প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২১

0
699

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২১

গাড়ি এসে থামে হাসপাতালের সামনে। ইশান গাড়ি থেকে আগেই নেমে গেছে। তীর আর ইশা এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে হাসপাতালে আসার কারন কি কার কি হয়েছে? ইশান তীরের সাইডের দরজটা খুলে ইশারা করে নামার জন্য। তীর ভ্রু-কুচকে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের এমন তাকানো দেখে ইশান বলে।

–কি হলো? নাম গাড়ি থেকে।

তীর বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলে।

–কেন? কেন নামবো আমি গাড়ি থেকে?

ইশান নাকের পাটা ফুলিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

–কারন আমি নামতে বলছি তাই তুই নামবি।

–আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই। তাই নামবো না আমি গাড়িতে বুঝতে পেরেছেন।

বলেই সোজা হয়ে বসে পড়ে। ইশান আশেপাশে তাকিয়ে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মেয়েটা আজকে একটু বেশিই অবাধ্যতা করছে এর আগে কখনোই এমনটা করে নি। সবসময় ভয়ে ভয়ে চলেছে তার সামনে কিন্তু আজকে যেন ভয়ের “ভ” টাও কাজ করছে না তীরের মনে এক ফোঁটাও।

ইশান নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে রাখে কিছুটা সময়। কিছু একটা ভেবেই আচমকা তীরের ডান হাতটা ধরে হেঁচকা টান মেরে গাড়ি থেকে নামায়। নিজের উপরে হঠাৎ করেই এমন আক্রমণ হওয়াতে তীর নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে ইশানের বাহু আঁকড়ে ধরে ভয়ে। নিজেকে ইশানের এতটা কাছে দেখতে পেয়ে রাগে ইশানের কাছ থেকে দুরে সরে গিয়ে বলে।

–এভাবে টানার মানে কি? আমাকে কি গরু পেয়েছেন নাকি হুম যা খুশি তাই করবেন।

ইশান হেসে দেয় তীরের কথাটা শুনে। ইশানের হাসিটা যেন তীরের কাঁটা গায়ে নুনরের ছিঁটার মতো লাগলো। মন চাইছে ইশানের ঠোঁট দুটোতে স্টেপলার মেরে দিতে যাতে দাঁত বের করে না হাসতে পারে। তীর রাগে দুঃখে বলল।

–আপনি হাসলেন কেন?

ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হেসে বলে।

–আমার মুখ, আমার ঠোঁট, আমার দাঁত তাই আমি হাসবো নাকি কাঁদবো সেটা একান্ত আমরা ব্যাপার তকে বলবো কেন?

তীর তেঁড়ে এসে বলে।

–আপনাকে আমি?

বলেই থেমে যায় তীর আর ইশান দু ভ্রু নাচিয়ে বুকের উপর দু হাত গুজে বলে।

–আমাকে তুই! কি হুম?

–কিছু না। সরুন আমি বাড়ি যাবো আপনার সাথে থাকার বিন্দু পরিমান কোনো ইচ্ছে নেই আমার।

তীর চলে যেতে নিবে সাথে সাথে ইশান তীরের বাহু ধরে আটকে দেয়। তীর রেগে কিছু বলতে নিবে সাথে সাথে ইশান বলে উঠে।

–একদম চুপ বেশি কথা বলবি না।

তীর সাপের মতো হাত মুচরামুচরি করে বলে।

–আমি কথা বলবই আমার মুখ, আমার ঠোঁট আমি হাজারটা কথা বলবো তাতে আপনার কি? আপনার মুখ দিয়ে তো আর আমি কথা বলছি না। তাহলে আপনি কে আমাকে কথা না বলতে বলার?

ইশান আবাক হয়ে যায় তীরের কথা শুনে। তার কথা তাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হলো এই মাএ “কি সাংঘাতিক মেয়ে”। এর মাঝে ইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ভাই আর বান্ধবীর দিকে। মানে এরা কি শুরু করেছে একে বারে টমেন জেরির মতো। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। কথার পিঠে কথা বলেই যাচ্ছে। ইশান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।

–ইশু তুই একটু বস আমরা আসছি।

ইশা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় আর তীর ইশানের হাত থেকে নিজের বাহু ছাড়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেই‌ না। এটা হাত না লৌহা কিচ্ছুই বুঝতে পারছে না একটুও নড়াতে পারছে না বেচারী। না পেরে তীর বলে উঠে।

–আমার হাতটা ছাড়ুঁন।

ইশান কাঁড়া চোখে তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।

–চুপচাপ ভেতরে চল। না হলে কিন্তু…

–না হলে কি হুম না হলে কি করবেন আপনি?

