প্রনয়ের_দহন #Nusrat_Jahan_Bristy #পর্ব_২৪

0
349

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_২৪

গাড়ি থামে জনমানব শূন্য এক জায়গাতে। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ ভেসে আসছে রাস্তার পাশের ঝোঁপ থেকে, মাঝে মাঝে দুর থেকে ভেসে আসছে শেয়াল আর কুকুরের ডাক। তবে রাস্তার পাশে একটা সোডিয়াম লাইট জ্বলছে কিন্তু সেটাও খুব ক্ষীন আলোর। যে আলো দ্বারা এক জন আরেক জনের চেহারা ভালো করে বুঝতে পারবে না। আকাশে আজকে চাঁদ নেই মেঘেরা দল বেঁধে যেন চাঁদকে আঁড়াল করে রেখেছে যাতে ইশানের কষ্ট চাঁদকে না দেখতে হয়।

ইশান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। চোখে মুখে ফুঁটে উঠেছে বিষাদের যন্ত্রনা। তীরের অভিমানি মুখশ্রীটা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে। ইশানের দিক থেকে তীরের মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা ইশান যেন সহ্য করতে পারছে না। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছে। ইশান হাটু ভে*ঙে বসে পরে ফাঁকা রাস্তায়। বসার কিছুক্ষন পরেই ইশান আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে। চারিপাশ থেকে ইশানের চিৎকার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে নিজের কাছে। ইশানের চোখ বেয়ে দু ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। এত বেদনা এত বিরহে সইতে পারছে না আর। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখেও বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে পারছে না এক মুহূর্তের জন্য। বুকের বা পাশটা যে বড্ড যন্ত্রনা হয়! ইশানের এই যন্ত্রনা এক মাএ তীরেই পারবে লাঘব করতে। ইশান দু হাত দ্বারা চুল গুলা আঁকড়ে ধরে। অতঃপর কিছু একটা ভেবে স্টান দাঁড়িয়ে পড়ে আর বলে উঠে।

–আর পারবো না এত লুকোচুরি করতে। বলে দিবো সব আমি তীরকে যে ওকে আমি ভালোবাসি। আর সহ্য করতে পারবো না এই #প্রনয়ের_দহন। মনের ভেতরের অনুভুতি গুলা আর লুকিয়ে রাখতে পারব না। যা হওয়ার হবে আমি বলে দিবো ওকে সবটা খুব তাড়াতাড়ি। ভেবেছিলাম ওর আটারো তম জন্ম দিনের দিন বলবো কিন্তু না এখন সেই সময় এগিয়ে আনতে হবে না হলে তীর হয়তো আমার কাছ থেকে আস্তে আস্তে দুরে সড়ে যাবে। নাহ সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না।

বলেই ইশান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকাতেই চমকে যায়।

______

–তীর এখন তো ফুপানো বন্ধ কর আর কত কান্না করবি। আমাকে কিছু বলছিসও না আর কাউকে ডাকতেও দিচ্ছিস না। বলবি তো কি হয়েছে?

তীর অশ্রুসিক্ত নয়নে ইশার দিকে তকায়। তীরের এমন চেহারা দেখে ইশা কোমল কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে বল আমাকে না বললে বুঝবো কি করে?

তীর এবার তার জবান খুলে।

–আমি কি দেখতে খুব খারাপ ইশু!

–কে বলেছে এই ফালতু কথাটা? আমার বন্ধবী হলো একটা মায়াবতী যাকে দেখলে যে কেউ পছন্দ করবে।

–তাহলে ইশান ভাই আমাকে কেন তার মনের কথা বলছে না।

ইশার ভ্রু-কুচকে আসে। আবাক হয়ে বলে।

–মানে।

তীর বিয়ে বাড়ির ঘটনা থেকে শুরু করে যা যা হয়েছে তার সাথে ইশার কাছে সবটা খুলে বলে। ইশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না ইশান এত কিছু করতে পারে।

–কি বলছিস এসব তুই তীর। তার মানে ভাইয়া সত্যি তকে পছন্দ করে।

তীর মাথা নেড়ে সায় দেয়। ইশা এবার একটু ভাব নিয়ে বলে।

–দেখিস আমি বলেছিলাম না ভাইয়া তকে পছন্দ করে। আমার কথা তো তখন বিশ্বাস করিস নি এবার বিশ্বাস হলো তো।

তীর ভাঙ্গা কন্ঠে বলে।

–পছন্দ যদি করেই তাহলে এভাবে এভয়েড করে কেন আমাকে? কেন স্বীকার করে যে আমাকে ভালোবাসে।

–শুনেছি ছেলেরা কাউকে ভালোবাসলে সে ব্যাপারে খুব হিংসুটে হয়ে যায়। যাকে ভালোবাসবে তার আশেপাশে কোনো পুরুষ মানুষ দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে একেবারে। আর রেগে বোম হয়ে যায়।

তীর অবাক হয়ে বলে।

–তো!

