#ফানাহ্ 🖤
#পর্বসংখ্যা_৩৬(চূড়ান্ত অংশ)
#হুমাইরা_হাসান
বিব্রত, জড়ত্বপূর্ণ চেহারাতে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো, পরনের জামা টা হাত দিয়ে টেনে সোজা করলো, ওড়নাটা ভালো মতো গায়ে জড়িয়ে দাঁড়ালো এক কোণায়। দুইতালা বাড়িটা জুড়ে বিশদ আভিজাত্যের ছাপ। আড়ষ্টচোখে চারপাশ টা অবলোকন করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো।
গাড়িটা যথাস্থানে পার্ক করে ড্রাইভার এগিয়ে আসলো, কৃষ্ণাভ গড়নের লোকটি মাথার টুপিটি খুলে এক বাহুতে চেপে ধরে আরেক হাতে চাবি পকেটে পুরে বলল
– ভেতরে আসুন
কেমন একটা অজানা আশঙ্কা ক্রমেই ঘিরে ধরছে। হুট করেই আজ এইখানটার তলব কেনো এলো! মনটা কেমন কু গাইছে, প্রচণ্ড চিত্তগ্রাহী, প্রসংশা তুল্য বাড়িটির ভেতরে যেনো অজানা কোনো কিছু অপেক্ষা করছে যা মোটেও সুখকর হবে নাহ। এরূপ হাজারো দুশ্চিন্তা, কল্পনা ও অভিপ্রায় নিয়েই এগোলো রোমহ্নন পায়ে।
.
– অরুনাভ ব্যানার্জি? কাকে এই নামে ডাকছো তুমি?
ভারী গলার প্রশ্নসূচক কণ্ঠে মোহর এগোতে গিয়েও থেমে গেলো। আজহার মুর্তজা সকৌতুকে চেয়ে মেয়েলী মুখখানার দিকে। তার জিজ্ঞাংসুকে প্রশান্ত করে মোহর হতে জবাব টুকু আসার আগেই কাকলি বেগম ক্ষ্যাপাটে সুরে বলল
– এই মেয়ে যা তা বকছে। কাকে কি বলছে ও? মেহরাজ তোমার বউকে বলো নাক না গলাতে, আমার মেয়ে আমার পরিবার ওকে কে এতো ওস্তাদি করতে বলেছে? তাও যা নয় তা বলে যাচ্ছে।
মেহরাজ প্রত্যুত্তর না করলেও মোহরের দিকে চোখভরা উৎকণ্ঠা আর সওয়াল সুলভ চাহনিতে তাকালে মোহর মেহরাজের নিকট এগিয়ে এসে ভীষণ ধীমি গলায় বলল
– আমাকে বিশ্বাস করেন আব্রাহাম সাহেব?
মেহরাজ বুকভরা অজানা উৎকণ্ঠা, দুর্ভাবনা সত্ত্বেও একেবারেই পানির ন্যায় স্বচ্ছল চোখের ইশারা করলো। যার মর্মার্থ আর কারো দৃষ্টিগোচর না হলেও মোহরের ফুলে এক ফালি হাসি আনার জন্য যথেষ্ট ছিলো।
– তুমি আসলে কি বলছো আর কি করছো যানো? তোমাকে এসবে মাথা ঢুকাতে কে বলেছে, নিজের ঘরে যাও তুমি
আম্বি বেগম শাসনাত্বক গলায় বললেন এগিয়ে আসতে আসতে, তবে মোহর এবার আর জবাবের প্রয়োজন বোধ করলো না। তার আগেই কলিং বেলের ধাতব শব্দটা টানটান মুহূর্তে একটা নীরব হুল্লোড় ফেলে দিলো, চোখ দুটো আরও প্রসারিত করে মোহর এগিয়ে গেলো।
দরজাটা খুলতেই কাঙ্ক্ষিত চেহারাটা সামনে আসলেও এবার আর মুখের হাসিটা বহাল রাখতে পারলো নাহ। প্রিয়জনের ভেঙে পড়ার আশঙ্কা বুকে জিরিজিরি ব্যথার প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছে। তবুও যা সত্য তা আজ হোক আর কাল সকলের সামনে আসতেই হতো, ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস টেনে সরে দাঁড়ালো দরজা থেকে। আগন্তুকের হাতটা সন্তপর্ণে নিজের মুঠোয় আঁকড়ে নিলো, দৃঢ় বন্ধনটা জোরালো করে এগিয়ে নিয়ে এলো ঘরের ভেতরে,মধ্যিখানে।
সকলের উৎসুক, অনুসন্ধিতসু দৃষ্টি তখন মোহরের সাথে প্রবেশকারী সম্পূর্ণ আগন্তুক মানুষটার দিকে। হালকা বাদামি রঙের একটা সালোয়ার পরিহিত শুভ্রতার দিকে। হালকা পাতলা,ছোট খাটো গড়নের মেয়েটির মুখ জুড়ে জড়তা, বিব্রতের ছাপ। বিস্ময়ের রেশ কাটিয়ে শাহারা বেগম বললেন
– এটা কে মোহর?
