বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৭) #মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

0
227

#বৃষ্টি_শেষে_রোদ (পর্ব ১৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

কেটে গেলো আরো কিছুদিন। কোনো কিছুই আগের মতো নেই আর। রিদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই আজ মাস খানেক। একটা ঝড়ে মুহুর্তেই কতটা পর হয়ে গেছে সে।
স্যরি বলা উচিৎ ভেবে আরশি দু’এক বার যোগাযোগ করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। এরপর আর যোগাযোগ করার সাহস হয়ে উঠেনি। সাথে খুব রাগও হচ্ছে রিদকে নিয়ে। সামান্য একটা বিষয়কে কতটা বড়ো করে ফেলেছে সে। ফারুক তো তার ভাইয়ের মতোই। তাকেও ছোট বোনের মতোই সব সময় সাপোর্ট করে। রিদ চলে যাওয়ার পর থেকে এই দুই বছরে কোনো সমস্যা হলে ফারুক ভাই’ই তাকে হেল্প করেছে। তাহলে তার সাথে কথা বললে সমস্যা কোথায়? আজব!

আজ হটাৎ কলেজ ছুটির পর ইয়াশার সাথে দেখা। কিছুটা ভ্রু-কুচকালো আরশি। ফারুক ভাইয়ের তো ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম শেষ। এখন কলেজে আসেনা প্রয়োজন ছাড়া। তবুও ইয়াশা কলেজের সামনে দাড়িয়ে কি করছে? তার চোখে-মুখে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট। আরশিকে দেখেই তার কাছে এগিয়ে আসে। হয়তো এতক্ষণ আরশির জন্যই অপেক্ষা করছিল।

আরশির পাশে বসে কাঁন্না করছে ইয়াশা। আরশি কারণ জানতে চাইলে ইয়াশা জানায়, ফারুক তিন দিন আগে ব্রেকআপ করে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তার সাথে। আরশি কিছুটা শান্তনা দিয়ে ব্রেকআপের কারণ জানতে চাইলে ইয়াশা বলে,
“আমি কিছু করিনি। হুট করেই সে বলে, আর রিলেশন রাখবে না। আমার দোষ কি সেটাও বলেনি। শুধু বলল, আমাকে নাকি এখন আর সহ্য হয় না তার। আমি অনেক কেঁদেও তাকে ফেরাতে পারিনি।”

আরশি কিছুটা ভেবে বলে,
“তো আপু, আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করতে পারি?”
ইয়াশা চোখ মুছে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলে,
“আপনি তাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন? আমার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিতে পারবেন?”
আরশি তাকে শান্তনা দিয়ে বলে,
“আচ্ছা আমি ভাইয়াকে বুঝিয়ে চেষ্টা করবো আপনার সাথে মিট করিয়ে দিতে।”
ইয়াশা আবারও কেঁদে বলে,
“অনেক দিনের রিলেশন আমাদের। এই রিলেশন টিকিয়ে রাখতে ও যা যা বলেছিল সব মেনে নিয়েছিলাম। দু’বার,,,,,,,,

“”””””””””””””””””””””””””””””””

বাসায় বসে সন্ধায় ফারুককে কল দিল আরশি। একবার কল হতেই রিসিভ করে সে। আরশি কথা না বাড়িয়ে মেইন প্রসঙ্গে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া, কালকে ফ্রি আছেন?”
“কালকে,,, হুম কেন?”
“একটু জরুরি দরকার ছিল। দেখা করা যাবে একটু?”

ফারুক কিছু না ভেবেই বলে,
“হুম, আমি নিজেই ভাবছিলাম কালকে তোমাকে দেখা করতে বলবো। যাক ভালোই হলো। কখন দেখা করতে হবে?”
“আমি তো এমনি বাসা থেকে বের হতে পারবো না। কলেজ ছুটির পর সেখানে দেখা করতে পারবেন?”
“আচ্ছা সমস্যা নেই, আসবো আমি।”