–গর্দভ! ভাইয়া যদি তকে মন থেকে ভালোবেসে থাকে তাহলে অন্য কোনো ছেলের সাথে তেক দেখে ভাইয়া রেগে তার হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নিশ্চিত তকে ভালোবাসার কথা বলে দিবে ভাইয়া।

তীর ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে বলে।

–সিরিয়াসলি।

–বিশ্বাস না করলে ট্রাই করে দেখতে পারিস।

–কিভাবে ট্রাই করবো?

–পরে বলবো তকে এসব আমি। এখন রেস্ট নে তুই তর শরীর ঠিক নেই।

–আমি ঠিক আছি তুই বল।

–নাই তুই ঠিক নেই।

বলেই তীরকে জোর করে শুইয়ে দেয় ইশা।

_____

ইশানের সামনে তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির হেডলাইনের আলোর দ্বারা ভালো করেই বুঝতে পারছে ছেলে গুলা নেশাগ্রস্ত। হাতে নেশা করার জিনিসপএ। ইশান চারিপাশটা ভালো করে নজর বুলিয়ে দেখে সে এক ভুল জায়গাতে চলে এসেছে এবার তার সাথে কি হবে। সচারচর এই জায়গাতে রাতে কেউ যাতায়াতে করে না। সাড়ে নয়টার পরেই সব যাতায়াতে বন্ধ হয়ে যায় এই রাস্তার। কারন সাড়ে নয়টা পরেই শুরু হয় বখাটে, সন্ত্রাস, নেশাখোরদের আনাগোনা এই রাস্তায়। আর তাদের সাথে নানা ধরনের অস্ত্র থাকে যার দ্বারা সাধারন মানুষদের আক্রমন পর্যন্ত করে। ইশান ফেঁসে গেছে এখন এর থেকে উদ্ধার কি করে হবে? ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাতে হবে ইশানকে এই ব্যাপারটা তাই ছেলে গুলার উদ্দেশ্যে বলে।

–কি ভাইয়েরা কিছু বলবে?

ছেলে তিন জন এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকায়। কিছু একটা ইশারা করে একজন বলে উঠে।

–এই শালা একদম বেশি ভাব ধরবি না। তাড়াতাড়ি মাল বের কর না হলে কিন্তু একদম গুম করে দিবো।

ইশান চাইলে এদের সাথে লড়তে পারতো এতটুকু শক্তি আছে ওর কাছে। কিন্তু এদেরকে দেখে মনে হচ্ছে একজনের সাথে লড়তে গেলে আরেক জন এসে পিছন থেকে আঘাত করে বসবে। তাই কোনো বেজাল না করেই পকেট থেকে ওয়ালেট বের করে দেখে ওয়ালেটে মাএ তিনশো টাকা আছে। ইশান সেই টাকাটা ওদের দিকে ধরতেই ক্ষপ করে একজন নিয়ে নেয়। এক জন আরেক জনের মুখের দিকে তাকায়। এই তিনশো টাকা পেয়ে কতটা খুশি যে হয়েছে ওরা যা বলার বাহিরে। তিন জন পিছন ফিরে চলে যেতে নিলেই একজন ওই দুই জনের হাত ধরে থামিয়ে বলে।

–ভাই লোকটা অনেক বড়ো লোক। দেখ এত বড়ো গাড়ি
দাঁড় করানো পাশে আর আমাদের দিলো মাএ তিনশো টাকা। আরও টাকা নিবো এর কাছ থেকে যাতে পরের বার টাকা নিয়ে চিন্তা না করতে হয়।

অন্য ছেলে গুলাও সম্মতি জানায় এই কথাটাতে। তাই ইশানের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে।

–এই ব্যাটা আরও টাকা বের কর।

এবার ইশান কি করবে ওয়ালেট তো পুরা খালি। টাকার কোন নোট নেই যা আছে সব কার্ড। ইশান ওদেরকে বুঝিয়ে বলে।

