#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৬
সময় আর স্রোত কারো জন্য থেমে থাকে না। তারা তাদের নিজের গতিতে প্রবাহিত হতেই থাকে। এর মাঝে দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিন তিনটে দিন। এই তিন দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। এই তিন দিন তীর বাড়িতেই ছিলো বাইরে বের হয় নি অসুস্থতার জন্য। মাঝে মাঝে পড়ার বিষয় জানার জন্য ইশার সাথে দেখা করতে ফরাজী ভিলাতে এসেছে। ইশানও অফিসে যেতে পারছে না। মায়ের কড়া আদেশ যত দিন না পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না। অগত্য ইশানও মায়ের কথা শুনতে বাধ্য হয়। তাই বাড়িতে বসেই অফিসের সকল কাজ করে। যে কাজ গুলো বেশি ইম্পরট্যান্ট সেগুলা বাবাই অফিসে গিয়ে দেখে। তাই বাড়িতে থাকার কারনে ইশান তীরের দেখা হয়। কিন্তু যত বারেই ইশান তীরের মুখোমুখি হয়েছে ততবারই ইশানকে ইগনোর করেছে তীর। ইশান যত বার কথা বলতে চেয়েছে তত বারেই কোনো না কোনা বাহানা দিয়ে তীর কেটে পড়েছে। ইশানের যেন সহ্য হচ্ছে তীরের এই ইগনোর। তাই আজকে ইশান নিজের কাছে শপথ নিয়ে রেখেছে আজকে যে করেই হোক তীরকে ওর কথা শুনতে হবেই। পারলে হাত পা বেঁধে রেখে তার কথা শুনাবে।
সন্ধ্যার দিকে তীর ফরাজী ভিলাতে আসে। আগামীকাল থেকে কোচিংয়ে যাওয়া শুরু করবে তার পড়াই ইশার কাছ থেকে নিতে এসেছে। তীরকে দেখে নেহা বেগম বলে।
–তীর এখন কেমন আছিস?
তীর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
–ভালো আছি আন্টি। তুমি কেমন আছো?
–ভালো আছি।
–ইশু কোথায়?
এমন সময় ইশা কিচেন থেকে চিৎকার করে বলে।
–তীর তুই আমার রুমে যা আমি কফি বানাছি সেটা নিয়েই একটু পর আসছি।
–আচ্ছা।
অন্যদিকে ইশান কফি নেওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে নিচে আসতে নিলে ইশার কথা কর্ণপাত হতেই পা জোড়া থেমে যায়। তীরের আসার কথা শুনে ইশান আবারও নিজের ঘরে চলে যায়। ইশানের ঘর পেঁরিয়ে তারপর ইশার ঘরে যেতে হয়। তাই ইশার ঘরে যাওয়ার আগেই তীরের পথ আটকে দিবে ইশান আর তার সমস্ত কথা শুনতে হবে।
ইশান পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে কখন তীর যাবে এই পথ দিয়ে আর কখন ও পথ আটকাবে। তীর ধীর পায়ে হেঁটে আসছে। আজকেও যদি ইশান ওর সামনে আসে তাহলে প্রত্যেক বারের মতো আজকেও ইগনোর করবে।
তীর যেই ইশানের ঘর পার হতে নিবে তখনেই ইশানের কন্ঠ ভেসে আসে। কিন্তু তীর ইশানকে পাত্তা না দিয়ে হেটে চলছে। ইশানের রাগ যেন চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেচ্ছে তাই তীরের সামনে এসে দ
দাঁড়িয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।
–তকে আমি দাঁড়াতে বলেছি কথা কানে যায় না।
তীরও সাথে সাথে উত্তর দেয়।
–না যায় না।
–খুব বেশি সাহস বেড়ে গেছে তর ইদানিং দেখা যায়।
তীর নিঃশব্দে হেসে উত্তর দেয়।
–সাহসটা বরাবর আমার সবসময় ছিলো। কিন্তু সেটা প্রয়োগ করতাম না আমি।
–ওহ রিয়েলি! তা এখন সাহস প্রয়োগ করার কারনটা কি জানতে পারি?
–আপনাকে তা বলতে আমি বাধ্য নই। সামনে থেকে সরুন।
তীর ইশানের পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই ইশান আবেগময় কন্ঠে বলে উঠে।
–তীর!
সেই ডাক যেই ডাক তীরের ভেতরের সব কিছু ওলট পালট করে দেয়। না চাওয়া শর্তেও পা দুটি থমকে যায়। ইশান তীরের অস্তিত্ব টের পেয়ে বলে।
–তর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
তীর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে।
–আমার কোনো কথা নেই আপনার সাথে।
ইশান আবার তীরের মুখোমুখি হয়ে বলে।
–কিন্তু আমার কথা আছে। যত বারেই আমি তর সাথে কথা বলতে চাইছি তত বারেই আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছিস কেন? হোয়াই?
তীর ইশানের দিকে না তাকিয়ে বলে।
–কারন আপনার কথা শুনতে আমি ইন্টারেস্টেড নই।
ইশান কোমল স্বরে বলে।
–প্লিজ তীর একটি বার আমার কথাটা শুন।
ইশানের কোমল কন্ঠ শুনে তীরের ছোট হৃদয়টা কেঁপে উঠে। চলে যেতে মন চাইছে কিন্তু ইশান কি বলতে চায় সেটাও শুনতে মন চাইছে। দু টানায় পড়ে গেছে তীর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না! এক বার ভাবচ্ছে চলে যাবে তো আরেক বার ভাবচ্ছে ইশানের কথা শুনবে। তাই শেষমেষ সিদ্ধান্ত নিলো ইশানের কথা শুনবে। তীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–বলুন! কি বলবেন?
ইশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এ্যাট লাস্ট মেয়েটা তার কথা শুনতে রাজি হলো। কিন্তু সে কি তার মনের কথা বলতে পারবে না। সেটা ভেবে ইশান ঠোট দুটো গোল করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আমতা আমতা করে বলা শুরু করে।
–আ.. স.. লে আমি,, আমি তকে বলতে চাইছি যে…
তীরের ছোট মনটা ভয়ে কেঁপে উঠে। কি বলবে তাকে ইশান? তার সন্দেহ কি তবে সত্যি হতে চলেছে। বুকের ভেতরে মনে হচ্ছে যেন কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে তার শব্দ নিশ্চিত ইশান শুনতে পাবে কিছুক্ষন পরেই। জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নেয় তীর। শুকনো ঢোক গিলে। ওড়নার কোণা দু হাত দিয়ে চেঁপে ধরে। নিঃশ্বাসের গতি ঘন হয়ে আসছে বুকের কাঁপন বাড়ছে ক্রমশ। লজ্জা লাগছে ভীষন ইশানের দিকে মুখ তুলে তাকাতে কিন্তু তারপরও তীর আঁড় চোখে ইশানের দিকে তাকায়। ঘন পাঁপড়ি জোড়া দু তিন বার ঝাঁপটায়। বেচারা ইশানকে খুব নার্ভাস লাগছে। বার বার কথা বলার সময় ঠোঁট জোড়া চেপে ধরছে। মনে হচ্ছে যেন বড় কোনো যুদ্ধে নেমেছে। ইশানকে এই প্রথম এমন রুপে দেখছে তীর এর আগে এমনট কখনো দেখেনি। দেখবে কি করে দেখার সুযোগেই আসে নি কখনো। কিন্তু আজ এসেছে সেই মহেন্দ্রক্ষণ। রাগী, গম্ভীর, রগচটা লোকটা যেন নিমিষেই বদলে অন্য একটা রুপে চলে গেছে। তীরের ভীষন হাসি পাচ্ছে এতক্ষন লজ্জা পাওয়াটা যেন নিমিষেই উবে গেছে ইশানের এমন বেহাল অবস্থা দেখে। একটা সামন্য কথা বলার জন্য এতটা নার্ভাস হওয়ার কি আছে ভেবে পাচ্ছে না তীর। ইশানের এমন তোতলানো দেখে তীর বলে।
–কি বলতে চাইছেন বলুন!
–আসলে তীর আমি তকে….
তীর মিনমিন করে বলে।
–আমাকে কি?
ইশান দু হাত দ্বারা চুল গুলা পিছনে টেলে দিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কিছু একটা বলতে যাবে ওমনি ইশা চলে আসে। ইশার কন্ঠস্বর শুনে ইশান আশাপাশে মাথা দুলিয়ে বলে উঠে।
–কিছু না যা।
তীর বেক্কেল হয়ে যায়। এই লোকটা কি তার মনের কথা বলবে না কোনো দিন, নাকি সারা জীবন এভাবে চেঁপে রাখবে। এতটা ভীতু কি করে হতে পারে ইশান ভেবে পাচ্ছে না তীর। দেখে তো মনে হয় সাহসের বস্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু না আসলে একটা ভীতুর ডিম। যে নিজের মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। ইশান নিজের ঘরে দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলে ইশা বলে।
–ভাইয়া তোমার কফিটা নিয়ে যাও।
ইশান ট্রে-র উপর থেকে কফির মগটা নিয়ে টাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। ইশা তীরের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে।
–কি রে ভাইয়া কিছু বলল?
–নাহ কিছু বলে নি শুধু তোতলে গেছে।
–কিহ ভাইয়া তোতলেছে এত নার্ভাসেই ছিলো।
এমন সময় নেহা বেগম উপরে উঠে দুটোকে এমন ফিসফিস করে কথা বলতে দেখে বলে।
–কি রে এখানে কি করছিস তরা দুটো?
ইশা মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–কিছু না মা। তীর চল ঘরে যাই।
ওরা চলে যেতে নেহা বেগম ভ্রুদ্বয় কুচকে বলে।
–এরা আবার কি গন্ডগোল পাকাছে।
______
ইশান দরজা বন্ধ করে ডেস্কের উপরে কফির মগটা রেখে বিরবির করে উঠে।
–এতটা নার্ভাস এতটা নার্ভাস হওয়ার কি ছিলো এখানে! সামান্য একটা কথা বলতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো যেন পৃথিবীর সকল অসস্তি আমার উপরে ভর করেছে।
ইশান ধপ করে বেডে বসে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। পরক্ষনে আবার শুয়া থেকে উঠে বসে বুকের বা পাশটায় হাত রাখে। কিছুক্ষন আগে মনে হচ্ছিলো যেন হার্টটা এক্ষুনি বেরিয়ে যাবে। ইশান আনমনে বলে উঠে।
–এতটা দুর্বল কি করে হতে পারি আমি। সত্যি কি ভালোবাসার মানুষটার সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে সকল প্রেমিক পুরুষ।
_____
–এত দিন ইগনোর করার পরও যখন ভাইয়া রেগে তকে কিচ্ছু বলতে পারে নি তাহলে এবার মেইন চাল চালতে হবে।
তীর অবাক হয়ে ইশাকে প্রশ্ন করে।
–এবার কি চাল চালবি?
–সকাল হওয়ার অপেক্ষা কর। কালকের মধ্যে যদি ভাইকে দিয়ে স্বীকার না করিয়েছি তকে যে ভালোবাসে তার কথা তাহলে আমার নামও ইশা নয়।
#চলবে______