চন্দ্রকিরণ কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন পর্ব:১৫

0
270

#চন্দ্রকিরণ
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৫

আরিয়ান রাইস মিলের দায়িত্ব অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিল পরবর্তীকালে নতুন করে সবটা ঠিকঠাক করে দিলেও সবটা ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়েছে। দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আবার গ্রহণ করার মতো ইচ্ছে ওর ছিল না। কমোলিনি ওর সঙ্গে সবটা খারাপ করলেও ওর নামে একটা ফার্ম করেছিল। সেখানে গরু হাস মুরগি থেকে শুরু করে নানারকম পশুপাখি নিয়ে খামারবাড়ি তৈরী করেছিলেন। হয়তো আরিয়ানের বিশ্বাস অর্জন করার জন্য। সামান্য কিছু দিয়ে বিশাল কিছু হাতিয়ে নিতে উস্তাদ ছিল কমোলিনি। কোর্টে কেস চলছে। ভদ্রমহিলা জেলে আছে। আরিয়ান খামার বাড়িটা আরও বড় করেছে। ইব্রাহিম খানের জমিতে যে বিল্ডিং তৈরীর কাজ চলছিলো সেটা আপাতত বন্ধ। রাইস মিল ম্যানেজার দেখাশোনা করছে। আরিয়ান নিজের জমিয়ে রাখা টাকা থেকে জেলা শহরে বাড়ি জন্য জমি কিনে বিল্ডিং তৈরী করছিলো সেটা বাড়ি না করে শপিংমল আর রেস্টুরেন্টে তৈরী করেছে। কমোলিনির থেকে উদ্ধার করা টাকা চৌধুরী বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়নি। দিতে চেয়েছিল ফিরোজের জন্য হয়নি। ওর মতে এই টাকার উপরে আরিয়ানের হক আছে। তাছাড়া টাকাগুলো তো বাইরের লোকেরা নিয়ে যেতো। যে উদ্ধার করেছে সেই নিবে । আরিয়ানের দিন বেশ ব্যস্তার সঙ্গে যায়। সারাদিন ভুতের মতো খাটাখাটনি করে। খামার বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য আগে থেকেই লোক ছিল কিন্তু রেস্টুরেন্ট আর শপিংমলের খোঁজখবর ওর নিজের রাখতে হচ্ছে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ফিরোজের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ফিরোজের এসবের প্রতি ঝোক নেই। প্রায় দিন সে মারা*মারি করে নাক চোখ ফাটি*য়ে বউয়ের দ্বারস্ত হয়। নীহারিকা ঢাকা মেডিকেলে পড়ে। ফিরোজ সেখানেই গিয়ে হানা দেয়। ওর জন্য মাঝেমাঝে আরিয়ানকেও ঝামেলায় পড়তে হয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামার পর থেকেই আরিয়ানের চোখের ঘুম হারাম। হার জিত কোনো বিষয় না। ল*ড়তে হবে সেটাই বিষয়। আরিয়ান অবাক হয়ে ভাবে এই ফিরোজ আর জাহান দুটোই এক। ও নিজেও চৌধুরী বাড়ির ছেলে তাহলে ও এতোটা শান্ত কেনো? নাকি ছোট থেকে না পাওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে এমন শান্ত হয়ে গেছে? মাথার উপরে সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দিচ্ছে। গরমে অবস্থা খারাপ। বেশ কিছুদিন অনাবৃষ্টি হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তন নেই। আরিয়ান শপিংমল থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টর দিকে হাঁটছে। হঠাৎ চিৎকার চেচামেচি শুনে থমকে গেলো। গেটের কাছে বেশ কিছু মানুষের ভিড়। হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আরিয়ান দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেলো। ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেই থমকে গেলো। জাহান দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার সঙ্গে দশ মাস আঠারো দিন পর দেখা। আগে খানিকটা মোটা ছিল কিন্তু এখন বেশ স্লিম। হয়তো শরীর চর্চার দিকে বেশ মনোযোগ দিয়েছে। পরণে সাদা রঙের লঙ শার্ট আর কালো প্যান্ট পায়ে সাদা জুতা। আরিয়ান থতমত খেলো। প্রথম থেকে জাহানকে ও শাড়ি নয়তো থ্রি পিচে দেখেছে। আরিয়ানের চোখ ফিরছে না। জাহান সেই থেকে সমানে তর্ক করছে এক বখাটে টাইপ ছেলের সঙ্গে। আরিয়ান ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু কুচকে বলল,