–দেখো আমার কাছে আর কোনো থাকা নেই। যা ছিলো তোমাদের দিয়ে দিয়েছি।

–শালা আমাদের বোকা পেয়েছিস। এত বড় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিস আর বলছিস পকেটে টাকা নেই।

বলতে বলতে পেকেট থেকে একটা ধারালো ছুড়ি বের করে ফেলে। সেটা ইশানের সামনে নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে।

–টাকা বের কর না হলে কিন্তু এটা পেটে ডুকিয়ে দিবো।

এবার ইশান রেগে বলে।

–আরে বাপ আমার কাছে টাকা নেই বলছি তো।

–শালা আবার মিছে কথা বলিস।

বলতে বলতে ইশানের দিকে ছুড়িটা এগিয়ে নিতে নিলে ইশান বা হাতটা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সামনে ধরলে বা হাতেই ছুড়ি দিয়ে পোস মারে ছেলেটা। সাথে সাথে গলগলিয়ে রক্ত পরা শুরু করে হাত থেকে। অন্য দিকে ছেলেটা হিংস্র হয়ে বলে।

–টাকা বের না করলে কিন্তু মেরে দিবো একদম।

ইশান কি করবে মাথা কাজ করছে না। অন্য হাত দিয়ে ক্ষত স্থানটা চেপে ধরে রক্ত বের হচ্ছে আগে রক্তকরন বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সামনে থাকা মানুষ নামক পশু গুলা যে আবার আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে। ছেলেটা যেই আবার ছুড়ি নিয়ে আক্রমণ করতে যাবে ওমনি ইশান নিজের গায়ের সর্ব শক্তি দিয়ে ছেলেটার বুক বরাবর দেয় এক লাথি। ছিটকে পড়ে ছেলেটা এমনেতেই নেশা করে আধমরা হয়ে আছে তাই ইশানের লাথিতে নিজেকে সামলাতে পারে নি। অন্য দিকে দুটো ছেলে এক সাথে আক্রমণ করতে নিবে তখনেই একটা আলোর রেখা ফুটে উঠে ছেলে দুটো তৎক্ষণাত থেমে গিয়ে বলে।

–ভাই পুলিশ পুলিশ আসছে চল চল পালাই।

ছেলে দুটো তো পালিয়ে যায় কিন্তু যেটাকে ইশান লাথি মেরেছে সেটা অজ্ঞান হয়ে গেছে তাই নিচেই পড়ে আছে। ইশান তাড়াতাড়ি করে পকেট দেখে রুমাল বের করে ক্ষত স্থানটা চেঁপে ধরে। ইশানের এখন মনে হচ্ছে মার কথাটাই মেনে না বের হওয়াটাই উচিত ছিলো।

পুলিশের গাড়ি এসে থামে ইশানের সামনে। গাড়ি থেকে তিন জন পুলিশ নেমে ইশানের সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশ তিন জনের মধ্যে দু জনেই ইশানকে চিনে তাই ইশানকে চিনার সাথে সাথে বলে।

–ইশান স্যার আপনি এই রাস্তায় এ সময়।

–আসলে আমি।

–একি আপনার হাত থেকে তো রক্ত বের হচ্ছে।

–না না আমি ঠিক আছি কিছু হয় নি। আপনারা বরং ছেলেটাকে দেখুন ওই আমাকে আঘাত করেছে।

দুজন পুলিশ মিলে নেশাগ্রস্ত ছেলেটাকে তুলে দু হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয় না হলে কখন আবার আক্রমন করে দেয় তার ঠিক নেই। ছেলেটা দুলতে দুলতে পুলিশের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। একজন পুলিশ ইশানকে বলে।

–স্যার চলুন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই।

–না না আমি ঠিক আছে আর থ্যাংকস ঠিক সময় আসার জন্য।

–ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু হয় নি। এটাই আমাদের ডিউটি সাধারন মানুষকে হেল্প করা।

–ঠিক আছে। আমি তাহলে আসি।

–কিন্তু স্যার আপনি এই হাতে ড্রাইভ করবেন কি করে? বরং আমি আপনাকে ড্রাইভ করে বাড়ি দিয়ে আসি।

ইশান আর না করে কারন এই হাত নিয়ে ড্রাইভ করতে পারবে না। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতালে যেতে হবে। হাতটা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করা দরকার। হয়তো দু একটা সেলাইও লাগতে পারে।

#চলবে______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here