বুকে_যে_শ্রাবণ_তার #পর্ব_১১

3
448

#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি

দেয়ালে টানিয়ে রাখা বাইকের একটি পোস্টারও নেই দেয়ালে। তবে রুমের আশপাশ থেকে কাগজ পোড়ার বিদঘুটে গন্ধ ভেসে আসছে! সেই গন্ধকে অনুসরণ করে সামান্তা বেলকনি অবধি হেঁটে গেল। তার ধারণা সত্যি প্রমাণিত হলো। আগুনের উত্তাপে কাগজ পুড়ে ছাঁই হয়ে গেল। তাই সারা ঘরময় পোঁড়া গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পোস্টারের একটি টুকরোও কোথাও অবশিষ্ট রইলনা। কী থেকে কী হয়ে গেলো সবটাই যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেলে। পুরো ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য সামান্তা উদগ্রীব হয়ে উঠল। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমকির রুমে গেল। বাধ্য হয়ে দরোজা খুলে দিলো রুমকি। মাথা নুইয়ে দরোজা ধরে দাড়িয়ে রইল। চোখে তার জল। সেই জলকে লুকানোর প্রয়াসে সে মাথা নুইয়ে রইল। তবুও যেন রুমকির বিষণ্ন ও গম্ভীর ভাব সামান্তার দৃষ্টি এড়ালোনা। ভ্রু কুঁচকে সামান্তা সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী হয়েছে তোদের বল তো? দুই ভাইবোন এমন গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”
“কিছু হয়নি।”
“কী লুকোচ্ছিস বল? আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল?”
“আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা আপু। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”
“দুই ভাইবোন কী ঝগড়া করেছিস? তাই কিছু বলছিস না আমার কাছে?”
“ভাইয়ার সাথে আমার কখনও ঝগড়া হয়নি আপু। অকারণে মনোমালিন্যও হয়নি। যা ঝামেলা হয় তৃতীয় ব্যক্তির জন্য হয়! আর তাকে আমি প্রচণ্ড রকম ঘৃণা করি।”
“তৃতীয় ব্যক্তিটি কে? প্লিজ বল আমায়?”
“সরি আপু। সাংসারিক ব্যাপারগুলো বাইরের কাউকে বলতে নিষেধ করেছেন ভাইয়া! প্লিজ তুমি কিছু মনে করোনা!”

সামান্তার মুখের উপর দরোজাটি আটকে দিলো রুমকি! দীর্ঘশ্বাস ফেলল সামান্তা। তবে কী এই পরিবারের কেউ তাকে আপন ভাবেনা? তাকে এতটাই পর ভাবে যে সাংসারিক ব্যাপারগুলোও মন খুলে বলা যায়না? রুমকির আচরণে কষ্ট পেল সামান্তা। তবে রুমকি বয়সে তার চেয়ে অনেক ছোটো বলে বিষয়টা তেমন আমলেও নিতে চাইলনা! বিবেক বুদ্ধি কম তাই হয়ত কোথায় কী বলতে হবে তা বুঝে ওঠতে পারেনি। মনে খচখচ নিয়ে সামান্তা তার রুমে ফিরে গেল। সামান্তাকে পেয়ে খুশি হয়ে গেল জেনিয়া! পকপক করে পুনরায় তার মাথা খেতে লাগল।

______________________________

সামান্তাদের বাড়ির ড্রইংরুমে আজ বিশেষ বৈঠক বসেছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন মিজানুর রহমান, জেসমিন বেগম, সাহিল এবং মিশালও। সাইফার বিয়ে ঘটিত ব্যাপার নিয়ে বিশেষ এই বৈঠক। ভয়ভীতি, শঙ্কা ও উদ্বিগ্নতা নিয়ে দূর হতে দাড়িয়ে সাইফা যতটুকু সম্ভব আড়ি পাতার চেষ্টা করছে। তার পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে সামিয়া।সাইফাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবুও যেন ভীতসন্ত্রস্ততা কাটছে না সাইফার। নখ কামড়ে সাইফা শুকনো ঢোঁক গিলে সামিয়াকে বলল,

“রুমকির নাম্বারে একটা কল দে তো। সামান্তা আপুকে বল আসতে। আপু এলে কিছুটা স্বস্তি পাব আমি।”
“রুমকি আপু তো কল তুলছেনা আপু। দাড়াও আমি আরও একবার ট্রাই করে দেখি।”

সামিয়া আবারও রুমকির নাম্বারে ট্রাই করতে ব্যস্ত হয়ে পরল। মিজানুর রহমান গলা খাকিয়ে এবার নীরবতা ভাঙলেন। কাজের প্রসঙ্গ তুললেন। মাথা নুইয়ে রাখা মিশালকে তিনি গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

“কী রে? এতো রাতে তোকে ডেকে এনেছি বলে কী তুই বিরক্ত হচ্ছিস?”

