মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 36

0
465

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 36

🍁🍁🍁

আদিদের ড্রয়িং রুমে আয়াশরা সবাই বসে আছে। বসে আছে বললে ভুল হবে বলা চলে অনসন করছে৷ ওদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন করবে বলে জানিয়েছেন। আয়াশরের সাথে যোগ দিয়েছে মেঘা, রোদেলারা। অনশনের মূললক্ষ্য ফ্যামিলি & ফেন্ড সার্কেল নিয়ে পিকনিক। সবাই রাজি থাকলে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে আদি আর সিমথি। এই নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে সবার মাঝে তুমুল মতবিরোধ হচ্ছে। সিমথি বাচ্চাদের মতো এদের পাগলামি দেখে বাকরূদ্ধ। পিকনিকের জন্য কেউ অনশন করে নাকি। বিরক্তি নিয়ে মেঘাদের দিকে তাকাতেই মেঘা রা মুখ ঘুরিয়ে নেয় ।

আদি : বাচ্চাদের মতো জেদ করছিস কেনো বলতো। এখন কি পিকনিকে যাওয়ার সময়।

আয়াশ : তো কি বিয়ে করে ছেলেপেলে নিয়ে যাবো। আর তোর সমস্যা কোথায় বউ রেখে তো যেতে বলছি না। বউ নিয়ে যাবি। তোর রোমাঞ্চে ও কেউ ব্যাঘাত ঘটাবে না৷ একদম বাচ্চা হওয়ার সুখবর বানিয়ে আসবি।

মা-বাবার সহ বড়দের সামনে আয়াশের এমন লাজহীন কথায় সিমথির বিষম উঠে যায়। মেহেররা মিটিমিটি হাসতে শুরু করে। আদির মা-বাবা সহ সবাই হতভম্ব। এই ছেলে সবসময় লাজহীন। লজ্জায় বড়রা উঠে চলে যায়।

রিক : আয়াশ তোর আক্কেল জ্ঞান কবে হবে। আঙ্কেল আন্টির সামনে কিসব বলছিলি।

আয়াশ : কি এমন বললাম। শোন আঙ্কেল আন্টি ও এ সময় পার করেছে নয়তো আদিরা আসলো কোথ থেকে।

সিমথি : আয়াশ ভাইয়া থামো তো। যেমন গার্লফ্রেন্ড তেমনই বয়ফ্রেন্ড। একদম খাপে খাপ জুটিয়েছে।

মেঘা : হুমম জুটাবো না। নয়তো জীবনে ও আন্টি ডাক শুনতে পারবি না বুঝলি🤭

মেঘার কথায় সিমথির বিরক্তি আকাশ ছুঁই ছুঁই। সোফা থেকে কুশন নিয়ে মেঘার দিকে ছুঁড়ে মারে।

সিমথি : নির্লজ্জ একটা৷ পারলে বিয়ের আগেই বাসর করে ফেলিস তুই।

সিমথির কথায় মেঘা কাশতে শুরু করে। বাকিরা শব্দ করে হেসে উঠে।

সিমথি : এখন কাশছিস কেনো। বাসর করার শখ জাগলে বেডরুমে যা নয়তো এখানেই কর। আমরা আটকাবো না আর দেখবো ও না।

মেঘা : মুখে লাগাম টান বান্ধবী। ( মিনমিনে স্বরে)

সিমথি : হাহ। তোমরা বলতে পারবা আমি প্রতিত্তোর করলেই দোষ।

রিক : সিমথি কথা ঘুরাচ্ছিস তুই। আগে যাবি কিনা বল।

রোদেলা : ওদের পারমিশন কে চাইছে ভাইয়া। যাবো মানে যাবো দ্যাটস ফাইনাল। ওরা না গেলে তুলে নিয়ে যাবো।

ইশান : ওহহ ভাবীজ্বি রাজি হয়ে যাও না। তুমি রাজি হলেই আদি ভাইয়া রাজি হবে।

সিমথি : তোমার ভাই কি আমার জন্য না করছে নাকি। উনার না করার পেছনের কারণ আমিও জানিনা।

