মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি #তাহিরাহ্_ইরাজ #পর্ব_১৬ ( প্রথমাংশ )

0
158

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৬ ( প্রথমাংশ )

কাবার্ডের সম্মুখে চিন্তিত বদনে দাঁড়িয়ে হৃদি। সুক্ষ্ম চাহনিতে পোশাকসমূহ অবলোকন করে চলেছে সে। কখনো ডানে, কখনো বামে। ওপর নিচও বাদ নেই। চারিদিকে তুষারের ন্যায় শুভ্রতা। সবই শ্বেত রঙা। ভিন্নতা কোথায় তন্মধ্যে!

” ধ্যাৎ! সবই সাদা রঙের। এতে এতো বাছবিচারের কি আছে? একটা নিলেই হলো। হুঁ। ”

আর কালক্ষেপণ না করে একটি সাদা রঙের পাঞ্জাবি বের করলো হৃদি। কাবার্ডের পাল্লা বন্ধ করে পাঞ্জাবিটা রাখলো বিছানায়। এরপর এগিয়ে গেল ড্রেসিং টেবিলের ধারে। রিস্ট ওয়াচ, ওয়ালেট, রিমলেস চশমা সবটাই হাতের নাগালে গুছিয়ে রাখলো। সে মুহূর্তে ক্ষীণ শব্দে উন্মুক্ত হলো ওয়াশরুমের দ্বার। জলে ভেজা শরীরে বেরিয়ে এলো ইরহাম। ডান হাতে তোয়ালে যা চালনা করে চলেছে ভেজা চুলের ভাঁজে ভাঁজে। শুষে নিচ্ছে প্রতি বিন্দু জলকণা। দ্বার উন্মোচনের শব্দ কর্ণপাত হতেই পিছু ঘুরে তাকিয়েছিল হৃদি। তবে তা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দীর্ঘকায় বলিষ্ঠদেহী মানবের সিক্ত গাত্র তার হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করলো। অক্ষিদ্বয় হলো অবাধ্য বেসামাল। দ্রুততার সহিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো মেয়েটি। এখনো ধুকপুকানি অনুভূত হচ্ছে অন্তঃপুরে। উফ্ কি এক শিরশিরানি অনুভূতির বহর! এদিকে দৃষ্টিপাত না করে ভেজা চুল মুছে তোয়ালে হাতে বেলকনিতে গেল মানুষটি। মেলে দিলো সুষ্ঠু রূপে। অতঃপর প্রবেশ করলো কক্ষে। কাবার্ডের ধারে অগ্রসর হতেই শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো মেয়েলি রিনিঝিনি স্বর,

” পাঞ্জাবি বের করে রেখেছি। ”

পদযুগল থেমে গেল। কৌতুহলবশত বিছানায় তাকালো মানুষটি। চক্ষুতারায় দৃশ্যমান হলো বিছানায় রাখা সফেদ পাঞ্জাবি। অধরকোলে অতি সুক্ষ্ম রেখা ফুটে উঠলো বোধহয়। ধীরপায়ে বিছানার ধারে গেল ইরহাম। হাতে নিলো পাঞ্জাবি। অতঃপর জড়িয়ে নিলো সুঠামদেহে। এবার তার পানে ঘুরে দাঁড়ালো হৃদি। এতক্ষণ ভিন্ন দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মানুষটির উদোম বক্ষপটে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে চায়নি সে। চায়নি কোনোরূপ নাম না জানা অনুভূতিতে আবিষ্ট হতে। হৃদি ড্রেসিং টেবিল হতে চশমা, রিস্ট ওয়াচ এবং ওয়ালেট নিয়ে স্বামীর নৈকট্যে উপস্থিত হলো। অপ্রত্যাশিত একের পর এক আচরণে চমকিত ইরহাম। যদিওবা তা চেহারায় পরিলক্ষিত হচ্ছে না। হাতে থাকা প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িয়ে দিয়ে হৃদি কৌতূহলী কণ্ঠে বললো,

” কাবার্ডে আপনার সাইড তো পুরোটাই সাদা। ভিন্ন কালারের একটাও পাঞ্জাবি দেখলাম না। এ কেমন কথা? হবু এমপি বলে অন্য রঙ ব্যান করে দিয়েছেন? ”