পাশ থেকে সাহিল বাঁকা হাসল। কান পড়া তবে কাজে দিয়েছে তার! মাথা তুলে মিশাল এবার সরু দৃষ্টিতে তার চাচার দিকে তাকালো। আচম্বিত গলায় প্রত্যত্তুরে বলল,

“বিরক্ত হবো কেন চাচা? তুমি বললে তো আমি শত মাইল দূর থাকলেও তোমার জন্য ছুটে আসতে পারব। আর এখন তো বাজে মাত্র রাত বারোটা। এ আবার কঠিন কী কাজ?”

“ওহ্ আচ্ছা। আমি ভাবলাম তোকে বিরক্ত করেছি!আচ্ছা যাই হোক, একটা জরুরি দরকারে তোকে ডেকে আনা। বড়ো ভাই যেহেতু এখন বেঁচে নেই বড়ো ভাইয়ের জায়গায় এখন তুই আছিস। তোকে বিষয়টা জানানোর দরকার মনে হলো তাই তোকে ডেকে আনলাম।”

“কী দরকার চাচা?”

“সাইফার জন্য সাহিল একটা বিয়ে এনেছে। ছেলেটার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম ভালোই ছেলেটা। সাইফার জন্য খারাপ হবেনা। চাইছিলাম এই নিয়ে কথাবার্তা আগাতে। বিষয়টা জানানোর জন্যই তোকে ডেকে আনা।”

আড়চোখে মিশাল তাদের থেকে অদূরে দাড়িয়ে থাকা আশঙ্কিত সাইফার দিকে তাকালো। হাত জোর করে সাইফা অনুনয়, বিনয় করে মিশালের কাছ থেকে সাহায্য চাইছিল। চোখের ইশারায় মিশাল তাকে শান্তনা দিলো। ভনিতা ভুলে মিশাল এবার সোজাসাপটা গলায় মিজানুর রহমানকে বলল,

“বিষয়টা আমাকে জানানোর আগে সাইফার থেকে তোমার মতামত নেওয়াটা বেশি জরুরি চাচা! এখন তো আর আদি যুগ নেই যে, বাবা-মা যেমন ছেলে পছন্দ করবে সেই ছেলেকেই খুশি মনে বিয়ে করে নিবে। এখন যুগ বদলেছে চাচা। মানুষের পছন্দ ও চিন্তাধারাও বদলেছে।সেখানে সাইফারও পছন্দ অপছন্দের জায়গা আছে। জোর করে তো তার উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবেনা তাইনা? তুমি বরং আগে সাইফার মতামত নাও। যাকে নিয়ে এতোকিছু তার মতামত তো অবশ্যই নিতে হবে।”

অতি মনোযোগ সহকারে মিজানুর রহমান মিশালের প্রতিটি কথা শুনলেন। সবকিছু শুনে তিনি চুপ হয়ে রইলেন। মনে মনে চিন্তাভাবনায় ডুবে গেলেন। মিশালের বিচক্ষণ কথায় বেশ খুশি হয়ে গেলেন জেসমিন বেগম। মিশালকে সবদিক থেকেই তাঁর পার্ফেক্ট মনে হয়। কেন যে সামান্তা তাকে বিয়ে করতে রাজী হলোনা! এই আফসোসই যেন তিনি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন৷ পাশ থেকে সাহিল বিষধর সাপের ন্যায় ফোঁস করে উঠল! মিশালের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তটস্থ গলায় বলল,

“মামা তোকে জাস্ট বিষয়টা জানানোর জন্য ডেকে এনেছে মিশাল। তোর কাছ থেকে কোনো সাজেশন নিতে ডাকেনি। ছোটো ছোটোদের মতো থাক। অতিরিক্ত জ্ঞান দিতে আসবিনা। সব জায়গায় তোর বাড়াবাড়ি।”

