হৃদয়ে শুধু আপনি❤️ #লেখীনিতেঃঅনুসা_রাত(ছদ্মনাম) #পর্ব:০২

0
547

#হৃদয়ে শুধু আপনি❤️
#লেখীনিতেঃঅনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০২

-“আপু আজকে পড়াতে আসোনি কেন?”

ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে মায়ার এমন কথা শুনে আরশির বুক ধক করে উঠলো।তবুও নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বললো,

-“আমি আর পড়াতে আসবো না মায়া!”

মায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অসহায় গলায় বললো,

-“আপু সামনে আমার হাফ ইয়ারলি এক্সাম।প্লিজ এসো,আমি ম্যাথে কাঁচা তুমি তো জানোই।”

আরশি কি বলবে বুঝতে পারছে না।মায়াকে পড়ানো মানেই ওইবাড়িতে যাওয়া। আর ওইবাড়িতে যাওয়া মানেই মুগ্ধের সামনে পড়া।যা আরশি চায় না।তাই সে ইনিয়েবিনিয়ে বললো,

-“দেখো মায়া,আমি তো আর পড়াতে চাচ্ছি না।”

-“আপু আমার এক্সামের আগে এমন করে যদি তুমি পড়ানো বাদ দাও তাহলে তো আমার ক্ষতি হয়ে যাবে।”

মায়ার কথায় খানিকক্ষণ চুপ রইলো আরশি। ভাবলো,আসলেই তোহ। মেয়েটার তো আর দোষ নেই। ওর পরীক্ষাটা খারাপ হবে।ভেবেই আরশি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

-“আচ্ছা আজকে বিকেলে আসব।”

মায়া যেন খুব খুশি হলো।হেসে বললো,

-“আচ্ছা এসো!”

বলেই সে কল কেটে দিলো। এদিকে আরশি মনে মনে ভাবছে,

-“হ্যা তো বলে দিলাম। কিন্তু মুগ্ধের সামনে যাওয়াটা কি উচিত হবে?”

ভেবেই আরশি ব্যাগ গুছাতে আরম্ভ করলো। ভার্সিটিতে যেতে হবে তো।ড্রইংরুমে আসতেই দিবা তাড়া দিলো,

-“আপু খেয়ে যেতে!তুমি এত কষ্ট করে সকাল সকাল উঠে আমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট বানালে।”

আরশি সাথে সাথে নাকোচ করে বললো,

-” না রে,ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো।”

আরশির বাবা জুনায়েদ খান সোফায় বসে নিউজপেপার পড়ছিলেন।তিনি একটা অফিসে ছোটখাটো জব করেন। যার টাকা দিয়েই পুরো পরিবারটাকে টানতে হয় তার।আরশির মা নেই।মারা গেছেন। বাবা আর ছোট বোনটাকে নিয়েই আরশির ছোট্ট পরিবার।প্রিন্সিপাল স্যারের মেয়েকে পড়িয়ে আরশির অনেকটাই সাহায্য হয়। প্রিন্সিপাল আরশিকে পড়াশোনায় বেশ সুবিধা করে দিয়েছেন। তাই জুনায়েদ আহমেদেরও বড় মেয়েকে নিয়ে এত চিন্তা নেই।ছোট মেয়েকেই এখন মানুষ করার চিন্তা।কিন্তু এখন মেয়েকে এমন ভাবে খাবারকে না করতে দেখে বললেন,

-“খেয়ে যাও।না খেয়ে যাওয়ার কি দরকার?”

আরশি জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“বাবা আসলে আমার ক্লাস দেরী হচ্ছে।”

দিবা তখন নিজের চুলে বেনুনী করছিলো ।বোনকে যেতে দেখে দিবা তাকে উদ্যােশ্য করে বললো,

-“একটু দাঁড়াও না আপু,আমিও তো যাবো তোমার সাথে।”

আরশি বোনের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বললো না। দাঁড়িয়ে রইলো।মাথায় এখনো হাজাররকমের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।আরশির বাবা জুনায়েদ আবার বললেন,

-“তোমার ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? পড়াশোনা ভালো করে হচ্ছে তো?”

