#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি
“স্বপ্নীল প্রায় তিনটি রেপ কেইসের সাথে জড়িত ছিল! গতকাল সকাল থেকেই পুলিশ তাকে হন্ন হয়ে খুঁজছিল। তাই স্বপ্নীল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। খবরটা কোনোভাবে আমার কানে আসে। তুইতো জানিস স্বাভাবিক কারণেই পুলিশদের সাথে মেলামেশা আমার! তাই সব খবর আমার কানে আসে। যদি বলি আজ ভোরের দিকে আমি স্বপ্নীলকে মেরে নাক নকশা ফাটিয়ে তাকে হসপিটালে ভর্তি করে এসেছি শুনলে কী তুই খুব রাগ করবি? কষ্ট পাবি? না-কি খুশি হবি?”
হতভম্ব সামান্তা। অদ্ভুত এক নির্বাকতায় ডুবে গেল সে। প্লে-বয় অবধি ঠিক ছিল। কিন্তু রেপিস্ট। তা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? একের পর এক ধাক্কা খেতে লাগল সামান্তা। ভাবনার বাইরে কিছু ঘটে গেলে নিজেকে সামলানোটা তখন দুষ্কর হয়ে পরে। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। নিজেকে ধাতস্থ করতে কিয়ৎক্ষণ ব্যয় করতে হলো সামান্তার। ধৈর্য্য সহ্য সঞ্চয় করে সে গলা ঝাকালো। নিশ্চল দৃষ্টি ফেলল তার উত্তরের অপেক্ষায় থাকা অধীর মিশালের দিকে। মন্থর গলায় শুধালো,
“তুমি শিওর সে রেপিস্ট?”
“শুধু শিওর নই। হিউজ প্রুভও আছে আমার কাছে। তুই চাইলে আমি শো করতে পারি।”
শান্ত ভাবমূর্তি পাল্টে মুহূর্তেই উত্তেজিত হয়ে উঠল সামান্তা। এদিক-ওদিক অস্থির দৃষ্টি ফেলে কিছু একটা খুঁজতে লাগল। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে সে ছটফটিয়ে ওঠে পা থেকে একটি হিল জুতো খুলে মিশালের হাতে তুলে দিলো!ঘটনার আকস্মিকতায় ভড়কে উঠল মিশাল। সামান্তা কী করতে চাইছে তা ভাবতেই ব্যস্ত হয়ে পরল। মিশালকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সামান্তা উদ্ভ্রান্ত গলায় চ্যাচিয়ে বলল,
“টেইক ইট। আমার গালে ঠাস ঠাস করে দুটো জুতোর বারি দাও! কেন আমি বোকার মত ঐ রেপিস্টের পাল্লায় পরলাম। দেশে কী ছেলের অভাব পরেছিল? বেছে বেছে আমার তার কাছেই যেতে হলো? আগে তো আমার শাস্তি হোক, এরপর না হয় আমি নিজ হাতে ঐ রেপিস্টকে শাস্তি দিব!”
কপাল কুঁচকালো মিশাল। বাঁ পাশের ভ্রুটি কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে সে সন্দিহান দৃষ্টি ফেলল বিস্ফোরিত সামান্তার দিকে। বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পেল না-কি তার? অতি শোকে আবার পাগল টাগল হয়ে গেল না তো? যদিও মিশাল অবগত, রেগে গেলেই যে সামান্তা নিজেকে হিট করতে পছন্দ করে। তবে অতিরিক্ত রাগ যে মানুষের ক্ষতি বয়ে আনে প্রতিবারই কী তা বুঝিয়ে দিতে সামান্তাকে? মনের সন্দেহ দূর করার জন্য মিশাল তীক্ষ্ণ গলায় ক্রোধে জর্জরিত সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আর ইউ শিওর স্যাম? তুই চাইছিস আমি তোকে হিট করি?”
“হ্যাঁ শিওর! মা-বাবার জায়গায় তো এখন তুমিই আমার গার্ডিয়ান। অভেয়সলি আমাকে মারার রাইট আছে তোমার। প্লিজ হিট মি মিশাল ভাই।”
সামান্তার এহেন পাগলামি দেখে নাজেহাল হয়ে গেল মিশাল। মুহূর্ত কয়েক পর ওষ্ঠদ্বয়ে কিঞ্চিৎ ব্যগ্র হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলল সে! শ্লেষাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো উগ্র সামান্তার দিকে। সামান্তাকে আরও একবার যাচাই করার জন্য বলল,
“পরে কিন্তু বলতে পারবিনা যে আমি ইচ্ছে করে তোকে মেরেছি। শিওর হয়ে বল!”