হৃদির হাতে থাকা রিস্ট ওয়াচ নিজ কব্জিতে গলিয়ে নিলো মানুষটি। জবাব না পেয়ে অধৈর্য স্বরে শুধালো মেয়েটি,

” কি হলো? বলুন। রাজনীতি করেন বলে অন্য রঙ পড়া নিষিদ্ধ? ”

পকেটে ওয়ালেট পুরে শান্ত কণ্ঠে বললো,

” এমন কিছু নয়। ”

” তাহলে? বিধবার মতো শুধুই সাদা পড়েন কেন? কত সুন্দর সুন্দর রঙের পাঞ্জাবি আছে। দাঁড়ান। আগামী সপ্তাহে শপিংয়ে যাওয়ার প্লান আছে। তখন আপনার জন্য ঝাঁকানাকা কিছু পাঞ্জাবি নিয়ে আসবো। একদম স্টাইলিশ ডিজাইনের। ”

চশমা হাতে নিয়ে প্রশস্ত আরশির সম্মুখে দাঁড়ালো ইরহাম। চুলে হেয়ারব্রাশ চালনা করতে করতে গম্ভীর স্বরে আপত্তি জানালো,

” প্রয়োজন নেই। ”

” আপনার না থাকতে পারে। আমার আছে। চোখের সামনে একটা মানুষ সারাক্ষণ বিধবার বেশে ঘুরবে আর আমি তা দেখে যাবো? নো। নেভার। আমি শীঘ্রই কিছু ডিজাইনিং পাঞ্জাবি কিনে আনবো। ”

হেয়ারব্রাশ রেখে চোখে চশমা পড়ে নিলো ইরহাম। কার রিং সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সে কক্ষ হতে প্রস্থান করলো। যাওয়ার পূর্বে সালাম দিতে ভোলেনি অবশ্য। হৃদি সালামের জবাব দিয়ে ডিভানে বসে পড়লো। অসন্তুষ্ট বদনে বিড়বিড় করে উঠলো,

” রষকষহীন একপিস! ”

কমলা এবং বাদামী রঙের মিলনমেলায় সজ্জিত রেস্তোরাঁটি। এর অভ্যন্তরটি অত্র এলাকার অন্যান্য রেস্তোরাঁ থেকে কিঞ্চিৎ ভিন্ন। রেস্তোরাঁয় ঢুকলেই একটি বড় কাঠের বোর্ডে তাদের ট্যাগলাইন ‘ ইট রাইট, থিংক রাইট ‘ আগত অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। কাঠের বোর্ড হতে দৃষ্টি সরিয়ে বিপরীতে বসা মানবীদের পানে তাকালো ইনায়া। বাদামি রঙা টেবিলের দু প্রান্তে বসে সে এবং তার বান্ধবীরা। কোলে আরামদায়ক ভঙ্গিতে রাখা তাদের কলেজ ব্যাগ। ইনায়া হাসিমুখে বললো,

” অনেকদিন পর তোদের সাথে রেস্তোরাঁয় আসা। তাই না? ”

” হাঁ রে। লাস্ট বোধহয় মাস দুয়েক আগে এসেছিলাম। ”

ইনায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আরেক বান্ধবী বললো,

” আগে প্রায়ই আসা হতো। এখন আর হয় না। হবে কি করে? আমাদের ইনু তো এখন কিপ্টে হয়ে গেছে। ”

” মোটেও নয়। পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই আসা হয়নি। ” বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো ইনায়া।

” তাই নাকি? তাহলে ভাবীর সাথে যখন ঘুরতে যাস তখন অসুবিধা হয় না? ”

ইনায়া অবাক চাহনিতে তাকালো বন্ধুরূপী সহপাঠীর দিকে। মেয়েটা বরাবরই এমন। কোথায় কখন কি বলতে হয় জানা নেই। ইনায়া কিছুটা অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বললো,

” ভাবী আর তোরা নিশ্চয়ই এক নস? আর ভাবীর সাথে রোজ রোজ বের হই নাকি? অত সময় কোথায়? শুধুমাত্র উইকেন্ডে বের হই। তা-ও অল্প সময়ের জন্য। আম্মুর অনুমতি নিয়ে। ওকে? ”

