বুকে_যে_শ্রাবণ_তার #পর্ব_৭

0
249

#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

“সাহিল ভাইয়ার কথা বলতেই একটা কথা মনে পরে গেল। কাল না-কি তুই হসপিটালে গিয়ে স্বপ্নীলের পা ভেঙে এসেছিস?”

কঠোরতা ধরে রাখতে পারলনা সামান্তা। ফিক করে হেসে দিলো। গুটিয়ে রাখা হাতগুলো ছেড়ে দিলো। প্রশ্নবিদ্ধ মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। খিলখিলিয়ে হেসে বলল,

“কেবিনে কেউ ছিলনা তখন। স্বপ্নীলের মুখে ছিল অক্সিজেন মাস্ক। চুপি চুপি কেবিনে ঢুকে পা টা মচকে দিয়ে আসি! বেচারাকে চিৎকার করারও সুযোগ দিইনি। দৌড়ে সাহিল ভাইয়ার হাত ধরে পালিয়ে আসি হসপিটাল থেকে। মাঝে মাঝে সাহিল ভাইয়ার জন্য বড্ড মায়া হয় জানো? পুরুষ মানুষরাও কী এত ভীতু হয়?”
“তোকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিল হয়ত! যদি ধরা পরে যাস তো?”
“ধরা পরলে আমি পরব। এতে সাহিল ভাইয়ার কী?”
“অনেককিছুই হয় হয়ত! তুইতো মাথামোটা তাই কারো অনুভূতির গভীরতা বুঝতে পারিসনা!”

আচ্ছন্ন দৃষ্টি মিশালের। সেই আচ্ছন্নতায় লুকিয়ে রইল কিছু অজানা কথা, অনুভূতি ও রহস্য। সামান্তার মাথায় আরও একটি গাড্ডা মেরে মিশাল প্রসঙ্গ পাল্টে নিলো। প্রসঙ্গটিকে বেশি দীর্ঘ করতে চাইলনা। এতে সামান্তার কৌতূহল বেড়ে যাবে সেই ভেবে। গলা ঝাকিয়ে মিশাল স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে থাকা সামান্তাকে শুধালো,

“সাইফার প্রেমিক এই সম্পর্কে কিছু জানে?”
“জানলেই বা কী হবে? সে তো এখনও প্রতিষ্ঠিতই হয়নি।”
“তাহলে প্রতিষ্ঠিত কাউকেই বিয়ে করতে বল! বেকার ছেলেকে নিয়ে এত ভাববার কী আছে? তাছাড়া সাহিল ভাইয়া নিশ্চয়ই তার জন্য সরকারি চাকুরীজীবি ওয়ালা কাউকে এনেছে।”

সামান্তাকে উপেক্ষা করে হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল মিশাল।ফোঁস করে শ্বাস ফেলল সামান্তা। মিশালের পিছু নিয়ে উঁচু গলায় ঘ্যানঘ্যান করে বলল,

“এই কোথায় যাচ্ছ তুমি? জ্ঞান না দিয়ে কিছুতো একটা উপায় বলে যাও।”

মিশালের পিছু হেঁটে সামান্তা সোজা তার রুমে চলে এলো। হন্তদন্ত হয়ে সাইফার মুখোমুখি দাড়ালো মিশাল। মুহূর্তেই ভয়ে ও জড়তায় সাইফা মাথা নুইয়ে নিলো। সোজাসাপটা গলায় মিশাল শঙ্কিত সাইফার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবিনা তাহলে তাকে ভালোবেসেছিলি কেন?”

ভড়কে ওঠে সাইফা মাথা উঁচিয়ে রাগান্বিত মিশালের দিকে তাকালো। কিয়ৎক্ষণ মৌন থেকে হকচকানো গলায় বলল,

“সে আমার কাছে সময় চেয়েছে মিশাল ভাইয়া। এখন আমি কী করব বলো?”
“সময় চাইতে হলে তোর পরিবারের কাছে এসে সময় চাইতে বল। তোর কাছে কেন?”
“ভয় পাচ্ছে। যদি মা-বাবা ফিরিয়ে দেয় তো?”
“যখন তোর পরিবার তোকে ধরে বেঁধে নিয়ে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে তখন তার ভয় কোথায় থাকবে? তোকে হারানোর ব্যথা সামলাতে পারবে তো তখন?”
“এখন কী করব বলো? তাকে বলব আমার পরিবারের সাথে এসে কথা বলতে?”
“শুধু ভালোবাসলেই হয়না ওকে? বুকে সাহসও থাকতে হয়। সাহিল ভাইয়া যে কাজে নামে তা কিন্তু কমপ্লিট করেই ছাড়ে! এখন ভেবে দেখ কী করবি।”
“ভাইয়া তুমি প্লিজ একটু মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলবা?”
“চেষ্টা করে দেখতে পারি।”