অবিচল দৃষ্টিতে সামান্তা তাকিয়ে রইল তাকে মজার ছলে পর্যবেক্ষণ করতে থাকা হাসোজ্জল মিশালের দিকে। সামান্তা তার সিদ্ধান্তে অটল। মিশালের কাছে তার আচরণ উদ্ভট মনে হলেও এটাই সত্যি! একরোঁখা ও জিদ্দি গলায় সামান্তা বলল,
“বলবনা। তুমি দাও তো। আমি চোখ বন্ধ করছি। যতক্ষণ অবধি কেউ আমাকে হিট না করবে আমার রাগ কমবেনা। প্লিজ হিট করো আমায়! এই দেখো আমি চোখ বুজে নিচ্ছি।”
তৎক্ষণাৎ চোখ জোড়া বুজে নিলো সামান্তা। সম্পূর্ণ প্রস্তুত সে নিজেকে হিট করানোর জন্য! যদিও মিশাল সামান্তাকে হিট করবেনা তবুও সে সামান্তাকে ক্ষেপানোর জন্য উস্কানিমূলক গলায় বলল,
“ওকে রেডি। এখনি দিচ্ছি, দিলাম কিন্তু।”
চোখমুখ খিঁচে রইল সামান্তা। মার খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহ তার। যদিও তার মধ্যে ভয়ভীতি একটু হলেও কাজ করছে। আচানক নিষ্পলক দৃষ্টিতে সামান্তার সিটিয়ে থাকা চঞ্চলা মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইল মিশাল! কী যে তীব্র ছটফটানি কাজ করছে সামান্তার মধ্যে। একমাত্র ভীত অবস্থাতেই সামান্তাকে শান্ত, শিষ্ট ও ভীষণ মিষ্টি দেখায়! যদিও খুব কম সময় সামান্তাকে এই রূপে দেখা যায়। ডর ভয় খুবই কম উপস্থিত সামান্তার মধ্যে। আজ যেহেতু সামান্তা নিজেই এই অনবদ্য সুযোগ করে দিলো সেই সুযোগ-ই বা মিশাল হাতছাড়া করবে কেন?
মিশালের মানসিক শান্তি ও চোখ জোড়ানো প্রশান্তিতে মুহূর্তের মধ্যেই ব্যাঘাত ঘটল! সুখের সময় বেশীক্ষণ স্থায়ী হলোনা। অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটল। মিশাল ও সামান্তা কেউ এখনও সেই ব্যক্তিটির উপস্থিতি টের পেলোনা। কারণ, তারা দুজনই দুজনের খেয়ালে ব্যস্ত। মিশালের হাতে জুতো ও সামান্তার ভীতিকর অবস্থা দেখে সেই ব্যক্তিটি ক্রমশ ক্ষিপ্র হয়ে উঠল। বীরদর্পে তেড়ে এলো সে মিশালের দিকে। সপাটে মিশালের গালে চড় বসাতে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হলোনা তার! মুহূর্তেই ধ্যান ভেঙে ভড়কে উঠল মিশাল। রক্তচক্ষু সাহিলের! মিশালকে শুধু চড় মেরেই ক্ষান্ত হলোনা সে। দেয়ালের সাথে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতেও দ্বিধাবোধ করলনা। হতভম্ব দৃষ্টিতে মিশাল তাকিয়ে রইল হিংস্রাত্নক সাহিলের দিকে। সাহিলের এহেন আক্রমনাত্নক আচরণে অবাক না হয়ে পারলনা সে।ঘটনার আকস্মিকতায় তৎক্ষণাৎ চোখ মেলে তাকালো সামান্তা। ইতোমধ্যেই সাহিল ছুটে গিয়ে নির্বাক মিশালের শার্টের কলার চেপে ধরল। চোয়াল উঁচিয়ে তাকে শাসিয়ে বলল,
“এত বড়ো সাহস তোর? একা পেয়ে তুই সামান্তাকে টর্চার করছিস?”