মেয়েটা কিছু বলতে উদ্যত হতেই আরেকজন তাকে থামিয়ে দিলো।

” আরে ভাই থাম তো। এ-ই ইনু। সে-ই কখন অর্ডার দেয়া হয়েছে। এখনো আসছে না কেন? ”

” এসে পড়বে। ধৈর্য ধর পেটুক রানী। ” হেসে বললো ইনায়া।

অবশেষে খাবার উপস্থিত। মোমো, পাস্তা এবং রিফ্রেশিং জুস। সবার জন্য। ট্রিট দিচ্ছে ইনায়া। খাবার দেখে সকলের খিদে যেন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। ফটাফট কয়েকটা ছবি ক্লিক করলো এক বান্ধবী। সবাই মিলে সেলফিও তুললো। অতঃপর শুরু হলো ভোজন পর্ব। খাওয়ার ফাঁকে মাঝেমধ্যে ইনায়ার দৃষ্টি স্বভাবতই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ দৃষ্টি আঁটকে গেল প্রবেশদ্বারে। রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করছে এক মানব, সঙ্গিনী রয়েছে এক মানবী। হাসাহাসিতে মাতোয়ারা দু’জনে। ওর পাশ কাটিয়ে গেল তারা। তবুও লক্ষ্য করলো না মানবটি। বসলো ইনায়াদের টেবিল হতে দু টেবিল পেছনে। তাই ওদের আর দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। যা অসহনীয় ঠেকছিল। যাতনা হচ্ছিল বুকে। তাই তো বিপরীত দিকে বসে থাকা বান্ধবীকে নম্র কণ্ঠে অনুরোধ করলো ইনায়া,

” দোস্ত তুই একটু আমার সাথে সিট এক্সচেঞ্জ করবি? ”

” এক্সচেঞ্জ করবো? কেন কি হয়েছে? এনি প্রবলেম? ” বান্ধবী উৎকণ্ঠা প্রকাশ করলো।

” আসলে কেমন সাফোকেশন হচ্ছে। একটু এখানে বস না। ” দুঃখী বদনে বললো ইনায়া।

বান্ধবী এতেই গলে গেল। সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পরিবর্তন হলো দুজনের সিট। ইনায়া বসলো বান্ধবীর স্থানে। এখান থেকে দু টেবিল পরে বসে থাকা মানবের পৃষ্ঠদেশ দৃশ্যমান। স্পষ্ট রূপে দেখা মিলছে মানবীর মুখখানি। যার অধরে লেপ্টে খুশির ছোঁয়া। দু’জনে কথোপকথনে লিপ্ত। তাদের হাসিমুখ, খুশিময় আভা ইনায়ার বুকে তীরের ন্যায় বি দ্ধ হচ্ছিল। র-ক্তক্ষরণ হচ্ছিল অন্তঃপুরে। মেয়েটি খেতে পারছিল না। বারবার ওদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হচ্ছিল। গলদেশে আঁটকে যাচ্ছিল পাস্তার ছোট ছোট টুকরো। ভেজা ভাব অনুভূত হচ্ছে চক্ষে। আর সইতে পারলো না কিশোরী ইনায়া। ত্বরিত ব্যাগ হাতে উঠে দাঁড়ালো। বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে বললো,

” তোরা খেয়ে নে। আমি যাচ্ছি। শরীরটা ঠিক ভালো লাগছে না। বিল পে করে দিচ্ছি। ”

” হেই ইনু! শরীর বেশিই খারাপ লাগছে? আমি সাথে আসবো? ”

” না রে। আ’ম ফাইন। তোরা এনজয় কর। আসছি।‌ আসসালামু আলাইকুম। ”

বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে কাঁধে ব্যাগ জড়িয়ে নিলো মেয়েটি। বন্ধুদের ভোজনের মূল্য পরিশোধ করে দ্রুত পায়ে রেস্তোরাঁ হতে বেরিয়ে গেল। যার জন্য এমন আচরণ সে কি আদৌ টের পেল এতসব?

