্ধব সবাই আমার জন্য চিন্তিত। তাই আমি ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতে চাই। আমি জানি বিয়ের তিনমাস আগে ডিভোর্স হয় না। ঠিক আছে আই হ্যাভ নো প্রবলেম। আমি এখন রাশিয়া চলে যাবো আপনে ডিভোর্স পেপার রেডি করে আমাকে বলবেন।
ইরান হাত মুঠি করে গম্ভীর হয়ে বসে রইলো। তাকে দেখে এখন বুঝার উপায় নেই আসলে তার মনে চলছে টা কী! স্মিত হাসে ইরান। কপালে দু’আঙুল ঠেকিয়ে বলে,
-হাও সেলফিশ ইউ আনাবিয়া! আসলে বিদেশী মানুষরা এইরকমই হয়।
আনাবিয়া অবাক কণ্ঠে বলে,
-আমি সেলফিশের কী করলাম? আপনিও তো জোর করে বিয়ে করেছেন। আমাদের দুইজনের ভালোর,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আনাবিয়া আর কথা শেষ করতে পারলো না। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইরান। আওয়াজ করে নিঃশাস নিচ্ছে। তার চোখ মুখে ভয়ংকর রাগ দেখা যাচ্ছে। আনাবিয়া বুঝলো না হঠাৎ ইরানের কী হলো। ইরান রাগে ঘরের সব জিনিস আছাড় দিয়ে ফেলতে থাকে। দিশাহারা হয়ে কাঁচের গ্লাস ছুঁড়ে মারে দেয়ালে ঝুলানো টিভির দিকে। বিকট শব্দ করে টিভি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আনাবিয়া কাঁপাকাঁপি পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। দৌড়ে রুমে আসে রাকিয়া আর তনুসফা। ইরানের এতো রাগের কারণ বুঝলো না তারা। রাকিয়া ছেলেকে জরিয়ে ধরে। তনুসফা আনাবিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-এই মেয়ে কী হয়েছে? কী বলেছো তুমি আমার ভাইকে?
-আমি তো,,,,,,,,,,,,,,,,
-একদম চুপ। দেখছো আম্মা এই মেয়ে তোমার ছেলেকে আরো অসুস্থ করে দিচ্ছে। সবসময় শুধু ঝগড়াই করে আমার ভাইয়ের সাথে। তাই তো আমি বলি ওদের ডিভোর্স করিয়ে দেও। বিদায় করো এই অকর্মাকে।
-শাটআপ, জাস্ট শাটআপ। ওকে আর একটা কিছু বললে আমার ভয়ংকর রূপের সাথে পরিচিত হবে আপা।
ইরান চিৎকার শুনে কেঁপে উঠে তনুসফা। ভাইয়ের এমন আচরণ অসন্তুষ্ট তিনি। রাগী চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। তারপর মুখ ফুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাকিয়া বিছানায় বসায় ইরানকে। আনাবিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-মা তুই আমার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নে। আমি আসছি।
-ঠিক আছে।
আনাবিয়া চলে যায়। ইরান কেনো অকারণেই তার সাথে রাগ দেখালো! আনাবিয়ারও রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। পারছে না এখনই ছুরি ঢুকিয়ে দিতে ইরানের বুকে!
রাকিয়া ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শান্ত স্বরে বলে,
-আব্বা কী হয়েছে? এভাবে কেউ রাগ করে?
ইরান মেঝেতে তাকিয়ে আছে। তার নিজেকে নিজের পাগল পাগল মনে হচ্ছে। অশান্ত কণ্ঠে বলে,
-আম্মা আমি নিজের মধ্যে নেই। আমার সব কিছু ধ্বংস করে দিতে মন চাইছে। ও কিভাবে আমার থেকে দূরে যেতে চায়? কিভাবে?
-কে দূরে যেতে চায় আব্বা? আনাবিয়া?
ইরান চুপ হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠস্বরে বলে,
-বলে দিলাম আম্মা ও যদি আমার থেকে দূরে যেতে চায় আমি কিন্তু ওরে নিজের হাত দিয়ে মেরে ফেলবো। যেকোনো মূল্যে আমি ওকে হারাতে চাই না।
রাকিয়া এবার বুঝলো আসল ঘটনা। মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। পরমুহূর্তে আবার কিছু একটা ভেবে চেহারা আতকে উঠে তার। কণ্ঠ খাঁদে ফেলে বলে,
-আনাবিয়া বলেছে ও চলে যাবে?
