প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২৫

0
347

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৫

ফরাজী পরিবারের সকলে টেনশনে আছে ইশানকে নিয়ে। রাত সাড়ে দশটা বাজতে চলল কিন্তু ইশানের কোন হদিস নেই। ইশানকে অনেক বার কল করা হয়েছে কিন্তু বার বার ওই‌ একই কথা ফোন থেকে ভেসে আসছে “আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন”। নেহা বেগম তো আজহারী শুরু করে দিয়েছেন ছেলেকে নিয়ে বার বার এক কথাই বলে যাচ্ছেন “কেন ইশানকে জোর করে আটকাইনি তখন”। কেয়া শাশুড়ির পাশে বসে শাশুড়িকে আশ্বাস দিয়ে বলে।

–মা আপনি চিন্তা করবেন না ইশানের কিছু হবে না। এত চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

–আমি কি করবো ছেলেটাকে নিয়ে বলতো বৌমা? আগে তো এমন ছিল না ও। কিন্তু যেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে মারামারি করে এসেছে সেদিন থেকে আমার শান্ত ছেলেটা বেপরোয়া স্বভাবের হয়ে গেছে।

সোহেল ফরাজী বলে।

–আমি বরং ড্রাইভারকে নিয়ে দেখে আসি কোথায় গেলো তোমার সুপুএ।

নেহা বেগম এই কথাটা শুনে তেঁতে উঠেন।

–হুম এখন তো বলবেই তোমার সুপুএ। যখন ছেলে ভালো কিছু করবে তখন তোমার ছেলে আর যখন ছেলে খারাপ কাজ করবে তখন আমার ছেলে।

সোহেল ফরাজী আর কিছু বলেন না এখন আর এখানে কথা না বলা-টাই শ্রেয়। তাই চুপ চুপ বের হয়ে যান ছেলের খুজে।

_____

এগারটা নাগাদ ইশান বাড়ি ফিরে। গাড়ির আওয়াজ শুনার সাথে সাথেই নেহা বেগম বের হোন বাড়ি থেকে। ইশানকে দেখার সাথে সাথে দ্রুত পায়ে ইশানের কাছে গিয়ে বলে।

–কোথায় ছিলি তুই বাবা? তোর ফোন বন্ধ কেন? জানিস কতটা চিন্তায় ছিলাম আমরা।

–মা আমি ঠিক আছি।

–কোথায় ঠিক আছিস চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে তর? সব ঠিক আছে তো!

–সব ঠিক আছে মা তুমি একটু বেশিই ভাবচ্ছো।

তখনেই নেহা বেগমের নজর যায় ইশানের বা হাত ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ করা দেখে নেহা বেগমের আত্মা কেঁপে উঠে। টি-শার্টেও রক্তের দাগ লেগে আছে। নেহা বেগম চিন্তিত কন্ঠে বলে।

–তর হাতে কি হয়েছে ইশান?

–মা তুমি শান্ত হও আমি ঠিক আছি।

–ইশান তুই আমার কাছ থেকে কি…কি লুকাচ্ছিস বল।

–মা তুমি ভেতরে চলো আমি সব বলছি।

ইশান মাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বাড়ির ভেতরে পা বাড়াতে নিলেই থেমে যায়। ইশানের মনে হচ্ছে যেন ওর দিকে কেউ তাকিয়ে আছে খুব গভীর ভাবে। কিছু একটা মনে করে ইশান তীরের বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু না বেলকনিতে কেউ নেই। ইশান দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে ঘরের ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

ইশান চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে তীর। তীর জেগেই ছিলো বাইরে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। আর যখনেই কর্ণপাত হয় ইশানের হাত ব্যান্ডেজ করা আর গায়ে রক্তের দাগ তখনেই মনের মাঝে ঝড় বইতে শুরু করে। আর এত রাতে লোকটা নিজের এমন অবস্থা করে কোথায় থেকে ফিরেছে? সেই চিন্তায় তীর অস্থির হয়ে পড়ে। মন চাইছিলো ছুটে ইশানের কাছে চলে যেতে কি হয়েছে তার প্রেমিক পুরুষটার দেখার জন্য খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছে কি হাতে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয় তাই তড়িৎ বেগে ঘরে ডুকে ইশার কাছে যায়।

