#মিশেছো_আলো_ছায়াতে
#Writer_Sintiha_Eva
#part : 33
🍁🍁🍁
পাত্র হিসেবে নিজের প্রাক্তন কে দেখে রাগে তরীর সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে। রাগ টা নিজের মাঝে চেপে সোফায় বসে। পাশেই রহিমা বেগম হাসতে হাসতে পাত্রের মায়ের সাথে কথা বলছে। সিঁড়ির একপাশে আদি, সিমথি, রোজ, ইফাজ, সায়ন দাঁড়ানো। সিমথির কোলে আদ্র। সিমথি মূলত আদ্রর সাথে টুকুর টুকুর করছে। আদি ভ্রু কুঁচকে একবার তরীর জন্য আসা পাত্র রুদ্রর দিকে তাকাচ্ছে আবার সিমথির দিকে তাকাচ্ছে । ছেলেটার ভাবসাব মোটেও সুবিধার না। কেমন করে যেনো সিমথির দিকে তাকাচ্ছে। আদি কনুই দিয়ে সিমথিকে গুতা দিতেই সিমথি ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : গ’রুর মতো গুতাচ্ছেন কেনো।
সিমথির কথায় আদি চোখ রাঙিয়ে তাকায়। সিমথি ঠোঁট চেপে হাসে।
সিমথি : কি হয়েছে জামাইজান। রাগো কেনো বলো বলো শুনি।
সিমথির মুখে জামাই জান শুনে আদির শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। এটা প্রতিবারই হয়। যখনই সিমথি ওকে জামাইজান বলে সম্বোধন করে তখনই আদি বুকে প্রশান্তি নেমে আসে।
আদি : সিয়াজান আই নিড এ কিস।
আচমকা আদির এহেন কথায় সিমথি বিষম খায়। ইফাজ রা অবাক হয়ে সিমথির দিকে তাকাতেই সিমথির বোকা বোকা হাসি দেয়। অতঃপর আদির দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায়।
সিমথি : আদি তুমি দিন দিন চরম মাত্রায় অ’স’ভ্য হয়ে যাচ্ছো৷
আদি : হুহ। নিজে জামাইজান বলে আমাকে এলোমেলো করতে পারবে আর আমি আদর চাইলেই দোষ।
সিমথি : ইইইই চুপ করুন। ভাইয়ারা শুনলে লজ্জায় পড়তে হবে।
সায়ন : কি ফুসুরফাসুর শুরু করেছিস বলতো।
আদি : এক বাচ্চার বাপ হয়ে ছিস। কিন্তু কমনসেন্সের অভাব।
সায়ন : মানে।
সিমথি : আহ ভাইয়া ছাড় তো।
রোজ : আপু ওই গা’ঞ্জা’খোরের সাথে কি তরী আপুর বিয়ে হবে নাকি।
সিমথি : আমি কি জানি৷ ( ঠোঁট বাঁকিয়ে)
কথাটা বলে কিছুক্ষণ পরের মুহুর্ত টা ইমাজিন করে সিমথি হাসে। হঠাৎ রুদ্র সিমথির দিকে এগিয়ে আসে। তা দেখ সিমথি হাসে। আদি ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এই ছেলে ওর বউয়ের দিকে আসছে কেনো।
রুদ্র : হেই সুন্দরী কেমন আছো।
সিমথি : দেখে কি আমাকে খারাপ মনে হচ্ছে।
রুদ্র : না তবে আগের থেকে একটু বেশিই সুন্দর আর হ,,,
সিমথি : এদিকে নজর দিস না। আমার হাতের মারের স্বাদ ভুলে গিয়ে থাকলে আমি আবার মনে করিয়ে দিতে জানি।
সিমথির কথায় রুদ্র হাসে। ঠোঁটে হাত বুলিয়ে সিমথির পা থেকে স্কেন করে। শাড়ীতে আগের থেকে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
রুদ্র : তা বাদ দিলাম তোমার কথা। কিন্তু যাকে এতোদিন আমার হাত থেকে বাঁচালে সে এখন আমার কব্জায়। কি করবে।
সিমথি : পেছনে ফিরে দেখ।
সিমথির কথায় রুদ্র পেছনে ফিরতেই ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় পড়ে ৷ রুদ্র হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে তরীর দিকে তাকিয়ে আছে। তরীর চোখ লাল হয়ে আছে। মাত্রাতিরিক্ত রাগে শরীর থরথর করে কাপছে। সিমথি বাদে রহিমা বেগম সহ সবাই হতবিহ্বল। তরীর রুদ্রর কলার টেনে ধরে।
তরী : কু’লা’ঙ্গা’র তোর সাহস হয় কি করে। আমার সাথে বিয়ের আলাপ নিয়ে আসিস। আমাকে কি তোর বোকা মনে হয়। এখনি তোর ফ্যামিলি নিয়ে বিদেয় হ। নয়তো ব্যাট বল খেলবো তোকে নিয়ে।
তরীর কথায় সিমথি হেসে আদির বাহুতে মাথা ঠেকিয়ে তরীর দিকে দৃষ্টিপাত করে।