অন্যায়ভাবে সাহিলের থেকে চড়-থাপ্পর খাওয়ার পরেও মিশাল নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল। সাহিল তার বড়ো ভাই সেই হিসেবে যথেষ্ট সম্মান ও ভদ্রতা বজায় রেখে নম্র গলায় বলল,
“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ভাইয়া। সামান্তার সাথে আমি ফান করছিলাম। সিরিয়াস কিছু নয়।”
মিশালের মুখের কথাও কেন যেন বিশ্বাস করতে পারলনা সাহিল। মাথায় রক্ত ওঠে গেল তার। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ তার মিশালের দিকে। তিরিক্ষিপূর্ণ মেজাজ নিয়ে সে পুনরায় মিশালকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার পূর্বেই সামান্তা হনহনিয়ে এগিয়ে এলো সাহিলের দিকে। সবার বড়ো কাজিন ভাই হিসেবে যদিও সাহিলকে বড্ড সম্মান করে ও ভয় পায় সামান্তা তবুও সাহিলের অনৈতিক আচরণে সে কড়া গলায় সাহিলের সাথে কথা বলতেও পিছপা হলোনা! খরখরে গলায় সাহিলকে বলতে বাধ্য হলো,
“তুমি অকারণেই মিশাল ভাইয়ার গাঁয়ে হাত তুললে সাহিল ভাইয়া। তুমি যেহেতু প্রথম থেকে এখানে উপস্থিত ছিলেনা এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও অবগত ছিলেনা সেহেতু তোমার উচিৎ হয়নি অকারণেই মিশাল ভাইয়ার গাঁয়ে এসে হাত তোলার। দোষটা একচুয়েলি আমারই ছিলাম। আমিই মিশাল ভাইকে বলেছিলাম আমাকে হিট করার জন্য।”
তাৎক্ষণিক মিশালের শার্টের কলারটি ছেড়ে দাড়ালো সাহিল। সামান্তার দিকে ঘুরে দাড়ালো সে। হটকারি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রুষ্ট সামান্তার দিকে। নির্বোধ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আর ইউ ক্রেজি সামান্তা? তুই নিজেই নিজেকে হিট করাতে চেয়েছিলি?”
মেজাজ হারানোর পূর্বেই শার্টের কলার ঠিক করে হুড়মুড়িয়ে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো মিশাল। রাগ, দুঃখ, যন্ত্রণা এই তিনের সংমিশ্রণে তার হাঁসফাঁস লাগছিল দুজনের মধ্যে অবস্থান করতে! উদ্বিগ্ন হয়ে মিশালকে পিছু ডাকতে চাইল সামান্তা। তবে সামান্তার মুখোমুখি দাড়িয়ে সামান্তাকে থামিয়ে দিলো সাহিল! তেজী গলায় সামান্তাকে বলল,
“লেট মি আনসার সামান্তা। এভাবে নিজেকে হিট করতে চাওয়ার কারণ কী?”
সাহিলের অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে অকপট দৃষ্টি ফেলল সামান্তা। চেয়েও নিজের রাগকে সংযত করতে পারছিলনা সে! মিশালের গাঁয়ে হাত তোলাটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। তাই নম্রতা ভদ্রতা বিসর্জন দিয়ে সে সোজাসাপটা গলায় প্রত্যত্তুরে বলল,
“সরি টু সে ভাইয়া। এটা আমার ও মিশাল ভাইয়ার পার্সোনাল ম্যাটার। তুমি প্লিজ এর মাঝখানে এসোনা!”
চূড়ান্ত অপমান বোধ করল সাহিল! আর এক মুহূর্ত ও এখানে অবস্থান করার ইচ্ছে হলোনা সামান্তার। দ্রুত পায়ে হেঁটে সে সাহিলকে উপেক্ষা করে দরোজার চৌকাঠে পা বাড়ালো। ঘোর অপমান হজম করেও সাহিল তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে সামান্তাকে অধীর গলায় ডাকল। বলল,
“হেই স্টপ? কোথায় যাচ্ছিস?”
থমকালো সামান্তা। তবে পিছু ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলনা। সঙ্গত কারণেই সাহিলকে সহ্য হচ্ছেনা তার। তাই একই জায়গায় ও একই ভঙ্গিতে দাড়িয়ে থেকেই সে বিরক্তিকর স্বরে বলল,
“হসপিটালে।”
“হসপিটালে? কিন্তু কেন?”
