সে_প্রেমিক_নয় #Mehek_Enayya(লেখিকা) #পর্ব ১৩

0
391

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ১৩

বাসায় এসে আনাবিয়া সবাইকে যার যার রুম দেখিয়ে দেয়। এখন আগে ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তারপর একসাথে আড্ডা দেবে সবাই। নিজেদের রুমে আসতেই ইরান তার দুই হাতের কুনই চেপে ধরে। রাগী কণ্ঠে বলে,

-ঐ ছেলে তিনজন কে ছিল?

-আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর হাত ছাড়ুন আমার। আমি ব্যাথা পাচ্ছি।

ইরান অস্থির হয়ে বলে,

-আর আমার যে মনে ব্যাথা হচ্ছে সেটা কে দেখবে? আমার ওয়াইফকে এখন পর্যন্ত আমি টাচ করলাম না সেখানে অন্য ছেলে কিভাবে করে!

-ইউ হার্টিং মি ইরান।

-ইউ অল্সো হার্টিং মি। আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ হোয়েন সামওয়ান টাচ ইউ।

আনাবিয়ার জোরাজোরি দেখে রাগে ধাক্কা দিয়ে ইরান ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। তাল সামলাতে না পেরে পায়ে বেডের সাথে বারি খায় আনাবিয়া। ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে সে। পা ধরে ধপ করে নিচে বসে পরে। ইরান জ্ঞানশূন্য হয়ে এগিয়ে যায় আনাবিয়ার কাছে। চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আনাবিয়া ঠিক আছ? আই এম সো সরি। বেশি ব্যাথা করছে? ডক্টর আসতে বলবো।

আনাবিয়া ইরানের এতো আলগা দরত দেখে রেগে যায়। ক্ষেপা বাঘিনীর মতো নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় ইরানকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-আমার সামনে আসার মতো দূরসাহস করবে না ইরান শেখ। চুপ করে সহ্য করছি তার মানে এই না যা মন চায় তাই বলবেন, করবেন! আমার স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে আমি আমার সময় সুযোগ বুঝে ঠিকই চলে যাবো।

ইরান হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বাসায় মানুষ আছে। তাঁদের সামনে ঝগড়া করলে বিষয়টা ভালো দেখায় না। তাই রাগে হনহন করে রুম ত্যাগ করে ইরান।

তাঁদের কারোই দুপুরে খাওয়া হয়নি। তাই আনাবিয়া তাড়া দিয়ে তাঁদের দুপুরের খাবার খেতে ডেকে আনে। আলিশান ডায়নিং টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। ইরান আনাবিয়ার ফ্রেন্ডদের পরিহিত পোশাক দেখে মাথা নিচু করে রেখেছে। আনাবিয়াকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে লিলি বিস্মিত হয়। কিছুক্ষন আগেও তো ঠিক ছিল হঠাৎ কী হলো! আনাবিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায় প্রশ্ন করে লিলি,

-তোর পায়ে কী হয়েছে আনা? (লিলি)

-একটু ব্যাথা পেয়েছি। (আনাবিয়া)

আনাবিয়ার দাদি চিন্তিত হয়ে বলে,

-আনা মলম বা স্প্রে দিয়ে নিস কিন্তু নাহলে ব্যাথা কমবে না।

-জি কিউটি।

লিলি খেতে খেতে ইরানের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে বসে আছে সে। লিলি আনাবিয়াকে বলে,

-আমাদের সাথে ব্রাদার ইন লো’র পরিচয় করিয়ে দিবি না আনাবেবি।

আনাবিয়া হালকা হেসে মাথা নারায়। ইরানের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। লিলি আনাবিয়ার থেকেও বেশি ফর্সা। ওর চুল কিছুটা সাদা আর গোল্ডেন কালার। আর ইভানার ফেইস গঠন আফ্রিকান মানুষদের মতো। কৃষ্ণবর্ণ গায়ের রঙ তার। কিন্তু আচরণ ভীষণ মার্জিত। লুকাস, ক্রিস ও ইরানের সাথে হাসি মুখে কথা বলে। ভেজাল হয় জোবানের সময়। গোমড়া মুখে শুধু হাই বলে ইরানকে। ইরান খেয়াল করছে এই ছেলেটা যখন থেকে এসেছে কেমন আনাবিয়ার পিছনে পরে আছে। গ্লু’র মতো একদম চিপকে আছে। ইরান চোখ মুখ খিচে শুধু সহ্য করছে। আনাবিয়ার দাদা খেতে খেতে বলে,

-হোয়াট’স ইউর প্রফেশন ইরান?