মোহর এবার ঘুরে দাঁড়ালো অরুণের মুখোমুখি যার মুখটা আগন্তুকের আগমনেই রক্তহীন, পান্ডুরে পরিনত হয়েছে। মুখ চিরে নিজের সম্পূর্ণ অজান্তেই নামটা বেরিয়ে এলো
– শ্রীতমা!
চোখ দু’টো অদ্ভুত বিস্ময়ে ভরে এলো। এতগুলো মানুষের উপস্থিতি আর উৎকণ্ঠাকে অগ্রাহ্য করে শ্রীতমা বিস্মিতস্বরে বলল
– অরুন তুমি এখানে? এখানে কি করছো? তুমি তো চট্টগ্রাম গেছিলে!
পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়ে উঠলো, একের পর এক অদ্ভুত ঘটনায় তকমা লেগে বাকশক্তির খেঁই হারিয়েছে সবাই । ছেলের মুখের দিকে না তাকিয়েই রূপালি প্রচন্ড বিরক্তি আর তিক্ততা নিয়ে বলল
– কি যা তা শুরু করেছেন আপনারা? এই মেয়ে কি বলে যাচ্ছে তখন থেকে? এটা কি নাটক সিরিয়াল চলছে? কে এই মেয়ে আর আমার অরুণকে অরুনাভ ব্যানার্জি না কি এসব কেনো বলছে এই মেয়ে
– বলছি কেনো তা আপনার গুণধর ছেলেকেই জিজ্ঞাসা করুন, এই মেয়ে কে তার সাথে আপনার ছেলের কি সম্পর্ক তা আপনার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করুন। কেনো নিজের স্ত্রী, সন্তান থাকা সত্ত্বেও নিজের জাত, কূল, ধর্ম ভুলে মিথ্যে একটা পরিচয় বানিয়ে এই মেয়েটার সাথে সম্পর্কে জড়ালো তা আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞাসা করুন! এই রকম নিচ, বহুরূপী, ফ্রড একটা ছেলের হয়ে গলাবাজি করার আগে দশবার ভাবা উচিত ছিলো আপনার
সুনসান নীরবতাকেও হার মানালো আব্রাহাম ম্যানসনের ডাইনিং রুমটা। দশাধিক উপস্থিতিতে সত্ত্বেও নিঃশ্বাসের ফোঁসফোঁস শব্দ ছাড়া একটা টু শব্দ অব্দি সৃষ্টি হলো নাহ। মেয়েলী স্বরের তীক্ষ্ণ চিৎকার আর উচ্চশব্দে সব কটাক্ষ,হেয় আর ধমকানি মুহুর্তেই দমে গেলো। একে অপরের মুখে প্রচন্ড অসহায়ত্বক দৃষ্টি ফেলা ছাড়া কিছুই বোধগম্য হলো না কারো।
কিন্তু এটুকু বলেই দমে গেলো না মোহর, চিকন স্বরের কণ্ঠের খাদ আরও উচ্চরবে বলল
– এই যে আপনাদের ছেলে, এই বাড়ির সম্মানিত জামাতা। সে নিজের বউ রেখে অন্য একটা মেয়ের সাথে অগাধ সম্পর্কে জড়িয়েছে তাও নিজেকে হিন্দুধর্মী বলে দাবী করে! সেই খোঁজ জানা আছে? ছেলে আর তার বউয়ের সম্পর্ক স্বাভাবিক না বলে চলে এসেছেন বউকে দোষারোপ করতে, নিজের ছেলে আদও কতটা চরিত্রধার তার হিসেব রেখেছেন? বলুন রেখেছেন?