ইশান গাড় বেকিয়ে মুচঁকি হেসে তীরের কানের দিকে ঝুকে আসে। তা দেখে তীর বড় বড় চোখ করে আশেপাশে তাকায়। অন্য দিকে ইশান ফিসফিসিয়ে বলে।

–না হলে তকে কোলে করে নিয়ে যাবো। সেটা কি ভালো দেখাবে বল ভদ্র সমাজে সবার সামনে কোলে নেওয়াটা একটু বেমানান হয়ে যায় না আর তার সাথে তুইও লজ্জা পাবি। পায়ে সমস্যা থাকলে কোলে নেওয়াটা ঠিক আছে কিন্তু তুই তো একদম ফিট তাই কোলে নেওয়াটা কি ঠিক হবে। অবশ্য তুই চাইলে নিতেই….

ইশানের কথা মাঝেই তীর বলে উঠে।

–নাহ! চাই না আমি আপনার কোলে উঠতে আর না ভবিষতে কোনো দিন উঠতে চাই।

ইশান মনে মনে হাসে তীরের কথা শুনে। ভবিষতে কে কার কোলে উঠে সেটা না হয় সময় বলে দিবে। ইশান তীরের কাছ থেকে সড়ে এসে বলে।

–ওকে তাহলে তর এই ভালো পা দু’খানা কাজে লাগিয়ে ভেতরে চল।

–কিন্তু কেন যাবো হাসপাতালে?

–সে তুই গেলেই দেখতে পাবি।

দুজনেই হাঁটা ধরে হাসপাতালের ভেতরে যাওয়ার ঊদ্দেশ্যে। তীরের মনে হচ্ছে ইশান হয়তো জেনে গেছে ওর হাত কে*টে গেছে তাই এখানে নিয়ে আসে। কিন্তু এত চিন্তা করার কি আছে ওকে নিয়ে লোকটা তো আর ওকে পছন্দই করে না তাহলে এত দয়া দেখানোর মানে কি তীর কিছু পাচ্ছে না।

তীর হাটার মাঝে ইশানের বা হাতের দিকে তাকায়। কি সুন্দর করে তার ডান হাতটা ধরে রেখেছে। মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে তীর। আনমনে তীরের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। এর মাঝেই ইশানের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে।

–হাতটা কাটলি কি করে?

কেঁপে উঠে তীর তার মানে ইশান সত্যিই বুঝতে পেরে গেছে যে ওর হাত কেটেছে। তার জন্যই হাসপাতালে নিয়ে আসা এত চিন্তা ওর জন্য। ইশান আবারও বলে।

–কি হলো বল হাত কাটলি কি করে?

–আমার হাত কিভাবে কেটেছে সেটা আপনি জেনে কি করবেন?

তীরের কথায় স্পষ্ট অভিমান ফুটে উঠেছে। বড্ড অভিমান করেছে মেয়েটা বুঝতে আর বাকি নেই। ইশান মুচঁকি হেসে তীরের অভিমানটা দ্বিগুন করার জন্য বলে।

–তাও ঠিক আমি জেনে কি করবো!

তীরের মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। জেনে কি করবে মানে তাহলে জিজ্ঞেস করেছে কেন হিটলার ব্যাটা আর হাসপাতালেই বা কেন নিয়ে এসেছে দয়া দেখানোর জন্য লাগবে না এই দু’টাকার দয়া তীরের। তাই রাগী কন্ঠে বলে।

–ছাড়ুঁন বাড়ি যাবো আমি। সবাই চিন্তা করবে।

–কেউ চিন্তা করবে না ফোন করে বলে দিয়েছি আমি তাই চুপচাপ চল।

ইশান তীরকে নিয়ে তার ডাক্তার বান্ধবী আবিরা সেনের কাছে আসে। আবিরা ইশানকে এমন সময় নিজের ওর্য়াডে দেখে একটু আবাক হয় পরক্ষনে হেসে বলে।

–কি রে তুই হঠাৎ এখানে?

ইশান তীরকে অন্য চেয়ারে বসিয়ে নিজে চেয়ারে বসতে বসতে বলে।

–কেন আমি কি আসতে পারি না বুঝি?

–নাহ আসতে পারিস কিন্তু তকে তো হাজার বার বললেও আসিস না তাই একটু অবাক হয়েছি।

–একটা দরকার এসেছি।

–কি দরকার?

–ওর হাতটা ড্রেসিং করার জন্য নিয়ে এসেছি।

আবিরা তীরকে এক নজর দেখে ইশানের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করতেই ইশান বলে।

–পরে বলি আগে তুই ওর হাতটা ড্রেসিং করার ব্যবস্থা কর।

–আচ্ছা।

তীর ভ্যাবলার মতো বসে আছে। কি বলবে ইশান পরে এই মেয়েকে বুঝতে পারছে না। আবিরা হাতটা দেখে অবাক চোখে তাকায় তীরের দিকে।

–এমন বাজে ভাবে হাত কেটেছো কি করে?