আরশি বাস্তবে ফিরে এলো। হেসে বললো,

-“না বাবা। কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আর পড়াশোনাও ভালোই চলছে।”

জুনায়েদ মেয়ের কথা শুনে খুশি হলেন।তারপর বললেন,

-“আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ আরশি। এমন কিছু করো না যেন আমাদের মাথা কাটা যায়। বরং এমনকিছু করো যেন আমাদের মাথা আরো উঁচু হয়।”

আরশির ঠোঁটে এনে রাখা জোরপূর্বক হাসিটা উধাও হয়ে গেলো।দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।তবুও বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“ইনশাল্লাহ।”

আরশির মাথায় বাবার কথাগুলোই বারবার ঘুরছে। সে আবারো ভেবে নিলো। নাহ!সে এমন কিছু করবে না যাতে সমাজের কাছে তাদের মাথা কাটা যায়।মুগ্ধ যা ইচ্ছে করে নিক। আরশি এবার মুগ্ধকে নিজের থেকে দূরে সরিয়েই ছাড়বে।

____

-“ভিজছেন কেন আরশি? ছাতা আনেননি?”

মুগ্ধের গলা পেয়ে পিছনে তাকায় আরশি। মুগ্ধ তার পিছনেই প্যান্টের পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

আরশি কিছু বলতে গিয়েও বললো না। মুগ্ধের সাথে কথা বলা মানেই তাকে প্রশ্রয় দেয়া।আরশি নিজের মত হেঁটে ফুটপাত দিয়ে যেতে লাগলো।মুগ্ধ আরশির পিছনে পিছনে হাঁটতে হাঁটতে বললো,

-“আপনি রিক্সা কেন নিচ্ছেন না আরশি?”

আরশি তখনও চুপ। মূলত সে রিক্সা নিতে চাচ্ছে না কারণ বৃষ্টি মানেই রিক্সাওয়ালাদের ডিমান্ড। তারা ২০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকায় যেতে চায়। তার চেয়ে ভালো আরশি হেঁটেই যাবে। সে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। রিক্সা ভাড়াতেই যদি ৮০ টাকা চলে যায় তার সেভিংস হবে কিভাবে? তাছাড়া আরশিরও ভালো লাগছে বৃষ্টির ছোঁয়া। রাস্তাটা তেমন জনমানুষ বহুলও না। কারণ বৃষ্টির জন্য সবাই রাস্তা থেকে দৌড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেছে। তাই আরশির হাঁটা আরো গতি বাড়ালো।মুগ্ধ আরশির উত্তর না পেয়ে নিজের হাঁটার গতিও বাড়িয়ে দিলো।আর বলতে লাগলো,

-“বৃষ্টিতে ভিজলে তো আপনার জ্বর এসে যাবে আরশি।”

আরশি মুগ্ধের কথা শুনতেই চাচ্ছে না। মুগ্ধ এবার আরশির হাত ধরলো। আর দুবার ভাবলো না আরশি।পিছনে ঘুরে মুগ্ধের গালে চড় বসিয়ে দিলো।মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে।আরশি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“চড়টা মনে থাকলে দ্বিতীয়বার আমার সাথে এমন বিহেভিয়ার করবেন না মুগ্ধ। আর নাম ধরে ডাকেন কেন আমায় আপনি? আপনার থেকে চার বছরের বড় আমি। আমাকে আপু বলে ডাকবেন।”

মুগ্ধ গাল থেকে হাতটা সরিশে মুচকি হেসে বললো,

-“আপনার হাতটা নরম,কিন্তু চড়টা শক্ত কেন আরশি?”

-“আমি আপনাকে আপু বলে ডাকতে বলছি মুগ্ধ। আমি কিন্তু স্যার আর আন্টির কাছে বিচার দিবো।”

-“বউকে কে আপু ডাকে আরশি?”

আরশি রাগে কটমট করছে।কেন শুনছে না এই ছেলে?আরশি মুগ্ধর বুকে ধাক্কা দিয়ে বললো,

-“আমার থেকে দশ হাত দূরে থাকবেন। নয়ত সেকেন্ড চড়টা আরো জোরে লাগবে।”

বলেই আরশি সেখান থেকে চলে গেলো।মুগ্ধ আরশির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।গালে হাত রেখে ভাবলো,

-“আপনার নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করছি। আজ রাতটা অন্তত ভালো ঘুম হবে আমার।”

আরশি বাসায় এসেই ওয়াশরুমে চলে গেলো।ভেজা কাপড়সহই ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে গেলো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।মুগ্ধের অসহায় মুখটা বারবার ভেসে উঠছে তার সামনে। নিজের হাতের দিকে তাকায় আরশি। চড়টা বেশ জোরেই লেগেছে। আরশির নিজের হাতটাই জ্বলে উঠেছে।কিন্তু সে যে নিরুপায়।মুগ্ধের প্রপোজালকে প্রত্যাখ্যান করবে এমন মেয়ে হয়ত কমসংখ্যাকই রয়েছে।তাদের মধ্যে সেও একজন।

_____

মায়ার রুমে মায়াকে পড়াচ্ছে আরশি।ঠিক তখনই এলোমেলোভাবে হেটে মায়ার কক্ষে প্রবেশ করলো মুগ্ধ।মায়া ভাইকে নিজের রুমে দেখে বললো,

-“ভাই তুই এখানে?”

