বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৪) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
299

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

“মেয়ে তো মা’শা আল্লাহ বড়ো হয়েছে। কলেজেও উঠে গেছে। তো ভাবি কিছু ভেবেছেন তাকে নিয়ে?”

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে আরশির মায়ের দিকে চেয়ে কথাটা বলে খাদিজা আন্টি। উপরের ফ্লাটেই থাকে তারা। কথাটা বলে অপেক্ষা করলেন না তিনি। আরশির মা কিছু বলার আগেই তিনি পূনরায় বলে,
“যদি কিছু ভেবে থাকেন, তাহলে আমার কছে একটা ভালো পাত্রের সন্ধান আছে। ছেলে উচা-লম্বা দেখতে শুনতে ভালো। ইতালি থাকে, সেখানে নাগরিকতা আছে তার। বিয়ের পর বউকেও নিয়ে যাবে সেখানে। এক কথায় কোনো দিক দিয়ে বাছাই করার মতো না।”

আরশির মা ক্ষনিকটা সৌজন্য মূলক হেসে বলে,
“আরশিকে নিয়ে এখনো এমন কিছুই ভাবি নি। সবে মাত্র স্কুল পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলো। বাচ্চা মেয়ে, তাছাড়া আমাদের আর কোনো সন্তানও নেই। বড়ো মেয়েটাও বিয়ে দিয়ে দিলাম। তাই তাকে এতো তাড়াতাড়ি দেওয়ার তেমন কোনো চিন্তাভাবনাও নেই। পড়াশোনা করছে করুক।”

খাদিজা চাচি কিছুটা হেসে বলে,
“স্কুল পার হলেই কেউ আর বাচ্চা থাকে না ভাবি। মেয়েরা বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট করে বেশির ভাগ কলেজে উঠার পরই। আধুনিক যুগ। এমন কিছু ঘটার আগেই মানসম্মানে মেয়েকে কোনো ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।”

ফোন হাতে বসে আছে আরশি। পাশের রুম থেকে খাদিজা আন্টির এসব কথা শুনে যেন রাগে শরির রি রি করছে তার। খুব করে মুখের উপর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, অন্যের মেয়েকে নিয়ে আপনার এত ভাবতে হবে না। আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য আমার বাবা মা আছে।
ইচ্ছে হলেও ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ বসে রইল সে। আশেপাশে এমন কিছু মানুষের কারণেই অনেক মেয়ের অকালে বিয়ে হয় আজকাল।

তিনি চলে যাওয়ার পর আরশি মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
“আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি, আম্মু?”
মেয়ের এমন কথায় মা কিছুটা হেসে বলে,
“এমন কেন বলছিস? আর আমি কি রাজি হয়ে গেছি? বাড়িতে বড়ই গাছ থাকলে লোকে ঢিল মারবেই।”
“মারবে না। তোমরা বলবে, মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। তাহলে আর কেউ ঢিল মারবে না।”

বলেই অভিমানী ভাব নিয়ে মায়ের সামনে থেকে চলে গেলো আরশি। পেছন থেকে মেয়ের দিকে চেয়ে হালকা মুচকি হাসলো মা। মেয়ে হয়েছে, একদিন না একদিন তো বিয়ে দিতেই হবে।

“””””””””””””””””””””””””””””””

এই মুহুর্তে বিয়ে শব্দটা যেন একটা আতঙ্কের নাম। ভাবতেই মনটা বিষণ্ন হয়ে উঠছে খুব। কল পেয়ে নিজের বিষণ্নতা গুছিয়ে নিল আরশি। তবুও প্রেয়শির মন খারাপের ছাপটা ঠিকই ধরা পড়লো বিপরীত মানুষটার কাছে।
আরশির চেহারায় বিষণ্নতার ছাপ দেখে রিদ কৌতুহল নিয়ে বলে,
“পিচ্চিটার মন খারাপ মনে হচ্ছে। কি এমন কারণ থাকতে পারে, যা আমার পিচ্চির মনকে বিষণ্ন করে তুলেছে?”
“কিছু না, এমনি।”
আরশির লুকোনো ভাব দেখে রিদ পূনরায় বলে,
“কিছু তো নিশ্চই হয়েছে। এমনি এমনি তো কারো মন খারাপ হয় না।”

আরশি এবার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বলে,
“আজ উপর তলার আন্টি বাসায় বিয়ের প্রোপোজাল নিয়ে এসেছিল।”
হটাৎই রিদ শোয়া থেকে উঠে গিয়ে বলে,
“মানে কি? ফুপি কি বললো?”
“রিজেক্ট করে দিয়েছে। বলছে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবে না।”
রিদ বুকে হাত দিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে,
“এক চর খাবি ফাজিল মেয়ে। সব টিকঠাক আছে যেহেতু, এত টেনশন করার কি আছে? খবর টা এমন ভাবে দিলি, আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত আমার।”
রিদের এমন কান্ডে বিষণ্নতার মাঝেও মুখ চেপে হেসে দিল আরশি।

“”””””””””””””””””””””””””””””””””

কলেজ থেকে ফেরার সময় ফারুক কে একটা মেয়ের হাত ধরে হাটতে দেখে কিছুটা অবাক হলো আরশি। পাশ থেকে প্রীতিও অবাক হয়ে বলে,
“এটা ফারুক ভাই না? মেয়েটা কে? ওর গার্লফ্রেন্ড নাকি?”
পাশ থেকে আরশি আনুমানিক ভাবে বলে,
“হলেও হতে পারে।”

