বুকে_যে_শ্রাবণ_তার #পর্ব_৬ #নিশাত_জাহান_নিশি

0
301

#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

ব্যগ্র হাসল মিশাল। সেই হাসিতে গাঁয়ে জ্বালা ধরে গেল সামান্তার। রাগে রি রি করে সে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। দরোজা খুলতেই আচমকা ভড়কে উঠল। বদরাগী ভাব নিয়ে শাহনাজ বেগম তার সামনে দাড়িয়ে! মিশালকে এবার কী করে বাঁচাবে সে?

বিচলিত হলোনা সামান্তা। বরং নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টা করল। বিপদের সময় দুর্বল না হওয়াই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। যতদূর সম্ভব বুকে সাহস রেখে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। উদ্যোগী হয়ে তাৎক্ষণিক দরোজা থেকে সরে দাড়ালো সামান্তা। রুমের দরোজাটি বাইরে থেকে বন্ধ করার পূর্বে গলা ঝাকিয়ে রুমের ভেতরে থাকা রুমকি ও মিশালকে সতর্ক করল! বুকের ভেতরটা টিউটিউ করতে লাগল রুমকি ও মিশালের। কাঁথা টেনে মিশাল ক্ষত-বিক্ষত শরীরটিকে ঢেকে লম্বা হয়ে শুয়ে পরল। রুমকি দৌড়ে গিয়ে মিশালের বাথরুমে ঢুকে পরল! তাগিদ দেখিয়ে সবাই সবার অবস্থান ঠিক করল।

পরিস্থিতি ঠিকঠাক হতেই জোরপূর্বক হাসল সামান্তা। ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা তার চাচীকে মলিন স্বরে বলল,

“ঘুম আসছিলনা চাচী। তাই একটু হাঁটতে হাঁটতে এদিকে এসেছিলাম। বাই দ্য ওয়ে তুমি এখানে কী করছ চাচী?”
“তুই এখানে যে কারণে এসেছিস, আমিও ঠিক সেই কারণেই এখানে এসেছি।”
“ওহ্ আচ্ছা। তার মানে তোমারও ঘুম আসছিলনা?”
“ঘুম আসবে কী করে? আমিতো চোর ধরার অপেক্ষায় ছিলাম!”
“মানে? চোরটা আবার কে?”
“মিশালের রুমে ঢুকেছিলি তুই?”
“কককই? নানানা তো!”
“দেখি সর সামনে থেকে।”
“কেকেন?”
“চোর ধরব!”

বেশ তাড়া দেখিয়ে শাহনাজ বেগম রুমের দরোজাটি খোলার পূর্বেই সামান্তা তার চাচীকে থামিয়ে দিলো। অস্থিরতা এবার আটকে রাখতে পারলনা সে। হাত-পা কচলে আমতা আমতা স্বরে বলল,

“কী দরকার চাচী? এই মাঝরাতে মিশাল ভাইকে বিরক্ত করার?”
“মিশাল বাড়ি ফিরল কি-না তা আমাকে দেখতে হবে। তুই সর সামনে থেকে।”
“একচুয়েলি আমি ঐসময় মিথ্যে বলেছিলাম চাচী! মিশাল ভাই তার রুমেই আছে। নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে! আমার মনে হয়না এই মুহূর্তে তাকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবে বলে।”

ভ্রুযুগল খরতর ভাবে কুঁচকে নিলেন শাহনাজ বেগম। কৌতূহলী হয়ে উঠলেন তিনি। সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“তুই এই মাঝরাতে মিশালের রুমে কী করছিলি?”
“ঐযে দেখতে এসেছিলাম মিশাল ভাই ফিরল কি-না।”
“বাহ্। আমার ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তা করিস দেখছি! শুনে খুব ভালো লাগল।”

মুখ টিপে হাসলেন শাহনাজ বেগম! অস্বস্তি বোধ হতে লাগল সামান্তার। ভুল জায়গায় ভুল কথা শুনতে হচ্ছে তার। তাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল সে। দ্রুত গলায় চাচীকে বলল,

“চলো চাচী আমরা আমাদের রুমে ফিরে যাই। এই মাঝরাতে কারো রুমের দরোজার সামনে দাড়িয়ে তাকে ডিস্টার্ব করা ঠিক নয়।”
“যাচ্ছি। তবে তুই শিওর তো মিশাল তার রুমে?”
“হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর চাচী। প্লিজ তুমি চলো তো।”
“দেখিস আবার মিথ্যে বলিসনা কিন্তু।”
“তোমার সাথে মিথ্যে বলে আমার লাভ?”

