মিশেছো_আলো_ছায়াতে #Writer_Sintiha_Eva #part : 37

0
508

#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 37

🍁🍁🍁

আধঘন্টা আগে সবাই এসে রিসোর্টে উঠেছে। রিসোর্টের সবকিছু কাঠের তৈরি। রিসোর্টের পেছনে একটা বিশালকার মাঠ। সবাই নিজেদের নিজস্ব রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এখন হালকা একটু রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে সবাই ঘুরতে বের হবে। আজ আশেপাশে ঘুরাঘুরি করবে। কাল সকাল থেকে সবাই ঘুরাঘুরি স্টার্ট করবে। এতো লম্বা জার্নির পর কারোরই আজ আর বের হবার ইচ্ছে নেই। সিমথি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আদি বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে চোখ বুঁজে আছে। গায়ে এখনো কাল রাতের পোশাক বিদ্যমান। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে আদির কোনো ভাবগতি না দেখে সিমথির মাথায় প্রতিবারের মতো আজও দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি দেয়। সিমথি হাত থেকে টাওয়াল টা রেখে পা টিপে টিপে আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর ভেজা চুলের পানিগুলো আদির চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। কিন্তু আদির তাতেও কোনো নড়চড় না দেখে সিমথি ভ্রু কুঁচকায়। বিছানায় বসে আদির দিকে ঝুঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। কি হলো ঘুমিয়ে গেলো নাকি এই ছেলে। আচমকা কোমড়ে কারো হেঁচকা টানে সিমথি বিছানায় শুয়ে পড়ে। তখনই আদির সিমথির উপর ঝুঁকে দুপাশে হাত দিয়ে সিমথি কে আটকে দেয়।

সিমথি : আদি এভাবে কেউ টান দেয়।

আদি : আমি দেই।

সিমথি : উঠো উপর থেকে। ফ্রেশ হতে যাও। একটু পরই নাস্তার জন্য ডাক পড়বে।

আদি : তখন সেটা দেখা যাবে। আগে এখনের টা দেখি

সিমথি : কি দেখবে।

আদি : পানি ছিটালে কেনো।

সিমথি : দেখছিলা তুমি জেগে আছো নাকি ঘুমিয়ে গেছো।

আদি : ডাক দিতে পারতে। এটা কোন সিস্টেম ব্যবহার করলে

সিমথি : আ আসলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগছিলো তাই ডাক দিইনি। যদি ডিস্টার্ব হয় তোমার ঘুমের। হিহিহি

আদি : দিন দিন ভীষণ দুষ্টু হয়ে যাচ্ছো এটা জানো।

সিমথি : জানতাম না তো এখন জানি।

আদি : ফা/জি/ল

সিমথি : ফা/জি/ল হয় আর যায় হয় তোমারই তো।

আদি : তাই না।

সিমথি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় অতঃপর শব্দ করে হেসে উঠে। সিমথি মাথা নাড়ানো দেখে আদি ঘাড় ঘুরিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে দেয়। সিমথি আদির হাসির দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। আদি যতবারই এভাবে রিয়াকশন দিয়ে হেসে দেয় ততবারই সিমথি থমকায়। বুকের ভেতর ধপধপ শব্দ ক্রমাগত বাড়তে শুরু করে। সিমথি একরাশ ভালো লাগা, একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে আদির গালে হাত ছোঁয়ায়। আদি চমকে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হালকা উঁচু হয়ে আদির অধরে হালকা করে নিজের অধর ছোঁয়ায়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে সিমথি নিজের কৃতকর্ম অনুধাবন করে বেডে মাথা হেলিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। হঠাৎ করেই সিমথির নিজেকে হাঁপানির রোগী মনে হতে শুরু করলো। শ্বাস কেমন আটকে আসছে। আদি হতবাক হতভম্ব। এমন একটা সিচুয়েশনে সিমথির রিয়েক্ট দেখে সত্যিই আদির মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। অনিমেষ নয়নে তাকিয়ে থাকে সিমথি মুখের পানে। লজ্জায় ইতোমধ্যে সিমথির মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বন্ধ চোখজোড়া ক্রমাগত কাপছে। গোলাপি ঠোঁটের দিকে নজর যেতেই আদি ঘোরে চলে যায়। আদি একটা শুকনো ঢোক গিলে সিমথির গলায় মুখ গুঁজে দেয়।