-ডিভোর্স চায়।
-তাহলে তুই এভাবে রাগ দেখিয়ে ওকে তো আরো ভয় পাইয়ে দিচ্ছিস। তোর বাপের মতো হইস না আব্বা। ঠান্ডা মাথায় আনাবিয়া মা কে তোর মনের কথা বুঝা। ও হলো ভালোবাসার কা*ঙ্গা*ল মেয়ে! একটু ভালোবাস, সুন্দর মতো কথা বল, যত্ন কর দেখবি ও নিজেই থেকে যাবে তোর কাছে।
ইরান শান্ত হয়ে মায়ের সবটা কথা শুনলো। কিছু কিছু কথা একদম সুন্দর ভাবে তার মস্তিকে গেঁথে গেলো।
🌸
রাতে আনাবিয়া আর ইরানের রুমে এলো না। তিক্ত রাগ তার মনে ইরানের প্রতি তাই রাকিয়ার সাথেই ঘুমালো। সারারাত ছটপট করে কাটে ইরানের। চোখে একটুও ঘুম ছিল। মাথায় শুধু ঘুরছিল কিভাবে আনাবিয়াকে নিজের কাছে রাখবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চমকে যায় আনাবিয়া। রাকিয়া তার সোফায় কতগুলো ড্রেস রেখে দিয়েছে। আনাবিয়াকে উঠতে দেখে রাকিয়া উৎফুল্ল হয়ে বলে,
-মা উঠেছিস। যা মুখ হাত ধুয়ে আয়।
-এইসব কী মম? তুমি কী পরবে এইগুলো?
-নারে গাঁধী! তুই পরিধান করবি।
-কিন্তু আমি তো এতো হেভি ড্রেস পড়তে পারি না।
-আগে মুখ ধুয়ে আয় মা।
শাশুড়ির কথা মতো আনাবিয়া মুখ ধুয়ে আসে। বিছানায় বসে ড্রেস গুলো দেখতে থাকে। কালো রঙের হালকা কাজ করা একটি সেলোয়াড় কামিজ রাকিয়া আনাবিয়াকে ধরিয়ে দেয়।। আনাবিয়া গোমড়া মুখে জামা পড়তে ওয়াশরুম চলে যায়। রাকিয়া কিছু জুয়েলারি বের করছিল এমন সময় ওড়নার সাথে যুদ্ধ করতে করতে আনাবিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। রাকিয়া মুগ্ধ হয়ে আনাবিয়াকে দেখছে। ধরে আয়নার স্মুখীন বসিয়ে দেয়। সিম্পল পাথরের কানের দুল ও হাতের চুরি পড়িয়ে দেয়। আনাবিয়া নিজের মতো করে ছোট ছোট চুল গুলো মধ্যে সিতি করে দুইপাশে বেনুনি করে পিছনে নিয়ে ক্লিপের সাহায্যে আটকে দেয়। কপালে কয়েকটা চুল এসে পরেছে। রাকিয়া মুগ্ধ কণ্ঠে বলে,
-মাশাআল্লাহ! অনেক সুন্দর তুই। এই চুলগুলো বড় হলে একদম বাঙালী নারী লাগতো।
-ঠিক আছে বড় করব ওকে। বাই দা ওয়ে এতো তৈরি কেন হলাম? কোথাও যাবো?
-হ্যাঁ যাবি। আয় আগে নাস্তা করবি।
ওড়না ঠিক করতে করতে ডায়নিং টেবিলের আসে আনাবিয়া। কোনোরকম ওড়না ঠিক করে চেয়ারে বসে পরে। আগের থেকেই তনুসফা, জেসিকা, ইরান বসে ছিল। ইরান মাথা তুলে তাকায় আনাবিয়ার দিকে। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকে। খাওয়ার সবটা সময় ইরান আনাবিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। অথচ আনাবিয়া! জেদের কারণে ভুল করেও একবার ইরানের পানে তাকায়নি। আনাবিয়ার এটিটিউড দেখে ইমপ্রেস ইরান। খাওয়া শেষে রাকিয়া বলে,
-ইরান তুই আজ আনাবিয়াকে তোর অফিসে নিয়ে যাবি। কতদিন ধরে মেয়েটা শুধু বাসায়ই বসে থাকে। আশেপাশের থেকে ঘুরিয়ে আনবি বুঝলি?