“মাঝেমাঝে ছোটোদের জ্ঞানও কাজে লাগে সাহিল ভাই! তাদের মতামতেরও গুরুত্ব দিতে হয়৷ সরি টু সে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, সামান্তাকে রেখে সাইফার জন্য তোমার বিয়ে আনাটা মোটেও উচিৎ হয়নি! সমাজে এর প্রভাব পরতে পারে।”

“ইউ জাস্ট শাট আপ মিশাল। সামান্তাকে নিয়ে তোর কোনো চিন্তা করতে হবেনা! তোর কাজ শেষ, তুই এখন আসতে পারিস।”

অত্যন্ত ক্ষেপে গেল সাহিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মিজানুর রহমান জোরে হুংকার ছাড়লেন। সাহিলকে থামিয়ে দিয়ে তিনি শাণিত গলায় বললেন,

“থামো সাহিল। মিশালের কোনো যুক্তিই আমার কাছে ফেলনা মনে হয়নি। সামান্তার বিয়ের পর আমার সাইফার বিয়ে নিয়ে ভাবা উচিৎ। তুমি বরং এক কাজ করো সামান্তার জন্য ভালো কোনো একটা সম্বন্ধ পেলে এনো! আর সাইফার জন্য যে সম্বন্ধটা এনেছ তা পেন্ডিংয়ে রাখো৷ সামান্তার বিয়ের পর ঐটা নিয়ে আমরা ভাবব।”

ইতোমধ্যেই সেখানে আবির্ভাব ঘটল সামান্তার! হম্বিতম্বি হয়ে সে ড্রইংরুমে সবার মুখোমুখি এসে দাড়ালো। উপস্থিত সবার দৃষ্টি এখন সামান্তার দিকে নিবদ্ধ। বুকের উপর হাত দুটো গুটিয়ে সামান্তা একরোখা গলায় তার বাবাকে বলল,

“আমার বিয়ে নিয়ে তোমার এতো ভাবতে হবেনা বাবা। বিয়ের বয়স পাড় হয়ে যাচ্ছেনা আমার। তাছাড়া তোমরা তো আমাকে এখন মেয়ে বলেই স্বীকার করোনা সেই জায়গায় আমার বিয়ে নিয়ে এত ভাববার কি আছে? ইভেন আমিতো মনে করি সাইফার বিয়ে নিয়েও তোমার এখন ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। মাত্র তো বিশে পা রাখল সাইফা। বিয়েশাদি নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করার কী আছে?”

“তাড়াহুড়ো করছি কারণ আমি চাইনা আমার মেঝো মেয়েও তোমার মতো কোনো ভুল করুক! রাস্তা থেকে যে কাউকে তুলে এনে তাকেই বিয়ে করার জন্য জেদ ধরুক! তুমি শুধু একবার নও দু, দু-বার ভুল করেছ। সেদিন মিশালকেও তুমি ফিরিয়ে দিয়েছ!”

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল সাহিল। ঘাড়ের রগ টান টান করে সে উত্তেজিত গলায় মিজানুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“সেকেন্ড ভুল তো সামান্তার ছিলনা মামা। সেকেন্ড ভুলটা ছিল তোমার। কারণ তুমি অপাত্রে কণ্যা দান করতে চেয়েছিলে। সামান্তা সেদিন রাইট ডিসিশন নিয়েছিল মিশালকে ফিরিয়ে দিয়ে! আমি এখনও প্রস্তুত আছি সামান্তার দায়িত্ব নিতে!”

সাহিলের উগ্র মেজাজ ও আকস্মিত প্রস্তাবে উপস্থিত সবাই ভড়কে উঠল! এই মুহূর্তে সামান্তার বেশ ইচ্ছে করছিল সাহিলের মাথা ফাটিয়ে দিতে৷ কোন অধিকারে সাহিল এই প্রস্তাব রাখে? যেখানে সাহিলকে তার মোটেও পছন্দ নয়। অস্বস্তি নিয়ে জেসমিন হক কেবল ঘুরে ঘুরে মিজানুর রহমানের দিকে তাকাচ্ছিলেন। সাহিলের প্রস্তাব যেন আবার তিনি মেনে না নেন সেই ভয়ে। মিশাল স্থবির হয়ে একই জায়গায় দাড়িয়ে রইল! অনুভূতিশূণ্য প্রায়। সাহিল যে সামান্তাকে মনেপ্রাণে চায় তা মিশালের আগে থেকেই জানা! তাই এই বিষয়ে তার মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তবে সবাইকে ছাপিয়ে মিজানুর রহমান নিজেকে সোচ্চার রাখলেন। শান্তশিষ্ট গলায় তিনি সাহিলকে বললেন,