পিছু ঘুরে দাড়ালো মিশাল। তার পেছনে নীরব হয়ে দাড়িয়ে থাকা সামান্তার মুখোমুখি দাড়ালো। বাঁ পাশের ভ্রুটি ঈষখ উঁচিয়ে সে সামান্তাকে অবাক করে দিয়ে বলল,

“আমি সাইফাকে হেল্প করতে পারি তবে একটা শর্তে!”

হকচকিয়ে উঠল সামান্তা ও সাইফা। চেষ্টা করবে বলে এখন আবার কী শর্ত রাখতে চায় মিশাল? তা জানার আগ্রহ নিয়ে সাইফা ঘুরে এসে সামান্তার পাশে দাড়ালো। কপাল কুঁচকে কোমরে হাত গুজল সামান্তা। হতভম্ব গলায় মিশালকে শুধালো,

“কী শর্ত?”
“আমার হয়ে তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে!”
“কী কাজ?”
“আমার ফ্রেন্ড লিওনকে নিশ্চয়ই চিনিস?”
“ঐযে চাশমিশটা?”
“হুঁ।”
“এরপর বলো?”
“আগামী সপ্তাহে তার বিয়ে।”
“হ্যাঁ তো?”
“তার বিয়েটা তোকে ভাঙতে হবে!”
“হোয়াট?”
“এভাবে চমকাচ্ছিস কেন? মনে হচ্ছে এর আগে কখনও কারো বিয়ে ভাঙিসনি?”
“ফ্রেন্ডদের বিয়ে ভেঙেছি বাট তোমার ফ্রেন্ডের বিয়ে ভাঙতে হবে কেন?”
“কারণ মেয়ে টিকটকার!”

হু হা করে হেসে দিলো সামান্তা ও সাইফা। পেটে খিল ধরে গেল তাদের। নিজেকে খানিক ধীরস্থির করে সামান্তা শুধালো,

“বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে জানতনা মেয়ে যে টিকটকার?”
“দুইমাস প্রেমও করেছিল!”

হাসি থামালো সামান্তা। ভাবমূর্তি পাল্টে নিলো। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“তাহলে প্রেম করেও বিয়ে ভাঙতে চাওয়ার কারণ কী? প্রেম করার দুইমাস পরে মনে পরল টিকটকার মেয়েকে বিয়ে করা যায়না?”
“মেয়ে লোভী তাই। লিওনের পরিবারকে মেয়ে এমনভাবে ব্রেন ওয়াশ করেছে যে তারা ঐ মেয়েকে ছাড়া কিছুই বুঝছেনা। যাদু টোনা করেছে হয়ত!”
“এসবে বিশ্বাস করো না-কি তুমি?”
“আগে করতাম না। তোর প্রেমে পরার করছি!”

অন্তরের কথা অন্তরেই চেপে রাখল মিশাল। মাথা চুলকে প্রত্যত্তুরে সামান্তাকে বলল,

“যাই হোক, লিওনের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছেনা তার পরিবার।”
“ওকে দেখছি কী করা যায়। তবে আমাদের কাজ আগে! এরপর তোমারটা।”
“ওকে। ডিল তবে ফাইনাল?”
“হুম ফাইনাল।”