__________________

নাস্তা শেষে সবাই ঘুরছে। আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা। হিমের বাতাসে একেকজন কেঁপে উঠছে। সন্ধ্যায় আকাশে ইয়া বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে। আজকে আকাশ একদম পরিষ্কার। আকাশজুড়ে কেবল তাঁরার মেলা। হাজার হাজার তারার মাঝে একটা মাত্র চাদের আলোয় চারপাশ টা ঝলঝল করছে। আদিরা যে রিসোর্টে উঠেছে সেই রিসোর্টে আরো একটা ফ্রেন্ড সার্কেল এসেছে পিকনিক করতে। অবশ্য ওরা মাত্র চারজন। খাবার সময়ই ওদের সাথে সিমথিদের দেখা হয়েছে। আপাতত ওরা সবাই একজোট হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এই ঠান্ডায় সবাই আইসক্রিম খাচ্ছে। আইসক্রিম খাওয়ার ভূত মূলত সিমথির মাথায় চেপেছে। সায়ন, আদি বারণ করলে সিমথির কথায় সই হলো। সিমথি তালে সব কয়টা মেয়ে তাল মিলিয়েছে। যার দৃশ্য স্বরূপ এই ঠানৃডায় প্রত্যেকের হাতে আইসক্রিম। অবশ্য খারাপ লাগছে না।

আদি : কারোর শুধু ঠান্ডা লাগুক সবগুলোকে মজা বুঝাবো।

আদির কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়

সিমথি : কি করবেন।

আদি : সেটা তখন দেখতে পারবে। সায়ন তোর বোনের মাথার তাড় কি ছেঁড়া ছিলো ছোটবেলায়।

সিমথি : এটা বউ থাকতে সমন্দি কে কেনো জিজ্ঞেস করছো। বেচারা তোমার জ্বালায় ভাবীর হাত ধরে ও শান্তি পাচ্ছে না। আমাকে বললেই তো আমি উত্তর দিয়ে দেয়। তো তোমার উত্তর হচ্ছে আমার মাথার তাড় কখনোই ছেঁড়া ছিলো না।

সিমথির কথায় সবাই হেঁসে দেয়। মিম লজ্জায় মাটির দিকে তাকায়।

সায়ন : পরী তুই আমার বোন তো।

সিমথি : কেনো কেনো কেনো। তোর সন্দেহ আছে। থাকলে বল ডিএনএ টেস্ট করবো। যদিও আমি সিউর আছি তোকে মা-বাবাই অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলো। সো ডিএনএ পজিটিভ কখনো হবে না।

সায়ন : আমি তোর বড়। তুই আমার আগে পৃথিবীতে এসেছিস নাকি আমি।

সিমথি : এই বুদ্ধি নিয়ে তুই এতোবড় বিজন্যাস চালাস। ইফাজ ভাই সত্যি করে বলো তো হিসেবে গড়মিল পাওনাকি।

সিমথির কথায় ইফাজ ও তাল মিলায়।

ইফাজ : এতোদিনে আমার বোনের নজর পড়লো আমার বিজন্যাসের উপর। বিশ্বাস কর বোন প্রত্যেক মাসে মাসে হিসেবে গড়মিল হয়।

সিমথি : ওকে কি বুঝে রেখেছো। ওকে দিয়ে তো পিয়নের চাকরী করানো ভালো।

সায়ন : পরী।

ইফাজ : ওই তুই ওর দিকে এভাবে তাকাস কেনো। ও আমার বোন।

রোজ : দিজ ইজ নট ডান। সায়ন ভাইয়াকে তোরা সবাই একঘরে করে দিচ্ছিস। সায়ন ভাইয়া ভয় নেই তুমি চালিয়ে যাও আমি আছি তোমার পাশে৷

সায়ন : এই না হলে আমার বোন।

তরী : রেড রোজ আগে নিজে ঠিক করে হাঁটতে শিখ পরে না হয় অন্যের পাশে দাঁড়াস।

ইফাজ : হাঁটতে গেলে যে একশবার হোঁচট খায় সে নাকি দাঁড়াবে আরেক গা/ধার পাশে।

ইফাজের কথায় রোজ আর সায়ন বাদে সবাই হেঁসে দেয়। রোজ গাল ফুলিয়ে সিমথির দিকে তাকায়।