> কি হয়েছে? এরকম চিৎকার চেচামেচি করছেন কেনো?

আরিয়ানের কথা শুনে জাহান খানিকটা চমকে উঠরো। হয়তো ওখানে আরিয়ানকে আশা করেনি। ছেলেটা এই সুযোগ কাজে লাগালো। নিজের অন্যায় ঢেকে নিয়ে বলল,

> আরে ভাই এই মেয়েটা হুদাই আমাকে দোষারোপ করছে। বলছে আমি নাকি পেছন থেকে সিটি দিয়েছি। আজেবাজে কমেন্ট করেছি। আমি ভদ্রঘরের ছেলে। সেখানে সেখানে তাকানোর অভ্যাস আমার নেই।
ছেলেটার কথা শুনে আরিয়ানের বেশ রাগ হলো। ও কিছু বলতে চাইলো তার আগেই জাহান অঘটন যা ঘটানোর ঘটিয়ে ফেললো।পাশের মেয়েটার জুতা খুলে নিয়ে টান পায়ে এগিয়ে এসে ছেলেটার গালে পরপর দুটো থা*প্পর লাগিয়ে দিলো। আরও একটা দিতে গিয়ে পিছিয়ে এসে আরিয়ানের দিকে আড় চোখে তাঁকিয়ে বলল,

> সত্যি বলার সাহস নেই তাহলে সেই কাজ করিস কেন? তখন আজেবাজে কথাবার্তা বলেছিস এখন ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করতাম কিন্তু তুই কি করলি? ছলচাতুরি করে মিথ্যা বলেছিস। আমি মিথ্যা সহ্য করতে পারিনা। সাহস থাকলে খান মেনশনে আসিস। আমি এমপি ইব্রাহিম খানের মেয়ে আহিয়া খান আদর। আদরের আদর তোর মতো বখাটেদের জন্য খুব কাজের। চিনে রাখ আমাকে। ভবিষ্যতে এমন কিছু করতে হলে দুবার ভাববি।

জাহান হাত উচু করে ছেলেটাকে শাসিয়ে গটগট করে চলে গেলো। আরিয়ান হতভম্ভ হলো। ছেলেটার উপর দিয়ে কথাগুলো মনে হলো ওকেই শুনিয়ে গেলো। মেয়ে না একটা বড়সড় ঘূর্ণিঝড়। আরিয়ান ঢোক গিলে পাশের ছেলেটার কলার টেনে গালে থা*প্প*ড় লাগিয়ে বলল,

> মেয়েদের সম্মান দিতে কবে শিখবি বল? তোদের যন্ত্রণায় আমাদের মতো নিরীহ পুরুষের কপাল পোড়ে। যদি আবারও এরকম কিছু দেখেছি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ডাকবো। প্রথমবার তাই ক্ষমা করলাম। তোর উপরে আমার নজর থাকবে।