দম ছাড়লো লম্বা একটা, আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই দূর্বল, সিক্ত একটা কণ্ঠ কানে আসতে থমকে গেলো মোহর, ঘাড় ঘুরিয়ে বিচলিত চোখে তাকালো নিস্তেজ, নির্বাক রূপে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।
দু কদম এগিয়ে গেলো শ্রীতমা, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
– অরুনাভ এরা কি বলছে? এরা কে হয় তোমার? কিসের বউ বাচ্চা, কিসের মিথ্যে নাটক? বলো অরুন চুপ করে থেকো না বলো মোহর কি বলছে এসব? এসবের মানে কি?
অরুণ কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পেলো, ঠিক এভাবে সবার সামনে সবটা উন্মোচন হবে এটা ভাবতেও পারেনি, এখন কি জবাব দেবে? নাকচ করার মতো পরিস্থিতি কি আদতেও বাকি আছে!
টলটলে দৃষ্টি, টলমলে পা। অন্তরপুরি তে কতটা
শ্রীতমার ভেতরে যে উথাল-পাথাল ঝড় উঠেছে, কতটা তীব্র দহন ছড়িয়েছে তা কি মুখে বলে বোঝানো সম্ভব? সকালে ফোনের রিংটনে ঘুম ভাঙলেই শুনতে পেয়েছিলো প্রিয় পরিচিত এক কণ্ঠের আদেশ সুলভ অনুরোধ ‘ তোর হোস্টেলের নিচে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, এক্ষুনি ওটাতে করে চলে আই। প্রশ্ন করিস না,আমিই পাঠিয়েছি গাড়িটা ‘
প্রাণপ্রিয় বিশ্বস্ত বান্ধবীকে আর দ্বিতীয়টি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়নি জবাবে।সদা সর্বদা বাধ্য মেয়ের মতোই আদেশ মতন চলে এসেছে। কে জানতো এখানে এতো বড়ো প্লবন অপেক্ষা করছে ওর জন্য? যা ওর এতগুলো দিন ধরে গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু সুখের রাজ্য টাকে নিমিষেই ছারখার করে দেবে!
– আমি বলছি এসবের মানে কি।
এই মুহুর্তে ঠিক শ্রীতমার মতোই আরও একজনের মনে তুফান আসার কথা ছিলো। বিস্ময়, আঘাত, যন্ত্রণায় বুক ফেটে কান্না আসার কথা ছিলো কিন্তু সেই মানুষটা এসব অনুভূতিকে ভীষণ দাম্ভিকতার সহিত ঠেলে দিয়ে মুখভর্তি স্বাভাবিকতা নিয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো শ্রীতমার পাশাপাশি। যেনো মুখস্থ ছড়া আওড়াচ্ছে, এরূপের ন্যায় স্পষ্ট ভাষায় বলল
– তুমি যতগুলো প্রশ্ন করলে এর সবগুলোর উত্তর আমি দেবো। এই যে মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে তোমার সামনে, যাকে তুমি গত কয়েক মাস ধরে ভালোবেসে নিজের প্রেমিক,ভবিষ্যৎ পুরুষ অরুনাভ ব্যানার্জি বলে জেনে আসছো আসলে সে হলো অনল মাহমুদের জেষ্ঠ্য পুত্র অরুণ মাহমুদ, যার সাথে আড়াই বছর আগে আমার বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো আর মাস ছয়েক আগে আমাদের একটা কন্যা সন্তান ও হয়েছে। আইন অনুযায়ী আমি এখনো যার লিগাল ওয়াইফ।
নিজের অজান্তেই টুপটুপ করে অসংখ্য অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো শুভ্র মুখটা জুড়ে। এখনো সবটা অস্পষ্ট, গোঁজামিলে ঠেকছে। অনড় তাকিয়ে রইলো সামনে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা অপরাধীর পানে যে কি না এতো বড়ো পাপ করেছে তার বিক্ষোভে একটা নয় দু দুটো জীবন আজ বিধ্বংসী মোড়ে দাঁড়িয়ে। তবুও শেষ বারের মতো একবার বুক ভরা আশা নিয়ে শ্রীতমা এগোলো, অসহায়, নির্জীব কণ্ঠে অনুরক্তির স্বরে বলল
– তুমি চুপ করে আছো কেনো অরুনাভ? একটা বার শুধু তুমি বলো এসব মিথ্যে,নাটক। তোমাকে মিথ্যে অপবাদে জড়াচ্ছে এরা, আমি তাই মেনে নেবো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি খুব। তুমি ছাড়া আমার নিজের বলে কে থাকবে? তুমি একটা বার শুধু বলে দাও এরা মিথ্যা বলছে আমি সব নিকৃষ্ট কথাগুলো ভুলে যাবো। তুমি বলো না একবার বলো!