সিমথির কথায় আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

আদি : তোমার কি মনে হয়। আমি অন্য কারণে না করছি৷

সিমথি : আমি কিভাবে জানবো।

মেঘা : আরে ধ্যাতত যাবি কিনা বল। না গেলে না কর। রাগ উঠতাছে।

তিন্নি : ওহ কাকিয়া চলো না যায়৷ অনেক দিন হলো কোথাও যায় না। আমার ও শীতের বন্ধ দিয়েছে। চলো না যায় প্লিজ প্লিজ। ও কাকাই চলো নাহহহ।

তিন্নির কথায় সিমথি চুপ মেরে যায়। বেচারি অনেক আশা নিয়ে বসে আছে। এখন সেই আশা ভাঙতে সিমথির ও মন চাইছে না। অগত্যা রাজি হয়ে যায়।

সিমথি : ঠিক আছে যা যাবো। বাট অনলি দুইদিন।

সিমথির কথায় সবাই খুশি হলেও শেষের কথায় সবার মুখ চুপসে যায়।

আয়াশ : দিজ ইজ নট ডান। মাত্র দুইদিনে কি করবো। অন্তত পাঁচ ছয় দিন তো থাকবো।

আদি : তুই কি ওখানে গিয়ে বিয়ে করবি যে এতোদিন থাকবি।

রিক : ওই আদি তুই থাম বাগড়া দিস না মাঝে ।

রিকের কথায় আদি চুপ হয়ে যায় ।

সিমথি : কোথায় যাবে ঠিক করলে।

রোদেলা : সাজেক।

রোদেলার কথায় সবাই সহমত পোষণ করে।

সিমথি : ডেট ফিক্সড করে জানাস।

সিমথির কথায় সবাই সায় দেয় । তিন্নি আনন্দে লাফিয়ে উঠে সিমথির গালে চুমু খায়। সিমথি ও হেসে তিন্নিকে চুমু খায়। মেহেররা হেসে উঠে।

_________________

রাত দশটার দিকে ড্রয়িং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে। কাল রাতের দিকে সবাই পিকনিকে যাবে। তবে সেখানে কেবল ইয়াং জেনারেশন থাকবে। আদির মা-বাবা, চাচা-চাচী রা কেউই ওদের সাথে যেতে রাজি হয়নি। ওদের কথা ছোটদের মাঝে বড়রা গিয়ে কি করবে। অগত্যা আদিরাই যাচ্ছে। আড্ডার মাঝেই হঠাৎ ইশানের বাবা বলে উঠে,,,,

ইশানের বাবা : সিমথি

ইশানের বাবার কথায় সবাই থেমে যায়।

সিমথি : হ্যাঁ ছোট বাবা বলো।

ইশানের বাবা হাসফাস করতে শুরু করে। কথাটা বলবে কিনা ভাবছে। ইশানের বাবার অস্থিরতা দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়।

সিমথি : কিছু বলবে ছোট বাবা। তাহলে বলো।

ইশানের বাবা : আ আসলে তোর ভালো মা মানে মিসেস সীমা বেগম কে আমি যেই থানায় পোস্টে আছি সেই থানায় আনা হয়েছে। উনার শাস্তি হয়েছে জানিস কিছু।

ইশানের বাবা কথায় সিমথি হাসি মুখটা মুহূর্তে কালো হয়ে যায়। আদির বাবাসহ সবাই সিমথির দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি নিজের দিকে নিবদ্ধ দেখে সিমথি চোখ বুঁজে একটা শ্বাস ছাড়ে। নিজের আবেগ কে কন্ট্রোলে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,,,

সিমথি : আমি উনার খোজ রাখিনি ছোট বাবা। তাই কিছু জানিনা। কি শাস্তি পেয়েছে জানো।

ইশানের বাবা : ছয় মাস কারাবাস করার পর ফাঁসির অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

ইশানের বাবার কথায় সিমথি মাথা নিচু করে নেয়। দমিয়ে রাখা আবেগ টা হঠাৎ জেগে উঠতে চাইছে। সিমথি সেটা দমিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করে।

