বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৩) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
352

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আজ কলেজের প্রথম দিন আরশির। স্কুল ছেড়ে কলেজে পা রাখা মানেই নিজের মাঝে একটা স্বাধীন চেতনার ভাব জাগ্রত হওয়া। পাখিদের মতো ডানা মেলে উড়তে চাওয়া। মনে হয়, এই তো অনেক বড়ো হয়ে গেলাম হুট করে। আরশির ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়।

তবে এমন স্বাধীন চেতনার ভাব নিয়ে প্রথম দিনই কলেজের সামনে পৌঁছে ভুল বসত একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হলো আরশির। তাও সামান্য একটা টিস্যু নিয়ে। যেটা সাইড করে ছুড়ে ফেলতে গিয়ে একটা ছেলের গায়ে গিয়ে পড়েছিল। আর এটা খুব বড়ো ধরনের কোনো অপরাধ নয়।

তবুও এই ছোট একটা বিষয় নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়েছিল ছেলেটা। আরশি ছোট করে স্যরি বললেও ছেলেটা হাত দিয়ে শার্টের ময়লা ঝাড়ার ব্যস্ততায় বিরক্তিকর ভাবে কিছু কথা শোনালো তাকে।
ভিতু ভঙ্গিতে আরশি চুপ থাকলেও এবার কিছুটা বিরক্তি হলে পাশ থেকে প্রীতি বলে,
“ভাইয়া,,, ভুলেই হয়েছে এমনটা। আর সে স্যরিও বলেছে আপনাকে। তবুও কেন এতো প্যাঁচাল করছেন? সামান্য একটা টিস্যু তে কি এমন ক্ষতি হয়ে গেলো আপনার?”

ছেলেটা মূহুর্তেই শাসানোর ভঙ্গিতে প্রীতির দিকে এক আঙুল তুলে বলে,
“এই মেয়ে, একদম চুপ থাকো? চামচামি করতে আসবে না। চেনো তুমি আমাকে?”
অপমানে ক্ষনিকটা ক্ষিপ্ত হতে চাইলো প্রীতি। আরশি পাশ থেকে তার এক হাত চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
“থাক প্রীতি চল এখান থেকে। কিছু বললে ঝামেলা তৈরি করতে পারে।”
প্রীতি কিছুটা অভয় দিয়ে বলে,
“আরে আমরা মেয়ে। ঝামেলা হলে ঐ ছেলে বিপদে পড়বে, আমরা না।”
আরশি হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“প্রীতি প্লিজ।”

ছেলেটা তাকিয়ে আছে দুজনের ফিসফিস করার দিকে। অতঃপর দুজন চলে যাওয়ার উদ্দেশ্য গেটের দিকে এগুতেই ছেলেটা এক হাতে পথ আটকিয়ে আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“দাড়াও মেয়ে। নবীন স্টুডেন্ট নিশ্চই। রাগ করো না। ফান করেছিলাম এতক্ষণ। নাম কি তোমার?”

আরশি চুপ থাকলেও প্রীতি কিছুটা ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
“পথ ছাড়ুন আমাদের।”
ছেলেটা কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে শান্ত গলায় বলে,
“আর যদি না ছাড়ি? তাহলে আপনার বান্ধবী কি খুব রাগ করবে?”

“বান্ধবী রাগ করলে তোর কপালে দুঃখ আছে আকাশ।”
পাশ থেকে একটা পুরুষনালী কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকায় তারা। দেখে ফারুক তাদের সামনে এসে দাড়িয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে বলে,
“যার তার সাথে ফান করাটা উচিত নয় তোর। আর যদি সেটা আমার বোন হয়।”
আকাশ নামক ছেলেটা এবার কিছুটা হেসে বলে,
“এটা তোর বোন ফারুক? আপন না নিশ্চই?”
“আপান বা পর এটা জেনে তোর কোনো কাজ নেই।”
ফারুক স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলে অতঃপর আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“আসো আমার সাথে।”

আকাশ নামক ছেলেটা আর কিছু বললো না, সরে দাড়ালো পথ থেকে। এই প্যাঁচাল থেকে মুক্তি পেয়ে দুজন চুপচাপ চলে গেলো ফারুকের পেছন পেছন। কলেজের গেট পেড়িয়ে ভেতরে হাটতে হাটতে ফারুক বলে,
“আমিও এখানেই পড়ি। তাই ভয়ের কিছু নেই। আর তুমি করে বললাম দেখে মাইন্ড করবেন না। নাহলে সে বিশ্বাস করত না।”
আরশি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ বলে,
“সমস্যা নেই ভাইয়া। আর ধন্যবাদ।”
“ক্লাস কোথায় জানো তো? নাহলে আমার সাথে চলো, দেখিয়ে দিচ্ছি।”
“থাক ভাইয়া, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমরা খুঁজে নিব।”
“শুনো, নতুন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে পেরেশান না হয়ে, কারো হেল্প নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।”

পাশ থেকে প্রীতি বলে,
“ও আসলে একটু বেশি বুঝে। ভাইয়া চলুন তো। অজথা খোঁজাখুঁজি করতে ভালো লাগছে না।”
হাটতে হাটতে আরশির দিকে চেয়ে ফারুক বলে,
“রুমকি ভর্তি হয়নি এখানে?”
আরশি হলকা মাথা নেড়ে বলে,
“না, ওর নাম আসেনি এখানে। অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে।”
ফারুক কয়েক সেকেন্ড নিশ্চুপ থেকে কিছু একটা বুঝে নিয়ে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে,
“দারুণ।”
,,,

কলেজ ছুটির পর রাস্তার পাশে গাড়ির জন্য দাড়ালো আরশি। সাথে প্রীতিও দাড়িয়ে আছে। এর মাঝে ফারুক তাদের পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে আরশি।”
ফারুকের দিকে ক্ষনিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরশি। ফারুক পূনরায় বলে,
“যাস্ট এক মিনিট।”
আরশি সম্মতি দিয়ে বলে,
“বলুন ভাইয়া কি কথা?”

