#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 34 ( ধামাকা পর্ব ১)
🍁🍁🍁🍁
ঘুমের মাঝে চোখে পানি পড়ায় আদি চোখ মুখ কুঁচকে নেয়। ওপাশ ফিরে ঘুমাতে চাইলে উন্মুক্ত পিঠে পুনরায় পানি পড়াতে বিরক্তিতে আদি পিটপিট করে তাকায়। চোখের সামনে কালো শাড়ি পরিহিত রমণীকে চুল মুছতে দেখে মুহূর্তে বিরক্তির জায়গায় একরাশ মুগ্ধতা এসে গ্রাস করে। আদি বালিশের উপর উপুর হয়ে গালে হাত দিয়ে সিমথির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ সিমথির চোখ আদির দিকে যেতেই দৃষ্টি থেমে যায়।
সিমথি : এভাবে কি দেখছো।
আদি : তোমাকে।
সিমথি : দেখাদেখি হলে এবার উঠুন। সকাল হয়েছে।
সিমথির কথায় আদি ফোঁস করে একটা শ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ে একবার আপনি তো একবার তুমি সম্বোধন করে। ভালোই লাগে সিমথির এই সংমিলিত ডাকগুলো। বেড ছেড়ে উঠে রোজকার অভ্যাসনুযারী সিমথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে থুতনি রাখে। সিমথি হেসে আয়ানার দিকে তাকায়।
আদি : ভালোবাসি।
প্রতিত্তোরে সিমথি লাজুক হেঁসে মাথা নিচু করে নেয়।
আদি : সিয়াজান ভালো মায়ের সাথে এমন বিহেভ কেনো করো। আগে তো ভীষণ ভালোবাসতে উনাকে।
আদির কথায় সিমথি থমকায়। লাজুক ভাব কেটে মুহুর্তের মধ্যে মুখশ্রী জুড়ে কালো মেঘের ন্যায় গাম্ভীর্যতা নেমে আসে। আদির দিকে ফিরে তাকায়।
সিমথি : আগে ভালোবাসতাম এখন বাসি না ভাবলেন কেনো।
আদি : তোর চোখে উনার জন্য রাগ আর ঘৃণা দেখতে পাই আমি।
সিমথি : আপনি আমার চোখের ভাষা বুঝেন।
আদি : তোর চোখে নিজের জন্য রাগ ঘৃণা দেখেছিলাম। আর তোর চাহনী দেখে আমি তোর মন পড়তে জানি।
সিমথি : যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃণা করা যায়না জামাইজান। আপনার জন্য আমার মনে সর্বদা রাগ&অভিমান র ভালোবাসার সংমিশ্রণে একটা অনুভূতি ছিলো। যেটাকে তুমি ঘৃণা ভাবতে সেটা আমার অভিমান ছিলো।
আদি : আমার প্রশ্নের উত্তর পায়নি আমি।
সিমথি : আচ্ছা আদি তুমি জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি। হঠাৎ যদি কোনোদিন আমার কোনো খারাপ কিছু তোমার সামনে আসে কিংবা আমার জন্য যদি কখনো তোমার মা-বাবার কিছু হয় তখন ও কি তুমি আমাকে এভাবেই ভালোবাসবে।
আদি : সিয়াজান মা-বাবা আর বউ তিনজন ব্যক্তির ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ আছে। আমার মা-বাবা আমাকে না দেখেই ভালোবেসেছে তাই তাদের প্রতি আমার ভালোবাসাটা অনেক গভীর। আর তুই আমার সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনে একদেখায় ভালোবেসেছিস তাই তোর ক্ষেত্রে আমার ভালোবাসা প্রকাশ করার কোনো অপশন জানা নেই। মা-বাবা একটা সময় থাকবে না যেনো আমার জীবনে ভালোবাসার প্রথম দুই ব্যক্তি ওরা। তাই ওদের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে তাকে আমি ছেড়ে দেবো এমনটা না।
সিমথি : আপনার প্রশ্নের উত্তর আপনার বলা কথায় আছে। খুঁজে নিন।
সিমথি আদিকে পাশ কাটিয়ে নিচে চলে যায়। আদি সিমথির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সিমথির কথাগুলো পুনরায় রিপিট করে। অতঃপর খালি রুমের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই মেয়ের কথার মানে বোঝা এতোটা ইজি না।
