হৃদয়ে শুধু আপনি❤️ #লেখীনিতেঃঅনুসা রাত(ছদ্মনাম) #পর্ব :০৩

0
317

#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখীনিতেঃঅনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব :০৩

প্রতিদিনের মত আজও মুগ্ধ ক্লাস শেষ করে ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।একটু পরেই আরশি বের হলো তারিন আর ফারিহার সাথে।মুগ্ধ আরশির হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মান সেটা লক্ষ্য করে বললো,

-“ভাই,ভাবী তো চলে আসছে।”

-“তোরা যা আমি আসছি।”

আয়মান তিতাস আর নীলকে নিয়ে সেখান থেকে সরে গেলো।আরশি বান্ধবীদের বিদায় দিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে রিক্সা খুঁজতে লাগলো। মুগ্ধ আবারো গিয়ে দাঁড়ালো আরশির সামনে।মুগ্ধর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার অসুস্থতা।হাতে একটা ব্যান্ডেজও রয়েছে।বিষয়টা চোখে পড়লো আরশির।তবুও আরশি কোনো প্রকার কথা বললো না।মুগ্ধ আরশির পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আমার ভীষণ মন খারাপ।”

আরশির কথা বলতে ইচ্ছে না হলেও বলেই ফেললো,

-“কেন?”

মুগ্ধ ঠোঁট উল্টে বললো,

-“আমাকে কেউ ভালোবাসে না আরশি।”

আরশি মুগ্ধের মুখের দিকে তাকালো।মুগ্ধ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

-“আমার সাথে একটু যাবেন আরশি?”

-“কোথায়?”(ভ্রু কুঁচকে)

মুগ্ধ মলিন হাসলো।আরশির দিকে একটু এগিয়ে বললো,

-“আমি সারাদিন কিছু খাইনি। একটা রেস্টুরেন্টে যাবো।”

-“খাননি কেন? দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছে।”

-“আমার অসুস্থতা দিয়ে আপনার কিছু যায়-আসে?”

বলেই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো মুগ্ধ। আরশির হৃদয় কেঁপে উঠলো। মুগ্ধের এই অবস্থা দেখে তার মন কেমন যেন করছে।মুগ্ধ আরশির হাত ধরতে গিয়েও ধরে না। অবাক হয় আরশি।মুগ্ধ মাথা নিচু করে ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“অসুস্থতা নিয়ে চড় খেতে চাই না। যাবেন আমার সাথে?”

আরশি কিছুক্ষণ ভাবলো। তারের বললো,

-“চলুন।”

মুগ্ধের চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠলো।সে নিজের বাইক নিয়ে এসে আরশির সামনে দাঁড়ালো। আরশি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“কি?”

-“বাইকে উঠে পড়ুন!”

-“আপনি এই অসুস্থতা নিয়ে বাইক চালাবেন আর আমি বাইকে উঠবো?মানে নিজেও মরবেন আর আমাকেও মারবেন।”

মুগ্ধ হাসলো।বিনা বাধায় আরশির হাত টেনে নিজের বাইকে বসাতে বসাতে বললো,

-“নিজে মরবো তবুও আপনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।”

আরশি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়।কি দিয়ে তৈরী এই ছেলে?আরশি পিছনে বসতেই মুগ্ধ বাইকটা একটু টান দেয়।আরশির মাথা গিয়ে লাগে মুগ্ধের পিঠে। আরশি কেঁপে উঠে।হাত দিয়ে ঘাড় স্পর্শ করে বলে,

-“আপনার শরীর তো ভীষণ গরম মুগ্ধ। বাসায় না গিয়ে কলেজে কেন এসেছেন?”

মুগ্ধ বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো,

-“আপনার জন্যে এসেছি আরশি।আপনাকে একবার দেখতে। নাহলে আমার সারাটাদিন ভালো কাটেনা।”

বলেই মুগ্ধ বাইক চালাতে লাগে।আরশি হঠাৎ ভাঙা গলায় বললো,

-“বাইকটা আপনার বাসার দিকে ঘুরান মুগ্ধ। বাসায় গিয়ে খাবেন। আর রেস্টুরেন্টের খাবার খেতে হবে না। এসব এখন অস্বাস্থ্যকর।”

-“আচ্ছা।”

মুগ্ধ আর কিছু বললো না। একটানে নিজের বাসার সামনে এনে বাইক থামালো। বাইকের শব্দ শুনে যেন মুগ্ধের মা শর্মিলা দৌড়ে এলেন।ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,

-“এসেছিস তুই!জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।কে বলেছিলো তোকে কলেজে যেতে?”