আরিয়ান ধমক দিতেই ছেলেটা মাথা নিচু করে প্রস্থান করলো। ইব্রাহিম খানের মেয়ে জানলে এরকম কাজ করার আগে দু’বার ভাবতো। না জেনে এরকম ঘটনা ঘটিয়ে ছেলেটার মুখে কথা নেই। তাছাড়া পরপর তিনটা থা*প্প*ড় খেয়ে লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অবস্থা। আরিয়ান সোজা রেস্টুরেন্টের মধ্যে গিয়ে বসলো। জাহান ফিরে এসেছে। মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা জরুরি ছিল কিন্তু কিভাবে বলবে? নীহারিকা ফিরোজের সঙ্গে এসেছিল তারপর আর খোঁজ নেই। সামনে পরীক্ষা শেষ হলে একবারে বাড়িতে ফিরবে। ফিরোজ নিজেই বউয়ের সঙ্গে দেখা করতে সপ্তাহে একদিন ছুটে যায়। আরিয়ান পড়লো মহা ঝামেলায়। বুদ্ধি একটা খুঁজতে হবে ভেবে চট করে মনে পড়লো নিজের বাবার কথা। আহিল চৌধুরীর খুব প্রিয় ছিল মেহের। মেহের যে মা*রা গেছে কথাটা উনি জানতেন না। জাহানকে দেখে মেহের ভেবে ভুল করেছিলেন। পরে সবটা শুনে অনেক দুঃখ পেয়েছেন। এই কয় মাসে আরিয়ান বেশ কয়েকবার জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু ফাজিল মেয়ে কোনো রিপ্লাই করেনি। বাবার কথা ভেবেই ও বাইরে বের হলো। বাড়িতে ইকরা নামের একজন মেয়ে আছে। রাইস মিলে মেয়েটার ভাই কাজ করতো। পরিবারের কেউ নেই। হঠাৎ দুর্ঘটনাতে ছেলেটা মারা গিয়েছিল সেই থেকে এই মেয়েটার দায়িত্ব আরিয়ানের। বাবা বাড়িতে একা থাকে তাই ইকরা এখানে এসে থাকে। তাছাড়া রান্নার দায়িত্ব ওই পালন করে। মেয়েটাকে ও কলেজে ভর্তি করিয়েছে। অনার্স প্রথম বর্ষে অর্থনীতি নিয়ে জাতীয় ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। বাসা থেকে যাওয়া আসা করে। আরিয়ান ওকে বোনের মতো স্নেহ করে। ভেবেছে ভালো পাত্র দেখে খুব তাড়াতাড়ি মেয়েটার একটা গতি করে দিবে। আরিয়ান কথাটা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পৌঁছে বাবার সঙ্গে দেখা করতে গেলো। ভদ্রলোক ইকরার সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজনের পর গল্পে মজে ছিল। আরিয়ানকে দেখে উনি হাসিমুখে বললেন,

> কিছু বলবে? হঠাৎ এই সময় বাড়িতে?

আরিয়ান সোজা বাবার পাশে গিয়ে বসলো। মাথা চুলকে বলল,

> বাবা আপনার কি জাহানকে দেখতে ইচ্ছা করছে?আজ শপিংমলে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলো। আমাকে এড়িয়ে চলছে। আপনি কি একবার দেখা করবেন?

আহিল সাহেব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। মাথা নাড়িয়ে বললেন,

> মেহের মা বাড়িতে ফিরেছে? চলো চলো এখুনি ওকে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার মা ব্যারিষ্টার হয়ে ফিরেছে তাকে একবার না দেখলে হয়?

আরিয়ান মাথা নত করলো। মনে মনে ভাবলো কি এমন করেছি যে সামনে যেতে পারবোনা? একশোবার পারবো। কথাটা ভেবে বলল।

> রেডি হয়ে আসুন আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।

আরিয়ান বেরিয়ে গেলো। কক্ষে গিয়ে গোসল করে পছন্দসই পোশাকে নিজের পরিপাটি করে গুছিয়ে নিলো। বাইরে এসে দেখলো আহিল সাহেব একা না ইকরাও সেজেগুজে প্রস্তুত। মেয়েটাকে বাড়িতে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না ভেবে চুপচাপ থাকলো। যখন খান বাড়ির গেটের কাছে গাড়ি এসে পৌছালো তখনই আরিয়ানের ফোনটা বেজে উঠলো। ফিরোজ ফোন করেছে। আরিয়ান রিসিভ করে কানে ধরতেয় ওপাশ থেকে হাপাতে হাপাতে বলে উঠলো,