ফারুক কিছু না বলে একবার ইশারায় প্রীতির দিকে তাকালো। আরশি বুঝতে পেরে প্রীতিকে দাড়াতে বলে কিছুটা সাইডে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া জরুরি কিছু?”
ফারুক ক্ষনিকটা অপরাধী গলায় বলে,
“আমার মনে হয় তুমি মন থেকে আমাকে এখনো ক্ষমা করোনি। বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই বিয়ের দিন আর বেয়াঈন দেখে মজা করতে গিয়ে এমনটা হয়ে গেছে। ইচ্ছেকৃত ছিল না। তোমাকে আমি আমার বোনের মতোই ভাবি।”
আরশি কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। ফারুক পূনরায় বলে,
“একটুও কি ক্ষমা করা যায় না? ভাই হিসেবেও না?”
আরশি কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে অতঃপর কিছুটা স্বাভাবিক গলায় বলে,
“ওসব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে ভাইয়া। আপনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, তাই আমি মনে রাখিনি এতকিছু। তবে এমন ফাজলামো না করাটাই ভালো।”
ফারুক আচমকাই নিজের কান ধরে বলে,
“এই কান ধরলাম বইন। আর জীবনেও না। একবার ফান করে শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। শুধু মন থেকে ক্ষমা করেছো কিনা একবার বলো। ক্ষমা না করলে এখানেই পা ধরে ক্ষমা চেয়ে বসবো। আমার আবার লোকলজ্জা একটু কম।”

হাসি মুখে কথাটা বলে কিছুটা ঝুঁকতে চাইলেই আরশি দু’পা পিছিয়ে বলে,
“এই না না, কি করছেন এসব। পায়ে ধরতে হবে না।”
“তাহলে মন থেকে বলো, ক্ষমা করেছো?”
আরশি এবার একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে করলাম। এবার সরুন, বাসায় যাবো।”
“এগিয়ে দিয়ে আসবো?”
“লাগবে না ভাইয়া, ধন্যবাদ।”

“””””””””””””””””””””””””””””‘

শেষ বিকেলে নতুন ফোন হাতে ছাদের এক পাশে বসে আছে আরশি। এসএসসি তে পাশ করার পর কিনে দিয়েছে বাবা। নতুন ফেসবুক আইডিও খুলেছে কয়দিন হলো। ইন্টারে উঠার পর থেকেই সবই যেন নতুন মনে হচ্ছে। যেন বসন্ত এসেছে জীবনে।

এর মাঝেই রিদের কল আসলে ঠিকঠাক হয়ে বসলো। অতঃপর কানে এয়ারফোন গুজে ফোন রিসিভ করে সে। রিদের দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
“হাই, কেমন আছেন?”
“আলহাম্দুলিল্লাহ্ ভালো, তুই?
” আলহামদুলিল্লাহ্।”
“কপালে কি হয়েছে? লালছে দেখাচ্ছে কেন?”

আরশি জিবে ছোট করে কামড় কেটে ওড়নাটা টেনে মাথায় দিল। রিদ মৃদু হেসে বলে,
“এখন আর লুকাতে হবে না। কিভাবে হলো এমন?”
“রামিমের সাথে খেলার সময় বাড়ি মেরেছিল। তাই এখন লাল হয়ে আছে হয়তো।”
রিদ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“ভালো তো, দুই বাচ্চা একাত্রে খেলার সময় মা’রা’মা’রি বেধে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।”
আরশির হাসি পেলেও কিছুরা রাগী ভাব নিয়ে বলে,
“আপনার মাথা।”
“আরিশা কবে এসেছে?”
“গতকাল?”
“কেমন আছে তারা?”
“হুম ভালো।”
“তো আজ কলেজের প্রথম দিন কেমন কাটলো?”
“হুম, ভালো।

কয়েক সেকেন্ড নিরব রইল রিদ। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,
” ছেলেটা কে ছিল?”
আরশি কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
“কোন ছেলে!”
“আকাশ না কি নাম। যার সাথে সকালে ঝগড়া করেছিলি।”
“আমি চিনি না। সে নিজেই শুধু কথা প্যাঁচাচ্ছিল। আচ্ছা, এটা আপনি জানলেন কিভাবে?”
কিছুটা হাসলো রিদ। উত্তর না দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
“নতুন নতুন কলেজে উঠেছিস ছেলেদের থেকে দুরে থাকবি।”
“ওকে স্যার।”

রিদ পূনরায় স্বাভাবিক গলায় বলে,
“আর এমন কিছু করবি না, যা আমার একদমই অপছন্দ। আশা করি আমার বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রাখবি। আমি চাইনা আমার রাগ তোকে কষ্ট দিক। কারণ অজান্তেই তোকে কোনো ভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললে পরে আমার নিজেকেই তার দ্বিগুণ কষ্ট ভোগ করতে হয়।”

আর কিছু না বলেই বিদায় নিয়ে ফোন কেটে দিল রিদ। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন খুব অবাক হলো আরশি। এমন ভাবে বিদায় নিল কেন? আর শেষে বিশ্বাস, কষ্ট কিসব বলে গেলো? তাছাড়া আজ এমন প্রশ্নবোধক ধারালো ধারালো কথা বললো কেন? কি হলো হটাৎ? তার কি কোনো কারণে মন খারাপ? নাকি এটা কোনো লুকোনো অভিমান? না বললে বুঝবো কিভাবে? আজব লোক।

To be continue……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here