আরশি এবার পিছনে ফিরলো। মুগ্ধের উশকোখুশকো চুল,চোখজোড়া হালকা লাল। পড়ণের ধূসর রঙের টি-শার্ট।মুগ্ধ এগিয়ে আসছে।মায়া টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়।আরশি মুখ ঘুরিয়ে খাতার দিকে তাকায়।মায়া ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

-“ভাই তোর তো শরীর গরম। তুই আমার রুমে কেন?কিছু লাগবে?”

আরশির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ অসুস্থ গলায় বলে,

-“আমার যা লাগবে সেটা তুই দিতে পারবি না রে মায়া।”

মায়া উঁচু হয়ে ভাইয়ের কপালে হাত রাখে। তারপর আঁতকে উঠে বলে,

-“তোর হয়ত জ্বর আসছে ভাইয়া। আমি মাকে বলছি!আরশি আপু আমি আসছি। ”

বলেই মায়া সেখান থেকে দৌড়ে বের হয়ে গেলো।
আরশির বুকটা কেমন ধকধক করছে।মুগ্ধের উপস্থিতি অনুভব করছে সে। কিন্তু পিছনে ফিরে না। ফিরলে হয়ত মুগ্ধের চঞ্চল দৃষ্টি দেখতে পেতো।মুগ্ধ ধীর পায়ে এগিয়ে এলো আরশির দিকে।আরশি তখন এমনি এমনই খাতায় আঁকিবুঁকি করছে।মুগ্ধ মায়ার চেয়ারটায় বসে পড়লো।আরশি মুখ তুলে তাকায়।মুগ্ধের এমন ভয়ানক চেহারা দেখে কেমন যেন বুক কাঁপে তার।মুগ্ধ অসহায় গলায় বলে,

-“আমার সাথে এমন অন্যায় কেন হচ্ছে। বলতে পারেন আপনি?”

আরশি আবারো নিচের দিকে তাকায়। মুগ্ধ আবার বলে,

-“আমার সাথে কথাও বলা যায় না আরশি?”

আরশি আবার তাকায় মুখ তুলে। মুগ্ধ হাসে।হেসে বলে,

-“আমার সাথে এমন করিয়েন না। আমার অনেক কষ্ট হয়। প্লিজ কথা বলুন আমার সাথে।”

-“আপনার জ্বর হয়তো।”(আটকে আসা গলায়)

-“হতে থাক জ্বর। আপনার তো তাতে কিচ্ছু না। তাই না?”(মলিন হেসে)

আরশি অসহায় চোখে তাকায় মুগ্ধের দিকে।মুগ্ধকে দেখে বেশ মায়া হচ্ছে তার।আচমকা মুগ্ধের গালে হাত রেখে বলে উঠে,

-“যান রেস্ট নিন।”

মুগ্ধের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরশির হাতটা নিজের গালে চেপে ধরে মুগ্ধ। হুঁশ ফিরে আরশির। হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে,

-“মায়াকে বলবেন পড়াগুলো শিখে রাখতে। আমি আসছি।”

বলেই সে দ্রুতপায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। মুগ্ধ পিছন থেকে হঠাৎ বলে উঠে,

-“আমি কি আপনার যোগ্য নই?”

আরশি ঢোক গিললো।দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো,

-“শরীরের যত্ন নিন।”

-“আপনি নিয়ে দিন।”

বুকটা কেঁপে উঠলো আরশির মুগ্ধর এমন আবদারে।তবুও হাতের সাহায্যে ঠোঁটের উপর থাকা ঘামটা মুছে বললো,

-“আমার থেকে দূরে থাকেন।নয়ত আরেকটা চড় খাবেন।”

-“এক চড়ে জ্বর উঠেছে। আরেক চড়ে নাহয় ভালোবাসা বাড়বে।”(মুচকি হেসে)

এই ছেলের সাথে কথা বলাটাই উচিৎ না।ভেবেই আরশি দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।সেদিকে তাকিয়ে হেসেই ফেললো মুগ্ধ। ”

চলবে….

(আমার ভুলক্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন।অযথা সেটা নিয়ে মজা না করে ক্ষমার চোখে দেখেন এবং ভালো কিছু লিখতে অনুপ্রানিত করবেন।ভুলক্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী😮‍💨)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here