তরী : তোর মতো নরকের কীটের জন্য আমি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষটার সাথে এতো বাজে বিহেভ করেছি। আর সেই তুই আবার বিয়ের আলাপ নিয়ে আসিস। বিয়ে করবি তুই আমায় তাই না। তোর বিয়ের শখ জন্মেরমতো গুছিয়ে ভেবে শা/লা ল/ম্প/ট
কথাগুলো বলে তরী রুদ্র কে একের পর এক থাপ্পড় মারে। বেচারা রুদ্র হতবাক হতবুদ্ধি হয়ে মার খেতে থাকে। সিমথি আদির বাহু খামছে ধরে হাসি আটকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে নেয়। এই মেয়ে আস্তো একটা বিড়াল প্রজাতির। হুটহাট কামড়ে ধরে আবার হুটহাট খামচে ধরে। রোজ মিটিমিটি হাসতে শুরু করে। সায়ন আর ইফাজ গিয়ে তরীকে ছাড়িয়ে আনে।
তরী : ভাইয়া তোমরা ছাড়ো আমায়। আজ ওকে আমি মে/রেই ফেলবো।
সায়ন : তরী বোন আমার থাম কি করছিস কি।
ইফাজ : আরে পা/গ/ল নাকি এভাবে হাত-পা ছুড়ছিস কেনো।
রুদ্রর বাবা : এসব কি মিসেস খান। ডেকে এনে এভাবে অপমান করার মানে কি।
রহিমা বেগম : তরী হচ্ছে টা কি। এমন বে/য়া/দ/বি করছিস কেনো। আর ছেলে দেখতে যথেষ্ট সুদর্শন। আমি তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছি।
তরী : মাই লাইফ মাই ডিসিশন। আমি বাদর না যে তোমরা ঢুগঢুগি বাজাবে আর তার তালে তালে আমি নৃত্য করবো। আর তুমি আমাকে না বলে কিভাবে ওর মতো একটা লু/ই/চ্ছা/র সাথে বিয়ে দিতে চাও।
সীমা বেগম : তরী ভাষা সংযত করে কথা বল।
রুদ্রর মা : এমন মেয়ে আমরাই নিজের ঘরে নেবো না। এই রুদ্রর বাবা চলো চলো।
রুদ্রর মায়ের কথায় তরী তেতে উঠে।
তরী : আপনার এই ছেলের গলায় কেনো ভালো ঘরের মেয়ে জুটবে না। আর আপনি কি আমাকে রিজেক্ট করবেন আমি আপনার এই কু/লা/ঙ্গা/র ছেলেকে রিজেক্ট করেছি। এই যে এতোক্ষণ বসে বসে এতো কিছু গিললেন বিনা পয়সায় এটা ও মাফ করে দিলাম। যান ভাগেন এবার৷ নয়তো ঝাটা পেটা করে বের করবো।
তরীর কথায় রোজ শব্দ করে হেঁসে দেয়। সিমথি আদির বাহু কামড়ে ধরে হাসি আটকায়। আদি ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে আহত স্বরে বলে,,,,
আদি : সিয়াজান কি করছো।
তরীর অপামনে রুদ্রর মা- বাবা নাক ফুলিয়ে চলে যায়। রুদ্র যাওয়ার আগে সিমথি আর তরীর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায়।
সীমা বেগম : এসব কোন ধরনের ব্যবহার তরী। ওরা কি ভাবলো।
তরী : যে যেমন তার সাথে তেমনই করতে হয়। তাই না সিমথি আপু।
তরীর কথায় সিমথি দ্রুত আদিকে ছেড়ে সরে দাড়ায়। অতঃপর ভাবলেশহীন উত্তর দেয়।
সিমথি : আমি কি জানি।
রোজ : তোমার কথাগুলো সেই ছিলো।
বলেই রোজ আবার হাসতে শুরু করে।
সীমা বেগম : রোজ হাসবে না। সবার আদরে আদরে মাথায় চড়ে বসেছো। বড় ভাইয়া নেই বলে সাহস বেড়ে গেছে।
সিমথি : তেমন সবার বিশ্বাসে আপনিও তো আঘাত আনতে জানেন তাই না। আর আমি সবাই কে নিষেধ করেছি রোজের সাথে এভাবে কথা বলবেন না কেউ। রোজ এই বাড়ির সবার ছোট তাই ও সবার আদরের। কথাটা মাথায় রাখবেন।
সিমথির গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথায় সীমা বেগম দমে যায়। অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে সিমথির দিকে তাকায়।
সীমা বেগম : আমার সাথে এভাবে কথা বলিস কেনো। কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছিস।
সিমথি : কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছেন সেটা আমার থেকে আপনি বেশি ভালো জানেন৷
সিমথির কথায় সীমা বেগম চমকে সিমথির মুখের দিকে তাকায়। সায়নরা পরিস্থিতি বুঝার জন্য অপেক্ষা করছে৷ সীমা বেগম সিমথির তাচ্ছিল্য বাণী শুনে শুকনো ঢোক গিলে। সিমথি ঠোঁট হেলিয়ে হাসে।