-গ্রান্ডফাদার আই এম এ বিজনেসম্যান এন্ড এমপি অফ দিস এরিয়া।

-এমপি কি?

ইরানের কিছু বলার আগেই আনাবিয়া বলে,

-ডার্লিং সে এই এরিয়া দেখা শোনা করে, মিনিস্টারের পরে এমপিদের পদ হয়।

-ওহহ!

সবাই চুপ হয়ে যায়। লিলি আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। আনাবিয়া বুঝলো না। লিলি বিরক্ত হয়ে বলে,

-কতদিন হলো তোদের বিয়ের আনা? (লিলি)

-এক মাস হবে। (আনাবিয়া)

-এতো দিন ধরে বিয়ে করেছ অথচ আমাদের বলো নি আনা! (আনাবিয়ার দাদি)

-আসলে কিউটি আমি ভয়ে বলতে পারিনি। (আনাবিয়া)

-অনেক ভালোবাসিস দুইজন দুইজনকে? (আনাবিয়ার দাদি)

ইরান বুঝলো না গ্রান্ডমার কথা। আনাবিয়া নিশ্চুপ হয়ে যায়। একবার ইরানের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলে,

-হ্যাঁ অনেক।

____________________🌸

খাওয়া দাওয়ার পর ঢুকিয়ে আনাবিয়া ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে তাঁদের রুমে যেতে নেয়। ইরান কোথা থেকে উড়ে এসে আনাবিয়ার হাত চেপে ধরে। আনাবিয়া রাগী চোখে ইরানের দিকে তাকায়।

-কী সমস্যা? ছাড়ুন আমাকে।

-এসো আমার সাথে।

-যাবো না কোথায়ও আপনার সাথে।

ইরান এবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া বিস্ময়বিমূঢ়। ছাড়া পাওয়ার জন্য ইরানের বুকে কিল ঘুষি দিতে থাকে। কিন্তু ইরান ছাড়ে না। নিজেদের রুমে নিয়ে এসে ধীরে সুস্থে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ইরান খুঁজে একটা স্প্রে নিয়ে আসে। আনাবিয়া চোখ ছোট ছোট করে ইরানের কাজ দেখছে। আনাবিয়া থেকে একটু দূরে বিছানায় বসে ইরান। আনাবিয়ার আঘাত প্রাপ্ত পা নিজের কাছে নিয়ে নেয়। আনাবিয়া ভড়কে বলে,

-কী করছেন আপনি?

ইরান কিছু বলে না। আনাবিয়ার পায়ে স্প্রে করে দেয়। তারপর যত্ন করে পা মালিশ করে দিতে দিতে বলে,

-আঘাত আমি দেবো আবার মলমও আমিই লাগাবো। কাঁদাবো আমি আবার আমিই হাসবো। ব্যাথা আমিই দেবো আবার আদরও আমিই করব। প্রেমিক না হলাম, ভিলেন হয়েই রইলাম তোমার জীবনে।

আনাবিয়ার দাদি আনাবিয়ার সাথে দেখা করতে ওর রুমে এসেছিল। দুইজনকে একসাথে দেখে আর ভিতরে ঢুকেনি। ইরানের ব্যবহার দেখে খুশিতে মন ভরে যায় তার। কিছু সময় পর আনাবিয়া ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে গেস্ট রুমে আসে। তার দাদা দাদি এখন রেস্ট করছে। আনাবিয়া প্রথমেই লিলির সাথে একচোট ঝগড়া করে নেয়। লিলি অপরাধী ভঙ্গিতে বলে,

-বিশ্বাস কর আমি বলতে চায়নি। গ্রান্ডমার সাথে কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে তোর বিয়ের কথা। (লিলি)