এর মাঝেই তারা কিছুটা কাছাকাছি এসে আরশিদের দেখে ফারুক হাসি মুখে বলে,
“কেমন আছো তোমরা?”
“জ্বি ভাইয়া ভালো?”
আরশি ও প্রীতি দুজনই ইশারায় মেয়েটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে ফারুকের দিকে তাকায়। যার মানে মেয়েটা কে সেটা জানতে চাইছে তারা। ফারুক ইশারা বুঝে বলে,
“তোমাদের ভাবি। ওর নাম ইয়াশা।”
বলেই কিছুটা হাসলো ফারুক। তারপর ইয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ওরা দুজন আমার ছোট বোনের মতোই। ওর নাম আরশি, আমার ছোট বেয়াইন। আর ওর নাম প্রীতি।”

পরিচয় হওয়ার পর তাদের মাঝে হালকা হাই হ্যালো হলো। অতঃপর ফারুক একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দিয় ইয়াশাকে। হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য চলে গেলো ইয়াশা।
,

কলেজ থেকে বাসায় ফিরে গোসল করে খাওয়াদাওয়া শেষে ক্লান্ত শরির বিছানায় এলিয়ে দেয় আরশি। এর মাঝেই মায়ের ডাক শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে সে। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াতেই দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে বাইরে। তাকে দেখেই ছেলেটা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“আপনার নাম কি আরশি?”
আরশি লোকটার দিকে একবার চেয়ে নিচু স্বরে বলে,
“জ্বি।”
আপনার নামে একটা পার্সেল ছিল। এখানে একটা সাইন লাগবে আপনার। লোকটার পাশে থাকা প্যাকেট করা ছোট বক্সটার দিকে তাকালো আরশি। ক্ষনিকটা অবাক হয়ে বলে,
“আমি তো কিছু অর্ডার করিনি।”
“ম্যাম এটা সারপ্রাইজ বক্স। আপনার নামেই পাঠানো হয়েছে।”

আর কথা না বাড়িয়ে সাইন করে বক্সটা নিয়ে ভেতরে গেলো। রুমে গিয়ে খুলে দেখে অনেক গুলো গল্পের বই। সাথে একটা ছোট কাগজ। সেটা খুললো চুপচাপ। সামনে মেলে ধরতেই দেখে কিছু লিখা,

‘কবে থেকে বই পড়ুয়া হয়ে গেলি পিচ্চি? যাই হোক, এটা একটা ভালো দিক। এখানে তোর উইশ লিষ্ট এর সব গুলো বই’ই আছে। তার সাথে আমার পছন্দের কয়েকটা বইও। সব মিলিয়ে আশা করি সুন্দর সময় কাটবে। হ্যাপি রিডিং পিচ্চি।”

বুঝতে বাকি রইলো না সারপ্রাইজ বক্সটা কার পাঠানো। কয়দিন আগে নতুন বের হওয়া অনেক গুলো বই একসাথে করে উইশ লিষ্ট হিসেবে পোষ্ট করেছিল সে। যা হয়তো নিশ্চই মহারাজের নজরে পড়েছিল।

ভাবতেই ফোন হাতে নিয়ে নেট অন করে আরশি। টুং টুং করে মেসেজ আসলো কয়েকটা। এর মাঝে রিদেরও একটা ছিল। নির্দিষ্ট মানুষটা থাকতে আর কারো মেসেজই সিন করাটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না।
বাকি সব মেসেজ ইগনোর করে রিদের মেসেজ টা সিন করে দেখে ছোট একটা লিখা,
‘রোমান্টিক জনরার বই গুলো পড়ার সময় নায়কের জায়গায় আমাকে, আর নাইকার জায়গায় তুই নিজেকে ভাবলে আমি খুব একটা মাইন্ড করবো না পিচ্চি। কারণ বাস্তবে নায়ক নাই বা হতে পারলাম, কল্পনার কারো নায়ক হলে সেটা মন্দ হয় না।’

লজ্জায় চোখ বুঁজে নিল আরশি। তবুও লজ্জার মাঝে অন্যরকম এক ভালো লাগায় ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠে তার।

“””””””””””””””””””””””””””””””””

কেটে গেলো আরো অনেক দিক। রাত জেগে উপন্যাস পড়ছিল আরশি। তখনই বেলকনিতে কিছু একটা অনুভব করলে ভিতু পায়ে সেদিকে পা বাড়ায় সে। ভিতু গলায় ‘কে’ বলে বেলকনিতে উঁকি দিল সে। দেখে সেই নিয়ম করে রেখে যাওয়া চিরেকুট পড়ে আছে। আচমকাই বিষয়টা মাথায় আসলে বেলকনিতে গিয়ে নিচে তাকায় ছেলেটা কে দেখার জন্য। হয়তো দেড়ি করে ফেলেছে সে। যার ফলে ছেলেটার মুখ দেখতে পায়নি। ততক্ষণে রাস্তায় পৌছে গিয়েছিল। শুধু দ্রুত গতিতে হেটে যাওয়া ছেলেটার পেছনের দিকটা দেখতে পেয়েছে শুধু। তাও কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই চোখের আড়াল হয়ে গেলো।

কিছু একটা ভাবলে মুহুর্তেই যেন মাথা ঘুরিয়ে উঠে তার। কারণ পেছন থেকে দেখা আজকের এই ছেলেটার গায়ে থাকা টি-শার্ট টার মতো, কয়দিন আগে রোহান ভাইয়ার গায়ে এমন টা টি-শার্ট দেখেছিল সে। তাহলে কি এটা সত্যিই রোহান ভাই? নাকি তার মতো দেখতে অন্য কেউ? দৃষ্টিভ্রম হলো না তো? ভাবতেই শরির জুড়ে শীতল শিহরণ বয়ে যায় তার। কি হচ্ছে এসব?

To be continue…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here