________________
হঠাৎ বাড়িতে পুলিশের আগমনে মিম, রোজ রা হতবাক। এই সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ ও নেই। ইফাজ, সায়ন দুইজনই অফিসে। নীরব খান কাজের সূত্রে দেশের বাইরে। বাড়িতে কেবল মিম, রহিমা বেগম, রোজ আর সীমা বেগম।
মিম : জ্বি কাকে চান বলুন।
অফিসার : সীমা বেগম আছে।
অফিসারের কথায় সীমা বেগম শুকনো ঢোক গিলে। মিম রা সবাই হতবাক। অফিসার হঠাৎ সীমা বেগমের কথা জিজ্ঞেস করার কোনো কারণই কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।
রোজ : ভালো মাকে দিয়ে আপনারা কি করবেন।
অফিসার : উনার বিরুদ্ধে চার্জ আছে। আমাদের সাথে যেতে হবে।
অফিসারের কথায় সীমা বেগমের শ্বাস আটকে যাওয়ার অবস্থা । মিম রা হতবাক হতবুদ্ধি। রহিমা বেগম নিজেও ভয় পেয়ে যায়। মিম দ্রুত সায়নকে ফোন করে সব জানায়। অতঃপর সিমথিকে ফোন করে। মিমের ফোন পেয়ে সিমথির হাসি চওড়া হয়। এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলো সিমথি।
মেঘা : তুই কিছু একটা করতে চলেছিস সিমথি। আমাদের কাছে সেটা লুকাচ্ছিস।
সিমথি : বিধির বিচার।
সিমথির কথার মানে মেঘারা বুঝতে না পেরে একে অপরের দিকে তাকায়। ততক্ষণে তরী সিমথির কেবিনে আসে। তরীকে দেখে সিমথি হাসে। যেন এমনটা হবে এটা সে আগে থেকেই জানতো।
তরী : সিমথি আপু ভালো মা কে পুলিশ এরেস্ট করতে এসেছে।
তরীর কথায় সিমথি বাদে মেঘারা চমকায়। চমকওত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়। কিন্তু সিমথি হাবভাব নরমাল দেখে তুহিনদের ভয় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিছু একটা আচঁ করতে পেরে তুহিন, রোদেলা, মেঘা একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে। সিমথি বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। সিমথির পেছন পেছন তরীও বেরিয়ে যায়। তুহিন, রোদেলা মেঘাকে ঠেলে সিমথির পেছন পেছন পাঠায়। এই মুহূর্তে সবার একসাথে হসপিটাল থেকে বেরুনো ঠিক হবে না ভেবেই সবাই মেঘাকে পাঠায়।
” সকালে জানতে চেয়েছিলে না মিসেস সীমা বেগম কে ঘৃণার পেছনে কারণ। তবে সায়ন ভাইয়ার বাড়িতে আসতে চাইলে আসতে পারো। কারণ সমেত লাইভে সব দেখতে পাবে। ”
মিটিংয়ের মাঝে ম্যাসেজের শব্দে আদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়। এই সময় আবার কে ব্যাঘাত ঘটালো। শাওন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়। মনে মনে গর্দভ বলে গালিগালাজ করে। মিটিংয়ের সময় ফোনটা সাইলেন্ট মুডে রাখতে হয় এটাও ভুলে যাওয়ার জন্য। আদি মিটিং থামিয়ে ফোন হাতে নিয়ে স্কিনে সিয়াজান নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসতে দেখে বিরক্তির জায়গায় কৌতুহল জন্মায়। হঠাৎ এই সময় সিমথির ম্যাসেজ দেখে খানিকটা অবাকই হয় আদি। কৌতুহলের বশে ম্যাসেজে ক্লিক করে। ম্যাসেজ টা পড়ে আদি থমকায়। সকালে সিমথির কথায় আদি কিছু টা হলেও আচঁ করেছিলো এর পেছনে বড় কোনো কারণ আছে। এখন আদির সংশয় বিশ্বাসে পরিণত হয়। শাওনকে পাশে ডেকে কিছু একটা বলে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ততক্ষণে বাড়িতে সায়ন এবং ইফাজ ও চলে আসে। সায়ন এসেই পুলিশের সাথে কথা বলতে শুরু করে।