মুগ্ধ মায়ের গালে হাত রেখে বললো,

-“দরকারী ক্লাস ছিলো মা।”

শর্মিলা এবার রেগে শাসনের সুরে বললেন,

-“একদম বাড়তি কথা বলবি না বেয়াদব ছেলে।একদম বেশি বড় হয়ে গেছে। চল খেয়ে নিবি।”

মুগ্ধ আরশির দিকে আঁড়চোখে তাকালো।শর্মিলারও এবার আরশির কথা খেয়াল হলো। তিনি আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“থ্যাংক ইউ আম্মু ওকে বাসায় আনার জন্যে।”

আরশি সৌজন্যমূলক হাসি দিলো। শর্মিলা আবারো বললেন,

-“মায়া ঘরেই আছে। পড়াবে না?”

-“জ্বী আন্টি।”

বলেই আরশি বাড়িতে ঢুকলো।শর্মিলা ছেলের হাত ধরে নিয়ে সোফায় বসালেন।ভাত মেখে মুখের সামনে ধরতেই মুগ্ধ হাতটা সরিয়ে বললো,

-“খাবো না আমি।”

-“খেয়ে নে আব্বু।ঔষধ খেতে হবে তো।”

-” না মা। আগে আমার একটা আবদার তোমায় রাখতে হবে।”

-“কি আবদার?”

-“আরশিকে এখানে আজকের জন্যে থেকে যেতে বলো না আম্মু।”(দূর্বল চোখে)

ছেলের চাহনি দেখে শর্মিলার বুক কেঁদে উঠে।ছেলের মাথায় হাত রেখে বলে,

-“তুই যেটা করছিস সেটা সমাজ ভালোভাবে নিবে না মুগ্ধ! ”

-“সমাজ আমায় খাবার দেয় না মা।”

শান্ত গলায় বললো মুগ্ধ।শর্মিলা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর বললেন,

-“বিষয়টা একবার ভাব ভালো করে। তাছাড়া ওর বাবা..”

-“সেসব আমি দেখে নেবো মা। আজ রাত্রি ওকে এখানে রাখো না!নাহলে কিন্তু আমি বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যাব।”

মুগ্ধের এমন কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন শর্মিলা বেগম।

-“আচ্ছা আমি ওকে রাখার ব্যবস্থা করছি। তুই খেয়ে নে।”

______

-“সেদিন আমার বাসায় থাকতে বলায় থাকলেন না কেন আরশি?”

আরশি পার্কের বেঞ্চটা থেকে উঠে দাঁড়ালো।মুগ্ধ চঞ্চল গলায় বললো,

-“কি হলো বলুন!আপনার বাবা তো থাকার পারমিশন দিয়েছিলো।”

আরশি মুগ্ধের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

-“আপনার আশেপাশে থাকা মানে আপনার আর আমার দুজনেরই বিপদ। আপনি কি সেটা বুঝতে পারছেন না?”

মুগ্ধ বেঞ্চ টাতে লাত্থি দিয়ে বললো,

-“বুঝতে চাই না আমি। আর কত কষ্ট দিবেন আমাকে আপনি?”

হঠাৎ এমন রাগ দেখে একটু ভড়কে গেলো আরশি। তবুও নিজেকে সামলে বললো,

-“এটা কেমন বেয়াদবি মুগ্ধ!এটা পার্ক। লোকে দেখছে আমাদের।”

মুগ্ধ আশেপাশে চোখ বুলালো। অনেকেই তাকিয়ে আছে। তবুও মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“আই ডোন্ট কেয়ার।”

-“আমার বিষয়টাও ভাবতে হবে আপনার মুগ্ধ।আপনার মানসম্মান গেলে সেটা ফেরত পাবেন।কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার সম্মান গেলে সেটা পাব না।”

-“সম্মান হারানোর মত কিছু করেছি আমি?”

-“করতে চাইছেন আপনি।আপনি কি বুঝতে পারছেন না নাকি বুঝতে চাইছেন না?”