সিমথি : ওহ।

সিমথি আর কিছু না বলে ফোন আসায় একটু সাইডে চলে যায়।

_______________

রাত আটটা বেজে বিশ মিনিট। আদিদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। এখনো সায়নরা এসে পৌঁছায় নি। ওদের জন্যই অপেক্ষা করছে সবাই। শীতে সবাই কিছুটা কাঁপা-কাঁপি করছে। শীতের সাথে হালকা হিলেম বাতাস ও বইছে। বাতাস যেনো সবার শীতটা আরেকটু বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিন্নি গুটি-শুটি সিমথির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সব মেয়ের পড়নেই আজ ওয়েস্টার্ন ড্রেস। ওদের সাথে তুহা ও যাচ্ছে। সিমথি জ্যাকেট থেকে হাত বের করে তিন্নির গালে হাত রাখে।। শ্যাম বর্ণের মুখশ্রী ঠান্ডায় শীতল হয়ে আছে। সিমথি তিন্নিকে কোলে তুলে নেয়।

সিমথি : তুমি গাড়িতে বসো সোনা। ঠান্ডা লাগছে তোমার৷

তিন্নি : হুমমম। খুউবব ঠান্ডা।

তিন্নির কথায় সিমথি হেসে তিন্নিকে গাড়ির সিটে বসিয়ে দরজা খোলা রেখে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। তখনই আদি, ইশান, শাওন লাগেজ নিয়ে এসে গাড়ির ডিকিতে তুলে দেয়। আদিবারা একজায়গায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে মেঘারা ও আছে। ইশান আর শাওন ওদের কাছে চলে যায়। আদি একবার ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিমথির দিকে পা বাড়ায়।

আদি : এখানে একা একা কি করছো।

সিমথি : একা কোথায়। তিন্নি আছে তো।

সিমথির কথায় আদি গাড়ির ভেতর উঁকি দিয়ে দেখে তিন্নি ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আদি হেসে তিন্নি জায়গায় বসে তিন্নিকে কোলে তুলে নেয়।

আদি : শীত করছে তোমার কাকাই।

তিন্নি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আদি তিন্নিকে নিজের জ্যাকেটের ভেতর ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরে। ঠান্ডায় ওম পেয়ে তিন্নি বিড়ালের বাচ্চার মতো গাপটি মেরে বসে থাকে।

আদি : সিয়াজান জ্যাকেটের চেইন লাগাও। কুয়াশা পড়ছে অনেক।

সিমথি : ইট’স টোটালি ফাইন। এতো ঠান্ডা ও না।

আদি : কোনো কথা শুনো না আমার। বড্ড অবাধ্য তুমি।

সিমথি : আপনি বাধ্য তাই।

আদি : এখন থেকে কথা শুনবে।

সিমথি : আগে যা শুনতাম এখন থেকে সেটাও শুনবো না হুহ।

আদি : মাইর দিবো।

সিমথি : পারলে তুলুন হাত৷

সিমথির কথায় আদি থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত তুলে। সিমথি চোখ বন্ধ করে নেয়। অতঃপর মাথায় কারো স্পর্শে সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। আদি সিমথির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজেও হেসে দেয়।

আয়াশ : কি ভাই। সামনে ছোট বাচ্চা রেখেও তোদের রাসলীলা শেষ হয়না।

আদি : বন্ধু তুমি করলে প্রেম আর আমি করলেই রাসলীলা।

রিক : ওর ক্ষেত্রে সবই ঠিক আমাদের ক্ষেত্রে সবই ভুল। তাই নারে আয়াশ।

আয়াশ : তুই এমন ভাবে পেছনে লাগছিস মনে হচ্ছে তোর বাসর ঘরে সিসিটিভি লাগিয়ে রেখেছিলাম।

রিক : আহা তোর বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে না। আমাকে বললে আমিই তোদের লাইভ দেখাবো।

রিকের কথায় সবাই হেঁসে দেয়।

আদি : মনে রাখিস ডিরেক্ট লাইভ দেখানোর জন্য প্রস্তুত থাকিস।

রিক : এমন ভাবে বলছিস তুই তোর বাসর ঘরের লাইভ দেখাইছোস আমাদের।

আদি : আমার বাসর রাতে কিছু ই হয়নি জাস্ট ঘুম হয়েছে। এই ঘুমের লাইভ দেখে কি করতি তোরা বল। তাই তো দেখাইনি।