রোজ : সিমথিপু তোমার ভাই আমাকে ইনসাল্ট করছে।

সায়ন : রেড রোজ বাদ দে। এরা কি বুঝবে আমাদের। ইনসাল্ট করলেই কি আর আমরা গায়ে মাখবো নাকি। ওদের মতো আলুপরেটা আমরা কত খেয়েছি।

সিমথি : ওয়াট ইজ আলু পরোটা। ভাইয়া তুই কি সত্যিই পা/গ/ল হয়ে যাচ্ছিস।

সায়ন : আলু পরোটা কখন বললাম।

ইফাজ : পল্টিবাজ একটা।

সিমথি : এহেম এহেম সেই দলে কিন্তু তুমি পড়ো ইফাজ ভাইয়া ।

ইফাজ : মানে

সিমথি : ওই যে পল্টিবাজ।

ইফাজ : যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।

ইফাজের কথায় সবাই হেসে দেয়।

আয়াশ : চলো লুডু খেলি বাজি ধরে।

আয়াশের কথায় সবাই সহমত হলেও মেঘা, রোদেলা, তুহিন, তন্ময় চারজন একত্রে চেঁচিয়ে উঠে।

_ কাভি নেহিইইইইই

আচমকা চারজনের চেঁচানো তে সবাই ঘাবড়ে যায়। সিমথি ঠোঁট কামড়ে হেঁসে দেয়। কারণ এখানে কেবল ওদের চেঁচানোর মানে সিমথিই জানে।

রিক : এভাবে চেঁচালে কেনো তোমরা।

মেঘা : নাহ নাহ লুডু খেলবো না৷

তুহিন : জিন্দেগী তে ও খেলবো না।

আদি : কিন্তু কেনো।

তন্ময় : সিমথির সাথে আমরা পারবো না। ওর একেকটা চাল পুরো কলিজায় এসে লাগে।

তন্ময়ের কথায় আয়াশরা বোকার মতো একে অপরের দিকে তাকায়। সিমথির দিকে তাকাতেই মেঘা রা আতঙ্কে ঢোল গিলে। এখনো লন্ডনের লুডু খেলার কথা ওদের মনে আছে। বাজি ধরে খেলেছিলো। সিমথি সেদিন জিতেছিলো। তাই সিমথি ওদের ডেয়ার দিয়েছিলো ভয়ানক। লন্ডনের যেই দিকটায় ওরা থাকতো সেদিকের জায়গা টা বেশ নির্জন ছিলো। রাত হলে ভূতের রাজপ্রাসাদ মনে হতো ওই জায়গা টা। আর বাঙালি হয়ে ভূতে ভয় না পেলে ইজ্জত থাকবে না। কোলাহল মুক্ত একটা নিরিবিলি জায়গায় দোতলা বিল্ডিং। নিচ তলায় থাকতো তন্ময় আর তুহিন সাথে একজন ওখানকার রুমমেট। আর দ্বিতীয় তলায় সিমথি, মেঘা, রোদেলা। বিল্ডিংয়ের বাম দিকে একটা বিলাশ মাঠ ছিলো। সেখানে পাশেই কয়েকটা কবর ও ছিলো। শীতের রাতে হারার ডেয়ার স্বরূপ সেদিন পুরো দুই ঘন্টা ওই কবরের পাশে মাঠে থাকতে হয়েছিলো ওদের। চারজনকে আলাদা আলাদা জায়গা ঠিক করে দিয়েছিলো সিমথি নিজে। সেদিন রাতে কি ভয়টায় না পেয়েছিলো ওরা চারজন। ভয় পাওয়ার কারণ সিমথি ওদের ভয় দেখিয়েছিলো। সেদিনের পরদিন সকালে সবাই কানে ধরেছিলো আর কোনোদিন লুডুর নাম ও নেবে না।

রিক : আরেহ সবাই এমন রিয়াকশন দিচ্ছো কেনো।

তন্ময় : আ আমি লু লুডু খেলবো না। তোমরা খেলো ভাই। আমি র রুমে যায়।

তন্ময়ের তোতলানো দেখে মেঘা, রোদেলা, তুহিন ও তোতলানো শুরু করে। ওদের অবস্থা দেখে আয়াশর হতভম্ব। সিমথি শব্দ করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে আদির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে দেয়। তবুও হাসি থামার নাম নেই। আচমকা সিমথির হাসিতে সবাই থমকায়। এতোদিনের পরিচয়ে সিমথি প্রথম প্রাণখোলা ভাবে হাসছে। কিন্তু এভাবে হাসার কারণ কেউই উদঘাটন করতে পারছে না।