পরদিক কলেজ ছুটির পর দেখা হয় তাদের। লাঞ্চ টাইমে ফারুক একটা ভালো রেস্টুরেন্টে বসে বসে কথা বলতে চাইলে অসম্মতি জানায় আরশি। এমনিতেও এসব নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে। তাই কলেজের বড়ো দিঘিটার পাড়ে দাড়িয়ে কথা বলছে দুজন। আরশি ইয়াশার প্রসঙ্গে বলবে তার আগেই ফারুক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“তোমার টা পরে শুনবো। আগে আমি কেন দেখা করতে চেয়েছি তা শুনবে না?”
আরশি এতকিছু না ভেবে বলে,
“আচ্ছা বলুন।”

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে দু’পা পিছিয়ে গেলো ফারুক। আচমকাই এক হাটু ভাজ করে বসে একটা ডায়মন্ডের রিং আরশির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“তোমার মায়াবি চোখ দুটো আবদ্ধ করে ফেলেছে আমায়। তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্তে আমি স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। ইদানিং কেন যেন মনে হচ্ছে, আমার পুরো হ্যাপিনেস টাই তোমার মাঝে আটকে আছে। তুমিহীন নিজেকে শুন্য মনে হয় খুব। এ নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। আই থিংক,,, ওম,,,, আই ফিল লাভ উইথ ইউ। আই প্রমিস, কখনো তোমার স্বাধীনতায় বাধা হবো না। শুধু দিন শেষে আমায় একটু ভালোবাসবে, আমি এতটুকুতেই হ্যাপি থাকবো। মাথায় তুলে রাখবো তোমায়, আই প্রমিস।”

এক মুহুর্তের জন্য মুর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে আরশি। ফারুকের বলা সব কথা যেন মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। আরশি কিছুটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বলা,
“ভাইয়া, এসব নিয়ে মজা আমার একদম পছন্দ না।”
ফারুক পাল্টা বলে,
“এটা কোনো মজা নয়।”
“মানে!”
“মানে সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার হাতটি ধরে বাকিটা জীবন পাড়ি দিতে চাই। ডু ইউ লাভ মি?”

এবার যেন সত্যিই মাথা ঘুরে উঠলো আরশির। ফারুক ভাই এসব কি বলছে? সে তো আমার আপন ভাইয়ের মতোই ছিল। এবার আরশি কিছুটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“এসব কি বলছেন ভাইয়া? আপনাকে আমি নিজের ভাইয়ের মতোই মনে করতাম। তাছাড়া আপনার একটা গার্লফ্রেন্ড থাকা স্বত্তেও আপনি কিভাবে আমাকে নিয়ে এসব ভাবতে পারেন?”

“গার্লফ্রেন্ড ছিল। এখন আর নেই। সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তার সাথে এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই আমার। তাছাড়া আমি মন থেকে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”

কিছুটা তাচ্ছিল্য হাসলো আরশি। অতঃপর বলে,
“কে কাকে ছেড়ে গেছে তা আমার ভালো করেই জানা আছে। আর এই ব্যাপারে কথা বলতেই আমি আপনার সাথে দেখা করেছি। অন্য কোনো কারণে না। ইয়াশা আপু আপনাকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসে। সে খুব সহজ সরল একটা মেয়ে। তাকে নিয়ে খেলার অধিকার আপনার নেই।”

এবার উঠে দাড়ায় ফারুক। ক্ষনিকটা কপাল কুচকে বলে,
“সে সব বলে দিয়েছে তোমাকে তাই না? বলেছিলাম বেশি বাড়াবাড়ি না করতে। এবার সে আমার আসল রুপ দেখতে পাবে।”
আরশি আচমকাই ফারুকের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
“আপনি কি করবেন তা আমার ভালো করেই জানা আছে।”
বলেই ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিলো দিঘির মাঝে। কয়েক সেকেন্ডে ঘটে যাওয়ায় স্থির দৃষ্টিতে দিঘির দিকে চেয়ে আছে ফারুক।