শাহনাজ বেগমকে কোনো রকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে সামান্তা তাঁকে নিয়ে জায়গা থেকে সরে গেল। এরপর যে যার রুমে ফিরে গেল। রুমের দরোজা আটকে সামান্তা স্বস্তির শ্বাস ফেলল। বুকে হাত রেখে চোখ দুটো বুজে বিড়বিড় করে বলল,

“থ্যাংকস গড। ফাইনালি মিশাইল্লাকে বাঁচাতে পারলাম!”

থমকালো সামান্তা। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবল। বেশ চিন্তিত স্বরে বলল,

“কিন্তু মিশাইল্লাকে আমি কেন বাঁচালাম? তাকে তো আমার বাঁচানোর কথা ছিলনা! যাই হোক, যা করেছি ভালো করেছি। নেক্সট টাইম তাকে খোঁটা দেওয়া যাবে! যদিও উপকার করে সেই উপকার নিয়ে কাউকে খোঁটা দিতে নেই। কিন্তু তবুও আমি খোঁটা দিব। বাকিদের মতো অতো ভালো মানুষ আমি নই!”

বিড়বিড় করতে করতে সামান্তা তার বিছানায় শুয়ে পরল। এই মুহূর্তে একটি মোবাইলের তীব্র অভাব বোধ করছে সে। রাগের মাথায় সেদিন মোবাইলটা ভেঙে মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ করেনি সামান্তা। তবে যত শীঘ্রই সম্ভব মোবাইলটি সারাতে হবে তার। কাল একবার মোবাইল রিপেয়ার দোকানে যেতে হবে। এভাবে মোবাইল টোবাইল ছাড়া থাকা যায় না-কি? এতিম এতিম মনে হয়।

চোখ বুজতেই চোখে শান্তির ঘুম ধরা দিলো সামান্তার। অন্যদিকে রুমকি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। দরোজার দিকে তাকিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। সত্যিই সামান্তা তাদের বড়ো বাঁচা বাঁচিয়ে দিলো। সেইক্ষেত্রে সামান্তার শুকরিয়া আদায় করতেই হয়। মিশালও তখন গাঁ থেকে কাঁথা ফেলে ব্যথাযুক্ত শরীর নিয়ে খাটের কার্ণিশে ড্যাশ দিয়ে বসল। চোখমুখ কুচকে ক্ষীণ স্বরে উহ্ করে উঠল। মিশালের এই মুমূর্ষু অবস্থা দেখে ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো রুমকির। উদগ্রীব হয়ে মিশালের পাশে বসল। আলতো হাতে মিশালের কাটাছেঁড়া জায়গাগুলোতে পুনরায় মলম লাগাতে লাগল। চোখ তুলে রুমকি ব্যথায় ছটফট করতে থাকা মিশালের দিকে একবার নিথর দৃষ্টিতে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ল,