তুহিন : হা/রা/মি হাসবি না। তোর জন্য লুডু খেলার উপর আমাদের আতঙ্ক জন্মেছে।

সিমথি : চুপ কর। বলদের গুষ্টি।

মেঘা : সিয়ু খারাপ হবে। বলদ বলবি না।

সিমথি : তোরা বলদ নাকি তোরা তো সাথে একেকটা ভীতু।

রোদেলা : চুপপ ফা/জি/ল।

রোদেলার ধমকে সিমথি মুখে আঙ্গুল দেয়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার হেসে উঠে। মেঘা, তন্ময়, রোদেলা, তুহিন রাগান্বিত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি অনেক কষ্টে হাসি থামায়।

সায়ন : পা/গ/লের মতো বিহেভ শুরু করলি কেনো। চল খেলা স্টার্ট করি।

তুহিন : তোমরা খেলো। এই সিমথির সাথে আর জীবনেও লুডু খেলবো না।

আয়াশ : কিন্তু কেনো।

সিসিমথি : আসলে একদিন,,,

মেঘা : ওই চুপ। ইট’স সিক্রেট বলা যাবে না।

মেঘার কথায় আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সিমথিও চুপ মেরে যায়।

মিম : আচ্ছা। সিক্রেট কিছুতে আগ্রহ দেখিয়ে লাভ কি। খেলা শুরু করি।

সিমথি : আরেহ ইয়ার কাম অন। কতবছর আগের কাহিনি এখনো মনে নিয়ে বসে আছিস। আচ্ছা যা প্রমিস এবার এমন কিছু করবো না। তবুও খেলাটা বিগড়ে দিস না।

তন্ময় : পাক্কা তো।

সিমথি : একদম।

সিমথির কথায় মেঘারা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর সবাই খেলা শুরু করে। সবাই দুইটা গ্রুপে ভাগ হয়ে নেয়। ছেলে Vs মেয়ে। খেলবে চারজন। কিন্তু বাকিরা পাশ থেকে উৎসাহ দেবে। চাইলে পার্টনার চেঞ্জ করতে পারবে। সিমথি&আদিবা, আদি& সায়ন, চারজন মেইন খেলোয়াড়। পরবর্তীতে যার খুশি সে চাইলেই পার্টনার চেঞ্জ করতে পারবে। খেলা শুরু হলে একে একে সবার গুটি উঠে যায়। সবাই পাশ থেকে ওদের পার্টনার কে চিয়ার আপ করছে।

আয়াশ : আদি ভাই আমার। মেয়েদের কাছে কোনো ভাবে হারিস না।

মেঘা : হাহ। সিমথি কে হারিয়ে দেখাও পারলে।

রিক : এতো কনফার্ম হইও না মেরি সিস।

রোদেলা : আরে বকবক রাখ তো। এদের কথায় কি আমরা হেরে যাবো। ছেলেরা অলরেডি মেয়েদের কাছে হেরে বসে আছে।

রোদেলার কথার মাঝেই আদিবা চেঁচিয়ে লাফিয়ে উঠে বাচ্চাদের মতো।

আদিবা : ভাইয়ার গুটি খেয়েছি ইয়াহহহহ।

আদি : এতো খাবার খেয়ে পেট ভরে না। শেষ পর্যন্ত গুটি খেলি।

সিমথি : আদি আপনি ও তো একটু আগে আমার গুটি খেলেন। তো আপনার ও কি খাবার খেয়ে পেট ভরেনি।

আদিবা : বেশ হয়েছে লাগ আরোও আমার পেছনে।

আদি : বউ আমার অথচ সাপোর্ট করে বিরোধী দলের হয়ে । পুরাই রাজাকার।

সিমথি : আপনি পাকিস্তান হলে আমি রাজাকার। একদম মেইড ফর ইচ আদার। প্রবলেম নেই। আর খেলার জায়গা নো রিলেশন।

আদি ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে সায়নের দিকে তাকায়। সায়ন হেসে খেলার মনযোগী হতে ইশারা করে। এরই মাঝে সায়ন আদিবার দুই গুটি ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। আদিবা কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়।