তখন ইয়াশা আরশিকে বলেছিল ফারুকের হু’মকির কথা। রিলেশন টিকিয়ে রাখতে দু’বার রুম ডেটে গিয়েছিল তারা। ফারুকের ফোনে ইয়াশার আপত্তিকর অনেক ছবি আছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে যেগুলো নেটে ছেড়ে দেওয়ার হু’মকি দিয়েছিল সে। ইয়াশার কথায় আরশি ক্ষনিকটা অন্যদিকে ফিরে অতঃপর তার দিকে চেয়ে বলে,
“ছি আপু! এসব কি কখনো ভালোবাসা প্রমানের বা ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হতে পারে?”
ইয়াশা আবারও চোখের পানি মুছে বলে,
“তখন আমি বুঝতে পারিনি এতকিছু হয়ে যাবে। না বুঝেই নিজের এত বড়ো সর্বনাশ করে বসেছি। যা এখন বুঝতে পারছি।”

আরশি ফোনটা ফেলে দিলে ফারুক কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থাকে। অতঃপর বড়ো বড়ো চোখের দৃষ্টিতে আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“এটা কি করলে তুমি? আমার এত দামি ফোন,,,”
ফারুকের কথার মাঝেই আরশি বলে,
“যত দামিই হোক। তা একজন মেয়ের ইজ্জতের চাইতে বেশি দামি না। আর আপনি কেমন মানুষ তা আমার জানা হয়ে গেছে। আসলে রিদ ভাইয়াই ঠিক বলেছিল। কু’কুরের লেজ কখনো সোজা হয় না। আর কখনোই সামনা-সামনি দাড়িয়ে কথা বলা দুরে থাক, আমাকে কল বা মেসেজ করারও দুঃসাহস দেখাবেন না।”

বলেই চলে যেতে প্রস্তুত হলো আরশি। ফারুক রেগে আরশিকে কিছু বলতে যাবে তার মাঝেই রোহানের কণ্ঠ শুনে থমকে গেলো সে। পাশে ফিরে দেখে রোহান তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সামনে এসে আরশির দিকে চেয়ে বলে,
“কলেজ ছুটি হয়েছে অনেক্ষণ হলো। কতক্ষন ধরে গেটের বাইরে অপেক্ষা করছি। বের না হয়ে এখানে কি করছিস?”
আরশি রাগের মাঝে বলে,
“নিজের চরম ভুলের মাশুল দিচ্ছি।”

কিছু না বুঝে ভ্রু কুচকে তাকায় রোহান। আরশি নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বলে,
“তুমি এখানে কি করছো ভাইয়া?”
“ফুপি এখন আমাদের বাড়িতে। তাই আমাকে পাঠালো তোকে নিয়ে যেতে।”
কিছু বললো না আরশি। রোহান এবার ফারুকের দিকে চেয়ে বলে,
“তো কি খবর ছোটভাই? ভালো আছো?”
ফারুক নিজের রাগ দমিয়ে রেখে কিছুটা গোমড়া মুখে বলে,
“হুম ভাইয়া ভালো। আপনি?”
“হুম ভালো। তো তুমিও চলো আমাদের সাথে?”
“না ভাইয়া, অন্যদিন। আজ কিছু জরুরি কাজ আছে আমার।”
বলেই হনহন করে হনহন করে হেটে চলে গেলো সে। রোহান কিছু না বুঝে তার দিকে চেয়ে থাকলে পাশ থেকে আরশি বলে,
“চলুন ভাইয়া, দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

“”””””””””””””””””””””””””””””””

রিদকে আর মেসেন্জার ওয়াটসএ্যাপ কোথাও এ্যাকটিভ দেখা যায় না। হয়তো সবগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সে৷ আরশি যোগাযোগ করতে চাইলেও যোগাযোগ করার কোনো মাধ্যম রাখেনি রিদ।

আরশির এক ক্লাসমেট হ্যা’কিং-এ পারদর্শী। টাকার বিনিময়ে আইডি হ্যা’ক এবং হ্যা’ক হওয়া আইডি ঠিক করে দেয়। তাকে দিয়ে রিদের আইডিটা হ্যাক করে আরশি। মেসেজ অপশনে গিয়ে হুট করেই যেন চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। একটা আইডি থেকে রিদের কাছে অনেক গুলো ছবি পাঠানো হয়েছিল। প্রথমে সেদিন রাস্তা পার করে দেওয়ার ছবি টা। তারপর রেস্টুরেন্টের পিক। সেদিন তাদের সাথে ইয়াশা ও প্রীতি তারাও ছিল। অথচ পিক থেকে তাদেরকে ক্রপ করে কেটে নিয়ে শুধু আরশি ও ফারুক’কে দেখা যায় এমন পিক পাঠানো হয়েছে। এরপর আরো কিছু এডিট করা পিক। দেখে যে কেউই বলবে ফারুকের সাথে রিলেশনে ছিল আরশি।