ইশা টেবিলের উপর মেলে রাখা ফিজিক্স বইয়ের উপরে মাথা রেখে কুম্ভকর্ণ এর মতো নাক ডেকে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। তীর বিরবির করে বলে।

–পড়ালেখার কোনো নাম গন্ধ নেই! এতক্ষন বয়ফ্রেন্ডর সাথে কথা বলে এখন পড়ে পড়ে ঘুমানো হচ্ছে দাঁড়া তর ঘুম বের করছি আমি।

তীর বিছানার উপর থেকে ওয়াটার বোতলটা নিয়ে বোতলের কেপ খুলে যেই পানি ঢালতে যাবে ওমনি নজর পরে ইশার ফোনের দিকে ফোনটা টেবিলের উপর থেকে সরিয়ে বেডে রেখে দেয়। পুনরায় ইশার কাছে এসে বোতলে যতটুকু পানি ছিলো সবটুকু পানি ইশার মুখের উপর ঢেলে দেয়। ইশা ধরফরিয়ে উঠে কাঁচা ঘুম এভাবে ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে। ইশা ওড়না দ্বারা মুখটা মুছে রাগী গলায় বলে।

–এটা কি করলি তুই তীর? এভাবে পানি দিয়ে কেউ ঘুম ভাঙ্গায়?

তীর বেডে বসতে বসতে বলে।

–আমি ভাঙ্গাই।

–আমাকে ডাকলেই তো আমি উঠে পড়তাম। এভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কি করেছিস দেখেছিস?

–বাড়ি যা।

–মানে।

–বলছি এখনেই তুই তর বাড়ি যা।

–তর মাথা ঠিক আছে এত রাতে বাড়ি যাবো এতক্ষনে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

–কেউ ঘুমাই নি!

ইশা দু হাত কোমড়ে রেখে বলে।

–তুই কি করে জানলি?

–কারন একটু আগে তর ছোট ভাই বাড়িতে এসেছে তাও আবার রক্ত ঝরিয়ে।

ইশা বাকরুদ্ধ! কি বলছে এসব তীর তার ভাই এত রাতে রক্ত ঝরিয়ে এসেছে মানে কি?

–কিহ বলছিস তুই এসব? ভাইয়া!

–হুম। আন্টি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছিলো তখন শুনলাম।

–তো তুই এখন বলতে চাইছিস ভাইয়া কেমন আছে সেটা জেনে এসে তকে জানাই।

তীর ছোট করে উত্তর দেয়।

–হুম।

–বাব্বাহ এত চিন্তা ভাইয়ার জন্য। তাহলে তখন এমন করলি কেন?

–প্লিজ ইশা জেনে আয় না ওনার কি হয়েছে? আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

–পারবো না যেতে। একে তো তুই পানি দিয়ে আমার আরামের ঘুম ভেঙ্গেছিস আর তার উপর আমার জামা কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছিস, সাথে বই খাতা গুলাও ভিজালি। তাই আমি পারবো না যেতে, যেতে হলে তুই যা।

–প্লিজ ইশু এমন করিস না আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

ইশা তীরের মুখের দিকে তাকায়। মেয়েটার মুখটা দেখে ইশার খুব মায়া হলো আসলেই তার ভাইকে নিয়ে চিন্তা করছে সামনের রমনীটা। তাই ইশা বলে।

–এখন এত রাতে বাড়ি যেতে পারবো না আমি ভাবির কাছে ফোন করে জেনে নিচ্ছি ভাইয়ার কি অবস্থা। তুই বরং আমার জন্য তর একটা ড্রেস বের কর চেইন্জ করতে হবে ঠান্ডা লাগছে খুব।