> কোথায় তুই? সিটি সেন্টারের দিকে ভীষণ মা*রামা*রি হচ্ছে। আমাদের চারদিক থেকে আটকে ফেলেছে। ওরা সংখ্যায় অনেক। আজ প্রাণ নিয়ে বের হওয়া মুশকিল। প্লিজ ভাই আমার কিছু হলে নিরুকে দেখে রাখিস। এখানে আরেকজন আছে। তুই তাড়াতাড়ি আই।

ফিরোজ কঠিন বিপদে পড়েও বউকে ভুলে থাকতে পারেনি। আরিয়ান তাড়াতাড়ি বাবা আর ইকরাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,

> খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাকে এখুনি যেতে হবে। আপনারা জান আমি নিতে আসবো। এখন সময় নেই।
আরিয়ান উত্তরের আশা করলোনা। তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো। মনে মনে ভীষণ আফসোস করলো। বউয়ের কাছাকাছি আসতে গেলে যত বাঁধা এসে হাজির হয়।
******
রাস্তার উপরে বড় বড় ইট পাথরের টুকরো পড়ে আছে। মানুষ কেউ সামনে এগোচ্ছে না। দু*পক্ষের দৌড়াদৌড়ি মা*রামারিতে চরম অবস্থা। আরিয়ান তাড়াতাড়ি করে পুলিশে খবর দিয়ে গাড়ি থামিয়ে মার্কেটের মধ্যে দিয়ে চিপা গলি ধরে এগিয়ে আসলো। ফিরোজের ফোনের লোকেশন ধরে এগিয়ে আসছে। ছেলেটার জন্য ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। চারদিকে আগুনের ধোয়া উড়ছে। হয়তো বো*ম ফাঁটানো হয়েছে। আরিয়ান দৌড়ে গিয়ে বড় রাস্তায় উঠলো। লোকেশন এখানেই আছে। হঠাৎ কয়েকজন ছেলে হৈহৈ করে বেরিয়ে আসলো। আরিয়ান নিজেকে বাঁচাতে সাইড করতেই একটা দৃশ্য দেখে থমকে গেলো।ওরা ফিরোজকে মা*রছে কিন্তু সেটা বড় কথা না মূল হচ্ছে ফিরোজকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে জাহান। লাঠির এলোপাথাড়ি আ*ঘাতে মেয়েটা কুকড়ে যাচ্ছে কিন্তু থামছে না। আরিয়ানের দুনিয়ার ঘুরে উঠলো। এই মেয়ে এখানে কি করছে? ও তাড়াতাড়ি রাস্তায় পাশে পড়ে থাকা তলো*য়ার হাতে তুলে নিলো। দিব্যজ্ঞান শূন্য হয়ে এলোপাথাড়ি আ*ঘাত করতে শুরু করলো। এই ছাড়া এই দুজনকে বাঁচিতে ফেরা সম্ভব না। সকলের হাতে ছু*রি লা*ঠি। আরিয়ান নিজের মতো হাত চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওদের দলের ছেলেরা এসে হাজির হলো। প্রতিপক্ষ পিছিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান দৌড়ে গিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা ফিরোজকে ধরলো। জাহানের হাতে ছু*রির আঘাত লেগেছে। র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আরিয়ান সেদিকে চেয়ে পকেট থেকে রুমালখানা বের করে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। জাহান ওর থেকে হাত সরিয়ে নিতে চাইলো। আরিয়ান চোখ রাঙিয়ে জোর করে সেটা বেধেঁ দিয়ে বলল,

> তাড়াতাড়ি যেতে হবে। ভাইজানের অবস্থা ভালো না। সামনের মোড়ে গাড়ি অপেক্ষা করছে। চুপচাপ সঙ্গে যাবেন।