সামান্তার রুম থেকে বের হয়ে গেল মিশাল। তার রুমে ফিরে এলো।। গাঁ থেকে টি-শার্টটি খুলে বাথরুমের কাছাকাছি যেতেই টের পেল বাথরুমের ভেতে কেউ তার কাপড়চোপড় কাচছে। বিস্মিত হয়ে মিশাল বাথরুমের দরোজা খুলতেই দেখতে পেল রুমকি কাপড়চোপড় কাচছে! অধীর হয়ে উঠল মিশাল। কাজে ব্যস্ত রুমকির দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হেই রুমকি? শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাপড় কাচছিস তুই? কে বলেছে তোকে এত কাজ দেখাতে?”
“কিছু হবেনা ভাইয়া। এসব মেয়েদের কাজ। তোমার কাজ নয়।”
“কিন্তু তুইতো অসুস্থ। ঠিকভাবে শ্বাসও ফেলতে পারছিসনা।”
“ইনহেলার নিয়েছি ভাইয়া। কিছুক্ষণের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
“মা দেখতে পেলে তোকে অনেক মারবে রুমকি।”
“মা রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত ভাইয়া। টের পাবেনা। তুমি প্লিজ চ্যাচাম্যাচি করে মাকে শুনিওনা।”

চুপ হয়ে গেল মিশাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। যদিও তার কাছে এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। রুমকি সচরাচর বিভিন্ন মুসিবত থেকে মিশালকে এভাবেই রক্ষা করে। তখনি থানা থেকে ইমার্জেন্সি কল এলো। সকালের নাশতা করারও সময়টি পেলোনা মিশাল। তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। তখনই রান্নাঘরের জানালা দিয়ে শাহনাজ বেগম পেছন থেকে মিশালকে ডাকলেন। থমকে দাড়ালো মিশাল। পিছু ঘুরে তাকালো৷ খুন্তি হাতে নিয়ে শাহনাজ বেগম উঁচু আওয়াজে মিশালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“এই মিশাল দাঁড়া? আজ সন্ধ্যার দিকে একটু বাস স্টপ গিয়ে জেনিয়াকে এগিয়ে আনিস তো।”
“জেনিয়া? হঠাৎ?”
“পরশু থেকে তার ইনকোর্স এক্সাম শুরু। আমাদের এখানে থেকেই এক্সাম দিবে।”

মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো মিশাল। মস্ত বড়ো এক বিপত্তি এসে তার ঘাড়ে পরল বলে! জেনিয়ার স্বভাবই হলো আঠার মতো তার সাথে চিপকে থাকা। মেয়দের গাঁয়ে পরার স্বভাব মোটেও পছন্দ নয় তার।

_______________________________

সাহিল ও মিশাল মুখোমুখি দাড়িয়ে! ভদ্রতার খাতিরে যদিও মিশাল সিগারেট ধরাতে পারছেনা তবে সাহিল নির্দ্বিধায় একের পর এক সিগারেট ফুকছে মিশালের সামনে। সাহিলের বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দুজন। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যে তখন। হাইওয়ের একটি রোডে দাড়িয়ে তারা। আশপাশ জুড়ে ল্যাম্প পোস্টের টিমটিমে আলো। যানবাহন ও পথচারীদের কোলাহল। নিঃশব্দে এভাবে আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকা যায়? নীরবতা ভাঙল মিশাল। নম্র গলায় সাহিলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী ব্যাপার ভাইয়া? আমাকে হঠাৎ ডাকলে কেন?”
“এত তাড়া কীসের? কোথাও আবার মা’র’পি’ট করতে যাবি না-কি?”
“যা জানা, তা নিয়ে আবার প্রশ্ন করো কেন?”
“ভদ্রভাবে কথা বল। আমি তোর বড়ো ভাই হই।”
“সে হিসেবে তোমারও তো উচিৎ বড়ো ভাই হিসেবে ছোটো ভাইয়ের সাথে নম্রভাবে কথা বলার।”
“ঘরের শত্রু যখন বিভীষণ তখন তার সাথে এভাবেই কথা বলতে হয়!”

নাকমুখ কুঁচকে এলো মিশালের। উত্তেজিত হয়ে উঠল সে। সোজা হয়ে দাড়ালো জায়গায়। রুক্ষ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“মানে? তুমি কী মিন করতে চাইছ ভাইয়া?”

নিমিষেই হাত থেকে সিগারেটটি ছুড়ে ফেলল সাহিল। রগচটা হয়ে মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। চোয়াল উঁচিয়ে বলল,

“সাইফাকে কুবুদ্ধি দিচ্ছিস কেন তুই? কেন তার বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করছিস?”