সিমথি : কি হলো। এতবছরের কুকর্ম ধরা পড়ে গেলো কি না সেটার ভয় পাচ্ছেন। ভয় নেই যথা সময়ে আপনার শাস্তি আপনি পেয়ে যাবেন।
সীমা বেগম : সিম,,,
সিমথি : আপনার সাথে কথা বলতে ও আমার রুচিতে বাঁধে। ভালোবাসার আড়ালে ছুড়িঘাত করেন। এমন বিশ্বাসঘাতক হয়েও আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন। আল্লাহ হাফেজ।
সিমথির রহস্যময়ী কথার মানে কেউ না বুঝলে দুইজন ব্যক্তি বুঝতে পেরেছে। তারা শুকনো ঢোক গিলে সিমথির দিকে তাকায়। সিমথি কথা না বাড়িয়ে আদ্রর কপালে চুমু একে সায়নের কোলে দিয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।
_______________
সিমথি : কে তেল দেবে মাথায়।
সিমথির কথায় সোফার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদির মা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
আদির মা : আমি তোকে বলছি। মেহের আদিবাকে ও দিয়ে দিছি। এখন তোর মাথায় দেবো।
সিমথি : এ্যাহহহ আমি তেল দেয় নাহহ। পেত্নীর মতো লাগে।
আদি : ঠিকই বলেছো এমনিতে তো পেত্নী লাগে আর চুলে তেল দিলে তো পুরাই তেঁতুল গাছের পেত্নী লাগবে।
সিমথি : পেত্নী গাছেই থাকে আপনার পেটে থাকে না।
মেহের : মেঝো মা আমাদের তেল দিয়ে দিয়েছো ধরে বেধে এখন সিমথিকে না দিলে খারাপ হবে।
সিমথি : ভাবী এমন করো না। আমি লাস্ট কবে তেল দিয়েছি নিজেই ভুলে গেছি। তেল দিলে আমার মাথা ব্যথা করে, মাথা ঘুরায়, বমি বমি পায়। আহহ কতগুলো রিজনের জন্য তেল দেয়না।
শাওনের মা : সব তেল না দেওয়ার ধান্দা।
সিমথি : বড় মা তুমি অন্তত আমার পক্ষে থাকো।
আদির মা : সিমথি এদিকে আয়। চুলগুলো তেল না দিলে সব পড়ে যাবে। তখন টাকলা হয়ে যাবি।
আদি : জাস্ট ইমাজিন তোমাকে টাকলা হলে কেমন লাগবে।
সিমথি : আদি কলার কাদি ( দাঁতে দাঁত চেপে)
সিমথির কথায় ইশানরা হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়।
ইশান : ভাই থাম তোরা। ভাবী জৃবি তোমার দলে আমরা আছি। তুমি এগিয়ে যাও। আমরা আছি তোমার পাশে।
তিন্নি : হ্যাঁ কাকিলা এগিলে তাও
সিমথি : আগাবো কিভাবে সামনে তো সোফা দেবর জ্বি।
আচনকা মাথায় তরল কিছু অনুভব করে সিমথি মাথায় হাত দেয়। হাত সামনে আনতেই ঠোঁট কামড়ে চোখ বুঁজে নেয়।
সিমথি : আহহহহ বাবাই তেললল ( চেঁচিয়ে)
সিমথি চোখ গরম করে পেছনে আদির দিকে তাকায়। আদি বিজয়ী হেসে তেলের বাটিটা মেহেরের হাতে ধরিয়ে দৌড় লাগায়।
সিমথি : এ্যাহহহ আদি।
সিমথি গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে পড়ে। আদির মা এসে সিমথির পুরো মাথা তেলে মাখিয়ে দেয়। সিমথি ইনোসেন্ট ফেস করে পাখির মতো টুকুর টুকুর করে সবার দিকে তাকায়। ছোট থেকে মাথায় তেল দেওয়া নিয়ে সিমথির চরম এলার্জি।
আদির মা : এখন কত সুন্দর লাগছে দেখতো।
সিমথি : এমনিতে কি বান্দর লাগে। ( নাক মুখ কুঁচকে)
আচমকা সিমথির ফোনটা বেজে উঠে। ফোনের স্কিনে অনিলের নাম দেখে সিমথি ফোনটা রিসিভ করে।
সিমথি : হুমমম বলো।
_____
সিমথি : এটা আমি জানি৷ আর কোনো ক্লু থাকলে বলো।
_____
সিমথি : ওকে কাল দেখা করো। আর হুমম বি কেয়ারফুল।
_____
সিমথি কান থেকে ফোন সরিয়ে আদির মায়ের পেটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুঁজে নেয়। এতটা ভালোবাসার পর ও কেউ কিভাবে এতোটা ক্ষতি করতে পারে সিমথির তা জানা নেয়। তবে শত্রু সবসময় কাছের মানুষ জন হয়। এটা সিমথি বুঝে গেছে। এখন কাল সকাল হবার অপেক্ষা অনেক হিসেব বাকি আছে।
চলবে,,,,,
( ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)