আদিবা : সায়ন ভাইয়া দিজ ইজ নট ডান ওকে।

সায়ন : খেলায় নো রিলেশন বুঝলি।

সায়নের কথায় সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ওর কথায় ওর পার্টনার কে ফেরত দিচ্ছে। জালিম একটা।

এভাবে একে একে আদিবা আর সায়নের সব গুটি উঠে যায়। বাকি রয়ে যায় সিমথি আর আদির গুটি। দুইজনেরই দুই দরকার। সিমথি আদির দিকে তাকায় আদি ও সিমথির দিকে তাকায়। সবার দৃষ্টি ওদের দুজনের দিকে। সিমথি ঠোঁট কামড়ে হাসে। আদি অসহায় দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।

তুহা : নাউ মেয়েরা এবার উইন হবেই। ভাবীজ্বি আমার একটা দুই প্লিজ তোলো৷

ইশান : আদি ভাই বউয়ের দিকে রোমান্টিক দৃষ্টিতে পরে তাকাস আগে আমাদের মান – ইজ্জত বাঁচা। একটা দুই

আদি বিরক্তি নিয়ে ইশানের দিকে তাকায়।

আদি : দুই কি আমার দ্বিতীয় বউ লাগে যে আমি চাইলেই আমার কাছে চলে আসবে।

আদির কথায় সিমথি হেসে উঠে।

আদি : সিয়াজান হাসবা না। খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে হাসে। নিষ্ঠুর মেয়ে।

আদি কথায় সবাই হেসে চেঁচিয়ে উঠে।

_ ওহহোহহহ সিয়াজানননন।

রোদেলা : হায় ডাকটা পুরা দিলে লাগছে।

শাওন : ভাই রোমান্টিকতা পরে করো আগে দুই তোলো।

সূর্য : আচ্ছা আফিন তোর কি মনে হয়। কে জিতবে।

আফিন : বলতে পারছি না। দুইজনই দুর্দান্ত খেলে। আর কি অবস্থা দেখ স্বামী – স্ত্রী বিরোধী দলে।

আফিনের কথায় সূর্য সহ ওর বাকি দুই বন্ধু ও হেসে উঠে। এদের সাথেই সিমথিদের আলাপ হয়েছে। একই রিসোর্টে উঠেছে তাই আর দূরে থেকে কি লাভ। একসাথে সবাই এনজয় করতে পারবে ভেবে সূর্য রা ও ওদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে ওদের সাথে যোগ দেয়। তারমধ্যে আফিন, আহানরা ও সিমথির সাথে কথা বলতে চাই।

এর মধ্যেই সিমথি নিজের চাল চালে। আদি সাথে সাথে চোখ বুঁজে নেয়। মনে মনে চাইছে দুই উঠুক। কারণ সিমথি কে হারতে দেখতে ওর একদম ভালো লাগবে না। আদির দোয়ায় কবুল হলো সিমথির দুই আসলো কিন্তু সিমথি মুহুর্তেই দৃশ্যপট পাল্টে দিলো। হাত দিয়ে ছক্কা ঘুরিয়ে দুইয়ের জায়গায় পাঁচ রাখলো। আয়াশরা সবাই বাকরুদ্ধ। মেঘারা চিৎকার করতে নিলেই সিমথির কাজে আওয়াজ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। সূর্য সমেত ওর তিন বন্ধুও হতবাক সিমথির কাজে। প্রায় মিনিট খানেক পর সবকিছু নিরব শুনে আদি চোখ খুলে। ছক্কায় পাঁচ দেখে হতাশ হয়। সিমথির দিকে তাকায়। দৃষ্টি স্বাভাবিক ঠোঁটের কোণায় হাসি।

সিমথি : এবার আপনার পালা মারুন।

আদি ঢোক গিলে। পুনরায় চোখ বুঁজে নেয়। মনে মনে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা জানায় দুই যেনো না উঠে। ছক্কা মারতেই লুডু বোর্ডে এসে চার পড়ে। আদি এখনো চোখ বুঁজে আছে। সিমথি আদির দিকে তাকায়। ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলছে আদি। সিমথি আগের মতোই হাত দিয়ে ছক্কা ঘুরিয়ে চারের জায়গায় দুই নিয়ে আসে। উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ। সিমথি জীবনে প্রথম বার নিজে যেছে নিজের হার এনেছে এটা তন্ময়দের কাছে আজ ফাস্ট। আয়াশরা, সূর্যরা অপলক দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকিয়ে আছে। সবার মনে একটা প্রশ্ন এতোটা ভালো একটা মেয়ে কিভাবে বাসতে পারে।