ইরানের কিছু বলার আগে আনাবিয়া চট করে বলে,
-মম আমি যাবো না।
-কেনো যাবি না মা? বাহিরের থেকে ঘুরে আয় ভালো লাগবে।
-আমি একা একাই ঘুরতে পারি মম। অন্য কারো প্রয়োজন আমার নেই।
তনুসফা মুখ বাঁকায়। ইরান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-আমি কয়টা ফাইল নিয়ে আসছি। তাকে গাড়িতে যেয়ে বসতে বলো আম্মা।
ইরান ওপরে চলে যায়। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-মম আমি যাবো না প্লিজ।
-যা না মা। আমার জন্যই যা।
-ওকে। তোমার ছেলে আধ পাগল হয়ে বাসায় আসলে আমি দায়ী নই।
এতক্ষন ওড়না একপাশে ছিল। এখন ওড়নাটা সুন্দর করে বুকে জড়িয়ে এটিটিউড দেখিয়ে বেরিয়ে যায়। ইরান গাড়ির দরজা খুলে দেখে আনাবিয়া বসে আছে। ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। ইরান মুচকি হেসে বসে পরে।
____________________🌸
অফিসের সামনে আসতেই গাড়ি থামে। বডিগার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ইরান প্রথমে বের হয় তারপর আনাবিয়া। ইরানের চোখে সানগ্লাস। আনাবিয়া ছোট ছোট চোখ করে আশেপাশে পরোক্ষ করে। সবাই ভুত দেখার মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরান আগে বাড়ে। আনাবিয়া ফোন টিপতে টিপতে তার পিছু পিছু যায়। দারোয়ান ইরানকে সালাম দেয়। ইরান মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিয়ে ভিতরে চলে যায়। সকল স্টাফরা ইরানকে সালাম দিচ্ছে আর চোখ বড় বড় করে আনাবিয়াকে দেখছে। কয়েকজনের মধ্যে গুনগুন করে কথা শোনা গেলো। ইরান স্যার কী লুকিয়ে বিয়ে করে ফেললো? এটা কী তার ওয়াইফ?। মেয়েটা বিদেশী। চোখ গুলো দেখ কেমন! স্যারের সাথে ভালোই মানিয়েছে! না স্যার আরো সুন্দর ডিজার্ভ করে! হতে পারে মেয়েটা তার কাজিন? ইসস আমার মন ভেঙে গেলো ক্রাশের সাথে অন্য মেয়েকে দেখে! মেয়েটা জানো তার কোনো বোনই হয়।
এইরকম অনেক ধরণের কথা শুনতে পেলো আনাবিয়া। স্মিত হাসলো সে। যখন এই পুর মেয়েগুলো জানবে সে তাঁদের ক্রাশের ওয়াইফ তখন তাঁদের রিঅ্যাকশন কী হবে? মনে মনে কথাটা বললো আনাবিয়া। তিনতালায় ইরানের ক্যাবিন। ক্যাবিনের সামনে আসতেই তাজীব এগিয়ে আসে। ইরানকে সালাম দেয়। আনাবিয়াকে দেখে তাকেও সম্মান জানিয়ে সালাম দেয়। ইরান ঘড়ি দেখে আনাবিয়াকে বলে,
-ভিতরে এসো। তুমি একটু ক্যাবিনে বসো আমি কয়েক মিনিটে একটা মিটিং করে আসছি।
আনাবিয়া কাঁচের জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলে,
-আমার এখানেই ভালো লাগছে।
-ওয়েল। তাজীব তুমি ম্যামের সাথে থেকো।
-জি স্যার।
আনাবিয়া ঘুরে ঘুরে পুরো অফিস দেখছে। তাজীব আনাবিয়ার পিছনে পিছনে বডিগার্ড এর মতো ঘুরছে। তাজীব লক্ষ্য করছে আনাবিয়ার এটিটিউড নিয়ে হাঁটা চলা একদম ইরানের মতো। তাজীব ভেবছেঁকা খেয়ে যায় নিজের চিন্তার কথা ভেবে। স্টাফদের এখানে আসতেই আনাবিয়ার মন খুশি হয়ে যায়। স্টাফরা সবাই শুধু তাকেই দেখছে। আনাবিয়া একজন মেয়ের সিটের সামনে যেয়ে বলে,
-আমি কী একটু ট্রাই করতে পারি?