আদির কথার বলার ভঙ্গিমা দেখে সবাই হেসে উঠে।

_পিপপি

আচমকা আধো আধো বাচ্চার ডাকে সবাই হাসি থামিয়ে দেয়। সিমথি সামনে তাকিয়ে দেখে সায়নরা এসে গেছে। কথার ধান্দায় হয়তো কেউই গাড়ির আওয়াজ পায়নি। সায়নের কোলে ছোট্ট আদ্র সিমথির দিকে ঝুঁকে আসছে। ফর্সা মুখ টা ঠান্ডায় লাল হয়ে আছে বাচ্চাটার।

সায়ন : নে বোন। আমার ছেলে সারাদিনে আমাদের ও এতোবার মা-বাবা ডাকে না যতবার ওর পিপপি ডাক আসে।

সায়নের কথায় সিমথি হেঁসে দেয়। আদ্র কে কোলে নিয়ে শীতল গালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। হালকা উঁচু করে তুলে ধরে আদ্রকে।

সিমথি : পিপপি তুমি এসেছো। আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি বলো তো। তোমার বাবাই একটা পঁচা। শুধু দেরী করে। তাই না সোনা।

ছোট বাচ্চা সিমথির কথার আগামাথা না বুঝে অবুঝ চোখে তাকিয়ে আছে। সায়ন সিমথির দিকে পিটপিট করে তাকায়। কি মেয়ে নিজের ছেলের কাছে ওর নামে বদ/না/ম করছে ওরই সামনে।

আয়াশ : এতোক্ষণ কি বউ নিয়া দরজা লাগাইয়া রোমান্স করছিলি ভাই তুই। আসতে এতোক্ষণ লাগে।

সায়ন : মুখে লাগাম টান শা/লা। সামনে বোনেরা আছে।

মেঘা : হয়েছে হয়েছে চলো চলো। অনেকক্ষণ হলো এবার গাড়িতে উঠো।

মেঘার কথায় সবাই গড়িতে উঠে বসে। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রত্যেক গাড়িতে সবাই হৈচৈ এ মেতে উঠে। আয়াশদের গাড়ি থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে।

আাদি ড্রাইভিং করার ফাঁকে ফাঁকে সিমথির দিকে তাকাচ্ছে। সিমথি তিন্নিকে নিয়ে দুষ্টুমি করছে। আর মাঝে মাঝে হেসে উঠেছে দুজনই। আদি ঠোঁট কামড়ে হেসে মিরর দিয়ে পেছনে তাকায়। শাওন, মেহের, তুহা আর রোজ জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এদিকে কারোরই নজর নেয়। আদি কিছু একটা ভেবে সিমথির দিকে তাকায়। অতঃপর সিমথির চুলে টেনে ধরে।

সিমথি : আহ আদি কি করছো।

আদি : আরেহ সবাই সবার মতো ব্যস্ত। আমার দিকে ও একটু নজর দাও সিয়াজান।

সিমথি : অ’স’ভ্য’তা’মি রাখো। তিন্নি দেখছে।

আদি : তো দেখুক আমি কি আর তোমাকে কিচ্ছি দিচ্ছি।

আদির কথায় সিমথি ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে। এই ছেলে বুঝবে না। উল্টো চিল্লাবে। বেশকিছুক্ষণ পর তিন্নি নিজের ভর সিমথির উপর ছেড়ে দেয়। সিমথি তাকিয়ে দেখে তিন্নি ঘুমিয়ে গেছে। সিমথি সিটে মাথা হেলিয়ে আদির দিকে তাকায়। এই ঠান্ডায় ও গাড়ির জানালা খুলে রেখেছে আদি। যার দরুন চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ড্রাইভিং করছে। মাঝে মাঝে বাম হাতে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সিমথি আনমনে হেঁসে দেয়। তখনই আদি সিমথির দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে ” কি হয়েছে “। প্রতিত্তোরে সিমথি মাথা নাড়িয়ে কিছু না বুঝায়। আদি হেসে সিমথির ডান হাত নিজের বাম হাতের মুঠোয় পুড়ে মিরর দিয়ে পেছনের সবার মতিগতি বেখেয়ালি দেখে সন্তপর্ণে সিমথির হাতের উল্টো পিঠে নিজের অধর জোড়া ছোঁয়ায়। অতঃপর হাত ধরে রেখেই ড্রাইভিং এ মনযোগ দেয়।

চলবে,,,,,,,,

( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here