আনাবিয়া রাগী চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে বলে,

-তুই আর কিছু বলিসই না লিলি। (আনাবিয়া)

-যাই বলিস তোর হাসব্যান্ড কিন্তু একদম চকলেট বয় আনাবেবি! এতো সাদা চামড়া দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত। শেষমেষে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হাসব্যান্ড এর ওপর ক্রাশ খেলাম! (লিলি)

-ইউ টু মাচ লিলি! যাকে দেখিস তাকেই তোর ভালো লাগে! (লুকাস)

লুকাসের কথায় সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। শুধু হাসি নেই জোবানের মুখে। ইভানা হাসি থামিয়ে বলে,

-বাট সিরিয়াসলি আনা, ইরান ইস সো হট এন্ড চাম!(ইভানা)

-শাট আপ ইভানা। (আনাবিয়া)

ক্রিস আনাবিয়ার রিঅ্যাকশন দেখে হাসে। আনাবিয়াকে রাগানোর জন্যে বলে,

-আর ইউ জেলাস আনা ডার্লিং? (ক্রিস )

আনাবিয়া ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,

-নট এট অল ক্রিস। আই এম জাস্ট ইরেটেড। (আনাবিয়া)

-ওয়েল। (ক্রিস)

জোবান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বলে,

-আনা তুই তাকে ডিভোর্স কবে দিচ্ছিস?

-আমি ডিভোর্স চাচ্ছি বাট সে দিচ্ছে না। (আনাবিয়া)

-কেনো দেবে না! এটা জাস্ট এক্সিডেন্টলি বিয়ে হয়েছে। তার উচিত তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া। (জোবান)

-ডিভোর্স দেক বা না দেক তোর তাতে কি জোবান? আই থিঙ্ক ইরান ব্রো লাভ আনা। (লুকাস)

-বাজে বকিস না লুকাস। আর আনা তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাদের সাথে রাশিয়া চলে যাবে।(জোবান)

-ডিভোর্স দেওয়া এতো সহজ নয় জোবান। সে যদি না দেয় আমি জোর করতে পারব না। (আনাবিয়া)

-হ্যাঁ সেটাই। আর তুই এতো জোর কেনো করছিস জোবান? (লিলি)

জোবান অসহায় ভঙ্গিতে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। নবজাতক হয়ে বলে,

-ইউ অল নো আই লাভ আনা। আই ক্যান্ট শি আনা উইথ আদার!

লিলি শান্ত স্বরে বলে,

-কিছু করার নেই জোবান। আনা এখন ম্যারিড। ওকে মন থেকে ভুলে যা।

জোবান কিছু বললো না। আনাবিয়া গম্ভীর মুখে বলে,

-শি জোবান, আমি আগেও তোকে বলেছি এখনও বলছি তুই আমার অনলি ফ্রেন্ড নট এনিথিং। যদি ইরানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায় তবুও আমি তোকে বিয়ে করব না। আমি এমন একজনকে চাই যে পিওর হবে। স্ট্রং চরিত্রের হবে। যার চোখ আমাকে ছাড়া আর কোনো মেয়েকে খুঁজবে না। যার সামনে হাজারো মেয়ে নগ্ন হয়ে বসে থাকলেও তার নজর ড্রেস পরা আমার দিকেই থাকবে। কিন্তু তুই! কতশত মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছিস মনে আছে তোর? এখন কয়দিন আমাকে ইমপ্রেস করতে ভালো সাজবি কিন্তু দেখা যাবে বিয়ের পর আবার চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিস। তাই আমরা ফ্রেন্ডই ভালো। প্লিজ বেড়াতে এসেছিস মুড খারাপ করিস না।

-আই লাভ ইউ আনা। (জোবান)

-বর্তমান যুগে ভালোবাসাটা হলো জাস্ট ড্রামেটিক। বুঝলি? এক দেখায়ই কত মানুষ ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু পরে যেয়ে দেখা যায় সেই ভালোবাসাই কাল হয়ে দাঁড়ায়! তাই আমার ভালোবাসা চাই না। শুধু একজন চরিত্রবান জীবন সঙ্গী চাই। সে যদি সৎ চরিত্রের হয় আর লয়াল হয় তাহলে ভালোবাসা ছাড়াই আমি তার সাথে পুরো জীবন পাড় করতে রাজি।

আনাবিয়ার কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। লিলি নীরবতা কাটিয়ে বলে,

-তো গ্রান্ডমাদের এখন কিভাবে বলবি সত্যিটা?