মেয়ে স্টাফটা দ্রুত বসা থেকে উঠে যায়। আনাবিয়া সিটে বসে কম্পিউটার অন করে। নিজের মতো করে চালাতে থাকে। কম্পিউটারে গ্রাফিক্স এর কাজ সেও একটু আরেকটু পারে। তাজীব অবাক হয়ে আনাবিয়ার কাজ দেখছে। চমকিত কণ্ঠে বলে,
-ম্যাম আপনিও পারেন ডিজাইন করতে?
-হ্যাঁ তাজীব ব্রো। আমি আমার এক ফ্রেন্ডের থেকে শিখেছিলাম।
পাশের একজন মেয়ে তাজীবকে ডাক দেয়। আস্তে আস্তে বলে,
-তাজীব ভাই মেয়েটা কে?
-স্যারের কাজিন।
-সত্যি! বিদেশী নাকি মেয়েটা? কত সুন্দর!
-হ্যাঁ, আপনি আপনার কাজ করুণ।
তাজীবের ফোন আসায় সে একটু দূরে যেয়ে কল এটেন্ড করে। আনাবিয়া কাজ শেষ করে উঠে যায়। মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিয়ে তাজীবকে খুঁজতে থাকে। হঠাৎই তার সামনে একটি ছেলে আসে। রোদ ছেলেটির নাম। আনাবিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয়। লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-এইরকম পরীর মতো সুন্দরী আমাদের অফিসে কী করছে জানতে পারি কী?
আনাবিয়া ছেলেটার মতলব বুঝলো। বাঁকা হেসে সে বলে,
-আই নো আই এম ফাইরি। এন্ড আই ডোন্ট নিড ইউর কমপ্লিমেন্ট। ওকে?
-বাহ্! ইরান স্যারের মতো অহংকার-ই দেখছি তোমার মধ্যে! তা মেয়ে পছন্দ হয়েছে তোমাকে।
ইরান মাত্রই মিটিং শেষ করে আনাবিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছে। তার ম্যানেজারের সাথে আনাবিয়াকে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। রোদের কথা শুনে আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-সবারই পছন্দ হয় আমাকে বুঝলে? সেখানে তুমি লিলিপুট মাত্র।
রোদ নিকিষ্ঠ চাহনি দিয়ে আনাবিয়ার হাত ধরে। আনাবিয়া একবার ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ওর ফেইসের দিকে। রেগে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আনাবিয়া রোদের গালে সপাটে চড় মারে। চড়ের আওয়াজে সবাই আশ্চর্য হয়ে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া পর পর আরো দুইটা চড় বসায়। চেঁচিয়ে বলে,
-তোর সাহস কত বড় আমাকে ছুঁয়েছিস? নোংরা, বেয়াদপ, নিলজ্জ, নর্দমারকীট এভাবেই অন্য মেয়েদের বিরক্ত করিস তাই না? তোদের মতো ছেলেদের উচিত এই হাত কেটে টুকরা টুকরা করে কুকুর কে খাওয়ানো। শিক্ষা হলে আর কখন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করবি না।
সবাইকে ভীত হয়ে পিছনে তাকিয়ে থাকতে আনাবিয়াও পিছনে তাকায়। ইরানকে দেখে আবারও চেঁচিয়ে বলে,
-এইরকম নোংরা আর চরিত্রহীনকে কাজে কেনো রেখেছেন? স্টাফের কী অভাব? এইসবদের উচিত ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া।
আনাবিয়া রাগে ইরানকে রেখেই চলে যায়। তাজীব বুঝতে পারছে আজ তার স্যার এই ছেলের কেয়ামত এনে ফেলবে! ভীত কণ্ঠে তাজীব বলে,
-স্যার আপনি ম্যামের সাথে যান। আমি এইদিকটা দেখছি।
-এই ছেলেকে আমি আমার বাড়ির গোডাউনে চাই। বুঝতে পেরেছ?