প্রভাতের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ! ফজরের সালাত আদায় করে হাঁটতে বেরিয়েছে দাদি, নাতবউ এবং পুত্রবধূ স্কো*য়াড। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এর পুষ্প বাগানে নজরকাড়া পরিবেশ! ইস্ট ইন্ডিয়া রোজবে, হিবিস্কাস, গোলাপ, রোজ, ডালিয়া, জেসমিন, গাঁদা, ডেইজি প্রভৃতির নান্দনিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ নয়ন জোড়া। হালকা ঝিরিঝিরি পবন শিহরিত করছে তনুমন। দাদির হাত ধরে ধীরজ পায়ে হেঁটে চলেছে হৃদি। হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিচ্ছে একেকটি ফুল। তন্মধ্যে বেশকিছু ভেষজ ফুল রয়েছে। যাতে সন্তুষ্ট হলেন রাজেদা খানম।

” বাহ্! নাতবউ তো ম্যালা কামের আছোছ। যেমন কইছিলাম হ্যার থে আরো সুন্দর ব্যবস্থা করছোছ। ”

প্রশংসা শুনে কে না খুশি হয়! হৃদিও খুশি হলো। প্রসন্ন কণ্ঠে বললো,

” যাক দাদিমা! তোমার পছন্দ হয়েছে। আমি তো চিন্তায় ছিলাম। ”

” চিন্তা! কিয়ের চিন্তা? ” ভ্রু কুঁচকে তাকালেন দাদি।

হৃদি গম্ভীর মুখ করে মৃদু স্বরে বললো,

” পছন্দমতো না হলে যদি দুলারি বা রিনা খান হয়ে যাও? ”

অপ্রত্যাশিত জবাবে হতভম্ব রাজেদা খানম। আচমকা উনি সশব্দে হেসে উঠলেন।

” ফা জি ল মাইয়া। আমারে ভয় দেহাছ? তোরে ধইরা পি’ডান দরকার। ”

ভীত নয় বরং বিনোদন পেয়ে হেসে উঠলো হৃদি। মালিহা এতক্ষণ ফুল গাছের যত্ন নিচ্ছিলেন। ওদের হাস্য কলরব শুনে উনি হাতের কাজ থামিয়ে এগিয়ে এলেন। কাছে এসে প্রশ্ন করলেন,

” কি ব্যাপার মা? এত হাসছেন যে? ”

” হেইডা তোমার মাইয়ারে জিগাও বউ। ছে”মড়ি বহুত দুষ্টু আছে। ”

হৃদি গর্বিত ভঙ্গিতে বললো,

” আজ জানলে? আমি তো জন্মসূত্রে বাঙালি দুষ্টু। ”

মালিহা মৃদু হেসে ওর কানের পিঠে চুল গুঁজে দিলেন। হৃদি মুচকি হেসে দাদিকে নিয়ে বাগান জুড়ে হাঁটতে লাগলো। এসে দাঁড়ালো একটি ফুল গাছের নিকটে। গাছে থাকা শুভ্র রঙা ফুলগুলোকে দেখিয়ে বললো,

” দাদি এই ফুলটা চেনো? ভালোমতো দেখে বলো তো। ”

রাজেদা খানম তীক্ষ্ণ চাহনিতে অবলোকন করে চলেছেন ফুলগুলো। অনেকটা সময় ধরে গবেষণা করেও ব্যর্থ। চিনতে পারলেন না।

” কি? পারলে না? স্বাভাবিক। এটা ভিন্ন জাতের ফুল। ইস্ট ইন্ডিয়া রোজবে। এই ছড়ানো, ঝোপঝাড় ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা এবং পাঁচ থেকে আট ফুট চওড়া পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এটা সাদা, মোমযুক্ত গ্রীষ্মের ফুল বহন করে এবং তরঙ্গায়িত প্রান্তের সাথে আয়তাকার পাতা রয়েছে যা উপরে গাঢ় সবুজ এবং নীচে ফ্যাকাশে সবুজ। ভারত, চীন এবং থাইল্যান্ডের কিছু অংশের স্থানীয় এই গাছটি বিকাশ লাভ করে যেখানে তাপমাত্রা পঞ্চাশ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে থাকে। ”

” বুঝছি বুঝছি। এইডা হইলো গা ভারতী গো ফুল। ”

হৃদি সশব্দে হেসে বললো,

” শুধু ওদের নয়। আমাদের দেশেও জন্মে গো দাদি। ”

” হয় বুঝছি। এহন চল। ওই গোলাপ গাছের ধারে। ”