-ভাবছি তোরা যতদিন এখানে থাকবি ততদিন নরমাল হাসব্যান্ড ওয়াইফের নাটক করব। (আনাবিয়া)

-উম ইটস্ এনজয়বল! (ইভানা)

ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে আনাবিয়া দাদা দাদিকে দেখতে আসে। দাদির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে সে। দাদিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

-ইরানকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। ওকে যতটুকু দেখলাম তোমার প্রতি ভীষণ পসিটিভ সে।

আনাবিয়া ধীর কণ্ঠে বলে,

-হ্যাঁ, পসিটিভ!

-জানো তো আনা, বিয়ের পর কিন্তু স্বামীই সব। স্বামীর বাড়িতে থাকা মেয়েদের জন্য একটা সম্মানের বিষয়। কখন স্বামীর কথা অমান্য করবে না।

-উফফ কিউটি তুমিও বড়দের ডায়ালগ দিচ্ছ!

-হ্যাঁ দিচ্ছি তোমার শুনতেও হবে। যাক তাহলে আমাদের জীবনের শেষ কাজ পূর্ণ হলো। তোমাকে একজন যোগ্য পুরুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি আর কি লাগে।

-হুম।

-স্টাডি করবে না আর বিউটিফুল? (আনাবিয়ার দাদা)

আনাবিয়া উঠে বসে। ক্লিপের সাহায্যে চুলগুলো বেঁধে নেয় উদাসীন হয়ে বলে,

-আমার স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছে না গ্রান্ডফাদার। আমি আর স্টাডি করব না।

_____________________🌸

রাতে সবাই মিলে গার্ডেনে চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মেঘলা আকাশ। মৃদু বাতাস। ইরান জরুরি কাজে একটু অফিসে গিয়েছিল। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার ফিরে এসেছে। এখন ইরান চুপ করে এক কিনারে বসে আছে। আনাবিয়া তার ফ্রেন্ডদের সাথে অনবরত কথা বলেই চলছে। আনাবিয়ার দাদি দাদার কোমর ব্যাথা করছিল তাই তারা দুইজন রেস্ট করতে ভিতরে চলে যায়। লিলি আর ইভানা বসা থেকে উঠে ইরানের পাশে এসে বসে। দুইজনের মুখেই শয়তানি হাসি। ইরান একটু ঠিক করে বসে। আনাবিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। লুকাসের সাথে অনেক ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে ব্যস্ত সে। লিলি গোমড়া মুখে বলে,

-ইটস্ ভেরি ব্যাড ব্রো! আমি খেয়াল করছি আপনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেন না। কারণটা জানতে পারি? (লিলি)

ইরান আনাবিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মৃদু হেসে বলে,

-আপনাদের ফ্রেন্ডের জাদু বুঝলেন? তাকে বেতীত অন্য কারো দিকে তাকাতে কেমন জানো দ্বিধাবোধ হয়। যেখানে সে থাকে সেখানে শুধু তার দিকেই নজর আটকে যায়।

ইভানা মুগ্ধ হয়ে যায়। খুশি হয়ে বলে,

-হাও সুইট! ভালোবেসে ফেলেছেন তাকে?