তিব্র অনুরোধ, অসহায়ত্ব নিমিষেই কান্নার ফুলকিতে পরিনত হলো। স্থান,কাল, পরিস্থিতি ভুলে বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পরলো শ্রীতমা, ওর বিধ্বস্ত অবস্থাটা মোহরের অন্তরটা চুরমার করে দিলো, ওকে দু’হাতে আগলে ধরে বলল
– শ্রী শান্ত হ। আমি তোকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুই যাকে এতটা ভরসা করে ভালোবাসছিস নিজের সবটা দিয়ে, সে আদও কে। তুই কেনো শুনিস নি বল, এই মানুষটা একটা ঠক। তোকে ঠকিয়েছে, ব্যবহার করেছে। এর জন্যে তুই কেনো কাঁদবি বল। আমার কথা টা শোন
মোহরের হাতটা তিক্ততার সাথে ছাড়িয়ে নিলো শ্রীতমা। নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে অরুণের দিকেই তাকিয়ে।
মেহরাজ এগিয়ে এসে অরুণের সামনা-সামনি দাঁড়ালো, ওর ক্ষুব্ধ চেহারায় তাকিয়ে আজহার শঙ্কিত গলায় বলল
– মেহরাজ, তুমি আগেই..
পুরোটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে যেতে হলো বাঘের থাবার ন্যায় হাতটার ইশারায়। তীক্ষ্ণ চোখটা অরুণের দিকে তাক করেই নিজ পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলল
– তোমরা এতদিন, এতক্ষণ বলেছো। অনেক বলেছো। এবার যা বলার আর যা করার আমি করবো। কারো মতামত বা পরামর্শ যেনো ভুলেও আমার কান অব্দি না আসে
শান্ত অথচ প্রচণ্ড ধারালো শব্দের নীরব ধমকানিতে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো বাড়িটির প্রতিটি দেওয়াল। কাজের লোক / স্টাফ’স গুলো রান্নাঘরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এদিকের অবস্থাটা বোঝার দায়ে।
মেহরাজ ক্ষ্যাপাটে মুখটা অরুণের দিকে নিক্ষেপ করে বলল
– তোমার কিছু বলার আছে অরুণ? নিজের হয়ে সাফাই গাইবে না? এক্সপ্লেইন্যাশন দেবে না? নাকি ভদ্র কা’লপ্রিটের মতো সবটা শুরুতেই মেনে নিলে।
-, ও কি সাফাই গাইবে, রাতের পর রাত কাজের বাহানা দিয়ে বাইরে বাইরে থেকেছে। ওর ফোনে মেয়েদের অসংখ্য ফোন কলস,ম্যাসেজ গায়ে মেয়েলি পারফিউম এমনকি ওর পকেটে আমি কতো বার মেয়েলী জিনিস দেখেছি।এসব অগ্রাহ্য করতে পারবে? মেয়েদের সাথে ওর ফোনালাপ আমি নিজ কানে শুনেছি সেই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে উল্টো আমাকেই দোষারোপ করেছে, এসবের পরেও ও কোন মুখে বলবে!