আরিয়ান ফিরোজকে তুলে নিলো। ভারি মানুষ তুলতে কষ্ট হচ্ছে। ফিরোজের জ্ঞান আছে কিন্তু পা চলছে না। আরিয়ান কোনোরকমে ধরে হাটতে লাগলো। জানান ওর পিছু পিছু দৌড়ে চলেছে। মেয়েটার চোখে পানি। ফিরোজের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। মোড় পযর্ন্ত আসতে ওদের তেমন একটা অসুবিধা হলো না। ওপাশে পুলিশ এসেছে। সব যে যেমন পেরেছে পালিয়ে গেছে। আরিয়ান দুজনকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। হাসপাতাল এখান থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা। গাড়ির মধ্যে ফিরোজ দুবার পানি চেয়েছে। আরিয়ান পানির বোতল খুলতেই জাহান হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,

> পানি দেবেন না। ভাইজানকে পানি খাওয়ালে আর বাঁচানো যাবে না। আমি দেখেছি সেবার রহিম কাকাকে ওরা মে*রেছিলো। পানি খাওয়ানোর পরে লোকটা চোখ বন্ধ করলো আর খুঁলেনি। পানি দেবেন না।

আরিয়ানের খারাপ লাগছে। চোখের কোনা থেকে বিন্দু বিন্দু অশ্রুজল গড়িয়ে পড়লো। ফিরোজের মাথা বুকের সঙ্গে লাগিয়ে রেখেছে। পাশেই জাহান বসে আছে। বারবার ভাইজানের মাথায় মুখে আর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বিলাপ করছে,

> ভাইজান তুমি ঠিক আছো? শুনতে পাচ্ছো? তোমার কিছু হলে নীরু আপা কিন্তু খুব কাঁদবে। ভাইজান কথা বলো। একদম চিন্তা করবা না।তোমার কিছু হবে না। এই শহরের মেয়র আমার ভাইজান যদি না হয় তবে কেউ হবে না। ও ভাইজান শুনছ?

ফিরোজের জ্ঞান নেই। কয়েকবার সাড়া দিলেও পরে আর কথা বলেনি। হাসপাতালে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন নার্স ছুটে আসলো। ফিরোজকে নিয়ে ছুটলো ওটির দিকে। জাহানের পায়ে শক্তি নেই। হাত বেশখানি কেঁ*টেছে। এখনো র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ফিরোজকে ওটিতে পাঠিয়ে জাহান ছুটলো ডাক্তারের কক্ষে। হাসপাতালে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেইতো আর ডাক্তার প্রস্তুত থাকেনা। আরিয়ান ছুটেছে ওষুধ আনতে। জাহান অনুমতি ছাড়াই ডাক্তারের কক্ষে ঢুকে পড়লো। র*ক্ত দেখে কেউ এগিয়ে আসছে না। আবদুল আলিমের সঙ্গে ওর চেনাশোনা আছে। ওকে এভাবে দেখে ভদ্রলোক দাড়িয়ে পড়লো। উদ্গ্রীব হয়ে বলল,
> আদর তুমি এখানে? হাত কাঁয*টলো কিভাবে?কি হয়েছে?

জাহান কেঁদে ফেললো। চোখের পানি মুছে বলল,

> আঙ্কেল আমি ঠিক আছি কিন্তু ভাইজান ঠিক নেই। তুমি এখুনি চলো। অন্য ডাক্তার আসতে আসতে ভাইজানের কিছু হয়ে যাবে। ওর কিছু হলে আমার নিরু আপা ম*রে যাবে। তুমি তাড়াতাড়ি চলো।
দুজনেই ছুটলো ওটির দিকে। ততক্ষণে অটি রেডি আর ঔষধের জোগাড় হয়ে গেছে। ওটির দরজা বন্ধ হলে আরিয়ান ছুটে গিয়ে জাহানের হাত ধরে জরুরী বিভাগের দিকে টেনে নিয়ে গেলো। জাহান কিছুতেই কথা শুনছে না। চেচামেচি করছে। ধৈর্যের বাইরে। আরিয়ান সহ্য করতে পারলো না। কড়া করে ধমক লাগিয়ে বলল,