জায়গা থেকে নড়েচড়ে দাড়ালো মিশাল। সরু দৃষ্টিতে তাকালো ক্ষিপ্র সাহিলের দিকে। গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কু-বুদ্ধি দিচ্ছি মানে? যেখানে সাইফা বিয়েতে রাজি নয় সেখানে আমি কু-বুদ্ধি দেওয়ার কে?”
“জাস্ট শাট আপ মিশাল। আমার সাথে একদম মিথ্যে বলতে আসবিনা। একটা বেকার ছেলের সাথে সাইফার এফেয়ার চলছে! গতকাল রাতে তাকে আমি সেই ছেলেটির সাথে পার্কে দেখেছি। কোনো ক্যালেঙ্কারি যেন না ঘটে যায় সেই কারণে আমি চাইছি সাইফাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিতে। যার সাথে সাইফার স্ট্যাটাস মিলবে।”
“প্রেম করা তো খারাপ কিছু নয় ভাইয়া। তাছাড়া ছেলে হয়ত এখন বেকার। তবে ভবিষ্যতে ভালো চাকরী বাকরীও করতে পারে।”
“তার মানে তুই সব জানতিস? জেনেশুনে তাকে স্যাল্টার দিচ্ছিস? এসব করে কী লাভ তোর? সামান্তাকে দিয়ে প্রমাণ পাসনি?”
“ভাইয়া দেখো? সামান্তা কার সাথে প্রেম করত সেই বিষয়ে আমি পুরোপুরি শিওর ছিলাম না। তবে সাইফার প্রেমিককে আমি চিনি! ছেলে হিসেবে তার কোনো তুলনা নেই৷ যেমন মেধাবী স্টুডেন্ট, তেমনি পরিশ্রমীও। সাইফা তাকে পেলে ঠকবেনা।”

গাঁয়ের জোরে মিশালকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলো সাহিল! শাসিয়ে ওঠে বলল,

“নিজে বেকার বলে অন্য একটা বেকার ছেলেকে সাপোর্ট করছিস? তুই কখনও পারবি তোর বোনটাকে একটা বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে? সেই জায়গায় দাড়িয়ে তুই কীভাবে চাইছিস নিজের কাজিনকে একটা বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে?”
“আমার বোন যদি কোনো বেকার ছেলের সাথে জড়িয়ে যেতো, আর ছেলেটা যদি ভালো হতো তখন আমিও বাধ্য হতাম তাকে সেই বেকার ছেলেটির হাতেই তুলে দিতে। দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করে তাদের মানসিক কষ্ট দিতামনা। নিজেদের ক্ষতি করতে দিতাম না।”
“যার ক্লাস যেমন! তোর বোনের সাথে তো বেকার ছেলেই যায়!”

তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটি বলল সাহিল। সহ্যশক্তি এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। সাহিলের হুমকি ধমকি ও ধাক্কাতেও এতটা কষ্ট পায়নি মিশাল যতটা কষ্ট পেয়েছে তার বোনকে নিয়ে কটুক্তি করে তার বোনকে ছোটো করায়! বাধ্য হলো মিশাল সাহিলের গাঁয়ে হাত তুলতে! ধাক্কা মেরে কয়েক ফুট দূরে সরিয়ে দিলো। ঘাড়ের রগ টানটান করে রূঢ় গলায় বলল,

“জাস্ট শাট আপ ভাইয়া। আমার বোনকে তুমি সম্মান দিতে না পারো তবে তাকে নিয়ে অসম্মান করার কোনো অধিকারও তোমার নেই। দুনিয়ার সব একদিকে, তো আমার বোন অন্যদিকে। নেক্সট টাইম আমার বোনকে নিয়ে কোনো কটুক্তি করার আগে দু’বার ভেবেচিন্তে করবে। নয়ত এরচেয়েও বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। ভুলে যাব তখন তুমি আমার বড়োভাই।”

পূর্বের তুলনায় আরও অধিক রেগে গেল সাহিল। হনহনিয়ে হেঁটে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো মিশাল। পেছন থেকে উগ্র গলায় মিশালকে পিছু ডাকল সাহিল। হুমকিসূচক গলায় বলল,

“হ্যাঁ থাক তুই তোর বোনকে নিয়ে। কিন্তু কখনও আমার মামা এবং মামার পরিবার নিয়ে মাথা ঘামাবিনা তুই! তাদের দায়িত্ব শুধু আমার। এমনকিও সামান্তাও শুধু আমার!”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here