সিমথি : কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার আদিত্য চৌধুরী আদি। সিমথি জাহান সিয়া কে হারানোর ক্ষমতা রাখেন আপনি। আম ইমপ্রেসড।

সিমথির কথায় আদি চোখ খুলে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি হাসি মুখে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। আদি সবার দিকে তাকায়। সবাই কেমন স্ট্যাচু হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। লুডু বোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখে ছক্কায় দুই ঝলঝল করছে। আদি সিমথির দিকে তাকায়। মনে মনে ব্যথিত হলো। নিশ্চয় ওর সিয়াজান কষ্ট পাচ্ছে। আদির মুখটা মুহূর্তেই কালো হয়ে যায়।

মেহের : কিন্তু সিমথি

সিমথি : আহ মেহের আপু। সবাই এভাবে স্ট্যাচু কেনো হাত তালি দাও। ছেলেপক্ষ জিতেছে উইনার দের সংবর্ধনা স্বরূপ একটা হাত তালি তো প্রাপ্য তাই না।

বলেই সিমথি হাত তালি দেয়। সিমথির সাথে মেঘারাও সামিল হয়। মেঘারা তো জানে সিমথির কাছে আদি কি। তাই এটা নিয়ে অবাক হওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছু না। আদি কিছু না বলেই উঠে চলে যায়। সিমথি আদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। ওর জামাইজানের মুড অফ হয়ে গেছে বউ হারাতে। সিমথি আদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকায়। সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

সিমথি : ওহ হ্যালো গাইস আম সিমথি নট ভূত। এভাবে কি দেখছো সবাই।

আয়াশ : তুই ইচ্ছে করে হারলি।

সিমথি চুপ হয়ে যায়।

শাওন : আদি কে জানালে ও কষ্ট পাবে। ছেলেটা তোমাকে জেতাতে চেয়েছিলো।

সিমথি : আর আমি উনাকে।

শাওনরা চুপ মেরে যায়। সিমথি উঠে দাঁড়ায়।

সিমথি : কখনো কখনো হেরে গিয়ে জেতার আনন্দ পাওয়া যায় বুঝলে আয়াশ ভাইয়া। আর তোমার বন্ধু কাছে আমি আট বছর আগেই হেরে বসে আছি। তোমার বন্ধুই একমাত্র ব্যক্তি যে আমার হৃদয় কাঁপাতে পেরেছে। তাহলেই ভাবো কিছু তো স্পেশাল আছে উনার মধ্যে যে সিমথি জাহান সিয়ার মতো কঠিন মনের মানুষ কে ভালোবাসার জোয়ার ভাসাতে পারে। সো এই হারটা আমার জন্য নয়। বরং হেরে গিয়ে ও আমি জিতে গেছি কারণ তোমার বন্ধুকে আমি পেয়ে গেছি। উনাকে পাওয়া মানেই সব পাওয়া হয়ে গেছে আমার এসব লোক দেখানো জেতার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমি ইতোমধ্যে জিতে গেছি। যায় হোক তোমারা উনাকে বলো না এসব। আসছি। হিম পড়ছে রাত ও হয়েছে ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও ডিনার করতে হবে তো।

সিমথি চলে যায়। আয়াশরা সবাই সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আদির জন্য সিমথির ভালোবাসার সত্যি তুলনা হয়না। আদি সত্যিই লাকি পার্সন কারণ ও সিমথির মতো একজন ভালোবাসা পেয়েছে। জীবনে ভালোবাসাটায় দরকার। টাকা পয়সা তো সবই একদিন শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভালোবাসা এটা কমে না বরং বাড়ে যদি মানুষ দুটো সত্যি কার অর্থে ভালোবাসার মানে বুঝে। যেমন উদাহরণ স্বরূপ আদি সিমথিকেই তুলনা করা যায়। দুজনই চেয়েছিলো দুজনই জিতুক। যদিও একজন হেরেছে কিন্তু খেলা শেষে দিন শেষে হেরে গিয়ে ও সিমথি জিতে গেছে ভালোবাসার কাছে।

চলবে,,,,,

( আজ অনেক বড় পার্ট দিছি সো কমেন্ট ও করবা বড় বড়। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here