অরুণ কথার খেই হারিয়ে নির্বাক,নিশ্চুপ। শ্রীতমার সাথে সম্পর্ক অস্বীকার করার কোনো রাস্তায় নেই। কারণ শ্রীতমার ফোনে ওদের অসংখ্য গোপনীয় ছবি ক্যামেরাবন্দী করা। তার একটাও যদি প্রমাণ স্বরূপ দেখিয়ে দেয় ওর হাড় গুলো ও হয়তো আস্তো রাখবে না মেহরাজ। বহুক্ষণ আমতা-আমতা করেও মুখ চিরে কোনো শব্দের আগমন ঘটাতে পারলো নাহ।
অনল মাহমুদ মাথা হেট করে তাকিয়ে আছে ছেলের দিকে। বড়ো মুখ করে যাদের অপমান করতে এসেছিলো তাদের সামনেই এখন লজ্জায় অপমানে নুইয়ে আসছে ব্যক্তিত্ব। ক্ষুব্ধ হয়ে খিটখিটে গলায় ছেলেকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠা’স করে সপাটে চ’ড় বসিয়ে দিলো। মেহরাজের বুলি নিজেই ছিনিয়ে নিয়ে বলল
– ছিহহ,,তোর মতো নালায়েক কে জন্ম দিয়ে আমি পাপ করেছি। এত বড়ো একটা পাপ তুই করলি? নিজের বউ থাকতে অন্য একটা মেয়ে? মানুষের সামনে আমাদের মান সম্মান সব উড়িয়ে দিলি, লজ্জা করছে না তোর!
এখানেই থামলো নাহ। সকলকে অগ্রাহ্য করে ছেলেকে যা নয় তা বলে গেলেন। আর এতো সবের একটাই কারণ, তা হলো মেহরাজ। ওর চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে নাহ, নিজের ছেলের মতো চুনোপুঁটিকে মেহরাজ পায়ের তলে পি’ষার ক্ষমতা রাখে তা কারোই অজানা নয়। ভয়টা সম্মানের চেয়ে নিজের ছেলের প্রতিই বেশি হচ্ছে এখন।
মেহরাজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো নাহ, বোন আর তার সন্তানটার প্রতিচ্ছবি চোখে ভেসে উঠলেই ক্ষিপ্ত হয়ে অরুণের কলার টেনে ধরে বলল
– রাস’কেল! কি মনে করিস নিজেকে। তুই কার সাথে ছেলে খেলা করিস। তাথই কে? তোর বিয়ে করা দাসী? নাকি মনোরঞ্জন করার খেলনা। তুই কাকে ধোকা দিস,ব্যবহার করিস। এতদিন আমি চুপ ছিলাম কারণ আমার বোন কথা বলতে দেয়নি, আজ তোকে মে’রে ফেললেও…
– উনাকে ছাড়ুন, প্লিজ রেগে গিয়ে কোনো অঘটন করবেন নাহ
মেহরাজকে জোর করে হাত ধরে সরিয়ে আনলো মোহর, প্রচণ্ড ক্রুদ্ধতায় মোহরের চেহারাটা দেখে মেহরাজ প্রত্যুত্তর করলো নাহ। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে নাহ। মোহর ব্যস্ত হয়ে বলল
– আমি অনুরোধ করছি এমন কিছু করবেন না যাতে অনাচার সৃষ্টি হয়।
– ভাইয়া তুই ওকে ছাড় প্লিজ। ওকে চলে যেতে বল, এক্ষুনি চলে যেতে বল। আমি কিচ্ছু চাইনা শুধু ওর চেহারা টা যেনো আমার সামনে আর না আসে। আমি আজ অব্দি কিছু বলিনি, এর পরেও বলবো না কিন্তু দোহাই তোদের ওকে সরা আমার চোখের সামনে থেকে, আমি সহ্য করতে পারছিনা আর ওকে।
বিরক্তি আর ক্রোধে তাথইয়ের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। মেহরাজ বোনের দিকে তাকিয়ে ওকে বোঝাতে গেলেও তাথই শুনলো নাহ, অস্থির হয়ে বলল
– ভাইয়া তুই অন্তত আমার কথাটা শোন। আমি কিচ্ছু চাচ্ছি না আর। ওকে কিছু কি বলবি আমার জীবনটার এই অবস্থাটা তো আমার নিজের মানুষ গুলোই করেছে, নিজেদের স্বার্থে আমাকে ওরা বিয়ের নামে বিক্রি করেছে।আমি শুধু আমার মেয়েকে নিয়েই বাঁচতে চাই একটু শান্তিতে। ওকে চলে যেতে বল ভাইয়া আমি আর ওদের সহ্য করতে পারছিনা।