“এসব আর কতদিন ভাইয়া? প্লিজ এবার একটা চাকরী খুঁজে নাও। জীবন মরণ নিয়ে খেলা বাদ দাও।”
“সিরিয়াসলি রুমকি? তুইও এই কথা বলছিস? বাবা কখনও এই পেশা ছাড়তে পেরেছে বল? বাবার ছেলে হয়ে আমি কীভাবে এই পেশা ছাড়ব?”
“বাবাকে দেখেও তোমার শিক্ষা হয়নি ভাইয়া? লাস্ট বাবা যখন বাবার বুকে গুলি বিঁধল এরপর থেকেই কিন্তু বাবা ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে থাকে। বাবার চিকিৎসার পেছনে আমাদের সব সহায় সম্পত্তি বিক্রি করতে হয়েছে। তখন না হয় সম্পত্তি ছিল বলে আমরা সব বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু এখন তো আর কিছু অবশিষ্ট নেই ভাইয়া। আল্লাহ্ না করুক, তোমারও যদি বাবার মতো অবস্থা হয় তখন আমরা তোমার চিকিৎসার খরচ কীভাবে বহন করব ভাইয়া?”

হেয়ো হাসল মিশাল। রুমকি দিকে নিশ্চল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তাচ্ছিল্যসূচক গলায় বলল,

“তখন প্রয়োজনে আমাকে জ্যান্ত দাফন করে আসবি! এমনিতেও মা আমার সাথে তা-ই করবে! তাই আমার সাথে কখন কী ঘটবে এসব নিয়ে আমি ভাবিনা।”
“মায়ের কথা বলে বলে সবসময় আমাকে দুর্বল করে দাও কেন ভাইয়া? সুযোগ বুঝে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে খুব মজা পাও?”
“জানিস আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি।”
“কী জিনিস?”
“ইদানিং তুই বড়ো পাকা পাকা কথা বলা শিখে গেছিস। মায়ের মত আচরণ করছিস! বেঁচে থাকলে আমার মা ও হয়ত এভাবেই আমাকে শাসন করত, আদর করত, যত্ন করত!”

কান্নার মাঝেও ফিক হেসে দিলো রুমকি। আনন্দ অশ্রু ঝরে পরল তার চোখ বেয়ে। অতি প্রত্যাশিত কথাটিও মানুষকে মাঝেমধ্যে অবাক করে। অদ্ভুত এক সুখ দেয়। মিশাল যে তাকে বাবার মতো ছায়া দিয়ে আসছে তা কী মিশাল জানে? বাবা মারা যাওয়ার পর মিশালই হলো তার সবচেয়ে ভরসার জায়গা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেউ একজন। জায়গা থেকে ওঠে দাড়ালো রুমকি। মিশালের দিকে কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলল,

“কেন? বোন কী মায়ের মতো হতে পারেনা?”

গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল রুমকি। প্রস্থান নেওয়ার পূর্বে রুমের লাইট নিভিয়ে গেল। কোমল স্বরে মিশালকে উদ্দেশ্য করে বলে গেল,

“ঘুমিয়ে পড়ো ভাইয়া। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই মা হয়ত তোমার রুমে এসে হানা দিবে! এইটুকু সময়ের মধ্যে নিজেকে যতটুকু পারো প্রস্তুত করে নাও।”

চলে গেল রুমকি। ম্লান হাসল মিশাল। ভাগ্য করে একটা বোন পেয়েছে সে! উপর ওয়ালা যে সবদিক থেকে মানুষকে মা’রে না তার জ্বলন্ত প্রমাণ মিশাল নিজেই। কাঁথা টেনে শুয়ে পরল মিশাল। শরীরে এত কাটা ছেঁড়ার দাগ যে, কোনোভাবেই শুয়ে শান্তি পায়না সে! শরীরের সব জায়গাতেই ব্যথা তার। তবুও মানিয়ে নিতে হয়। পুরুষ মানুষের এত আরামের প্রয়োজন হয়না। তাদের ভেতর যেমন শক্ত, বাহিরও তেমন। হয়ত এজন্যই তারা সব পরিস্থিতিতেই মানানসই। দুঃখ ঢাকতে পারদর্শী।