-অনেক বেশি! (ইরান)

-আনা অনেক নরম মনের মানুষ। ওর মন জিততে আপনার বেশি সময় লাগবে না ব্রো। (ইভানা)

-ইভানা ইস রাইট ব্রো। আপনি ওকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করুন আমরা আছি পাশে। (লিলি)

-নরম মনের মানুষ! তার দিন শুরু হয় আমার সাথে ঝগড়া করতে করতে!(ইরান)

লিলি হাসতে হাসতে বলে,

-ও একটু এইরকমই। কলেজের অনেক ছেলে ওর পিছনে ঘুরত। আনার এক ধমক শুনে দ্বিতীয়বার ঐ ছেলে আর তার চোখের সামনে আসতো না।

ইরান এক দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো। অস্পষ্ট স্বরে বলে,

-আমার বাঘিনী।

কথায় কথায় হঠাৎ জোবান আনাবিয়ার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। জোবানের এইরকম আচরণ পছন্দ হলো না আনাবিয়ার। ইরানও বিষয়টা লক্ষ্য করে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় তার। হাত মুঠি করে বসে রইলো। আনাবিয়া জোবানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে বলে,

-জোবান প্লিজ এইরকম আচরণ করিস না। ইরান এইসব পছন্দ করে না।

-ঐ ইরান তোর নামের মাত্র হাসব্যান্ড বুঝতে পেরেছিস আনা? কিসের এতো অধিকার ওর তোর ওপর? (জোবান)

-আর একটা কথাও বলিস না তুই। (আনাবিয়া)

দুইজন ভৃত্য সবার জন্য গরম গরম ধোঁয়া উঠা কফি আর কিছু স্নাক্স নিয়ে আসে। আনাবিয়া সবাইকে দেওয়ার জন্য বসা থেকে উঠতে নেবে তার আগেই ইরান দাঁড়িয়ে যায়। আদুরে ভঙ্গিতে বলে,

-ডিয়ার তুমি শান্তিটে বসো। আমি সবাইকে দিচ্ছি।

লুকাস মজার ছলে সিটি বাজায়। লিলি আপসোস স্বরে বলে,

-আমিও এই দেশের ছেলে বিয়ে করতে চাই। ব্রো ঠিক আপনার মতো একজন ছেলে আমাকে খুঁজে দেবেন। (লিলি)

-ঠিক আছে লিলি। (ইরান)

ইরান ভৃত্যদের থেকে কাপ নিয়ে সবাইকে সযত্নে দিচ্ছে। আনাবিয়া স্মিত হেসে ইরানের কাজ দেখছে। সবাইকে দেওয়া হলে শেষে ইরান জোবানের কাছে আসে। সবার আড়ালে তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। ফোনে নজর রেখে জোবান কাপ নেওয়ার জন্য হাত আগে বাড়ায়। ইরান ইচ্ছেকৃত ভাবে গরম কফি জোবানের হাতে ঢেলে দেয়। ঠিক যে হাত দিয়ে আনাবিয়াকে ছুঁয়েছিল। জ্বালাপোড়া অনুভব হতেই ধরফড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় জোবান। লিলি, ইভানা দৌড়ে আসে। আনাবিয়া জোবানের হাত দেখে আতকে উঠে। সাথে সাথেই ঠোসা পরে গিয়েছে হাতে। ইরান দুঃখিত কণ্ঠে বলে,

-সো সো সরি জোবান। আমি আসলে খেয়াল করিনি।

জোবান আড়চোখে ইরানের দিকে তাকালো। শান্ত স্বরে বলে,

-আপনার উচিত ছিল দেখে শুনে কাপ দেওয়া।

-হ্যাঁ তোমারও ভুল জায়গায় হাত দেওয়া উচিত হয়নি জোবান। (ইরান)

জোবান সহ সবাই চমকায় ইরানের কথা শুনে। জোবান আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,

-মানে?

-মানে গ্লাসের ধরনিতে ধরার দরকার ছিল। কিন্তু তুমি তো সাইড দিয়ে ধরেছো তাই তোমার হাতে কফিগুলো পরে গেলো। ভীষণ দুঃখিত আমি।

আনাবিয়া সন্দীহান দৃষ্টিতে ইরানের দিয়ে তাকিয়ে জোবানকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। সবাই যেতে ইরান নিজের কফির গ্লাস নিয়ে আয়েস করে চেয়ারে বসে পরে। কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মনের আনন্দে গুনগুন করে গান গাইছে। হঠাৎই একা একাই হাসতে হাসতে বলে,

-প্রেমিক হওয়া সহজ বাট ভিলেন হওয়া কঠিন। আর ভিলেনের চরিত্র আমার একটু বেশিই প্রিয়।

>>>চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here