অবাকের সাথে আরশির যেন এবার কান্না আসছে খুব। তার মানে এজন্য রিদ তাকে সেদিন বকাবকি করেছিল? আর সেও বুঝতে না পেরে উল্টো রিদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছিল।
এবার সেই আইডিটাও হ্যা’ক করালো আরশি। দেখে সেটা ফারুকের নাম্বার দিয়েই খোলা একটা ফেইক আইডি। তার মানে সবকিছু ফারুকই করেছিল? আর এমন একটা ছেলের জন্য রিদের সাথে এমন আচরণ করেছিল, যে মানুষটা তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতো? তাকে সন্দেহ করতো না, বরং এসব থেকে আগলে রাখার জন্যই এমন করতো?
ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে আরশি। অনুসূচনায় যেন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ।

টানা দু’দিন ধরে চেষ্টা করেও রিদের সাথে এক সেকেন্ডের জন্যও যোগাযোগ করতে পারেনি আরশি। মায়ের ফোন থেকে কল দিলেও রিসিভ করছে না। হয়তো বুঝতে পেরেছে কে এত কল দিচ্ছে।
তাই বাধ্য হয়ে রিদ’দের বাড়িতে এসেছে আজ সকালে। রুমকি বলেছিল, বাসায় প্রতিদিন ফোন দেয় ভাইয়া। সবার সাথে কথা হয়। নিশ্চই আজ মামি বললে ফিরিয়ে দিবে না রিদ। বেশি না, শুধু এক মিনিট সময় পেলেও নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে এই আশায়। আর তার বিশ্বাস, সে ক্ষমা চাইলে রিদ কখনোই তাকে ক্ষমা না করে থাকতে পারবে না। কারণ রিদের দুর্বলতা আরশি, এটা সে ভালো করেই জানে।

সন্ধায় বাসায় ফোন দেয় রিদ। মায়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর মা হাসি মুখে বলে,
“আরশি এসেছে আজ সকালে। এখন তুই ফোন দেওয়ার পর থেকেই আমার সাথে বসে আছে। বললো তোর সাথে নাকি কথা বলবে।”

তীব্র আশা নিয়ে মামির দিকে তাকালো আরশি। তবে বুকটা ধুকপুক করছে খুব। খুব চেনা মানুষটাকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে অচেনা। যার সাথে মন খুলে কথা বলতো, তার কথা ভাবতেই যেন আজ শব্দ ভান্ডারে কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে।

মামি মুচকি হেসে পূনরায় রিদকে বলে,
“এই নে কথা বল তার সাথে।”
মাঈমুনা চৌধুরি ফোনটা আরশির হাতে দেওয়ার আগেই রিদ স্বাভাবিক গলায় বলে,
“এখন পড়াশোনায় অনেক চাপ আম্মু। একটু আগে ক্লাস করে ফিরেছি, খুব ক্লান্ত লাগছে৷ পরে ফোন দিব তোমায়। ভালো থেকো।”

বলেই ফোন কেটে দিল রিদ। শ্রাবনের কালো মেঘের ন্যায় অন্ধকার হয়ে গেলো আরশির চেহারা। রিদ আজ তার সাৎে কথা বলতেও ইচ্ছুক না? মুহুর্তেই চোখ টলমলে হয়ে উঠেছে তার। যেন এখনই বৃষ্টি নামবে দু’চোখ জুড়ে। মুশলধারে বৃষ্টি। আচ্ছা, এই বৃষ্টি শেষে রোদের দেখা মিলবে তো? নাকি এই রোদ টা তার স্বপ্নই থেকে যাবে?

To be continue…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here