____________________________________

সকাল সকাল মজার ঘুমটা ভেঙে গেল সামান্তার। ভোরের দিকেই তো চোখ লেগেছিল তার। টুকটাক হাবিজাবি স্বপ্নও দেখছিল। তবে, কী স্বপ্ন দেখছিল মনে নেই! ভোরের স্বপ্ন দেখার এই এক জ্বালা। কিছুতেই মনে রাখা যায়না সেই স্বপ্ন। তবুও আরামের ঘুমে কেউ এভাবে এসে ব্যাঘাত ঘটায়? সাইফার হাঁকডাক ও ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙল সামান্তার। আচ্ছন্ন নেত্রযুগল মেলে তাকালো উদ্বিগ্ন সাইফার দিকে। মুহূর্তেই শঙ্কিত হয়ে উঠল সামান্তা। এই সাত সকালে তার মেঝো বোন হঠাৎ এই বাড়িতে? সাংঘাতিক কিছু ঘটে গেল না তো? সামান্তাকে চোখ মেলতে দেখে সাইফা ব্যস্ত হয়ে উঠল। বিচলিত গলায় বলল,

“আপু প্লিজ আমাকে বাঁচাও।”
“কেন? কী হয়েছে?”
“সাহিল ভাইয়া আমার জন্য সম্বন্ধ এনেছে!”
“হোয়াট?”
“আজব! এভাবে চমকাচ্ছ কেন?”
“এইমাত্র কী বললি তুই?”
“সাহিল ভাইয়া অন্য কারোর হয়ে আমার জন্য সম্বন্ধ এনেছে!”
“কী যে করিসনা। বুঝিয়ে বলবি তো না-কি?”
“প্লিজ কিছু একটা করো আপু। আমাকে বাঁচাও।”

হামি তুলে শোয়া থেকে ওঠে বসল সামান্তা। গাঁ ছাড়া ভাব তার। সাইফার সমস্যাটিকে সে সমস্যা হিসেবে দেখলই না! বরং ধীরেসুস্থে থেমে থেমে বলল,

“এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তোকে আমার কাছে আসতে হলো?”
“হাউ স্ট্রেঞ্জ আপু। এটা তোমার কাছে সামান্য ব্যাপার মনে হলো?”
“আরে চিল। এত ভয় পাচ্ছিস কেন? মা-বাবা নিশ্চয়ই সাহিল ভাইয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছে। ঘরে বিবাহযোগ্য বড়ো মেয়ে থাকতে তাঁরা মেঝে মেয়েকে নিশ্চয়ই বিয়ে দিবেনা।”
“তাঁরা তোমাকে নিয়ে ভাবছেইনা আপু! অসন্তুষ্ট তোমার উপর। এখন তাঁদের চিন্তা শুধু আমাকে ও সামিয়াকে নিয়ে।”
“আবেগের বশে একটা ভুল করে ফেলেছি বলে তাঁরা আমাকে মন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে তা তো হতে পারেনা। বলে দিস তাঁদের রক্ত কিন্তু আমার শরীরেও বইছে। এত সহজে আমিও হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নই।”

সাংঘাতিক রেগে ওঠে সামান্তা শোয়া থেকে ওঠে বসল। কাঁকড়া বেন্টের সাহায্যে লম্বা ও ঘনগোছা চুলগুলো বাঁধল। হামি তুলে রুম থেকে বের হতে হতে শান্ত সুরে সাইফাকে বলল,

“তুই একটু বস। আমি আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছ? বলে তো যাও।”
“বিপদে পরলে আমি যাকে আগে স্মরণ করি, তার কাছেই যাচ্ছি!”

ফোঁস করে শ্বাস ফেলল সাইফা। বিছানার চাদর খামচে ধরল। বিড়বিড় করে বলল,

“নিশ্চয়ই মিশাল ভাইয়ার কাছে যাচ্ছে! এই আপুটাও হয়েছে একটা ব’দ! সবসময় মিশাল ভাইয়াকে সবকিছুতে জড়াবে। ধরা পরে গেলে আবার সুযোগ বুঝে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে নিবে।”

মিশালের রুমের বাথরুমের সামনে দাড়িয়ে সামান্তা। রীতিমত বাথরুমের দরোজায় কান পেতে সে গভীর মনোযোগ দিয়ে যেন বিশেষ কিছু একটা শ্রবণ করছে। বাথরুমের ভেতর থেকে ভেসে আসছে কাপড় কাচার শব্দ! দরোজায় কান ঠেকিয়ে রেখেই সামান্তা দরোজায় টোকা মারল। মৃদুস্বরে বলল,

“মিশাল ভাই? আর ইউ হেয়ার?”