“স্বপ্নীলকে দেখতে!”
স্বপ্নীলের নাম শোনা মাত্রই রাগে তেতে উঠল সাহিল! গিজগিজিয়ে ওঠে সে সামান্তার সম্মুখস্ত হলো। সূচালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আগ্রাসী সামান্তার দিকে। বদরাগী গলায় শুধালো,
“এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও তুই ঐ রেপিস্টটাকে দেখতে যাবি?”
“দেখতে নয়। তাকে খু”ন করতে যাব আমি!”
সাহিলকে পুনরায় উপেক্ষা করে সামান্তা ছুটল সামনের দিকে। ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল সাহিল। পুনরায় পিছু ডেকে সামান্তাকে বলল,
“হেই ওয়েট সামান্তা। আমিও আসছি।”
সামান্তার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে গাড়িতে অপেক্ষা করতে লাগল সাহিল। তবে মিশালকে বাড়িতে কোথাও খুঁজে পেলোনা সামান্তা। পুরো বাড়িতে হন্ন হয়ে খুঁজেও না! রাগ করে কোথায় চলে গেল মিশাল? নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে সামান্তার। তার কারণেই তো মিশালের গাঁয়ে হাত তুলেছে সাহিল। যদিও সামান্তা জানে সাহিল কখনও তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইবেনা মিশালের কাছে! খুবই দাম্ভিক প্রকৃতির সাহিল। ছোটো হোক কিংবা বড়ো হোক কারো কাছে নত হওয়ার স্বভাব নেই তার! কাজিন মহলের মধ্যে বড়ো ভাই হিসেবে তার মধ্যে অহংকারের মাত্রাটাও বেশি। যা সামান্তার মোটেও পছন্দ নয়।
এই মৃহূর্তে মিশালের জন্য সত্যিই তীব্র খারাপ লাগা কাজ করছে সামান্তার। ক্ষণে ক্ষণে মনটা কেমন ভারি হয়ে উঠছে। ফোনটা ভেঙে যাওয়ার দরুন মিশালের সাথেও আপাতত যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা তার। ইতোমধ্যেই ড্রইংরুমে শাহনাজ বেগমের সম্মুখীন হলো সামান্তা। সামান্তাকে এক ঝলক দেখামাত্রই জোরপূর্বক হাসলেন শাহনাজ বেগম। তড়িঘড়ি করে তিনি সামান্তাকে টেনে নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসলেন। একপ্রকার ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় সামান্তা তব্দিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শাহনাজ বেগমের দিকে। এত অস্থিরতার কারণ কী শাহনাজ বেগমের? বাড়ির সদর দরজার দিকে একবার ছটফটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শাহনাজ বেগম এবার জিজ্ঞাসু সামান্তার দিকে তাকালেন। ফিসফিসিয়ে বললেন,
“এই? সাহিল কেন এসেছিল রে সামান্তা?”
ভ্রু যুগল কুঁচকালো সামান্তা। কপালের ভাজে ফুটিয়ে তুলল একরাশ তিক্ততা। তার চাচীর অদ্ভুত প্রশ্নে অবাক হলো সে। সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ল,
“হঠাৎ কেন এই প্রশ্ন চাচী? সাহিল ভাই কী কোনো কারণ ছাড়া তার মামার বাড়িতে আসতে পারেনা?”
থতমত খেয়ে গেলেন শাহনাজ বেগম! পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য তিনি অসন্তোষ হাসলেন। প্রত্যত্তুরে বললেন,
“পারে। পারবেনা কেন? ভাবলাম তোকে নিতে এলো। তাই আর কী!”
“তোমার হঠাৎ এমন মনে হলো কেন চাচী? একচুয়েলি তোমার মনের ভাব আমি বুঝতে পারছিনা। একটু ডিটেলে বলবে প্লিজ?”