“আত্নীয়ের মাঝে আমি আর কোনো সম্পর্ক বাড়াতে চাইনা সাহিল! আমার মেয়েকে আমি দূরে কোথাও বিয়ে দিব। এই টপিকে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা। সামান্তা বা সাইফা কারো জন্যই তোমার সম্বন্ধ আনার কোনো প্রয়োজন নেই!”

“তুমি বুঝতে পারছনা মামা। সামান্তা ও মিশাল তোমার কাছ থেকে কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছে! আমি যা করতে চাইছি তোমার এবং সাইফার ভালোর জন্যই করতে চাইছি। একচুয়েলি সাইফার অন্য কারোর সাথে….

সাহিলকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা মিশাল! সামান্তাকে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে বলল যে করেই হোক সাহিলের মুখটা বন্ধ করতে। ইশারা বুঝে সামান্তা রাগ, জেদ ও লাজলজ্জা খুইয়ে সাহিলের পাশে দাড়িয়ে সাহিলের হাত চেপে ধরল! মন্থর সুরে বিড়বিড় করে বলল,

“তোমার সাথে আমার কথা আছে সাহিল ভাইয়া। বাইরে চলো প্লিজ!”

সামান্তার হাতের ছোয়া পেয়ে মুহূর্তেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সাহিল! অদ্ভুত এক ঘোরে ডুবে গেল। কথা থামিয়ে সে মোহভরা দৃষ্টিতে সামান্তার দিকে তাকালো! ধ্যান জ্ঞান হারিয়ে সামান্তার পিছু পিছু হাঁটা ধরল। মিজানুর রহমান ও জেসমিন বেগম বেকুব বনে গেলেন। দুজনই সামান্তা ও সাহিলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। গলা ঝেরে মিশাল তখন স্বাভাবিক গলায় তার চাচাকে বলল,

“আমি জানিনা চাচা তুমি আমাকে কতটুকু ট্রাস্ট করো। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি সজ্ঞানে আমি কখনও তোমার পরিবারের কোনো ক্ষতি চাইবনা। সাইফা বা সামান্তাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই তোমার। আমি এবার থেকে তাদের দেখেশুনে রাখব। সামান্তা যে ভুল করেছে সেই ভুল আমি সাইফার জীবনে হতে দিবনা। সামান্তাকেও কোনো ভুল পথে পা বাড়াতে দিবনা।”

“তোর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। আমিও চাই তুই তাদের দেখেশুনে রাখ! সাহিলের প্রতি আমার কোনো বিশ্বাস নেই, যতটুকু তোর প্রতি আছে। তুই কখনও আমার মেয়েদের খারাপ চাইবিনা আমি জানি।”

ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল মিশালের! সৎ মায়ের কাছ থেকে অপমানিত, অবহেলিত ও লাঞ্চিত হওয়ার পরও কেউ যে তাকে আপন ভাবে এতেই যেন তার সন্তুষ্টি মিলল। আবেগপ্রবণ হয়ে জড়িয়ে ধরল চাচাকে! আচমকা তার দু-চোখো জল ভিজে গেল। ভরাট গলায় তার চাচাকে বলল,

“বাবার কথা হঠাৎ মনে পরে গেল চাচা! মনে হলো তুমিই হয়ত বাবার প্রতিচ্ছবি। লাস্ট বার বাবাকে যখন জড়িয়ে ধরেছিলাম বাবা তখন আমার কাঁধে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল। বিশ্বাস করো সেই নিঃশ্বাসের শব্দ এখনও আমার কানে বাজে। আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। আমি বাবার মৃত্যু ভুলতে পারছিনা।”

#চলবে…?

3 COMMENTS

  1. এইটা কি হ‌ইলো,,,,,,,, বাকি পর্ব ক‌ই,,,,,,, গল্পের জন্য অপেক্ষা করা তো বড্ড কষ্টের,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here