-জজজি স্যার।
______________________🌸
বিকেলে জেসিকার কিছু ফ্রেন্ড আসে তার সাথে দেখা করতে। আনাবিয়াও তাঁদের সাথে ছিল। জেসিকা সবাইকে বলেছে আনাবিয়া তার মার কাজিন হয়। এতে অবশ্য আনাবিয়ারও কোনো ক্ষোপ নেই। সমবয়সী কিছু মানুষদের সাথে ভীষণ এনজয় করে সে। সন্ধ্যার আগে চলে যায় তারা। আনাবিয়া ড্রইংরুমের সোফায় বসে রাকিয়াও জেসিকার সাথে কথা বলছিল তখনই কালকের সেই অচেনা ছেলেটা আসে। ছেলেটার প্রথমেই নজর যায় আনাবিয়ার ওপর আনাবিয়াও কৌতূহল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রাকিয়া ছেলেটাকে দেখে বলে,
-নূরান বাবা, এসো বসো।
নূরান নামক ছেলেটি বসলো। হাসি মুখে রাকিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-আন্টি ভালো আছেন? কাল এসেছিলাম আপনার সাথে দেখা করতে কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন।
-হ্যাঁ বাবা একটু অসুস্থ তো তাই ঘুমিয়ে ছিলাম। বাড়ির সবাই ভালো আছে? আর কবে এসেছো তুমি?
-চারদিন আগে এসেছি আন্টি। সবাই ভালো আছে। ইরান ভাইয়ের থেকে শুনলাম ইসরাফ ভাইয়ের কথা। এখন ভালো হয়েছে?
-ভালো হয়েছে। কিন্তু এক পা সারাজীবনের জন্য হারিয়েছে।
-দুঃখজনক। জেসিকা কবে আসলে তুমি?
-অনেকদিন আগেই এসেছি।
-ওওও।
নূরান এবার আনাবিয়ার দিকে তাকায়। রাকিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-আন্টি উনি কে? জেসিকার ফ্রেন্ড নাকি?
-আমার বোনের মেয়ে হয়। বেড়াতে এসেছে কিছুদিনের জন্য।
-ওহহ।
-তোমরা কথা বলো আমি একটু নাস্তাপানি নিয়ে আসি।
-আন্টি কিছুর দরকার নেই।
-বসো তুমি।
রাকিয়া চলে যায়। আনাবিয়া জেসিকা কথা বলছে। নূরান আড়চোখে আনাবিয়াকে দেখছে। শান্ত কণ্ঠে আনাবিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-হ্যালো মিসস। ভালো আছেন?
-জি। কে আপনি?
-ইরান ভাইদের প্রতিবেশী আমি। উইযে পিছনে পাঁচতালা বাড়িটা আছে না সেখানে থাকি।
আনাবিয়া সন্দীহান নজরে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
-তিনতালায় রাইট?
-জি। কতদিন থাকবেন এখানে?
-আমি নিজেও জানি না।
নূরান হতবাক হয়ে যায় আনাবিয়ার কথা শুনে। এমন সময় বাড়িতে প্রবেশ করে ইরান। নূরানকে দেখে হাসি মুখে কোট খুলে সোফায় বসে পরে।
-নূরান ভালো করেছ এই সময়ে এসেছো।
-জি ভাইয়া, আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।
-হ্যাঁ শুনবো নে। আগে বলো বিদেশে দিনকাল কেমন যাচ্ছে? বিয়েসাদির কী খবর?
-আপনার মুখে এটা মানায় ভাইয়া? আপনি বলেন কবে বিয়ে করছেন? আমি কিন্তু আপনার বিয়েতে ডান্স করার আশায় বসে আছি।
-আমার আবার বিয়ে!
ইরান মৃদু হাসলো। আনাবিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। নূরান চোরা চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-নিজ দেশে এসে একজন মেয়েকে ভীষণ ভাবে মনে ধরেছে। ভাবছি এবার বিয়েটা করে ফেলবো।
-বাহ্! বেশ ভালো।
—-
—-
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আনাবিয়া। ইরানের রুমে ঘুমালেও ভালোভাবে একটা কথাও বলেনি ইরানের সাথে। জেদি মেয়ে! আনাবিয়াকে দেখে বিছানা ছাড়ে ইরান। গায়ের টি-শার্ট খুলে কালো রঙের শার্ট জড়িয়ে নেয়। পার্কিং এরিয়ায় এসে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। তার নিজস্ব বাড়িতে এসে গাড়ি থামায়। দ্রুত বেরিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ না করে পিছনের দিকে যায়। তাজীব ও আরো কয়েকজন আগের থেকেই সেখানে ছিল। ইরানকে দেখে তাজীব বাড়ির পিছনের একটা ছোট দরজা খুলে দেয়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে সবাই। জায়গাটা একদম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। তাজীব আগে আগে নেমে একটা সুইচ চেপে দেয়। সাথে সাথেই হলুদ রঙের আলোতে আলোকিত হয়ে যায়। বিশাল বড় একটি রুম। এক কিনারে কয়েকটা চেয়ার রাখা। সেখানেই বাধা অবস্থায় বসে আছে রোদ। ইরান তাকে দেখে বড় একটি হাসি দেয়। ধীর পায়ে এগিয়ে যায় তার কাছে। রসিকতা করে বলে,
-রোদ স্যারের কোনো কষ্ট হচ্ছে নাতো?