হকচকিয়ে উঠল মিশাল! কাপড়গুলো বালতিতে তুলে রাখল। মোট দু-বালতি কাপড় ভিজিয়ে সে। এক বালতি হলো তার নিজের প্যান্ট শার্ট,অন্য বালতিতে তার মা শাহনাজ বেগম ও রুমকির কাপড়চোপড়! ভোরবেলাতে এসেই শাহনাজ বেগম কাপড়চোপড় গুলো ধুঁতে দিয়ে গেছে মিশালকে। বাহানা হিসেবে বলে গেছে রুমকির শ্বাসকষ্ট বেড়েছে! শাহনাজ বেগমেরও বাতের ব্যথা বেড়েছে। তাই তাদের পক্ষে সম্ভব নয় কাপড়চোপড় গুলো ধোঁয়ার। মিশাল যেন ধুঁয়ে দেয়। আপত্তি থাকা সত্ত্বেও মিশাল মুখের উপর না করতে পারেনি! তার মতে, মা মা-ই হয়। সৎ মা হলেও সে মা-ই। মা -ই হলো পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ, ভালো রাখার মানুষ। কখনও মায়ের সাথে বেয়াদবি, অসম্মান কিংবা তর্ক করা যাবেনা। তাইতো আহত শরীর নিয়েই তার কাপড়চোপড় ধুঁতে আসা।

উন্মুক্ত শরীর মিশালের। গাঁয়ে সাবানের ফেনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই অবস্থাতে সামান্তা তাকে দেখলে নির্ঘাত সব গোপন তথ্য টের পেয়ে যাবে! তাকে আচ্ছেমত ক্ষেপাবেও। গাঁয়ে লেগে থাকা ফেনাগুলো দু’হাত দ্বারা ঝেরে ফেলে দিলো মিশাল। দরোজা ধাক্কানোর আওয়াজও ক্রমশ বাড়তে লাগল। বিরক্ত হয়ে উঠল মিশাল। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে ঠিকঠাক করে বাথরুমের দরোজা খুলে বের হয়ে এলো। তখনি বিষম খেয়ে দরোজা থেকে সরে দাড়ালো সামান্তা। মিশালের থেকে একটুখানি দূরে গিয়ে দাড়ালো। বাইরে থেকে বাথরুমের দরোজাটিতে খিল লাগিয়ে মিশাল ভ্রু কুঁচকে সামান্তার দিকে তাকালো। বুকের উপর দু’হাত গুজে রুক্ষ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“আবারও এসেছিস আমাকে বিরক্ত করতে?”
“আগে বলো তুমি বাথরুমে কী করছিলে?”
“ননসেন্স। বাথরুমে মানুষ কী করতে যায়?”
“ওহ হ্যাঁ তাইতো। আমিতো ভাবছিলাম তুমি হয়ত মেয়েদের মত নিজের কাচছিলে!”

মুখ টিপে হাসল সামান্তা। রাগে গাঁ পিত্তি জ্বলে গেল মিশালের। সামান্তার মাথায় ঠোয়া মারতে বাধ্য হলো সে! গিজগিজ করে বলল,

“নিজের কাজ নিজে করা ভালো ওকে? রাক্ষসীর মতো হাসিস না।”