_____

ইশান সোফায় বসে আছে আর তার পাশে বসেই মা বকর বকর করেই যাচ্ছে। মা তো তাই হয়তো এমন করছে, সন্তানের জন্য মায়েদের একটু বেশিই চিন্তা করে। কিন্তু ইশানের আর ভালো লাগছে না মাথা ধরে গেছে। হাতে দু’টা সেলাই লেগেছে আর কাটা স্থানটা যেন এখন একটু বেশিই ব্যাথা করছে। পেটেও ভীষন খুদা লেগেছে মনে হচ্ছে যেন দু তিন যাবত পেটে কিচ্ছু পড়ে নি। শরীর কেমন যেন নেতিয়ে আসছে ক্রমাগত। কথায় আছে না “পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা”। তাই দুনিয়া ঠান্ডা করতে হলে ইশানকে এখন খেতে হবে। তাই মাকে ক্লান্ত কন্ঠে বলে।

–মা খুব খিদে পেয়েছে আমাকে খেতে দাও।

নেহা বেগম থমকে যায়। সত্যি তো তার ছেলে তো খায় নি কোথায় ছেলে আসার সাথে সাথে খাওয়াবে তা না করে ননস্টপ কথা বলেই যাচ্ছে। অনুতপ্ত বোধ করেন নেহা বেগম। ছেলেকে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে ছুটে চলে যায় রান্নাঘরে। প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে এসে ছেলের পাশে বসে বলে।

–নে বাবা খা।

ইশান কোমল কন্ঠে বলে।

–খাইয়ে দিবে মা। তোমার হাতে আজকে খেতে খুব ইচ্ছে করছে।

নেহা বেগম বেজায় খুশি হোন সাথে অবাকও হোন। ছোট থেকেই ইশান নিজের কাজ নিজে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই নিজেই একা সব কিছু করার চেষ্টা করত। নেহা বেগম মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। সাদা ভাত আলু চিংড়ি ভাজি দিয়ে মাখিয়ে ভাতের নলা ছেলের মুখের সামনে ধরে ইশানও চুপচাপ তৃপ্তি ভরে খেয়ে নেয়।

মা ছেলের এমন মুহূর্ত দেখে সোহেল ফরাজী খুব খুশি হোন। ছেলেকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে নি। কেয়ার ফোনে কল আসাতে চলে যায় ঘরে আর সোহেল ফরাজীও মুচকি হেসে ঘরে চলে যায় রাত অনেক হয়েছে। ইহান বাড়িতে নেই এখনও হসপিটালে আসতে দেরি হবে।

খাওয়া শেষে ঔষধ খেয়ে ইশান নিজের ঘরে চলে যায়। ঘরে যাওয়ার আগে মাকে বার বার বলে গেছে যাতে চিন্তা না করে সে ঠিক আছে। খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে আজ। ঘুম প্রয়োজন গায়ে পরিহিত টি-শার্টটা সাবধানে খুলে সোফায় রেখে দেয়। ফ্রেশ হওয়ার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। তাই না ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পড়ে। শোয়ার সাথে সাথে রাজ্যের ঘুম এসে হানা দেয় দু চোখে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিরবির করে বলে।

–আজ আমার স্বপ্নে এক বার হলেও আসিস তীর। তর জন্য আমি অপেক্ষা করবো। খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতে চাই তকে নিয়ে আমি। যে স্বপ্নটা বাস্তবে পরিণত হবে। খুব বেশি ভালোবাসি তকে খুব। যার পরিমাণ আমি কখন তকে বলে বুঝাতে পরবো না। জানি না তুই আমার হবি কি না! তবে তকে নিজের করার জন্য যা করা দরকার সব করবো সব।

#চলবে________

বানান ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। পরের বার ঠিক করে নিবো। আর গল্পটা কেমন লাগছে বলবেন। অন্য লেখিকাদের মতো এতটা ভালো লিখি না আমি। যতটুকু পারি ততটুকুই লিখি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here