তীর কিছু বলছে না শুধু একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে নিজের কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। তীরের ক্ষতটা দেখে ইশানের মাথায় যেন আসমান ভেঙ্গে পড়লো। এত বাজে ভাবে তার তীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে আর এই মেয়ে কিনা এই হাত নিয়ে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুড়ছে। ইশান ঢোক গিলে বলে।

–ওর হাতটা ভালো করে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দে আমি আসছি একটু।

বলেই এখানে থেকে তাড়াহুড়ো করে যায়। ড্রেসিং করার সময় নিশ্চয়ই তীরের কষ্ট হবে সেই কষ্ট ইশান সহ্য করতে পারবে না। তাই চলে যেতে বাধ্য হলো।

আট মিনিট পরে ইশান এসে দেখে তীরের হাত ব্যান্ডেজ করা শেষ। আবিরা ইশানকে দেখে বলে।

–এসে গেছিস।

ইশান তীরের পাশের চেয়ারটাই এসে বসে তীরের ব্যান্ডেজটার দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে। আবিরা তীরকে বলে।

–ঔষুধ লিখে দিয়েছে নিয়মিত খাবে তাহলে তাড়াতাড়ি ক্ষতটা শুকিয়ে যাবে। আর চেষ্টা করবে ক্ষত জায়গাটা না ভিজাতে কেমন।

তীর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। ইশান তীরকে বলে।

–তুই গিয়ে গাড়িতে বস আমি আসছি।

তীর চলে যায়। তীর যেতেই আবিরা বলে।

–কিহ হ্যান্ডসাম? এই কি সেই জন যার জন্য নিজেকে এখনও সিঙ্গেল বানিয়ে রেখেছেন আপনি। আর আমার বান্ধবী রিয়াকে রিজেক্ট করেছন!

ইশান মুচঁকি হেসে ছোট করে উত্তর দেয়।

–হুম।

–তাই তো বলি রিয়ার মতো এত স্মার্ট একটা মেয়েকে রিজেক্ট করার কারন কি! সামনে যদি এমন একটা মায়াবতী থাকে তাহলে তো অন্য কারোর দিকে নজর পারবেই না সে যতই সুন্দরী আর স্মার্ট হোক।

ইশান কোনো কথা বলছে না চুপচাপ আবিরা বলা কথা গুলা শুনে যাচ্ছে। আবিরাই আবার বলে।

–তো বলেছিস নিজের ভালোবাসার কথা মেয়েটাকে।

ইশান তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে।

–নাহ।

–কেন?

–সময় আসুক তারপর বলবো।

–তর সময় আসতে আসতে দেখিস পাখি না আবার অন্য কেউ নিয়ে চলে যায়।

ইশান ভ্রু-কুচকে তাকায় আবিরার দিকে। আবিরার আর বুঝতে বাকি নেই ভুল জায়াগায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। তাই পরিবেশ গরম হওয়ার আগেই ঠান্ডা করতে হবে। আবিরা মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–না মানে বলতে চাইছিলাম আসলে…

–আমি আসি এখন আবিরা আর তর নতুন লাইফের জন্য শুভ কামনা রইলো আমার তরফ থেকে।

–থাক আর শুভ কামনা জানাতে হবে না। বিয়েতে না এসে শুভ কামনা জানতে এসেছিস লাগবে না তর শুভ কামনা।

–কাজ ছিলো তাই যেতে পারি নি।

–বুঝতে পেরেছি।

–থেংক্স বুঝার জন্য আর আমি এখন আসি।

আবিরা অবাক হয়ে যায় ইশানের কথা শুনে। মানে এই ছেলে কি বুঝতে পারে নি আবিরা অভিমান করে কথাটা বলছে। এর মাঝে কি কোনো দিন পরির্বতন আসবে না। নাকি কি সবসময় এমনেই থাকবে।

ইশান বের হতেই মুখোমুখি হয় তীরের দিকে। তীরকে দেখে ইশান থতমত খেয়ে যায়। তীরকে এখানে আপতত ইশান একদমেই আশা করি নি। মেয়েটাকে কি ওদের সব কথা শুনে ফেললো নাকি।

ইশান তীরের মুখপানে তাকাতেই চমকে যায়। কেমন অসহায় চোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে রেখেছে, নাকের পাটা ফুলে উঠছে বার বার। মনে হচ্ছে যেন ভেতরের কান্নাটা আটকানোর চেষ্টা করছে। চোখ দুটোও কেমন লাল হয়ে আছে। ইশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীর তাড়াতাড়ি করে এখান থেকে চলে যায়। ইশান হতভম্ব হয়ে তীরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

#চলবে_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here