সায়ন : কিসের ভিত্তি তে আপনারা ভালো মাকে এরেস্ট করতে এসেছেন।
অফিসার : উনার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইফাজ : কিন্তু কে এনেছে।
অফিসার : আপনাদের বোন।
সায়ন : আমাদের বোন মানে কার কথা বলছেন।
অফিসার : সিম,,,,
_ আমি করেছি।
আচমকা সিমথির কন্ঠস্বরে সবাই দরজার দিকে তাকায়। অফিসার নিজের কথা পুনরায় পেটে চালান দেয়। সায়নরা হতভম্ব হতবাক হতবুদ্ধি। সিমথির কথার মানে কেউই বুঝতে পারলো না।
সায়ন : মানে কি বলছিস এসব।
সিমথি : মানে টা খুব সিম্পল ভাইয়া। আমি উনার বিরুদ্ধে কেইস ফাইল করেছি।
মিম : কিন্তু কেনো। না মানে তুমি ভালো মা
সিমথি : ভাবীপু রিলাক্স। আমি আছি এখানেই পালিয়ে যাবো না।
সায়ন : পরী হেয়ালি করিস না। এসবের মানে।
সিমথি : অফিসারস্ গিভ মি টুয়েন্টি মিনিটস্ প্লিজ।
অফিসার : সিউর ওয়াই নট।
অফিসার কনস্টেবল সহ বাড়ির বাইরে যায়। ততক্ষণে আদিও চলে আসে।
সায়ন : এবার বল এসবের মানে কি।
সিমথি : পাপের শাস্তি। খু’ন করলে তো শাস্তি স্বরূপ কারাগার বাসই হয় তাই না।
ইফাজ : মানে ( চমকে)
সিমথি : সেটা তোদের সো কল্ড ভালো মা’কেই জিজ্ঞেস কর।
সিমথির কথায় সায়ন, ইফাজ, রোজ, তরী চারজনই অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে সীমা বেগমের দিকে তাকায়। সীমা বেগম মাথা নিচু করে নেয়। সেটা দেখে সায়নরা বুঝতে পারলো সিমথি অকারণে কিছু করেনি।
সায়ন : ভালো মা পরী এ এসব কি বলছে।
______
ইফাজ : কি করেছো তুমি
_____
সিমথি : বুক ফুলিয়ে বলার মতো কিছুই করেনি উনি। তাই চুপ করে আছে।
এতোক্ষণে রহিমা বেগম মুখ খুলেন,,৷
রহিমা বেগম : দেখলি তো কইছিলাম এই মাইয়া একদিন সব্বাই রে শেষ কইরা দিবো।
রহিমা বেগমের কথায় সিমথি রক্তলাল চোখে রহিমা বেগমের দিকে তাকায়। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,,,
সিমথি : আপনার বয়স টা কে রেসপেক্ট করছি আমি। তাই বলে ভাববেন না নিজের কুকর্মের কথা আমি এখনো অজ্ঞাত। তাই মুখ টা বন্ধ রাখুন।
রহিমা বেগম দমে যায়। সীমা বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,,
সীমা বেগম : সিমথি মা আমার তুই সবটা না জেনে আমাকে ভুল বুঝছিস। ডায়েরির একপাতা পড়ে সব বোঝা যায়না।
সীমা বেগমের কথায় সিমথি হাসে।
সিমথি : আমি সম্পূর্ণ টা জেনেই এসেছি। যেমন ভাবে জেনেছি আপনি আমাদের আপণ ফুফি না তেমন এটাও জেনেছি মা-বাবার কার এক্সিডেন্টের পেছনে আপনার সংযোগ আছে। তেমন এটাও জেনেই এসেছি আপনি আমাকে পাঁচ বার মা/র/তে চেয়েছিলেন। আবার এটাও জেনেই এসেছি আপনি সাত বছর ধরে তরীকে ড্রাগস দিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করতে চেষ্টা করেছেন। আবার বড় মায়ের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর পেছনেও আপনার সংযোগ আছে।
চলবে,,,,,
( পরের পর্বে বাকি ধামাকা দেবো। আজ আর না। ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)