> এখুনি চুপ করবেন নয়তো খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। কি ভেবেছেন আপনি? কিছু বলছি না বলে এভাবে যা ইচ্ছা করবেন? কেনো গিয়েছিলেন ওখানে? জানতেন ঝামেলা হচ্ছে তবুও গিয়েছেন। আমি ভেবেছিলাম আপনি বাড়িতে আছেন। আমি না গেলে আজ কি হতো ভাবতে পারছেন? আমাকে একটুও শান্তি দিচ্ছেন না। দুইভাইবোন মিলে লেগেছেন কিভাবে আরিয়ান শাহরিয়ারকে জব্দ করা যায়। এই সময় বউ হয়ে শাড়ি পরে সেজেগুজে আমার ঘরে থাকার কথা ছিলো আপনার। কিন্তু তানা আপনি রাস্তার মা*রামারি করে বেড়াচ্ছেন?

জাহান চুপসে গেলো। ওকে আজও কেউ ধমক দেয়নি। চারদিকে অসংখ্য মানুষ ওদেরকে দেখছে। লজ্জার একটা বিষয় আছে। জাহান নাক টেনে বলল,
> ইচ্ছে করে যায়নি। শপিং করছিলাম তখন মা*রামা*রির মধ্যে আটকে পড়লাম। রাস্তায় ওরা ভাইজানকে তাড়া করছিলো খুব ভয় পেয়েছিলাম। ওরা অনেক মে*রেছে। ভাইজান একা ছিল খুব চেষ্টা করছিলো বেরিয়ে আসার। কিন্তু পারলোনা। আমিও ভাইজানের সঙ্গে ওদের সঙ্গে লড়েছি কিন্তু পারলাম না। দুজন মানুষ ওতগুলো ছেলের সঙ্গে কিভাবে পারবো? সব শেষ হয়ে গেলো।

জাহান চোখ বন্ধ করে কাঁদছে। শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আরিয়ান ডান হাতে ওকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় চুমু দিয়ে বলল,

> কাঁদবেন না।কিছু হয়নি আমি আছিতো। সব ঠিক করে ফেলবো। কাউকে ছাড়বো না। নির্বাচন নিয়ে সব পাগলা কু*ত্তায় পরিণত হয়েছে না? দেখে নিব।

জাহান সবটা চোখের সামনে দেখেছে। শপিংমলের ভেতরে ছিল তখন একজন বললো বাইরে ঝামেলা হচ্ছে।জাহান কৌতূহলী হয়ে রাস্তার দিকে উঁকি দিয়ে ফিরোজকে দেখে চমকে উঠে দিব্যজ্ঞান শূন্য হয়ে ভাইয়ের পিছনে ছুটে গিয়েছিল। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে হাতে অ*স্ত্র পযর্ন্ত তুলেছিলো কিন্তু শেষপর্যন্ত রক্ষা হয়নি। প্রথমে দুভাইবোন ভালোই লড়েছিলো পরে থামতে হয়েছে। ওরা ক্রমাগত দলে ভারি হয়ে উঠছিলো। বেঁচে আছে এটাই অনেক। ইব্রাহিম খানের মেয়ে হিসেবে অনেকেই চেনে ওকে হয়তো তাই ওকে বেশি আঘাত করা হয়নি। ওদের উদ্দেশ্য ছিল ফিরোজকে শেষ করা। ফিরোজ প্রতিবাদী যুবক। প্রাক্তন মেয়র লোকটা খুব একটা সুবিধার না। জাহান ফুপিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান ওর ডান হাত ধরে রেখেছে। আটটা সেলাই লাগলো হাতে। আরেকটু হলে হাড়ে লাগতো। কপাল ভালো উপরের তকে লেগেছে। সেলাই শেষ হলে ওরা আবারও ছুটে আসলো ওটির দিকে। ফিরোজের অবস্থা বিশেষ ভালো না।

চলবে।

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।আমার চোখের সমস্যা হয়েছে। যন্ত্রণা করছে আর ঝাপসা দেখছি। চশমা কাজ করছে না। দয়াকরে কেউ কিছু মনে করবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here