“এত ডিটেলে ফিটেলে কিছু বলতে পারবনা আমি। শোন? তোকে আমি গার্ডিয়ান করে এখানে এনেছি তাই তুই আমার কাছেই আমানত হিসেবে থাকবি। কেউ যেতে বললেও তার সাথে কোথাও যাবিনা! আমার ছেলে মিশালের মতো তো আর সব ছেলেরা হয়না! কথাটা খারাপ শোনা গেলেও এটাই সত্যি যে, সাহিলকে আমার কোনোদিক থেকেই সভ্য মনে হয়না! তুই আমার বাড়িতে থাকলেই নিরাপদে থাকবি ব্যস।”
শাহনাজ বেগমের কুচুটে কথায় অসন্তোষ প্রকাশ করল সামান্তা। হাজার হলেও সাহিল তার ফুফুর ছেলে। অতিরিক্ত রাগী, অহংকারী ও দাম্ভিক হতে পারে সাহিল তবে অসৎ চরিত্রের নয়। খরখরে গলায় সামান্তা তার চাচীকে বলল,
“দেখো চাচী। আমার ফুফাতো ভাই সম্পর্কে কোনো বাজে কথা আমি তোমার কাছ থেকে শুনতে রাজি নই। অন্য কোনো কথা থাকলে বলো। সাহিল ভাইয়ের প্রসঙ্গে যেতে আমি আগ্রহী নই।”
মনে মনে সামান্তার উপর ক্ষোভ ঝারতে লাগলেন শাহনাজ বেগম! তবে তা বাইরে প্রকাশ করলেননা। এতে সামান্তার মন নষ্ট হতে পারে তাই। মুখে বিষ নিয়ে বিড়বিড় করে তিনি বললেন,
“উহ্। দরদ একেবারে উতলে পরছে ফুফাতো ভাইয়ের জন্য। কী ভেবেছে তোর ফুফু ফুফারা? তাদের চাল আমি বুঝিনা? ভাবছে তোকে সাহিলের গলায় ঝুলিয়ে একাই তোদের সম্পত্তি ভোগ করবে! কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে তো তা হতে দিবনা। যেকোনো ক্রমেই হোক আমি তোকে মিশালের গলাতেই ঝুলাব! ইট’স মাই চ্যালেঞ্জ!”
মনে ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও সামান্তার মাথায় আদুরে হাত বুলাতে লাগলেন শাহনাজ বেগম। ভাবমূর্তি নিমিষেই পাল্টে তিনি নরম স্বরে বললেন,
“আমার কথায় রাগ করিসনা রে মা। তোর ভালোর জন্যই কথাগুলো বলা। যাই হোক তুই যেহেতু তোর ফুফাতো ভাইয়ের বদনাম শুনতে চাইছিসনা তো আমিও আর কিছু বলবনা। তবে সাহিলের সাথে তোর কোথাও বের হওয়াটা আমার পছন্দ হচ্ছেনা! তোর যদি কোথাও বেরুতে হয় তো তুই মিশালের সাথে বের হ। সাহিলের সাথে কেন?”
শাহনাজ বেগমের কথায় এবার সম্মতি জানালো সামান্তা! যদিও সামান্তা চাইছিল মিশালের সাথেই বের হতে। তবে মাঝখান থেকে সাহিল এসে তো সব ঘেটে ‘ঘ’ করে দিলো। বেশ উচ্ছ্বাস নিয়ে সামান্তা তার চাচীকে বলল,
“তাহলে এক কাজ করো চাচী। মিশাল ভাইকে একটা কল দাওতো। আমার ফোনটা কাল ভেঙে গেছে তাই আমি মিশাল ভাইয়ার সাথে কন্ট্রোক্ট করতে পারছিনা।”
খুশিতে ফেটে পরলেন শাহনাজ বেগম। সামান্তার মুখ থেকে তো এই কথাটিই শুনতে চাইছিলেন তিনি! উদ্দেশ্য সফল হলো তার। তাড়াহুড়ো করে তিনি মিশালের নাম্বারে কল করলেন। প্রথম কলটি কিছু সেকেন্ড পর্যন্ত বেজে যাওয়ার পর অবেশেষে মিশাল কলটি তুলল। উৎফুল্ল হয়ে শাহনাজ বেগম হ্যালো বলার পূর্বেই সামান্তা তার চাচীর হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো! ব্যস্ত গলায় সে ফোনের ঐ প্রান্তে থাকা মিশালকে বলল,
“এই মিশাইল্লা! কোথায় তুমি? না বলে কোথায় চলে গেলে?”
“তোর সাথে কথা বলার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার। কল কাট!”
বেশ ক্ষিপ্রতা দেখিয়ে সামান্তার মুখের উপর কলটি কেটে দিলো মিশাল। সরি বলার সুযোগটি পর্যন্ত দিলোনা সামান্তাকে!
#চলবে….?