-স্যার আমাকে ছেড়ে দিন স্যার। আর কখন কোনো মেয়ের দিকে তাকাবো না স্যার ছেড়ে দিন।
মুহূর্তেই ইরানের চেহারার রঙ পাল্টে যায়। চোখ বড় বড় আর লাল হয়ে যায়। ইশারায় তাজীবকে কিছু দিতে বলে। তাজীব বড় একটি লোহার পাইপ ইরানের হাতে ধরিয়ে দেয়। সেটা দিয়ে ইরান আঘাত করে রোদকে। ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে ছেলেটা। ইরান চিৎকার করে বলে,
-তোর কলিজা আজ আমি বের না করছি আমার নামও ইরান নয়। তুই কার গায়ে হাত দিয়েছিস জানিস? আমার স্ত্রী, আমার জানের ওপর। ওর দিকে যে নজর দেবে আমি তার নজরই তুলে ফেলবো সেখানে তুই তো ওকে ছুঁয়েছিস! বল তো কী করা যায় তোকে?
রোদ ব্যাথায় কিছু বলতে পারল না। নিচের দিকে মাথা করে বসে আছে। ইরান পুনরায় বলে,
-বল তোকে কী করব? ওয়েট ওয়েট তাজীব তোমার ম্যাম জানো কী বললো? হাত কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুর কে খাওয়ানো উচিত। রাইট?
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে তাজীব বলে,
-জি স্যার।
ইরান হাতের পাইপ ফেলে দেয়। কিনারে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। চা*পা*তি হাতে তুলে নেয়। তাজীব ভীত হয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইরান চাপা*তিটা ভালো করে দেখে রোদের দিকে এগিয়ে যায়। কিছু সময় নিয়ে ধপ করে চা*পা*তি চালিয়ে দেয় রোদের হাতে। সঙ্গে সঙ্গেই হাত আলাদা হয়ে যায় দেহ থেকে। র*ক্তের ছিটা এসে পরে ইরানের মুখে। রোদের নিস্তেজ দেহ ঢলে পরে মৃত্যুর কোলে। হাত আলাদা করেও শান্তি পেলো না ইরান। মেঝেতে বসে পরল সে। হাতের সেই অংশটা নিয়ে টুকরো টুকরো করে কাটতে শুরু করল। কাঁটা শেষ হলে একটি ব্যাগে ভরে দেয়। তাজীব ইরানের দিকে তাকায়। কোনো দানবের থেকে কম লাগছে না এখন ইরানকে। ইরান শান্ত কণ্ঠে বলে,
-আমার বাচ্চা টাফিটা ভীষণ ক্ষুধার্ত। ওকে এগুলো খেতে দিও তাজীব।
-ঠিক আছে স্যার।
উঠে দাঁড়ায় ইরান। হাতের চাপা*তিটা ঠাস করে নিচে ফেলে দেয়। কাপড় দিয়ে মুখের র*ক্ত মুছতে মুছতে বলে,
-আমার বিদেশীনির হুকুম সারাক্ষপার। যে তার দিকে হাত বাড়িয়েছে সেই মনে করো নিজের মৃত্যু নিজেই ডেকেছে।
-স্যার ম্যাম যদি আপনার সত্যিটা জেনে যায়?
হাসলো ইরান। পাগলদের মতো হাসতে লাগলো। হাসি দমিয়ে বলে,
-নিজের পুরো পরিবারকে খতম করলাম আজ পর্যন্ত পুলিশও ধরতে পারল না আসলে খুনিকে। সেখানে তোমার ম্যাম জানবে এটা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। সে অনেক সাহসী তবে চালাক কম। রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তি ভালো হবে এটা আশা করা নির্ঘাত বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
তাজীবের হাত থেকে ছোট আয়নাটি নেয় ইরান। নিজ মুখশ্রী দেখতে দেখতে বলে,
-এই ভদ্র, বেচারা চেহারার পিছনের রহস্য যে পর্যন্ত আমি না চাইবো সেই পর্যন্ত কেউই জানতে পারবে না।
>>>চলবে।