আজহার মুর্তজা চুপ করে থাকলেও আরহাম ছুটে এলো। সমস্ত ভদ্রতার মুখোশ চিরে উচ্চস্বরে বলল
– এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। অনেক ভালো মানুষি দেখিয়েছি। এক মুহূর্ত আপনাদের মুখ দেখতে চাইনা। আপনার ছেলে যা করেছে তার শাস্তির এক ফোঁটাও মাফ যাবে না। যা দেখার কোর্টে দেখা যাবে
মুর্তজা পরিবারের ক্ষমতা, খ্যাতি আর হাতটা যে ঠিক কতদূর লম্বা হতে পারে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইনা। আপাতত পরিস্থিতি বাঁচাতে অনল মাহমুদ ছেলের হাত ধরে ক্ষিপ্ত পায়ে বেরিয়ে গেলো। অসম্মান, অপমানে মাথা হেট হলেও প্রত্যুত্তরের কোনো সুযোগ নেই। মুহুর্তেই বাড়ির ত্রিসীমানা পেরিয়ে যেতেই তাথই আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো নাহ। ছুটে নিজের ঘরে চলে গেলো। এতক্ষণ নিশ্চুপ থাকলেও নিজের বোনকে এই পরিস্থিতিতে একা ফেলাটা কতটা অসমীচীন তা ঠিক বুঝতে পারলো সাঞ্জে, তাথইয়ের পিছু পিছু ওউ ছুটলো।
কিন্তু তখনো স্থির রইলো শ্রীতমা। ওর এখনো সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে, আদও কি এটা বাস্তব? এতটা নাটকীয় ও হয় বাস্তবতা? এভাবে ঠকে যায় মানুষ! কাল রাত অব্দি যার সাথে কথা বলল সেই মানুষটার এই রূপটা আজ কি করে সহ্য করবে ও! আকাশ পাতাল উচাটন সামলাতে পারলো না শ্রীতমা, সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে, কাঁধের উপর কারো হাতের স্পর্শ পেলেও ঘুরে তাকালো নাহ। এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে সরে এলো। শরীরের সমস্ত শক্তি চিরে ছুটলো। মোহর ওর পেছনে আসলেও শ্রীতমা ওর কোনো কথায় কানে নিলো না, এক ছুটে গেট পেরিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়িটার চৌহদ্দী মাড়িয়ে।
দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটতে ছুটতে অনেকটা পেরিয়ে এলো, চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসছে, কোনো কিছুই মস্তিষ্ক ঠাওর করতে পারছে না। বাবা-মা পরিবার হীনা এতিম জীবনে একটা ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলো। সেটাও মিথ্যে! এতো নিষ্ঠুরতম নাটক!
আর ভাবতে পারছেনা কিছুই,প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত মন মস্তিষ্ক, টলমল চোখ আর পায়ে ছুটতে ছুটতে হুট করেই রাস্তার মাঝখানে এসে দাঁড়ালো, অদূর হতেই তীব্র বেগে ছুটে আসলো একটা গাড়ি।
প্রচণ্ড বেগে লাগাম টেনে ব্রেক কষার আগেই ধাক্কা লাগলো শরীর টাতে,ছিটকে পড়লো রাস্তার মাঝে
.
.
.
চলমান
#হীডিংঃ অসময়ে হুট করেই অনাকাঙ্ক্ষিত উপহারটি দিয়ে যেমন চমকে দিলাম, তেমনই শিগগির পড়ে ফেলে আপনাদের অতীব প্রাণোচ্ছল মন্তব্য গুলো ফটাফট লিখে ফেলুন।
©Humu_❤️