রেগে গেল সামান্তা। হাসি থামিয়ে রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো মিশালের দিকে। এক কদম এগিয়ে এলো মিশালের দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এই তুমি মারলে কেন আমাকে? আর রাক্ষসীই বা কাকে বললে?”
“তুই ছাড়া তো আমি আশেপাশে আর কাউকে দেখছিনা। নিশ্চয়ই তোকে বলেছি। সিক্স সেন্স এত দুর্বল কেন তোর?”
“মিশাল ভাইয়া ভালো হচ্ছেনা কিন্তু। তুমি আমাকে অপমান করছ ইভেন মারধরও করছ।”
“সামান্য ছুঁয়েছি মাত্র। এতেই এত ব্যথা লেগে গেল? কাল যেন কী বলছিল আমাকে? তোরা মেয়েরা দুর্বল নস?”
“মাথামোটা কোথাকার। আমি এই দুর্বলতার কথা বলিনি।”

মুখটা কুঁচকে নিলো সামান্তা। গম্ভীর ভাব নিয়ে মিশালের দিকে তাকালো। মাঝেমধ্যে মেরে ধরে সামান্তাকে রাগাতে বেশ লাগে মিশালের! মায়া মায়া অনুভব হয়! আদুরে হাতে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। এসব ভাবতেই হাতটা পেছনের দিকে নিয়ে মাথা চুলকালো মিশাল। ক্রুর হেসে ডানপিটে গলায় বলল,

“দেখি। সরে দাড়া সামনে থেকে। বেসামাল হয়ে গেলে কিন্তু মারের চেয়েও বড়ো কিছু হয়ে যাবে!”

বিষণ্নতা ভুলে রুখে এলো সামান্তা মিশালের দিকে। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,

“খুব সাহস বেড়ে গেছে তাইনা? আমাকে শাসাচ্ছ তুমি? মনে নেই? রাতে আমি চাচীর হাত থেকে তোমাকে কীভাবে বাঁচিয়েছিলাম?”
“ওহ্। তাহলে খোঁটা দিতেই এসেছিস আমার রুমে? সো ডিজগাস্টিং ইউ আর।”

রাগ শিথিল করল সামান্তা। মিশালের কাছ থেকে সরে এলো। এই মুহূর্তে ক্ষেপানো যাবেনা মিশালকে। কারণ, বিপদেই পরেই সে মিশালের কাছে এসেছে। বুকের উপর দু’হাত গুজে বেশ ভাব নিয়ে তাকালো অন্যদিকে। নাক টেনে বলল,

“না। একটা দরকারে এসেছি।”

সামান্তার নমনীয়তা দেখে অবাক হলো মিশাল। নিশ্চয়ই তাকে বড়ো কোনো বিপদে ফাঁসাতে এসেছে সে। এছাড়া তো এত কোমলতার কোনো মানেই হয়না। ভ্রু উঁচিয়ে মিশাল প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী দরকার?”
“আগে তো নিজের গাঁ ঢাকো! নির্লজ্জের মত আমার সামনে খালি গাঁয়ে দাড়িয়ে আছো।”
“কেন? মাতাল মাতাল লাগছে তোর? ভাবছিস, ইশ! কী সুন্দর সিক্সওয়ালা বডি মিশাল ভাইয়ার। যদি একটু ছুঁতে পারতাম!”

কদাচিৎ হাসল মিশাল। সামান্তাকে আরও একটু ক্ষেপাতে ইচ্ছে হলো তার। মুহূর্তেই তেতে উঠল সামান্তা। হ্যাঙার থেকে মিশালের একটি টি-শার্ট এনে ছুড়ে মারল মিশালের মুখে। তীক্ষ্ণ সুরে বলল,

“আমি তোমার মতো এত নির্লজ্জ নই যে কাউকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে তার উপর মজা নিব। তাকে ছুঁতে চাইব। সাইফা একটা বিপদে পরে আমার কাছে এসেছে। সাহিল ভাইয়া তার জন্য একটা সম্বন্ধ এনেছে। আমাদের সেই সম্বন্ধটা ভাঙতে হবে।”

টি-শার্টটা গাঁয়ে পরে নিলো মিশাল। সামান্তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“সাহিল ভাইয়ার কথা বলতেই একটা কথা মনে পরে গেল। কাল না-কি তুই হসপিটালে গিয়ে স্বপ্নীলের পা ভেঙে এসেছিস?”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here