-“কিছুই না। শুধু আপনাকে চাই আমি। এইটুকুই। আপনার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে নিতে চাই আমি। আমি চাই যেন আমাকে আপনি ভালোবাসেন। আমার মতো।”

আরশি মুগ্ধের মুখপানে তাকিয়ে রইলো।চোখে পানি চলে এলো তার। আর কত এই ছেলেটাকে আঁটকে রাখবে সে? আর কি করলে ছেলেটা মানবে?আরশি মুখ চেপে ঝিলের দিকে দৌড় দিলো। সাথে দৌড় দিলো মুগ্ধও।ঝিলের সামনে এসে ঘাসের উপর বসে পড়লো আরশি।মুগ্ধ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

-“কি সমস্যা আপনার?”

বলতে বলতে মুগ্ধ বসে পড়লো।আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশির চোখে পানি। মুগ্ধের বক্ষস্থল ডিপ ডিপ করতে লাগলো।কাঁপা কাঁপা হাতে সে আরশির গালে হাত দিয়ে মুখটা তুলে বললো,

-“আপনি কাঁদছেন কেন আরশি?”

আরশি মাথাটা নিচু করে ফেললো।মুগ্ধ মলিন হেসে বললো,

-“আমাকে ভালোবাসতে সমস্যা আপনার?একটু ভালোবাসুন না আমায়!আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারি না আরশি!”(আকুতিভরা গলায়)

আরশি মাথা তুলে বললো,

-“আপনি আপনার বয়সী একজনকে খুঁজে নিন মুগ্ধ। অনেককে পাবেন।”

মুগ্ধ মায়া ভরা চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে বলে,

-“আমার যে আপনাকেই চাই।আমার যে #হৃদয়ে শুধু আপনি।”

আরশি অন্য দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলো।মুগ্ধ এবার উঠে দাঁড়ালো। পিছনে ফিরে হাতের কনুইয়ের সাহায্যে মুখ মুছতে মুছতে বললো,

-” আপনার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি চলে গেলে যদি আপনি না কাঁদেন তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।”

আরশি মুগ্ধের দিকে তাকায়। ছেলেটা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। মুগ্ধ আবারো বলে,

-“আমি আর কখনো আপনাকে বিরক্ত করবো না।
কিন্তু একদিন আমার শূন্যতা আপনি টের পাবেন। সেদিন হাজার খুঁজেও আমায় পাবেন না।”

-“কেন?”(অবাক হয়ে)

-“হারিয়ে যাবো ততক্ষণে।”(মলিন হেসে)

বলেই মুগ্ধ সেখান থেকে চলে গেলো।আরশি মুগ্ধের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। আর বলছে,

-“আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না মুগ্ধ। কিন্তু আপনি যেটা চাইছেন সেটা তো সম্ভব না।সমাজের লোকে নানান কথা শুনাবে। আমার বাবা ছোটখাটো একটা চাকরী করেন। সারাজীবনে সম্মানে দাগ লাগেনি। আজ আমার জন্যে যদি বাবার সম্মান হানি হয় আমার তো সেটা সহ্য হবে না।”

ভাবতে ভাবতে আরশি বসে পড়লো আবার।কিছুক্ষণ বাদেই কারোর হাসির শব্দ পেলো। আরশি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো মুগ্ধ বসে আছে। আর হেসে বলছে,

-“আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো? এত সহজ?”

আরশির কেন যেন হাসি ফুটে উঠলো মুখে। কেমন যেন খুশি খুশি লাগলো।মুগ্ধের ফিরে আসাটা যেন তার জন্যে ভীষণ খুশির। এমনটা হবার কারণ না জানলেও আরশি মুখ বাঁকিয়ে বলে,

-“আপনি না চলে গেলেন।”

-“আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারি না তো।”

মুগ্ধের এমন কথায় আরশি ভুবন ভোলানো হাসি দেয়।মুগ্ধের গালে হাত রাখতেই মুগ্ধ হঠাৎই উধাও হয়ে গেলো।আরশি কেমন ভড়কে গেলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা নামছে। আর তার পাশে কেউ নেই। আরশি বুঝলো,এটা তার নিতান্তই একটা কল্পনা মাত্র!মুগ্ধ তো কখনই চলে গেছে।

চলবে….

(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেটা নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখেন এবং ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রানিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী😮‍💨)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here