” চলো। ”

বৃদ্ধা দাদির হাত ধরে ধীরপায়ে এগোতে লাগলো হৃদি। বলতে লাগলো কত কি! স্বল্প দূরত্বে দাঁড়িয়ে মালিহা। মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করলেন এ দৃশ্য। উনি ভুল কাউকে পছন্দ করেননি। একদম সঠিক মানুষকেই পছন্দ করেছেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর মুহূর্ত হতেই প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর গোটা দেশ। দেশের আনাচে কানাচে চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টক শো, সর্বত্র নির্বাচনী আলাপচারিতা। ভোটারদের কাছে টানতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন প্রার্থীরা। ডিজিটাল প্রচারণা, বিভিন্ন ধরনের নির্বাচনী গান, গণসংযোগ, পরিচিত তারকাদের নিজেদের পক্ষে প্রচারে নামানো, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিসহ সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ফেসবুকে পেজ খোলাসহ প্রার্থীদের লাইভ করার মাধ্যমে এবারের প্রচারে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে পিছিয়ে নেই ইরহাম চৌধুরী নিজেও। সকাল হতে গভীর রাত অবধি চলছে প্রচারণা। এমপি পদপ্রার্থী ইরহাম চৌধুরীর বিপরীতে দাঁড়াচ্ছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজগর সাহেব। স্বাভাবিক ভাবেই যা বেশ মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। তবুও দমে যাচ্ছে না মানুষটি। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার আজ। ছুটির দিন। মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে প্রচারণা অভিযানে নেমে পড়েছে ইরহাম। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে এক রেস্তোরাঁয় সেরে নিয়েছে দুপুরের ভোজন। সেখানে নির্বাচন বিষয়ক টুকটাক কথাবার্তা হলো। অতঃপর ভোজন পর্ব সম্পন্ন করে লম্বা এক মিছিল বের হলো রাজপথে। অসংখ্য দলীয় কর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যমণি শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি পরিহিত মানুষটি। যার চোখেমুখে উদ্দীপনা, অদম্য এক চেতনা। অন্তরে এক ক*লুষতা বিহীন সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন। দেশনায়ক নয় বরং পথপ্রদর্শক হিসেবে তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করাই তার মূল লক্ষ্য। অপরাজেয় স্বপ্ন। মানুষটির প্রতিটি কদমে অনুপ্রাণিত হচ্ছে তরুণ সমাজ, দেশবাসী। সঙ্গ দিচ্ছে বিশ্বস্ত সহচরেরা। তার মুখনিঃসৃত দৃঢ় বাক্যে হারানো স্বপ্ন পূরণের আশা দেখছে নগরবাসী। সে স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি? নাকি অমানিশার ঘোর আঁধারে তলিয়ে যাবে!

মিছিল চলাকালীন সময়ে পথচারীদের হাতে বিলি করা হয়েছে অগণিত লিফলেট। ঢেউটিন মার্কায় ভোট চেয়েছে ইরহাম চৌধুরী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। বিকেলের নিউজে সম্প্রচার করা হয়েছে মিছিলের অংশবিশেষ।

জনবহুল শহরে তখন রাত্রি নেমেছে। আঁধারে তলিয়ে গোটা শহর। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতের ঘরে। ছোটোখাটো এক চায়ের দোকানে বসে ইরহাম। বিপরীত দিকে বসে বিশ্বস্ত সহচর সাহিল এবং দলের দু’জন ছেলে। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে ছোট ছোট চুমুক বসাচ্ছে মানুষটা। মনোযোগ সহকারে শুনছে সাহিলের কথা। সহসা পকেটে থাকা মোবাইলটি বেজে উঠলো। বিপ বিপ শব্দে সৃষ্টি হলো আলোড়ন। কথোপকথনে বাঁধা পেয়ে থেমে গেল সাহিল। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে পকেট হতে মোবাইল বের করে হাতে নিলো মানুষটি। ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঞ্চিত হলো কলার আইডি দেখে। বিলম্ব না করে ত্বরিত কল রিসিভ করলো সে।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। ”

চলবে.

[ আসসালামু আলাইকুম। পরবর্তী পর্বে অভাবনীয় দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত থাকবেন পাঠকবৃন্দ। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here